নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পকেটভর্তি গল্প নিয়ে বোবার মত ঘুরি, শুনবেন কেউ?

হাসান ইজ ব্যাক

পকেটভর্তি গল্প নিয়ে বোবার মত ঘুরি!

হাসান ইজ ব্যাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায় কী সুখ!...

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:০৯

খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে হতচকিত হই-

এই তো আম্মু বুঝি আমায় ডেকে ডেকে হয়রান। গরম পানি তৈরী। হাত-মুখ ধুয়ে গরম পরোটা আর খাঁটি দুধের চা। এত্ত ভোর এখনো- কখন জাগলো মা? তার ঘুম ভাঙ্গাতে এলার্ম ক্লক তো ছিল না কোন-কালে। নাকি ঘুমোয়নি এতটুকু!! আজকের মায়েদেরও কী ঘুম ভাঙ্গে এমনই- জানতে ইচ্ছে করে।



কি শীত কি গরম- একই রকম দিনগুলো। নাস্তা করে দৌড়ো মক্তবে, লাইন করে বসে আমপারা-সূরা-মোনাজাত-দোয়া- নামাজ শিক্ষা। আরো কত কি! ঠিক এখনো কানে বাজে সুর করে পড়া সূরাগুলো। নাহ্‌ আজো নামাজে দাড়ালে সেই সুরই বাজে- একটুও নড়চড় হয়নি। আচ্ছা, আজকের প্রজন্ম কোথায় শিখে সূরা, কোথায় শিখে নামাজ পড়ার নিয়ম? নিশ্চয় তাদের ঘরে ঘরে মৌলানারা এসে পড়িয়ে যায়; কিংবা ইন্টারনেটেই পাওয়া যায় "সহজ নামাজ শিক্ষা"! খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে তাদের দৌড়োতে হয়না মক্তবে! সময় সহজ করে দিয়েছে হয়তো তাদের জীবন।



সহজ হয়েছে আরো কত কি? আর আমরা! মক্তব থেকে এসে পড়তে বসো। সকালের পড়া নাকি মনে থাকে খুব- বাবার কথা। পড়া শেষে কাধেঁ ব্যাগ গুছিয়ে ইস্কুল- লাইন ধরে পিটি- "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি"- কানে বাজে আজো। পড়া না শিখলে মাস্টারের বেতের বাড়িটা বড় জঘন্য ছিল। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বিকেলে মাঠে ফুটবল- ততটা জনপ্রিয় হয়নি তখনো ক্রিকেট। মাঠও ছিল পাড়ায় পাড়ায়- মহল্লায় মহল্লায়। প্রতি সপ্তাহে ফুটবল ম্যাচ। জয়ী দলের জন্য কাঁচের গ্লাস- আহা- কী সুখ! মাঝে মাঝে মারামারি- হাত-পা ছিঁড়ে ঘরে ফেরা- মায়ের বকুনি। অল্পবিস্তর উত্তম-মধ্যম- অতঃপর সেবা-যত্ন- পট্টি বেঁধে দেওয়া।

এখনো ছেলেরা খেলে সেই মাঠে- জানতে ইচ্ছে করে খুব। এখনো পাড়ায়-পাড়ায় ম্যাচ হয়, গ্লাসের বিনিময়ে?



শীতকালটা বড়ই মজার ছিল- কেবল হতচ্ছাড়া সাত-সকালের মক্তবটা বাদে। গরম গরম ভাপা পিঠা-খেজুরের রস- আরো কত কী! এখনো কী পাওয়া যায় তেমন খেজুরের রস, ভাপা পিঠা? নাকি হারিয়ে গেছে ফুচকা-চটপটির আর বার্গারের ভিড়ে?



একটু বড় হতে না হতেই কত রঙ্গীন দুনিয়া। বইয়ের পাতায় পাতায় হাঁটে মাসুদ রানা- রবিন হুড- আরো কত নায়ক! বইয়ে চড়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ--আম্রিকা। কতদূরের দেশ! না জানি কেমন স্বপ্নময়-গল্পময়! কেমন মানুষগুলো? আমাদের মতই- নাকি অন্য কোন ভাষার-জগতের, অন্য কোন মানবীয় মননের?জানতে ইচ্ছে করতো! রাতে শুয়ে শুয়ে দিনে পড়া গল্পগুলোর কাহিনী-ছেদন-গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। আজো কী বই পড়ে শিহরিত হয় ছেলেমেয়েরা, স্বপ্ন বুনে আমাদের মত? নাকি ল্যাপটপ কেড়ে নিয়েছে ওদের সব স্বপ্ন?

হায় কত অভাগা ওরা- কতটুকু বঞ্চিত!



ওদের আজ সবই আছে। কত সহজ আর আধুনিক ওদের জীবন। ফুটবল মাঠ এখন ঘরে ঘরে- কম্পিউটার জুড়ে। মক্তব-লাইব্রেরী সবই চারকোনা বাক্সে প্যাকেটবন্দি। তামাম দুনিয়া আজ অজানা নয়। রবিনহুডদের জায়গা দখল করে নিয়েছে সুপারম্যানরা। সবই আছে- সবই। ওদের মুখে তবু হাসি দেখি না- আমাদের সময়কার মত। ওদের বুকফাটা কান্না দেখি না- স্বপ্ন দেখি না- অভিমান দেখি না। দুঃখ-কষ্টের মায়াজালে ওদের বন্দি হতে দেখি না। হায়, কত হতভাগা ওরা, কতটুকু বঞ্চিত! মোবাইল ছিল না আমাদের - ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারিনি বন্ধুর সাথে। তবে বন্ধুত্ব ছিল অফুরান। মোবাইল ছাড়াও প্রতিদিন ঠিকই দেখা হতো। আমাদের বন্ধুত্বে প্রান ছিল -স্পর্শ ছিল। আমরা যেন অনেক বেশি মানবীয় ছিলাম।



সবচেয়ে খুশির ছিল ঈদ। ঈদ এলেই নতুন জামা-জুতা। নতুন আবদার- রিবোক ক্যাডস কিংবা হালফ্যাসনের নতুন জিন্স! আর না পেলে কান্নাকাটি- অভিমান; ভাত না খাওয়া। সংসার যন্ত্রনার দুঃখ লুকিয়ে বাবার সারপ্রাইজ- মাঝরাতে নতুন প্যাকেট খোলা। নতুন জামা-জুতা পরে সারা রাত বসে থাকা। আহা - কী সুখ! এখনো ঈদ হয়- হয়তো ঠিক আগের মতই। এখনো সকালে ঈদগাহে জামাত হয়। ঈদের আগের রাতে বাবারা কী এমন সারপ্রাইজ দেয় - জানতে ইচ্ছে করে খুব।



সংসার সাগরের সেই সুখ-দুঃখের ভেলায় ভাসতে ইচ্ছে করে আবার। কান্না-হাসি, অভিমান- ভালোবাসায় ভরপুর পুরনো ঠিকানায় ফিরতে পারতাম যদি! চোখের কোণ আর্দ্র করে দেওয়া স্মৃতির পাতা হাতড়াই, ঘুম-ঘুম চোখে তাকিয়ে রই বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া অতীত পানে।

হায়, কী সুখ!

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩০

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: আগের দিন গুলো কতই না মজার ছিল.....

ঘরে টেলিভিশন ছিল না, পাশের গ্রামে গিয়ে সিন্দাবাদ, আলিফ লায়লা দেখার জন্য বিকাল থেকেই বাড়ীর উঠানে ভীর করে বসে থাকতাম.... সে আলিফ লায়লা দেখে যে আনন্দ পেতাম এখন পুরো সিরিজটি ডাউনলোড করেও এক সাথে দেখতে সময় হয় না, সময় হলে ইচ্ছে করে না.....

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৫

হাসান ইজ ব্যাক বলেছেন: সত্যিই, একদম মিলে গেছে। অনেক ব্যস্ত আমরা এখন। কিন্তু কিসের পানে? কিসের মায়ায়? প্রশ্ন নিজেকে।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩

কক্ষ পথের শেষ ইলেকট্রন বলেছেন: আপনার লিখা সব কিছুই আমার সাথেই মিলে গেল,

এই সকাল বেলায় মনটা খারাপ করে দিয়ে নস্তালজিক করে দিলেন।

সাথে বোনাস হিসেবে কান্না টাও দিলেন।

লিখা টা বেশ ভালো লাগছে।
আমাদের শৈশব টাই বেস্ট ছিল। ক্ষুদ্রের মাজেও আমরা অনেক সুখী ছিলাম।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭

হাসান ইজ ব্যাক বলেছেন: সকাল বেলায় আপনার মন খারাপ করার জন্য দু:খিত।
আসলে আমিও কাদঁলাম তো। তাই ভাবলাম আরো কাউকে কাঁদিয়ে দিই। একা হাসতে ভালো লাগে, একা কাঁদতে ভালো লাগে না।
তবে, লিখাটা আপনার ভালো লেগেছে শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল। এবার মন খুলে হাসুন প্লিজ।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪

কক্ষ পথের শেষ ইলেকট্রন বলেছেন: ঘরে টেলিভিশন ছিল না, পাশের গ্রামে গিয়ে সিন্দাবাদ, আলিফ লায়লা দেখার জন্য বিকাল থেকেই বাড়ীর উঠানে ভীর করে বসে থাকতাম.... সে আলিফ লায়লা দেখে যে আনন্দ পেতাম এখন পুরো সিরিজটি ডাউনলোড করেও এক সাথে দেখতে সময় হয় না, সময় হলে ইচ্ছে করে না.....

৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) :) :)

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭

হাসান ইজ ব্যাক বলেছেন: ;)

৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২৪

স্বপ্ন নীল বলেছেন: এর আনেক কিছু আমি ও করেছি /
এখন আর এগুলো নেই.....................................

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮

হাসান ইজ ব্যাক বলেছেন: সবাই আমরা আসলে একই জগতের মানুষ।
পিছু ফিরে ভাবতে ভালোবাসি।
এগুলো আর নেই বলেই হয়তো এগুলো এত সুন্দর।

৬| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯

বাতায়ন এ আমরা কজন বলেছেন: আমাদের সময় শিশুকাল ছিল, বাল্যকাল ছিল, কৈশোর ছিল ..... তারপর ধীরে ধীরে আমরা বড় হয়ে উঠতাম।এখনকার বাচ্চাদের এসব কিছুই নাই।

বাবা মারা এখন খুব অল্প সময়ে তাদের বাচ্চাদের বড় করে ফেলে,
যখন একটা শিশু কিছুই বুঝতে শেখেনা, তার আগেই তার ঘাড়ে চেপে বসে স্কুলের অগুন্তি বইয়ের বোঝা। যখন সে জানে শিক্ষা কী, তার বহু আগে থেকেই তার চারপাশ থেকে সে শিখতে শুরু করে, জীবনে এই হতে হবে, ঐ হতে হবে। তাদের নিজেদের জন্য তাদের কোন সময়ই থাকেনা।
অবশেষে বেশিরভাগই কিছুই হয়না। আমরা আমাদের শিশুদের বড় বেশি যান্ত্রিক বানিয়ে ফেলছি দিনে দিনে। একটা বিষয় কখনই আমার মাথায় ঢোকেনা যে, জীবনের জন্য শিক্ষা, নাকি শিক্ষার জন্য জীবন?

এতটা বয়স হবার পরও এখনও অনেক অনেক মিস করি শৈশবের সেই ক্ষণ গুলোকে।

আপনার লেখা পড়ে, বহুদিন পর কিছু সময়ের জন্য হলেও হারিয়ে গেলাম হারানো শৈশবে। ধন্যবাদ আপনাকে।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:৩৫

হাসান ইজ ব্যাক বলেছেন: খুবই ভালো বলেছেন। আপনার চিন্তাগুলোই মনে হচ্ছে আমার ভাবনার সাথে মিলেছে খুব। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.