নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
দুপুরের আগেই ডে লং কোদাই কানাল সাইটসিইয়িং ট্রিপটি শেষ হয়ে গেলে আমি আর হোটেলে ফেরত না গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম কোদাই শহরটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখার। যেহেতু দুপুর প্রায় মধ্য গগনে, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দুপুরের লাঞ্চটা সেরেই না হয় শুরু করা যাক আজকের পায়ে হাঁটা এই শহর দর্শন। সকালে যে রেস্টুরেন্টটিতে নাস্তা খেয়েছিলাম সেই “আর রহমান” রেস্টুরেন্টে গিয়ে চিকেন থালি অর্ডার করে দিলাম সাথে অতিরিক্ত হিসেবে নিলাম দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত এবং অতি সুস্বাদু পরাটা। কলা পাতায় পরিবেশন করা হলো ভাত, চিকেন গ্রেভি, মিক্সড সবজি, বুটের ডাল, সালাদ এবং পাপড়। তৃপ্তি করে খাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করতে দেখি শরীর ভীষণ ক্লান্ত, তার সাথে ছিল মধ্যাহ্নের তপ্ত সূর্য কিরণ। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে না হয় পরিকল্পনা করা শহর পরিভ্রমণ করা যাবে।
“হোটেল ক্লিফটন” এর শূন্য চত্বর দিয়ে আমার রুমের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ইতি-উতি চেয়ে দেখি সেই কেয়ারটেকার কাম ম্যানেজার ভদ্রলোকটিকে দেখতে পাওয়া যায় কিনা। হতাশ হলাম কোথাও তার দর্শন না পেয়ে। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বেশ কিছুটা সময় পার করে বেলা তিনটার দিকে রুম হতে বের হয়ে উনার দর্শন পাওয়া গেল। তাকে জানালাম, হোটেলে ফিরতে আমার রাত হতে পারে; তাকে এমনটা জানানোর কারণ আমি ছাড়া এই হোটেলে আর কোন গেস্ট নেই, সে কথা আগের পর্বেই বলেছিলাম।
হোটেল হতে বের হয়ে সোজা আর রাহমান রেস্টুরেন্টকে ডানদিকে রেখে যে রাস্তাটি সোজা চলে গিয়েছে, সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম। কেমন একটা মফস্বল শহর তাই আবহাওয়া চারদিকে, কোন উচ্চ ভবন নেই, পাকা-আধপাকা বেশ দোচালা বেশিরভাগ ঘরবাড়ি, টিনের ছাদোওয়ালা দোকানপাট, কোথাও হয়তোবা টালির ইটের ছাদ। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তাটা বামে বাঁক নিয়ে নেমে গেছে একটা ঢালু পথে, যে পথে শেষ প্রান্তে দেখা যাচ্ছে পাহাড়; আরেকটি পথ হালকা ডানে বেঁকে দূরে কোথাও হারিয়ে গিয়েছে, বুঝা যাচ্ছে সেই পথটি মূল সড়ক পথ। আমি জনপদের মাঝ দিয়ে ঢালু সেই বাম দিকের পথ ধরে হেঁটে এগিয়ে গেলাম। প্রতিটি শহরের প্রান্তিক জনপদই বোধ হয় এই দুপুর বেলা ভাতঘুমে ঝিমুতে থাকে। আশেপাশে তেমন ব্যস্ততা দেখতে পেলাম না। এর মাঝেই হুট করে কোথা থেকে যেন একটি শব দেহ নিয়ে একটা শ্মশান যাত্রীর দল সামনের দিক থেকে হেঁটে আসতে লাগলো। কোন মন্ত্র বা বোল উচ্চারিত হচ্ছিল না তাদের মুখ থেকে, মৃত শ্মশান যাত্রীটি ফুল দিয়ে ঢাকা ছিল একটি এম্বুলেন্স এ আর তার সামনে মহা উৎসাহ নিয়ে ব্যান্ডপার্টি ড্রাম বাজাচ্ছিলো। কত বিচিত্রই না মানুষের এই শেষ বিদায়, কোথাও পোড়ানো হয়, কোথাও মাটিচাপা, আবার কোথাও খোলা আকাশের নীচে ফেলে রাখা হয়। কোথাও নীরবতায় জানানো হয় শেষ বিদায় আবার কোথাও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, কোথাও নেচে গেয়ে। বিচিত্র মানুষের বিচিত্র এই জীবন, বিচিত্র তার আগমনী উৎসব, তেমনই বিচিত্র তার চলে যাওয়া, বিদায় বেলার আয়োজন। আমাকে পাশ কাটিয়ে তারা চলে যাওয়ার সময় মনে হল কত তুচ্ছ এ জীবন; মরে যাওয়ার পর চব্বিশ ঘন্টাও ঠাই হয় না আপন সংসারে, আপন পরিবারে….
আরও কিছুটা পথ হেঁটে যাওয়ার পর বেশ কিছু পাকা দালান চোখে পড়ল। বুঝতে পারছিলাম পেছনে ফেলে আসা এলাকার চাইতে এই এলাকাটা অনেকটা উন্নত। একই শহরে কিছুটা দূরত্বে থাকা দুটি এলাকার চিত্র সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। চোখে পড়ল বেশ কয়েকটা তিনতলা চারতলা ছোট ছোট ভবন, যেখানে নানান রকমের দোকানের সমাহার নিয়ে অনেকটা মার্কেটের মত গড়ে উঠেছে। পথ চলতে চলতে কতটা সময় গিয়েছিল খেয়াল করি নাই, আকাশের দিকে তাকাতে বুঝতে পারলাম দুপুর গড়িয়ে সময়ের ঘড়ি বিকেলের আঙিনায় পা দিয়েছে। তাই ফিরতি পথে হাঁটতে লাগলাম কানে গুঁজে দিয়ে হেডফোন, চালিয়ে দিলাম পছন্দের কিছু গান।
বিকেলের আগে দিয়ে চলে এলাম কোদাই লেকের কাছে। কোদাইকানাল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ডিন্ডিগুল জেলার একটি শহর এবং হিল স্টেশন। এটি পশ্চিমঘাটের পালানি পাহাড়ে অবস্থিত একটি পাহাড়ি জনপদ যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,২২৫ মিটার তথা ৭,৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ১৮৪৫ সালে গ্রীষ্মকালীন আবাস হিসেবে ইংরেজ শাসকেরা গোড়াপত্তন করেছিলো এই পাহাড়ি জনপদের বর্তমানে যা দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটিকে "প্রিন্সেস অফ হিল স্টেশন" হিসাবে উল্লেখ করে থাকে স্থানীয়রা। এই পাহাড়ি জনপদের মানবসৃষ্ট জলাধার হল কোদাই লেক যা মাদুরাইয়ের তৎকালীন কালেক্টর “স্যার ভেরে হেনরি লেভিঞ্জ” এর তত্ত্বাবধানে ১৮৬৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। এই লেককে কেন্দ্র করে জনপদ গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো ব্রিটিশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দিকের মিশনারি’রা।
মূলত এই লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে কোদাইকানালের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। লেকের চারিপাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে পিচ ঢালা পায়ের চলা পথ, যে পথ দিয়ে অনায়াসে চলতে পারে মোটর ভেহিকেল। কিন্তু সেখানে মোটর গাড়ি না দেখা গেলেও, দেখলাম ঘোড়ার পিঠে চড়ে লেকের চারিপাশে চক্কর দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের জলে বাঁধা আছে বোট, কোদাই লেকে বোটিং পর্যটকদের অন্যতম বিনোদন কর্মকান্ডের একটি। লেকের প্রবেশ পথের মুখেই দেখলাম বিনোদনের নানান ব্যবস্থা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ৭ডি মুভি, গেমিং জোন সহ বিনোদনের নানান ব্যবস্থা। সেখানেই দেখলাম সারি দিয়ে সাজানো রয়েছে বেশ কিছু বাইসাইকেল। এখানে এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলাম, সাইকেল কি ভাড়া দেওয়া হয়? সম্মতিসূচক উত্তর পেয়ে আধ ঘন্টার জন্য সাইকেল ভাড়া নিলাম লেকের চারিপাশে ঘুরে দেখার জন্য।
বহু বছর পর সাইকেল চালালাম, শহরের ব্যস্ত কোলাহলের কর্মময় নাগরিক জীবনে ছুটে চলার মাঝে, প্রিয় শখগুলোর একটি, সাইকেল চালানো হয়ে উঠে না বছর। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পড়ে সাইকেল চালাতে মন্দ লাগছিল না। মৃদুমন্দ বাতাস বইছিলো শেষ বিকেলের রাঙ্গা আলোয় আলোকিত লেকের জলে ঢেউ তুলে। এর মাঝে ধীরলয়ে সাইকেল স্যাডালে পা চালাতে চালাতে অদ্ভুত সব অনুভূতির সাথে হচ্ছিলাম নষ্টালজিক। সেদিনের সে বিকেল বেলায় লোকের চারিপাশে খুব একটা পর্যটকের আনাগোনা ছিল না। তবে লেকের চারিপাশে বাড়িঘর গুলো দেখে বুঝাই যাচ্ছিলো এখানকার বাসিন্দারা অনেকটাই সচ্ছল আর এলাকাটাও অভিজাত। সন্ধের আগে আগে ফিরে এলাম যাত্রা শুরুর জায়গায়, সাইকেল যারা ভাড়া দিচ্ছিল তাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম, ছবি তুললাম।
এরপর সেখান হতে সাঁঝবেলার কোদাইকানাল শহর দেখতে দেখতে ফিরে চললাম আমার হোটেলের দিকে। পথে দেখলাম বেশ কিছু ভাঁজাপোড়ার দোকানে মানুষের জটলা। সান্ধ্যকালীন নাস্তার জন্য ভিড় করেছে স্থানীয়রা। পরিচিত-অপরিচিত বেশ কিছু পদ দেখা গেল, ছিলো চায়ের দোকানও। ভাঁজাপোড়া না খেয়ে চা পাণ করে রাত সাতটার দিকে হোটেলে ফিরে এসে দেখি গেটের কাছেই বসে আছে হোটেলে ম্যানেজার কাম রিসেপশনের লোকটা। তাকে জানালাম নয়টার দিকে ডিনার করতে যাবো, সে জানালো আমি ডিনার করে আসার পরে সে হোটেলের মেইন গেটে তালা দিবে।
সাড়ে আটটার দিকে চলে গেলাম রাতের খাবার খেতে, রাতের মেন্যুতে বেঁছে নিলাম হায়দ্রাবাদি চিকেন বিরিয়ানি, সেই "আর রাহমান" রেস্টুরেন্টেই। খেতে তেমন আহামরি ছিলো না, ভারতের বেশীরভাগ এলাকাতেই বিরিয়ানির স্বাদ পুরাতন ঢাকার বিরিয়ানি খেয়ে অভ্যস্ত এই মুখে রুচে না। যাই হোক, রাত নটার আগেই ই রাতের খাবার শেষ করে হোটেলে ফিরে এসে ঘুমানোর জন্য বিছানাতে গা’এলিয়ে দিলাম। আগের দিন সারারাত বাস জার্নি করার কারণে খুব একটা ভালো ঘুম হয় নাই, তাই আজ ভালো একটা ঘুমের দরকার ছিলো। আগামীকাল সারাদিন সাইট সিয়িং প্যাকেজে বেশ কিছু টুরিস্ট স্পট ঘুরে রাতের বাসে রওনা দিবো উটির উদ্দেশ্যে। রাত দশটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়লাম ক্লান্ত এই বোকা পর্যটক।
আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ -TDTK (Tour D Tamilnadu & Karnataka)
পর্ব - ০৪
ভ্রমণকালঃ জুন-জুলাই, ২০১৭
এই সিরিজের সকল পোস্টঃ
* আবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণ - শুরুর গল্প
* চলে এলাম কোদাইকানাল
* কোদাইকানাল "ফরেস্ট ডে ট্রিপ"
* কোদাইকানাল শহর ভ্রমণ
এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
২৫ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সেলিম ভাই। সলো ট্রিপ হওয়ায় নিজের মতো করে ঘুরতে পেরেছি। ফলে অন্যান্য প্যাকেজ ট্যুরগুলোর চাইতে এই ট্রিপে অনেক বেশী সাধারণ মানুষ এবং তাদের জীবনাচারকে সামনে থেকে দেখতে এবং উপলব্ধি করতে পেরেছি।
২| ২৪ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১২
নতুন বলেছেন: চমতকার সব ছবি। অনেকটাই দেখা হয়ে গেলো আপনার সাথে...
কবে যাবো পাহাড়ে.... আহারে..
২৬ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৫২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ নতুন। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। আসলেই বহুদিন পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া হয় না। কবে যাবো পাহাড়ে... আহারে... আহারে...
৩| ২৪ শে জুন, ২০২৪ রাত ৮:৫১
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভ্রমন গল্পও ছবি বরাবরের মতোই ভাল লাগল। শুভ কামনা রইল।
২৬ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:২১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সুজন ভাই।
৪| ২৪ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:০৭
শেরজা তপন বলেছেন: সবমিলিয়ে চমৎকার। ব্লগে এত অনিয়মিত কেন?
২৬ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। আমার মনে হয় ব্লগে অনিয়মিত হওয়াটাই আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
৫| ২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১২:১৪
আরইউ বলেছেন:
বোকা,
অফলাইনে পড়েছি। চমৎকার লিখেছেন, বরাবরের মতই। কিছু ছবি অসাধারণ লেগেছে। সব মিলিয়ে এ++
ভালো থাকুন!
২৬ শে জুন, ২০২৪ রাত ৮:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আরইউ। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: জীবনযাত্রা থেমে গেলে মৃত্য তারে বলে
আপনার ভ্রমন কাহিনীতে শবযাত্রা আছে আছে ভাজা পুড়া খাবার দারুন সব ছবি ।
সুন্দর ।+