![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভুললে চলবে না, আমাদের সবার একটা নিজস্ব পরিচয় আছে। ব্যক্তিগত জীবন আছে। যে জীবনে আমরা সবাই সুখী হতে চাই। যে জীবনে আনন্দ আছে, বেদনা আছে, বন্ধুত্ব আছে, ভালোবাসা আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমাদের নিজস্ব মতামত, পছন্দ- অপছন্দ আছে।
কিন্তু যখন নিজস্ব সত্ত্বাটাকে ধর্ম-রাজনীতি বা অন্য কোন বাহ্যিক শক্তির সাথে গুলিয়ে ফেলি, আমার আমি'টা তখন বিলীন হয়ে যায়। আর তখন সমস্যা হয়ে দাড়াঁয় এই যে, মানুষকে আমরা একজন বন্ধু, একজন নাগরিক বা একজন সামাজিক জীব হিসেবে ভাবতে চাই না। তাদের পরিচয় হয়ে দাড়াঁয় তাদের ধর্ম বা রাজনৈতিক বিশ্বাস। বিভেদ-বিভেজনের হাজারো লেয়ার সৃষ্টি হয়। দুটো মানুষকে আলাদা করতে একহাজারটা নির্ণায়ক নিরুপন করা খুবই সহজ হয়ে যায়।
ফলস্বরুপ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা কিংবা সামাজিক-অর্থনৈতিক যেকোন দুর্যোগে সংকট নিরসনে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা ব্যর্থ হয়। কোন না কোন ভাবে মানুষের সেই বাহ্যিক দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিচয়টা তার নাগরিক পরিচয়টাকে গ্রাস করে ফেলে। আমাদের মত সমস্যাসংকুল জনপদে তার ভয়াবহ পরিনতি বেশি চোখে পড়ে। দেখা গেছে বছরের পর বছর পাশের বাড়ি বা গ্রামে একসাথে-একপাতে থাকা-খাওয়া; কিন্তু অস্থির সময়ে প্রতিবেশী থেকে তারা হয়ে গেল ধর্মীয় সংখ্যালঘু। মনুষ্যত্ব মার খেল বাহ্যিক রংয়ের কাছে। তবে হ্যাঁ, বাহ্যিক রংটা কেবল বাহ্যিক নয়, এর সাথে মানবাত্নার মহামিলন রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই রংটুকু কেন ইউনিভার্সাল বন্ধন আর বিশ্বাসকে ছাপিয়ে যাবে? সেখানে মানবিক মনন তো এই রংটুকুর সাথে ততটুকুই রিঅ্যাক্ট করার কথা, যতটুকু সামাজিক সহনশীলতাকে নষ্ট করবে না। মহাত্না গান্ধী এই সর্ম্পকটাকে বর্ণনা করেছেন এভাবে, "I claim that human mind or human society is not divided into watertight compartments called social, political and religious. All act and react upon one another." আমাদের সমাজে এই ইম্ব্যালান্স এতটাই প্রকট হয়ে গেছে, যুক্তি বা শান্তির পথে এখন তাই কোন সমাধান আসে না, শক্তির ব্যবহার অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাবটা বেশি পীড়াদায়ক। ভাবুন তো, বন্ধুরা কেবল বন্ধু নয়, যখন আঃলীগ- বিএনপি, হিন্দু-মুসলিম; শিক্ষকরা লাল-নীল, ডান-বাম; নতুন প্রজন্ম আস্তিক-নাস্তিক হয়ে গেছে- কেমন হবে এর কনসিকোয়েন্সটা? অনেকে আবার এই রংটাকেই ভালোবেসে ফেলছে। চট করে কাউকে মেপে ফেলা যাচ্ছে, অবজ্ঞা করা যাচ্ছে। ভিন্নমতকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রদ্ধাবোধ বিষয়টাই হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে।
বিপরীত ধারাও সমান ভয়ংকর। লুকিয়ে ফেলার প্রবনতা বাড়ছে নির্বিরোধীদের মাঝে। মেধাবীরা লাজুক হয়ে যাচ্ছে। ওরা আইডেন্টিটি হাইড করলে সেফ মনে করছে। মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার অভাব দেখে শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে চুপসে যাওয়ার প্রবনতা বাড়ছে। বলতে চাইলেও বলে না, মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটে। সভ্যতার স্বর্ণশিখরে এসে মানুষ নিজের বিবেকের কাছে লজ্জিত হয়। এই ধারাটা হয়তো খুব আস্তে ঘটছে, কিন্তু ফলাফল হবে ভয়াবহ। ক্রমেই যেন আমরা এক বিড়াল জাতির অস্তিত্ব টের পাচ্ছি- যারা চলে নিঃশব্দে, বলে নিঃশব্দে, বিবেকের ফিসফিসানি শুনে ভয় পায়। ওরা ভাবতে শিখছে, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার মানুষের অভাব নেই সমাজে; আমি বলার কে?
এই ধারার সূচনা যেমন নিঃশব্দে হয়েছে, ব্যপ্তিও ঘটছে নিঃশব্দে, দীর্ঘকাল ধরে। কোন সরকার বা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। মানুষের জীবনের ছোট ছোট বদঅভ্যাসগুলো যেমন সামষ্টিক ব্যক্তিত্বকে নোংরা করে তোলে- তেমনি সামাজিক নানা ছোট ছোট অনাচারের সম্মিলিত ফল এটা।
বিবেকের এই ক্যান্সার অনেকের চোখে পড়ছে, অনেকের পড়ছে না বা অনেকেই এটাকে অবজ্ঞা করছে। তাই সময় ফুরোলে কেবল দীর্ঘঃশ্বাসের অপেক্ষা। এখনই সচেতন না হলে আগামীর নতুনদের কাছে ধিক্কারই পাওনা থাকবে। এক বিড়াল জাতির উত্তরাধিকার হিসেবে একটা সুস্থ সমাজে বাস করার স্বপ্ন- স্বপ্নই রয়ে যাবে ওদের জন্য।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯
হাসান ইজ ব্যাক বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৫
উদাস কিশোর বলেছেন: চমত্কার লিখেছেন
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:০০
হাসান ইজ ব্যাক বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:১৭
সীমাহীন ভালবাসা বলেছেন: ভালো লিখেছেন