নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
জয়পুরে সারাদিন ডে-ট্রিপে "হাওয়া মাহেল", "জয়পুর সিটি প্যালেস মিউসিয়াম", "জন্তর-মন্তর", "সিটি প্যালেস" আর "জল মহল" দেখে সোজা "আম্বার ফোর্ট" চলে গিয়েছিলাম চমৎকার এই ফোর্টটি দেখতে। আদ্ধেকবেলা আম্বার ফোর্টে কাটিয়ে প্রায় বিকেল ছুঁই ছুঁই সময়ে ফোর্ট এর প্রবেশপথ লাগোয়া রেস্টুরেন্ট এ নানান ভেজ আইটেম দিয়ে ভরপুর দুপুরের খাওয়া শেষে চা পান করে যাত্রা শুরু করেছিলাম দিল্লীর পানে। প্রায় পাঁচ ঘন্টার যাত্রায় মাঝে এক ধাবায় ছিল চা বিরতি, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পৌঁছলাম দিল্লী, নিবাস সেই আগের হোটেলটিই। আগে থেকে ফোন করে জানিয়ে দেয়ায়, রাত এগারোটার পরেও পাওয়া গেল ডিনার। ডিনার শেষে ক্লান্ত বদনে সবাই হারালাম ঘুমের রাজ্যে।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সবাই ছিলাম এদিন দৌড়ের উপর। দশজনের দলের পাঁচদিনের ভ্রমণের শেষে এখান থেকে টুকরো টুকরো হওয়া শুরু। প্রথমেই দুটো প্রাইভেট কারে দুভাগ হয়ে দিল্লী দর্শণ শুরু হল; এক গ্রুপে চারজন আর এক গ্রুপে ছয় জন। চারজনের গ্রুপের দুইজন দিল্লী থেকে সরাসরি ঢাকার বিমানে আজই চলে যাবে দেশে। বাকী দুজন তাদের নিয়ে দিল্লীর কিছু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ শেষে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সিঅফ করতে যাবো। অন্যদলের ছয়জন এবং এই দলের দুজন চলে যাবো কলকাতা, সেখান থেকে পরদিন চারভাগে ভাগ হয়ে বাকীরা ফিরবো ঢাকা। সেই গল্পে পরে আসছি।
এদিনের গন্তব্যের মধ্যে ছিলো কুতুবমিনার, হুমায়ুন টম্ব, ইন্ডিয়াগেট, আকসার ধাম, লোটাস টেম্পেল। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারনে দুইদলের কোন দলই সব কয়টি জায়গা কাভার করতে পারে নাই। আমি ছিলাম চারজনের দলে, আমার সাথে ছিলো এক বন্ধুর ছোট ভাই আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক স্যার এবং উনার সহধর্মীনি। উনারা দুইজন সরাসরি ঢাকা চলে যাবে আজকে। স্যারের আবার বার্ডিং ফটোগ্রাফির নেশা, হুমায়ুন টম্ব দেখতে গিয়ে কোন এক পাখীর ছবি তোলায় উনি অনেকটা বেশী সময় দিয়ে দিলেন। ফলে উনাকে প্রায় শেষ মুহুর্তে প্লেনে চড়তে হয়েছে, আর মিনিট পাঁচেক দেরী হলে ফ্লাইট মিস করতো। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, দিল্লী এয়ারপোর্টে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট হলে কমপক্ষে ফ্লাইটের তিনঘন্টা আগেই বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশনে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত। অনেক ভীড় থাকে ইমিগ্রেশনে, কখনো কখনো প্রায় ঘন্টা দেড়েকের বেশী সময়ও লেগে যায়। তার উপর আপনার বিমানের ডিপারচার গেট যদি হয় ইমিগ্রেশন থেকে দূরবর্তী তাহলে তো কথাই নাই।
যাই হোক, স্যারদের দুজনকে বিদায় দিয়ে আমরা বাকী দুজন হোটেলে ফিরে এসে দেখি অন্য দল এখনো দিল্লী দর্শন শেষে হোটেলে এসে পৌঁছায় নাই। আমাদের কলকাতার ফ্লাইট ছিলো বিকেল বেলা, দুপুর দুইটার মধ্যে হোটেল হতে রওনা দিয়ে দিতে হবে এমনটাই প্ল্যান। তাই হোটেলের রেস্টুরেন্টে আমাদের অবশিষ্ট সকলের জন্য দুপুরের লাঞ্চে সাদা ভাত, কড়াই চিকেন, আলু গোবি, ডাল ফ্রাই অর্ডার করে দিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম বাকীদের জন্য। দুপুর একটার আগে আগে সবাই ফেরত আসলে তাদের তাড়া দিলাম দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ নিয়ে সরাসরি রিসিপশনে হাজির হতে। লাঞ্চ সেরেই রওনা হয়ে যাবো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। প্ল্যান মোতাবেকই দুপুর দুইটার কিছু আগে আগে আমরা কেরলবাগের হোটেল হতে ছুটে চললাম দিল্লী এয়ারপোর্টের পাণে।
ভালোয় ভালোয় এয়ারপোর্ট পৌঁছে সবাই বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষার সময় হুট করে আমার মনে পড়লো বিশাল একটা ভুল হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে সকল ট্রান্সপোর্ট আর হোটেল বুকিং কমপ্লিট করলেও আজকে রাতের জন্য কলকাতায় আগে থেকে হোটেল বুকিং করি নাই। প্ল্যান ছিলো ইন্ডিয়া এসে সেটা করে নিবো। আমার তো মাথায় হাত। এদিকে আমার মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ, আছি দিল্লি এয়ারপোর্টের ডিপারচার গেট এর কাছে। কি করা যায়। রিকোয়েস্ট করে ভ্রমণসাথীদের একজন হতে ফোন চেয়ে নিয়ে ঢাকা এবং কলকাতায় বেশ কয়েকজনকে ফোন করলাম, তারা জানালো দেখছে কোন কিছু করা যায় কি না। এরকম অবস্থায় কলকাতার হোটেল বুকিং অমীমাংসিত রেখেই প্লেনে চেপে বসলাম সন্ধ্যার পর।
তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইটে কলকাতা ফেরা, শেষ দল যখন কলকাতা পৌঁছাল তখন রাত প্রায় এগারোটা।এরকম হওয়ার কারণটা প্রথম পর্বেই বলেছিলাম, আমাদের দলটা চারজনের ছিলো শুরুতে, ট্যুর এর ডেট যত এগিয়ে আসতে লাগলো, ধীরে ধীরে দলে যুক্ত হতে লাগলো অন্যরা। ফলে সকলের এয়ার টিকেট একই এয়ারলাইন্সে পাওয়া যায় নাই। ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইটে যাত্রা করতে হয়েছে। কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে সোজা নিউমার্কেট চলে এলাম ট্যাক্সিযোগে। এরপর রাতের বেলা সবাই একটা ফুটপাতে ডেরা করে বসে ব্যাগপত্তর রেখে প্রয়াত কামরুন নাহার বীথি আপা দম্পতির জন্য দলের চারজন চারদিকে ছড়িয়ে হোটেল খোঁজা শুরু করে দিলাম। ঘন্টাখানেক পর দ্বিগুণ ভাড়ায় একটা মোটামুটি মানের হোটেলে রুম পাওয়া গেল। উনাদের সেখানে উঠিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে আমরা বাকী ছয়জন ফের হোটেলের খোঁজ শুরু করে দিলাম। এই মধ্য রাতে নির্জন কলকাতার রাস্তায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা হোটেলে বড় একটা রুম পাওয়া গেল, চার বেডের। সেখানেই আমরা ছয়জনের ছেলে ছোকরার দল রাত্রি যাপনের জন্য মাথা গুঁজার ঠাই পেলাম। বাকী রইলো পেটপূজো, হোটেলের বয়কে বলায় সে কিচেন ঘুরে এসে জানালো এতো রাত্রে কিছুই খাবার নাই, সে ছোলা-ডিমভাজি আর আটার রুটি’র ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তাতেই সম্মতি জানালে মিনিট ত্রিশের মধ্যে সে খানা নিয়ে হাজির হলে খাওয়া দাওয়া শেষে যখন ঘুমাতে যাবো, ঘড়িতে রাত দুটোর বেশী বাজে। এদিকে দলের ছয়জনের একজনের বাস সকাল ছয়টায়!!!
উৎসর্গঃ আমার ভারত ভ্রমণের এই সিরিজটি ব্লগার "কামরুন নাহার বীথি" আপাকে উৎসর্গ করছি। উনি আমার এই ট্যুরে ট্যুরমেট ছিলেন। গত পহেলা জানুয়ারী রাত এগারো ঘটিকায় বীথি আপা আল্লাহ্র ডাকে সারা দিয়ে পরপারে চলে গেছেন আমাদের সবাইকে ছেড়ে। আল্লাহ্ তার শোকার্ত পরিবারকে এই শোক সইবার ধৈর্য দাণ করুন। আর আপাকে পরপারে আল্লাহ্ সকল গুনাহ (যদি থাকে) মাফ করে তার কবরে আজাব মাফ করুন এবং আখেরাতে বেহেশত নসীব করুন।
প্রথম পর্ব থেকে বীথি আপার এই ট্যুরে যুক্ত হওয়ার ঘটনাটা আবার তুলে ধরলামঃ
ঈদের কয়েকদিন আগে আমি কোন একটা কাজে নীলক্ষেত মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি, একটি অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো, কল রিসিভ করতে অপরপাশ থেকে অচেনা কণ্ঠস্বর। আমাদের দলের সাথে যুক্ত হতে চায় এই ট্রিপে। “সামহোয়্যার ইন ব্লগ” এ তখন পর্যন্ত আমার পূর্বপরিচিত কেউ ছাড়া আর কারো সাথে পরিচয় ছিলো না। “সাদা মনের মানুষ” খ্যাত কামাল ভাই এর সাথে পরিচয় ভ্রমণ বাংলাদেশ থেকে। সেই কামাল ভাই এর কাছ থেকে খবর পেয়ে ফোন দিয়ে প্রিয় ব্লগার কামরুন নাহার বীথি আপা। উনি এবং ভাইয়া যুক্ত হতে চাচ্ছেন আমাদের সাথে। আমি একদিন সময় নিয়ে উনাকে কনফার্ম করলাম উনাদের যুক্ত হওয়ার ব্যাপারটা। এরপর উনাদের এয়ার টিকেট এর ব্যবস্থা করা হলো। দল গিয়ে দাড়ালো দশজনের। সিদ্ধান্ত হল চারজনের একটা দল ঈদের দিন রাতে রওনা হয়ে যাবো কলকাতার উদ্দেশ্যে। একদিন পরে বাকী ছয়জন রওনা হবে, যেহেতু কোরবানী ঈদের ছুটি, তাই অনেকেই সারাদিনের কোরবানীর হ্যাপা পোহানোর পর সেদিন রাতেই রওনা হতে রাজী হলো না। ফলে আমরা যে চারজন আগে রওনা হবো, তারা একরাত কলকাতা থেকে পরেরদিন সরাসরি বিমানবন্দর চলে যাবো। অপর দলও সরাসরি বেনাপোল বর্ডার হতে দমদম বিমানবন্দর চলে আসবে। এরপর ঢাকা থেকে সকলের কলকাতার বাসের টিকেট এবং আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে অপেক্ষার পালা চলতে লাগলো...
ভ্রমণকালঃ সেপ্টেম্বর ২০১৬
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর, ২০১৬ এর সকল পর্বঃ
* যাত্রা শুরুর আগের গল্প (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০১)
* কলকাতায় অপেক্ষা... (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০২)
* ফ্লাইট মিসড তো ট্যুর ক্যান্সেলড... টেনশনিত অপেক্ষার শেষে (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০৩)
* আগ্রার পাণে যাত্রা (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ০৪)
* আগ্রার ঘাগড়ায়, দেখা হলো না নয়ন জুড়িয়া (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৫)
* তাজমহলে পদধূলি (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৬)
* আগ্রা ফোর্ট - বহু ইতিহাসের সাক্ষী (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৭)
* কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা "ফাতেহপুর সিকরি" ভ্রমণ (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৮)
* পিঙ্ক সিটি জয়পুর ভ্রমণে চলে এলাম "হাওয়া মহল" - (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ৯)
* "সিটি প্যালেস - জয়পুর" অনবদ্য রাজকীয় কীর্তি (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ১০)
* “যন্তর মন্তর” ফুঁ (থুক্কু) টু “জল মহল” (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ১১)
* আম্বার ফোর্ট - জয়পুরের মূল আকর্ষণ এবং ঐতিহাসিক মূল্য বিচারে রাজাস্থানের প্রধান দূর্গ (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ট্যুর - পর্ব ১২)
এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:১৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর। ইচ্ছে আছে দ্রুতই সকল পেন্ডিং ট্রাভেল পোস্টগুলো লিখে ফেলার।
২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৬
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: চলুক।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:১৭
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পরের পর্বেই শেষ হয়ে গেছে এই সিরিজ। খুব শীঘ্রই শুরু হবে "দক্ষিণ ভারতে একাকী ভ্রমণে"।
পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: ভ্রমন কাহিনী পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।
আরো লিখুন।