নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
সদ্য ঘটে যাওয়া নেপালের ভূমিকম্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি’র পর আমাদের দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়বস্তু ছিল, “ঢাকা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ৭৪ হাজার স্থাপনা”। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞদের মতে ভূমিকম্পের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে এই ৭৪ হাজার ভবন। তো? অপসারন করতে হবে? অসম্ভব!!! ভাই থামেন, থামেন... এটা কি মগের মুল্লুক? আপনি বললেন আর সাথে সাথে এই ৭৪ হাজার ভবন অপসারিত হয়ে যাবে। আসুন একটু আলোচনা করা যাক কেন এটা অসম্ভব একটা বিষয়।
৩৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই শহর ঢাকা। প্রায় দুই কোটি লোকের শহর এই ঢাকা। এখন চটপট হিসেব কষে ফেলুন প্রতি বর্গ মিটারে কতজন মানুষ বসবাস করেন। এই ঘনত্ব’র সাথে খাপ খাওয়াতে গত দুই দশকে ঢাকা শহরে গড়ে ওঠে প্রায় তিন লাখেরও বেশী ভবন। বর্তমানে এই শহরে ছয় লক্ষাধিক ভবন রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে চুয়াত্তর লক্ষ ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায় আট ভাগের এক ভাগ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন এই ভবনগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে পুরাতন ঢাকার ভবনগুলো এটা সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু শুধুমাত্র কি পুরাতন ঢাকার ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ?
না, বরং পুরাতন ঢাকার অধিকাংশ এলাকার সুবিধা হল এখানকার মাটির গঠন। যারা রিয়েল এস্টেট বা ভবন নির্মাণের সাথে জড়িত বা অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানেন পুরাতন ঢাকার বেশীরভাগ এলাকাতেই ভবন নির্মাণে পাইলিং এর প্রয়োজন হয় না এখানকার মাটির উত্তম গঠনের জন্য। অপরদিকে গত বিশ বছরে ঢাকা শহরের যে বিস্তৃতি হয়েছে, সেই এলাকাগুলোর অধিকাংশই জলাভূমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গার এই পাশের মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকা থেকে শুরু করে অপর প্রান্তের বনশ্রী বা পূর্বাচল অথবা বিখ্যাত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। এগুলোর প্রতিটিই কিন্তু জলাভূমি ভরাট করে গড়ে ওঠা এলাকা। ফলে এখানকার মাটির গঠন অনেক নাজুক। তাই অহেতুক পুরাতন ঢাকার দিকে আঙ্গুল না দেখিয়ে পুরো ব্যাপারটাতে একটু নজর দেয়া যাক।
এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতে যে ঝুঁকিপূর্ণ ৭৪ হাজার ভবন রয়েছে, সেগুলো অপসারন করা বা সংস্কার করা কতটুকু সম্ভব বাস্তবতার নিরিখে। গত বছরের ১৫ জুন জাতীয় সংসদে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন জানিয়েছিলেন, রাজউক রাজধানীতে ৩২১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে। সংখ্যার ধাঁধায় পড়ে গেলেন তো? বাদ দেন, আসুন আমরা সাধারণ মানুষ, একটু সাধারণ হিসেব কষি।
প্রথম প্রশ্ন ঝুঁকিপূর্ণ ৭৪ হাজার ভবন কি অপসারন সম্ভব? উত্তর না? কারণ পুরো শহরের ১২.৫% জনগণের আবাস অপসারণ, পুনঃনির্মাণ বা সংস্কার কি খুব সহজ ব্যাপার? মোটেও না? দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, অর্থনৈতিক দিক। এই ৭৪ হাজার ভবনের পুনঃনির্মাণের জন্য দরকার কত টাকা। গড়ে যদি প্রতিটি ভবন পাঁচতলা ধরা হয় এবং প্রতি ফ্লোরের আয়তন দুই হাজার স্কয়ার ফুট এবং প্রতি স্কয়ার ফুটের নির্মাণ খরচ এক হাজার টাকা ধরা হয় তবে কত টাকা লাগবে একটু হিসেব করুন। আমি আবার বোকা মানুষ কি না, আমার হিসেবে ভুল হয়ে যায় বারবার প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার মত হয় তাই নয় কি? তো এই টাকার যোগান কে দেবে?
শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করে আমরা কতটা ঝুঁকিমুক্ত হতে পারবো এটা একটা বড় প্রশ্ন? তারচেয়ে এই প্যানিক না ছড়ানোটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি? নেপালের ভূমিকম্পের সময় এবং পরবর্তীতে আমাদের দেশে এই প্যানিকে আহত-নিহতের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। অথচ, ভূমিকম্পের সময় দৌড়ঝাঁপ করার তেমন একটা সময় কি পাওয়া যায়? ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ এবং এই সংশ্লিষ্ট নিউজ যতটা প্রচার হয়েছে তার চেয়ে অনেক অনেক কম প্রচারিত হয়েছে ভূমিকম্পের সময় করনীয় নিয়ে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ যতটা অসম্ভব, তারচেয়ে অনেক অনেক বেশী কার্যকর হল এই ভূমিকম্পের সময় করনীয় বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা।
তবে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের একটি সহজ এবং কার্যকর উপায় রয়েছে। কি সেটা? আছে, তার আগে একটা কথা বলে নেই। আপনারা কে কে হাউজ বিল্ডিং লোণ নিয়ে নিজের বাড়ী করেছেন? তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন এই হাউজ বিল্ডিং লোণ পেতে কি হ্যাপা পোহাতে হয় এবং অবশ্যই সাথে আপনার লবিং থাকতে হবে। তো এখন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ এবং নতুন ভবন নির্মাণে সরকার একটা উদ্যোগ নিলেই এটা অনেকাংশে সম্ভব হয়ে যাবে। প্রথম কথা আমাদের সেনাবাহিনীর সিভিল ওয়ার্ক এক্সপার্টদের তত্ত্বাবধানে প্রাইভেট ডেভেলপারদের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে ভবনের এলাকার দিক বিবেচনা করে ৮/৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণের। এক্ষেত্রে সরকারী ব্যাংক অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বেসরকারি ব্যাংক এই নির্মাণ কাজে বিনিয়োগ করবে। বাড়ীর মালিকের নামে বিশ বছর মেয়াদী হাউজ বিল্ডিং লোণ ইস্যু করে এই নির্মাণের পুরো খরচ আদায় করা হবে। এক্ষেত্রে হাউজ বিল্ডিং লোণের ক্ষেত্রে সুদের যে হার, সেই হারই না হয় প্রযোজ্য হবে। ফলে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিক নিজেরাই এসে ধর্না দিবে রাজউকের দরবারে। তারপরও প্রশ থেকে যায়, নির্মাণকালীন সময়ে এই ভবনের বাসিন্দাদের আবাসনের কি হবে? কারণ সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়, প্রায় বিশ লক্ষাধিক মানুষ!
এই বিষয়ে পুরাতন ঢাকার বাড়ীর মালিকগুলোর কথা শেয়ার করি। বেশীরভাগ বাড়ীর মালিকের আয়ের অন্যতম উৎস হল এই বাড়ী ভাড়ার টাকা। অন্যতম কেন, অনেকক্ষেত্রে একমাত্র উৎস। তো আপনি, আমি বা সরকার চাইলেই সে এই বাড়ী হুট করে ভেঙ্গে নতুন বাড়ী তুলতে পারবে না। আবার এই বাড়ী ভাড়া না দিয়েও সে থাকতে পারবে না। আর ঢাকা শহরের অতি জনসংখ্যার চাপের কারণে তাদের ভাড়াটিয়া পেতেও সমস্যা হবে না। তাই সমাধান হল, সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী লোণের ব্যবস্থা করে এই ভবনগুলো দ্রুত সংস্কার করা। আর আমার মতে, এটি একমাত্র করনীয়, এর বাইরে আর কিছুই করার নাই। কেননা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শুধু ভাড়াটিয়া নয়, বাড়ীর মালিকও বসবাস করেন, স্বপরিবারে।
১০ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ সজা১২৩, বোকা মানুষের ব্লগে স্বাগতম। এখন কিন্তু সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছে রাজউক। কিন্তু কি লাভ? আপনি বলুন কয়জনের পক্ষে সম্ভব পুরাতন বাড়ী ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা? তাই সককার যদি উদ্যোগী হয়ে লোণের ব্যবস্থা করে দেয়, তবেই সম্ভব এই সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ তথা পুনঃনির্মাণ। অন্যথায় এই ঝুঁকি নিয়েই সবাই দিনযাপন করবে।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।
২| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: যারা এসব করার দায়িত্বে আছে সরকারের তারা সবাই ঘুষ খায়, দেদারসে। সুতরাং কিচুই হবেনা। রানা প্লাজার মত দুর্ঘটনা কর্তাদের প্রশ্রয়েই ঘটবে। ব্যাস।
১০ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: হুমম... কিন্তু এসব সমস্যা একমাত্র সরকার মহাশয়ই পারে সমাধান করতে। বেসরাকারি উদ্যোগে এগুলো বাস্তবায়ন কি করে সম্ভব ভেবে পাই না
৩| ০৯ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩
ধূর্ত উঁই বলেছেন: সময়োপযোগী পোস্ট । দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ও তার বাস্তবায়ন জরুরী ।
১০ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ ধূর্ত উঁই। আসলেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ও তার বাস্তবায়ন জরুরী। আশা করি সরকার মহাশয় অতি দ্রুত এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।
৪| ১০ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৮
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সমস্যা হচ্ছে, এই বিষয়ে কাজ করতে গেলে অনেক মানুষের স্বার্থে টান পড়বে। তারা চেষ্টা করবেন ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ার আগপর্যন্ত এসব ভবন থেকে যেন টেকাটুকা পেতে থাকেন। তাই, আমি নিরাশাবাদি। কিছুই হবে না। একদিন ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখব, বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষ মরে গেছে ভূমিকম্পে।
১৫ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ঠিক বলেছেন প্রোফেসর সাহেব। আসলে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ বজায় রাখতে সবাই ভুলে যাচ্ছি কিছু ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থ ভাবাটাই সকলের জন্য মঙ্গলময় হয়। অনেক আগে কোন এক আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে'র সামারি লাইন পড়েছিলাম, এরকম ছিল লাইনটা, 'এই দেশে সবাই নিজের ক্ষমতাটাকে অর্থে রূপান্তর করতে সদা সচেষ্ট'
৫| ১১ ই মে, ২০১৫ রাত ১:০৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: বংশী বাজারের আমার নানাবাড়িটির করুন দশা মনে করে আমি ভীত।। মামাতো ভাই-বোনের সবাই নূতনবাড়িতে ঠাই।। অথচ আমার অনেক স্মৃতি বিজরিত এই বাড়িটির কোন মূল্যায়ন নেই।। শতবছরেরও পুরাতন বাড়িটি।। যেখানে একসময় দাপিয়ে বেড়াতাম,আজ কতবছর ধরে দেখিও না!! বড্ড টানে সেই বাড়িটি।।
১৫ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: স্মৃতিচারণমূলক মন্তব্যে একরাশ ভালোলাগা। আসলে চোখের সামনে ধীরে ধীরে সব ক্ষয়ে যাচ্ছে, নীরবে, নিভৃতে।
৬| ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ১:২০
সজা১২৩ বলেছেন: আপনার প্রস্তাবনা অত্যান্ত চমৎকার,তবে তা বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করতে সকলকে এক যোগে কলম ধরতে হবে। আর আপাত হিসাবে ভূমিকম্প ঝুকিপূর্ণ বাড়িতে সাইন বোর্ড দিলে ন্যুন্যতম এতটুকু উপকার হবে যে ভাড়াটিয়ারা নিজের জীবনকে ঝুকির মধ্যে ফেলার বিষয়ে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাছাড় সাইন বোর্ড দিলে ভাড়াটের অভাব হবে যা বাড়িওয়ালাদেরকে তাদের বাড়ি সংস্কারে স্বউদ্যেগি হতে সহায়তা করবে।
১৫ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে যাওয়ার পর বাড়ির মালিক কি আর তা ঝুলিয়ে রাখবে? ঢাকা শহরে যার যার এলাকায় তার তার ক্ষমতা রয়েছে। ফলে সাইন বোর্ড ঝুলালেও লাভ নাই, মাঝখান থেকে সাইনবোর্ডটা জলে যাবে।
আসলে সবাইকে সচেতন হতে হবে, সাথে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এসব সমস্যা হতে উত্তরন ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবনে, ভালো থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩
সজা১২৩ বলেছেন: কোন কোন বাড়ী ভূমিকম্প ঝুকিপূর্ণ তা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া উচিত যাতে করে যারা তাদের জীবনকে ঝুকির মধ্যে ফেলছে তারা যেন তা যেনশুনে করতে পারে।