নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোয় আলোকিত

হ্যাজাক

বিশাল এই জগতটাতে আমি নগন্য । খুজি ফিরি সুন্দর একটি মানুষ, কিছু মানুষ............

হ্যাজাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দু' ফোটা অশ্রুর বিদায়

২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৩৩



১.

সকালের সূর্যটা আজ ভিন্ন একটি আমেজ নিয়েই উদিত হয়েছিলো বলে রাফির ধারনা, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো রাহীর ফোন আসবে কেন?

কি খবর, কেমন আছো?

তোমার ফোন পেয়ে ভালো না থাকা সম্ভব?

হুম, আজ বিকালে লঞ্চে ঢাকা আসছি।

তাই নাকি? এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। আগে ঢাকা এসে নামো তারপর বিশ্বাস করতে হবে।

আচ্ছা ঠিকাছে। বিশ্বাস করা লাগবে না । কাল ঠিকই দেখো।

ওকে। সদরঘাট গিয়ে দেখবো।



কয়েকদিন যাবতই রাহী ঢাকা আসবে বলছিলো। মেঝো মামী অসুস্থ, হসপিটালে ভর্তি করতে হবে। তার সেবা করার জন্য ছোট খালা আসবে। ছোট খালার সাথে আসবে রাফির কাজিন রাহী।



ছোট বেলা থেকেই খুব ভালো সম্পর্ক ওদের মাঝে। রাফি ঢাকায় চলে আসার পর বছরে দু এক বার বিভিন্ন বন্ধে বাড়ী গেলে ওদের সাথে দেখা হতো। চুপি চুপি মন দেয়া নেয়া চললেও প্রকাশ্যে কখনো কিছু বলা হয়নি ওদের। কিন্তু গত দুই বছরে ফোন, এসএমএস আর মাঝে মাঝে সাক্ষাৎ রাফি-রাহীর সম্পর্ক নতুন মাত্র পেয়েছে।কাজিনের সম্পর্ক ছাড়িয়ে আরো অন্তরঙ্গ রূপ লাভ করেছে তা।চুপি চুপি ভালবাসা ডালপালা গজাতে শুরু করেছে।হঠাৎ করেই ভালবাসার মানুষটিকে এতো কাছে পাবে রাফি কল্পনাও করতে পারেনি।

মামার অফিসিয়াল ব্যস্ততায় মাঝে মাঝেই মামার বাসায় সময় দিতে হয় রাফিকে। মামীর সেবাও কিছুটা সময় যায় তার।অসুস্থ মামীর সেবার পাশাপাশি রাহীকেও পাওয়া যাবে আরো কাছাকাছি।তাইতো মনের ভাবটা বাহিরে প্রকাশ না করলেও ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড পুলকিত রাফি।



২.

সাত সকাল রাহীকে আনতে মামার সাথে সদরঘাট যেতে হবে।সকালে রাহীর সাথে দেখা হলে কি অনুভুতি তৈরী হবে, কি বলবে ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে রাতটা পার হযে গেলো রাফির। ছোট খালা আর রাহী লঞ্চে উঠার পর থেকেই ওর যোগাযোগ রয়েছে।রাতে লঞ্চের খোঁজ খবরও নেয় কয়েকবার। লঞ্চ ভেড়ার সাথে সাথেই রাফিকে ফোন দেয় রাহী।ভোড়ের আলো ফোটার আগেই মটর সাইকেলটি নিয়ে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো রাফি আর ওর মামা।মামা সহ রাহী চলে গেলো সদরঘাট, তারা না যাওয়া পর্যন্ত লঞ্চ থেকে নামলো না রাহী আর ছোট খালা।



সকালের মিষ্টি রোদে লঞ্চের কেবিনের সামনে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো রাহীকে।ভ্রমনের ক্লান্তি ছুঁতে পারেনি তাকে। ব্যাগ গুছিয়ে রাফিদের অপেক্ষা করছিলো ওরা। আবেগে আপ্লুত রাফি চাপা উত্তেজনায় কুশল বিনিময় ছাড়া তেমন কিছু বলতে পারলো না রাহীকে। লঞ্চ থেকে একসাথে নেমে মামা, খালা আর রাহীকে একটি সিএনজিতে তুলে দিয়ে বাইকে চড়ে মামার বাসায় পৌছলো রাফি।

সকালে প্রথম সাক্ষাতে দুজনেই কিছুটা অপ্রস্তুত থাকলেও এখন দুজনেই বেশ ফ্রি। মামার বাসায় বসে চা নাস্তার পাশাপাশি চলছে তুমুল আড্ডা। পাশের রুমে ছোট খালা রেষ্ট নিচ্ছেন আর এদিকে ওরা জমিয়ে রাখা অসংখ্য কথার ঝুড়ি খুলে দিয়েছে।



৩.

মেঝো মামি অসুস্থ, বেশ কয়েকদিন হলো হসপিটালে ভর্তি। রাহী আর ছোট খালাকেও তার সাথে হসপিটালে থাকতে হয়। মামার অফিস, মামাতো ভাইবোন দুটোকে স্কুলে দেয়া, নেয়াতে করতে আর সময় পান না। বিকাল সময়টাতে আসেন হসপিটালে। রাফিকেই সময় দিতে হয় টুকটাক কাজে। অন্যান্য ব্যস্ততা কমিয়ে হসপিটালে যাওয়াটা নিয়মিত করছে সে। কারণ আর বেশী কিছু না, রাহী। যতক্ষন একসাথে থাকে ততক্ষন চলে প্রাণখুলে আড্ডা কিন্তু ফিরে আসার সময়ই মন টা খারাপ হয়ে যায় রাফির। ফেরার সময় প্রতিদিন রাহী লিফটের দরজা পর্যন্ত পৌছে দেয় রাফিকে।



কেটে গেলো কয়েকদিন।রোগী না হয়েও হাসপাতালেই কাটাচ্ছে হচ্ছে রাহীকে। কিছুটা একঘেয়েমী আসলেও রাফির উপস্থিতি একঘেয়েমী থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রান দেয় তাকে। মাঝে ছোট খালা তার এক আত্মীয়ের বাসায় ঘুরে এসেছেন, ইচ্ছে থাকলেও কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনি রাহী।



সেদিন তখনো হসপিটালে যায়নি রাফি, বিকালে রাহীর ফোন। হসপিটালে বোরিং লাগছে । কিছুক্ষন এলোমেলো ঘুরাঘুরি করে মনটা ফ্রেস করবে, কাছাকাছি মার্কেট থাকলে টুকটাক কেনাকাটা করবে। শুনেই কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করছিলো রাফি ........... ভিড়ের মাঝে রাহীর হাত আঁকড়ে ধরে রাখবে রাফি, রাস্তার পাশে একসাথে বসে ফুসকায় কামড় বসাবে, এলোমেলো বাতাসে উড়তে থাকা রাহীর চুলগুলো ঢেকে নিবে জরিদার ওরনায়, পছন্দ মতো ছোট্ট কিন্তু সুন্দর একটি গিফট তুলে দিবে ওর হাতে......... ইত্যাদি কত কি......... কিন্তু কাজ শেষ করে রাফি যখন হসপিটালে পৌছলো ততক্ষনে দেরী হয়ে গেছে।কিন্তু এরি মাঝে মামা এসে ফরমান জারি করলেন, আজ যেতে হবে না, কাল নিউমার্কেট নিয়ে যাবো তোদের।......... মামার উপরে বেশ রাগ হলো রাফির, বেশ ভারাক্রান্ত মনে ফিরেছিলো সেদিন।



৪.

মামী এখন বেশ সুস্থ এদিকে বাড়ী ফেরার সময় হয়েছে রাহীদের।সেদিন ঘুরতে বেরুতে না পারায় কিছুই হলো না । বন্ধু রাশেদকে নিয়ে রাহীকে দেয়ার মতো কিছু খুজতে বেরুলো কিন্তু কি কিনবে?

অনেক খোঁজাখুজির পর এ সেট চুড়ি আর এক সেট কানের দুল কিনে ফিরে এলো ওরা। কিন্তু রাহীকে এগুলো কিভাবে দিবে......... ওকি এগুলো পছন্দ করবে........... ইত্যাদি ভাবনায় পেয়ে বসলো রাফিকে।



কাল রাহী চলে যাবে বাড়ীতে, হসপিটাল থেকে উদাস মনে বাসায় ফিরলো রাফি। রাতে ফেসবুকে বসে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো রাফি। রাফিকে নিয়ে রাহীর বন্ধুদের কয়েকটি মন্তব্যে রাফি নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।রাহীকে কিছু না বলে কষ্টটুকু বুকের মাঝে বিধে নিলে ভারাক্রান্ত হৃদয়টা আরো ভারক্রান্ত হয়ে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলো, রাহী চলে যাক কিন্তু রাফি এগিয়ে দিতে যাবে না, দেখাও করবে না।তাই কোন ফোনও দিলো না রাহীকে।



৫.

আজ রাহী চলে যাবে। দুপুর বেলা মামার ফোনে সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো রাফিকে। তাকেই পৌছে দিতে হবে সদরঘাট পর্যন্ত হসপিটালে গেলেও ইচ্ছে করেই খুব একটা কথা বললো না রাহীর সাথে। সিএনজিতেও কথা নাই, লঞ্চে উঠেও চুপচাপ রাফি।

লঞ্চ ছাড়তে এখন বেশ কিছুটা সময় বাকী।লঞ্চের কোরিডোরে একাকি দাড়িয়ে পানির দিতে তাকিয়ে আছে রাফি। হঠাৎ রাহীর উপস্থিতি।



কি হয়েছে তোমার?

তেমন কিছু না , বলে এড়ানো চেষ্টা করলো।



কেবিন থেকে ছোট খালা বেড়িয়ে এসে নিচে নামার তাগাদা দিলে আর বলা হলো না, কেন রাফির মন খারাপ?

সদরঘাটের হাজার মানুষের ভিড়ে ছোট খালা, রাহী আর রাফি এগুনোর চেষ্টা করছে। খালা কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও রাহী রাফি থেকে আলাদা হলো না।আশে পাশের ধাক্কা সামলাতে মাঝে মাঝেই আকড়ে ধরছিলো রাফির ডান বাহু।রাফি নির্লিপ্ত, কিছু বললো না। ইচ্ছে থাকলেও ধরলো না রাহীর হাতটি ।



নিচে গিয়ে টুকটাক কেনা কাটা সেড়ে ফিরলো কেবিনে।এবার রাহী চেপে ধরলো রাফির হঠাৎ কি হলো জানার জন্য। প্রথম না বলত চাইলেও রাহীর চাপচাপিতে বলতে বাধ্য হলো। বন্ধুদের মন্তব্য আর রাহীর নিরবতাই কষ্ট দিয়েছে রাফিকে। চুপি চুপি ভালবাসতে গিয়ে এভাবে মাঝে মাঝেই কষ্ট পায় রাফি কিন্তু বুকে পাথর বেধে সহ্য করে।



নিশ্চুপ রাহী তেমন কিছু বললো না, শুধু ....... তুমি কষ্ট পেয়েছো এজন্য স্যরি। আর মুছলো কাজলে আকা চোখ দুটি।



রাহীর অশ্রু রাফির অভিমান ভুলিয়ে দিলো।ধুয়ে মুছে দিলো সকল কষ্ট।

বাকীটা সময় মান অভিমান ভুলে গল্প করে কাটিয়ে দিলো রাফি।



সময় হয়ে এলো লঞ্চ ছাড়ার। রাফি ছোট খালা আর রাহীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেমে এলো লঞ্চ থেকে।

হুইসেল বাজিয়ে ছেড়ে দিলো লঞ্চ।ধীরে ধীরে বিশাল লঞ্চটি দূরে সরে যাচ্ছে, মিলিয়ে যাচ্ছে আলো আধারির মাঝে।প্রায় শূন্য প্লাটফর্মের মাঝে একাকি দাড়িয়ে রাফি তাকিয়ে আছে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটির দিকে, যেটি এই মাত্র রাফির প্রিয় মানুষটিকে সড়িয়ে নিয়ে গেলো রাফির কাছ থেকে।বুকের পাজর মোচর দিয়ে উঠলো তার, তাকিয়ে থাকা চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দু' ফোঁটা অশ্রু।



মুঠোফোনটি বের করে করে মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখলো............ "আমায় একা ফেলে , তুমি চলে গেলে, ................উপহার দিলাম দু ফোটা অশ্রু"।



পাঠিয়ে দিলো.............. ০১৭............... নাম্বারে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৪৬

ফারজানা শিরিন বলেছেন: জীবন থেকে নেয়া ???

২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:০১

হ্যাজাক বলেছেন: প্রায় প্রতিটি গল্পই কারো না কারো জীবনের গল্প। সেরকমই............

২| ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৩:২৬

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: সুন্দর গল্প !

২৬ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৫৪

হ্যাজাক বলেছেন: গল্পরা সুন্দর হয়

৩| ২৭ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:০৫

ফারজানা শিরিন বলেছেন: হু ।

২৭ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২১

হ্যাজাক বলেছেন: শুধুই ........হু......... আর কিছু ?

৪| ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪

এক্সপেরিয়া বলেছেন: ভাল লাগল ....

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:১৫

হ্যাজাক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৭ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩৮

মামুন রশিদ বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে ।

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:১৫

হ্যাজাক বলেছেন: প্রীত হলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.