![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
সেদিন সবে মাত্র সপ্তাহখানেকের একটা লম্বা ভ্রমণ শেষ করে বাসায় ফিরে একটু আয়েশি বিশ্রামে কাটিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইকো ট্রাভেলার্স এর স্বত্তাধিকারী আবু বকুর সিদ্দিক ভাই এর ফোন পেলাম, "ভাই শ্রীমংগল যাবেন? রাশমেলা উৎসবের খুব রঙিন একটা আয়োজন হয় সেখানে"। কখন? জানতে চাইলে বললেন, আগামীকাল ভোর ছয়টায়, শাহবাগ থেকে আমাকে পিক করা হবে। ঘড়িতে রাত পৌনে বারোটা, হাতে পাঁচ ঘন্টা ঘুমানোর জন্য আছে। দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে ঘুমাতে গেলাম। সাত সকালে উঠে বের হলাম দেশের ভেতরে বছরের দ্বিতীয় ট্রিপে।
গত ছয়দিন, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঘুরে এলাম বান্দারবান-কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন দ্বীপ এ আবু বকর ভাই এবং কিছু ভ্রমণ সাথী এবং তার পরিবারের সাথেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ২০১৫-২০১৮ চার বছরে দেশের ভেতর ০৩/০৪ দিনের ট্রিপ দিয়েছিলাম মাত্র একটা! যেখানে ২০১৩ সালে ছোট বড় মিলে ২৫টা ট্রিপ ছিল!! দেশের ভেতর শেষ বড় ট্রিপ ২০১৬ সালের দিকে, শাহরিয়ার ভাই ওরফে রাজা মশাই আর আমার দেশের ভেতর সবচেয়ে বেশী ভ্রমণের সঙ্গী হাসিব এর সাথে "কুমীরা-সন্দীপ-হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপ-মনপুরা-ঢাকা সদরঘাট" ট্রিপটি (এই পোস্টে সেই ভ্রমণের সকল গল্পের লিংক সংযুক্ত আছে)। সেই অসম্ভব সুন্দর ট্রিপের পর দেশের ভেতর দুয়েকটা ডে লং ট্যুর ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন ট্যুরই দেই নাই! অথচ এই সময়ে ভারতের ১১টি প্রদেশের প্রায় ৫০টি শহরে ভ্রমণ করেছি... গুণিজনেরা আবার না দেশদ্রোহী বলে!
শাহবাগ পৌঁছে গেলাম সময়মতই, কিছু সময় পর আবু বকর ভাই চলে এলেন রিজার্ভ মাইক্রোবাস নিয়ে। এবারের ভ্রমণ দল খুবই ছোট, সর্ব সাকুল্যে আমরা সাতজন। রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় গাড়ী ছুটে চললো দ্রুতই ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ধরে। পথে নাস্তা সেরে নিয়ে আমরা বেলা বারোটার কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে গেলাম শ্রীমঙ্গল, প্রায় বছর চারেক পর এখানে আসা হলো। শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ রোডে "হোটেল শ্রীমঙ্গল ইন" এ আমাদের জন্য রুম বুক করাই ছিলো। সুন্দর পরিপাটি নতুন গড়ে ওঠা ভবনে ভালোই ছিলো হোটেলটি। ফ্রেশ হয়ে গল্প করে কিছুটা সময় কাটানোর পর দুপুরে লাঞ্চ শেষে দলনেতা সবাইকে কিছুটা ঘুমিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিলেন। ঘুমের সাথে চিরশত্রুতার এই বোকা মানুষ কিছুটা সময় বিছানায় গড়াগড়ি করে সময় কাটাতে না পেরে হোটেল হতে বাহির হয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলাম। বিকেলের চা নাস্তা শেষে আমরা সন্ধ্যার আগে আগেই পৌঁছে গেলাম মাধবপুর, কমলগঞ্জ এ। এখানকার শিববাজার জোড়ামন্ডপ এলাকার রাসমেলার আয়োজনই আমাদের আজকের মূল গন্তব্য।
আগে থেকেই বেশ লোক সমাগম ছিলো, সন্ধ্যার পরপর আরো বাড়তে লাগলো। মেলায় নানান পণ্য এবং খাবারের দোকান বসেছে। সেগুলো পেরিয়ে সামনে গিয়ে দেখা মিললো কিছু দূরত্বে তৈরী হওয়া জোড়া মন্ডপ। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের শিববাজারে জোড়ামণ্ডপে ১৮৫ বছর ধরে মণিপুরীদের রাস উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। এই রাসলীলা উৎসবের ইতিহাস খোঁজ করতে জানা গেল, ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মণিপুরের তৎকালীন মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতে মহারাস প্রথমবারের মতো এই লীলা উৎসব প্রবর্তন করেন। এরপর থেকে অগ্রহায়ণ পূর্ণিমা তিথিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাস লীলা পালিত হয়ে আসছে।
মণিপুরে রাসলীলা প্রবর্তনের একটি গল্প প্রচলিত আছে। মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র যখন কাঞ্চিপুর নামের এক অঞ্চলে বাস করতেন; তখন এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, শ্রীকৃষ্ণ নিকটবর্তী ভানুমুখ পাহাড়ে কাঁঠাল গাছ হয়ে রাজার জন্য অপেক্ষা করছেন। পরদিনই রাজা সেই পাহাড়ে গিয়ে কাঁঠাল গাছ খুঁজে পেলেন। গাছটি কেটে রাজধানীতে আনা হলো। রাজধানীর খ্যাতনামা শিল্পীকে রাজা তার স্বপ্নে দেখা কৃষ্ণমূর্তির অনুকরণে কাঠের মূর্তি গড়তে আদেশ দিলেন। এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষেই তিনি ওই বছর অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতে মহারাসলীলা উৎসব প্রবর্তন করেন। মেয়ে বিম্বাবতীও সেই রাসে অংশ নেন। তবে এই কাহিনির সঙ্গে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। রাজা ভাগ্যচন্দ্রই মহারাস, বসন্তরাস, কুঞ্জরাস ও ভঙ্গীপারেঙ প্রবর্তন করেন।
আমরা প্রায় রাত বারোটার পরে সেখান হতে রওনা ব্যাক করি হোটেলের দিকে। গভীর রাতে শ্রীমঙ্গল এর চা-বাগান আর লাউয়াছড়া বনের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে পূর্নিমার আলোয় সেই ফেরার যাত্রাটা আজও মনে গেঁথে আছে। এর মাঝে মেলা প্রাঙ্গনেই গড়ে ওঠা একটা খাবার হোটেলে আমরা রাতের খাবার সেরে নিয়েছিলাম। হোটেলে ফিরে ঘুমের পালা।
খুবই সংক্ষিপ্ত ট্যুরের শেষ ছিলো নাস্তা শেষে ঘন্টা খানেকের জন্য লাউয়াছড়া অভয়ারণ্যে ঘোরাঘুরি। লাউয়াছড়ায় যতবারই যাই, ভালোই লাগে। বিশেষ করে বনের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইন ধরে হাঁটতে ভালো লাগে। বেলা এগারোটার দিকে আমরা ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়ে বিকেলের মধ্যে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে যাই। আর হুট করে শুরু হওয়া এই ভ্রমণ এর সমাপ্তি। সত্যি বলতে গত রাতের হোটেলে ফেরার জার্নিটা আর সাথে মায়াবী হলদেটে রাসপূর্নিমার পূর্ণ চন্দ্রের শোভা এখনো হৃদয়ের মানসপটে জাগ্রত যেন।
সেই চন্দ্রের একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপঃ
ভ্রমণকালঃ নভেম্বর ২০১৮
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: ছবি গুলো দেখলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:০৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: রেললাইন ধরে যে হাঁটতেছে সে কে?
আমি গতবার চাঁন্দের গাড়ীতে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলাম । এত ভালো লেগেছিল। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে লাউয়াছড়ার কাছে গিয়ে ঘুরে এসেছি ভিতের যাওয়া হয়নি। আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন। প্রকৃতি অনেক সুন্দর আমাদের সিলেটে।
ভালো লাগল ভ্রমণ গল্প ও ছবিগুলো