![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
সকালের প্রথম লগ্নে প্রাতঃরাশ শেষ করে ধূমায়িত এক কাপ চা হাতে নিয়ে জানালায় চোখ মেলতেই সফেদ দানার অবিরাম বৃষ্টিধারার আঘাতে অষ্টাদশী কিশোরীর ন্যায় সবুজ চা-গাছের কচি পাতাগুলোর মুহুর্মুহু কেঁপে কেঁপে ওঠা। সবুজের সাথে চক্ষুযুগলের সাক্ষাতের মাঝে বৃষ্টির পর্দার বাঁধার দেয়াল—মগ্ন হয়ে চেয়ে থাকা, হাতের চায়ের কাপের উষ্ণতাটুকু মিইয়ে যাওয়া পর্যন্ত। হুট করে বরফশীতল চায়ে চুমুক দিতেই সম্বিৎ ফিরে পাওয়া। এর মাঝে কোন ফাঁকে সবুজের শাসনেরই কারণে কী না থেমে গেছে আকাশভেঙে ঝাঁপিয়ে নামা জলকণাদের দল। বৃষ্টি শেষে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে ধরা দিয়ে যাচ্ছে—ফিকে হয়ে যাওয়া ভুবনখ্যাত চায়ের মাদকতার গন্ধকে ম্লান করে দিয়ে।
চা-বাগানের বাংলো থেকে রুমের দরজায় তালা লাগিয়ে বারান্দায় রাখা দ্বিচক্রযান নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম চা-বাগানের বুক চিরে চলে যাওয়া মেঠো পথ ধরে। ভেজা মেঠোপথ অজানা মায়ায় আটকে দিতে চায় প্রতিটি প্যাডেলের বিচ্ছেদের পদক্ষেপকে। এর মাঝে মাথার উপর শরতের শুভ্রনীল আকাশের শামিয়ানার নিচে প্রশান্তির ঝিরিঝিরি হাওয়া গায়ে মেখে হারিয়ে যাই অজানা কোনো এক সুখের পরাবাস্তব জগতে। মাঝে মাঝে ভুল করে নেমে আসা দু-চারটা জলকণা আলতো মায়ায় ছুঁয়ে যায় শহুরে জীবনের জাতাকলে পিষ্ট হওয়া খসখসে, রুক্ষ, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ভেদ করে থাকা মানবচর্মে আবৃত মুখাবয়বকে…
এলার্মের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে দ্রুত বিছানা ছেড়ে শাওয়ারের তলায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতায় ছুটে চলার জন্য তৈরি করে নিতে হয়।
শেষ শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলাম ২০১৮ সালে, আবু বকর ভাইয়ের ইকো ট্রাভেলার্স এর সাথে। এর মাঝে প্রায় আট বছর হতে চললো। প্রতি বর্ষার শেষে ভাবি, শ্রীমঙ্গল বেড়াতে যাবো। কিন্তু সেই ভাবনাগুলো আরও হাজারো অপূর্ণ ভাবনার সাথে হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে। জীবন-জীবিকার খোঁজের নির্মম সত্য জীবনের বাঁকে হারায় মনের অনেক চাওয়া-পাওয়া। তার মধ্যে ইদানীং যুক্ত হয়েছে নতুন চাকরির প্রায় ছুটিহীন এক জীবন।
ইচ্ছে করে বৃহস্পতিবার অফিস শেষে রাতের স্লিপার ট্রেনে চেপে প্রভাতের প্রথম লগ্নে শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াই চিরহরিৎ চা-বাগানের বুক চিরে চলে যাওয়া সিঁথির মতো পথ জুড়ে। রোদের তেজ একটু বেশি হলে থেমে জিরিয়ে নেই কোনো শতবর্ষী বৃক্ষের তলায়। পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়াই চা-বাগানের কর্মীদের চা তোলার বেতের ঝাঁঝি বোঝাই সদ্য তোলা চা-পাতা নিয়ে পথচলার দিকে চোখ রেখে। মন চাইলে ভরদুপুরে হারিয়ে যাবো লাউয়াছড়ার বনের গহীনে। শেষ বিকেলে সিঁদুর মাখা রাঙা আকাশ পেছনে রেখে ফিরতি বাস বা ট্রেনে চেপে বসবো—ফের যান্ত্রিক জীবনের যন্ত্রণাময় যন্ত্রের জীবনে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ভ্রমণবন্ধু হাসিব শ্রীমঙ্গল ঘুরে এসে জানালো—ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতেই লেগে গেছে দশ-বারো ঘণ্টা। অফিসে নাই শুক্রবার ছাড়া কোন ছুটি। এদিকে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার মধ্য রাতের কোন ট্রেন নাই, যে ট্রেনে করে ভোরবেলা নেমে পড়বো শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনে। শীত শীত পরিবেশে স্টেশনের লাগোয়া কোন টং এর দোকানে চায়ে চুমুক দিয়ে ইতিউতি তাকাবো রিকশার খোঁজে। এরপর সারাদিন সবুজের মাঝে ঘুরে বেড়াবো আপন মনে। বেলাশেষে সন্ধ্যার ট্রেনে ঢাকা রওনা দিয়ে মধ্যরাতে বাসায় ফিরে দিবো ঘুম, পরের দিনের জন্য শরীরকে কিছুটা রিচার্জের সুযোগ দিতে....
তাই আপাতত জাবর কাটা, ঘুমের ঘোরে দেখা সেই স্বপ্নময় ভ্রমণের জগতেই। বারেবারে বর্ষা শেষে শ্রীমঙ্গল আমায় যে ডাকে বারংবার…
২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪
নীল-দর্পণ বলেছেন: ২০২১ সালে এসেছি সিলেট থেকে, এরপর থেকে শ্রীমঙ্ল, সিলেট বেড়াতে যাবো ভেবে ভেবেই শেষ সুযোগ আর হয়নি, পুরনো স্মৃতিই জাবর কেটে যাচ্ছি। আপনার পোস্ট শিরোনাম আর ছবি দেখে ভাবলাম যাই অন্যের ঘুরাঘুরি দেখে নিজের জ্বালা আর একটু বাড়াই। ওমা এসে দেখি আপনিও আমার মতই জ্বলছেন! খুব ভালো লাগছে সত্যিই ।
"…মাথার উপর শরতের শুভ্রনীল আকাশের সামিয়ানার নিচে প্রশান্তির ঝিরিঝিরি হাওয়া গায়ে মেখে হারিয়ে যাই অজানা কোন এক সুখের পরাবাস্ত জগতে।" কয়েকবার পড়লাম লাইনটা, অনুভূতির কী দারুন প্রকাশ। মন ছুঁয়ে গেল। মনে হল আমিই হারিয়ে গেছিলাম।
৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৫
বিজন রয় বলেছেন: কিছুদিন পর শ্রীমঙ্গল যাবো। তবে বেড়াতে নয়। কাজে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।