নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।

হিরক রাজা

হিরক রাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা আছি হীরক রাজার দেশে

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২৭

হীরক রাজা ছিলেন প্রজানিপীড়ক এক শাসক। তার অত্যাচারে প্রজারা অতিষ্ঠ, জর্জরিত ছিলেন। হীরক রাজার দেশে হীরকের খনি থাকলেও প্রজারা না খেয়ে মারা যেত। তিনি সব সম্পদ রাজকোষে জমা রাখতেন। যত আকাল-অভাবই হোক না কেন, খাজনা বকেয়া রাখতে পারতেন না প্রজারা।

যারা এসবের প্রতিবাদ করত, মগজ ধোলাইয়ের জন্য হীরক রাজা তাদের ‘যন্তরমন্তর’ ঘরে পাঠিয়ে দিতেন। বিজ্ঞানী সন্তোষ দত্ত (গবেষক গবুচন্দ্র জ্ঞানোতীর্থ জ্ঞানরত্ন জ্ঞানবুদ্ধি জ্ঞানোচুড়োমণি) উদ্ভাবিত সূত্র অনুসারে তাদের মগজ ধোলাই করা হতো।



হীরক রাজার মন্ত্রীরা ছিল ক্রীড়নক। হীরক রাজার একমাত্র শত্রু ছিলেন উদয়ন পণ্ডিত। তিনি একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি মূল্যবোধে বিশ্বাস করতেন। রাজা জোর করে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। উদয়ন পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।



হীরক রাজার হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে সঙ্গীত পরিবেশন করার আমন্ত্রণ পান গুপী গাইন ও বাঘা বাইন। রাজার ছেলে শুত্তি ও হাল্লার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন গুপী ও বাঘা। তারা এ অবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছিলেন। হীরক রাজার দরবারে আমন্ত্রণকে তারা কাজে লাগাতে চাইলেন। কিন্তু রাজার অত্যাচারী চরিত্র সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা ছিল না।

এরই মধ্যে উদয়নের সঙ্গে পরিচয় হয় গুপী ও বাঘার। উদয়ন হীরক রাজার নির্মম চরিত্র সম্পর্কে জানতেন। তারা দু’জন উদয়নকে বোঝাতে সক্ষম হলেন যে, তারা তাদের জাদুকরী সঙ্গীতের মূর্ছনাকে রাজার অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করলে বিপত্তারণ ঘটতে পারে।

তাদেরকে রাজদরবারে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয়া হয়। গুপী-বাঘা তাদের সুরের জাদুতে রাজাকে বোকা বানিয়ে তার ধনাগার লুণ্ঠন করেন। তাদের সুরের জাদুতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রাজার সম্পদের পাহারায় নিয়োজিত বাঘও। এসব সম্পদ রাজার রক্ষীদের দিয়ে দেয়া হয়।



অবশেষে উদয়ন ও তার শিষ্যদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের মগজ ধোলাইয়ের জন্য যন্তরমন্তরে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে সঙ্গীতের জাদুকে কাজে লাগিয়ে গুপী ও বাঘা যন্তরমন্তরে উপস্থিত হন। তারা গবেষককে ঘুষ দিয়ে তাদের পক্ষে নিয়ে নেন। গুপীর কণ্ঠে মুগ্ধ হন হীরক রাজা। শেষ পর্যন্ত রাজাকেই পাঠানো হয় মগজ ধোলাইয়ে।

ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিত্ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ নামক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রটি অনেকেই দেখেছেন। রূপকের আশ্রয় নিয়ে এই চলচ্চিত্রে কিছু ধ্রুব সত্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।



এর একটি বিশেষ দিক হচ্ছে মূল শিল্পীদের সব সংলাপ ছড়ার আকারে করা হয়েছে। তবে কেবল একটি চরিত্র ছড়ার ভাষায় কথা বলেনি। তিনি হলেন শিক্ষক। এ দ্বারা বোঝানো হয়েছে, হীরক রাজার দেশে একমাত্র শিক্ষক মুক্তচিন্তার অধিকারী, বাকি সবার চিন্তাই নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ।

ছবিতে ব্যবহৃত মগজ ধোলাইয়ের সূত্র হচ্ছে—বাকি রাখা খাজনা, মোটেই ভালো কাজ না; ভর পেট নাও খাই, রাজকর দেওনা চাই; যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান; অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ; লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে; জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই ইত্যাদি।

বাংলাদেশের গোটা জনগণও আজ এক হীরক রাজার খপ্পরে পড়ে নির্যাতনে নিষ্পেষিত হচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশ যেন এক হীরক রাজার দেশ। গত চার বছর ধরেই এখানে চলছে এই রাজার অত্যাচার, নির্যাতন, অপকর্ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতা। চার বছরের প্রয়োজন নেই। গত কয়েক দিনের ঘটনা তুলে ধরলেই এদেশের হীরক রাজা শেখ হাসিনা সরকারের স্বরূপ কী বোঝা যাবে।



ধরা যাক পদ্মা সেতুর কথা। এ প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য ১২০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা বাতিল করে দেয়ার পর আবার হাতে-পায়ে ধরে বিশ্বব্যাংককে ফেরানো হয়। বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য ছিল, সরকার যদি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে আবার তারা পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি বিবেচনা করবে। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা রাজি হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল বাংলাদেশে আসে। দুদক তদন্ত শুরু করে, কিন্তু তদন্তটি ছিল লোক দেখানো। দুদক নামক সংস্থাটি সরকারের ইশারার বাইরে এক কদমও চলতে পারে না। সরকারের অদৃশ্য সুতা লাগানো আছে দুদকের নাকে। এই অদৃশ্য সুতার টানেই চলে দুদক। ঠুঁটো জগন্নাথ এই সংস্থাটিকে বলা হলো, মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় নিক্সন চৌধুরীকে বাদ দিয়ে যা করার করতে হবে। তাই করল দুদক। মূল অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে ছাইপাশদের জড়াল দুর্নীতির সঙ্গে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে—পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাংক আবার বেঁকে বসেছে। ফের শিকেয় উঠেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। হীরক রাজার এই কাণ্ড সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ঠিকই বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিয়ে বিরোধী নেতাদের জেলে পুরছে আর রেহাই দেয়া হচ্ছে দুর্নীতিবাজ আবুলদের। আবুলদের ধরতে চান না। কারণ কান টানলে মাথা আসে।



একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে কারও আপত্তি নেই। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদেও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তখন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় ওই বিচারের নাম তারা মুখেও তোলেনি। জামায়াতে ইসলামী এবার বিএনপির সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটে রয়েছে। এবার হৈচৈ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলো। ভালো কথা। বিচার হোক কিন্তু বিচারের নামে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এমন কিছু কাজ করে বসে, যার কারণে পুরো বিচার ব্যবস্থাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যায়। বিচারকে পাশ কাটিয়ে যোগসাজশের মাধ্যমে যে একটি রায় দেয়ার আয়োজন চলছিল, তা প্রকাশ করে দেয় দৈনিক আমার দেশ। বিচারপতিকে এজন্য পদত্যাগ করতে হয়েছে। এ ধরনের একটি কেলেঙ্কারির জন্য উচিত ছিল সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে পত্রিকা কেন নেপথ্যের অনৈতিক কাজ ফাঁস করে দিল, সেটাকেই বড় ‘দোষ’ হিসেবে দেখছে সরকার। সততার সঙ্গে সত্য প্রকাশ করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এজন্য তার পুরস্কার পাওয়ার কথা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে উল্টো গ্রেফতারের পাঁয়তারা চলছে। তিনি বলেছেন, গ্রেফতারে তার আপত্তি নেই। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে, বিচার বিভাগকে বড় ধরনের অন্যায় থেকে বাঁচানোর জন্যই তিনি স্কাইপি কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছেন। বিচার বিভাগের ওপর সরকার যে নিয়ন্ত্রণ চালাচ্ছে, এর মাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়েছে। সেজন্য যদি তাকে গ্রেফতার করতে হয়, পত্রিকা অফিস থেকেই গ্রেফতার করতে হবে। আমার দেশ অফিসে আজ তিনি এক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। পত্রিকা অফিসের চারদিকে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। আমার দেশ অফিসে আসার অপরাধে দু’জন ব্রিটিশ নাগরিককে আটকও করা হয় কিছুক্ষণের জন্য। প্রথম আলোর একজন সাংবাদিকও পুলিশের হয়রানির শিকার হন।

৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি ছিল। এই অবরোধ কর্মসূচির দিন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা চাপাতি, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বিশ্বজিত্ দাস নামের একটি হিন্দু তরুণকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তা সবাই দেখেছে। টেলিভিশনের ফুটেজ ও পত্রিকার ছবি ছাত্রলীগের খুনিদের সবার সামনে তুলে ধরেছে। দেশের সব পত্রিকা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে এরা ছাত্রলীগের ক্যাডার, ছাত্রলীগের কর্মী। ওইসব ক্যাডারের আত্মীয়-স্বজনও বলেছেন তারা ছাত্রলীগ করে। কিন্তু সব পত্রিকা, সব টেলিভিশন এবং দেশের মানুষকে মিথ্যা বানিয়ে সরকার প্রচার করছে এরা নাকি ছাত্রলীগের কর্মী নয়, জামায়াত-শিবিরের সমর্থক। প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সংবাদ ব্রিফিং করে তার প্রেস সচিব বলেছেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী বিশ্বজিেক হত্যা করেনি। হত্যাকারীদের পরিবার বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো রীতিমত অভিনয় করে চলেছেন। যেন তিনি কিছুই জানেন না, কিছুই বোঝেন না। ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না। বিজয় দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘বিশ্বজিতের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ছেলেকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো।’ আহা! বিশ্বজিতের প্রতি কী মায়া? এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তারই সোনার ছেলেরা। আর তিনিই বিশ্বজিতের জন্য মায়াকান্না করছেন। হীরক রাজার পক্ষেই এটা সম্ভব।



রাজধানীর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম বিকাশকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কে? সে হত্যাসহ ১২ মামলার আসামি। এই সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেয়ায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেরই আশঙ্কা, বড় ধরনের খুন-খারাবি করানোর জন্যই বিকাশকে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু সেই আশঙ্কাকে আমলে না নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর শীর্ষ সন্ত্রাসীর পক্ষে সাফাই গেয়ে চলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিকাশকে ছাড়া হয়েছে আইন অনুযায়ী। আদালতের নির্দেশেই বিকাশ বের হয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।’ বড় ধরনের কোনো খুন-খারাবির পর হয়তো দেখা যাবে তিনি বলছেন—আইন অনুযায়ীই এই খুন হয়েছে!

দেশের বৃহত্ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে বন্দী এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে। তিনি নাকি অবরোধের দিন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাংচুর করেছেন। যে নম্বরযুক্ত গাড়িটি ভাংচুর হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, মামলা করানো হয়েছে অন্য একটি গাড়ির চালকের নামে। ওই চালক ছুটিতে ছিলেন। তার স্বাক্ষর জাল করে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে দেয়া স্বাক্ষর আর সিটি করপোরেশনের খাতায় করা স্বাক্ষরের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সাংবাদিকদের কাছে চালক আয়নাল নিজেই বলেছেন, তিনি ওই মামলা করেননি। বিশ্বজিতের খুনি ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ধরতে না পারলেও সঙ্গে সঙ্গে সরকার গ্রেফতার করেছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার তাকে ৩৭টি মামলার আসামিও করা হয়ে গেছে। বিরোধী দলের মহাসচিবের চেয়ে খুনিদের মর্যাদা যে কতটা উঁচুতে, সরকার তা দেখিয়ে দিয়েছে। একই ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকেও জড়ানো হয়েছে। যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তিনিও আজ এক সপ্তাহ ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।

দেশকে এক বড় কারাগারে পরিণত করেছে শেখ হাসিনা সরকার। যে কেউ হাইকোর্টে গেলে এটা উপলব্ধি করতে পারবেন। হাইকোর্টের বারান্দায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জামিনের জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন হাইকোর্টের শরণাপন্ন হচ্ছেন। একেকটি মামলায় কয়েকশ’ করে আসামি। ঢাকায় যে ১৮টি মামলা অতিসম্প্রতি হয়েছে, তার আসামি ২৫ হাজারের বেশি। ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে চালানো হচ্ছে হয়রানি-নির্যাতন।

গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ২০ জন নারী কর্মী ও জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। পুরুষ পুলিশরা অত্যন্ত অমানবিকভাবে এই নারী কর্মীদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। হাজতে একদিন রেখে তাদের কোর্টে তোলা হয়। এদের মধ্যে একজন ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা নারী। পুলিশ তাদের রিমান্ড চায়। কোর্ট ২০ জনকে দু’দিনের রিমান্ড দিয়েছে। তাদের অপরাধ (!) তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সদস্য এবং তাদের কাছে ইসলামী বই-পুস্তক পাওয়া গেছে। নারী নির্যাতনের এক বীভত্স উদাহরণ এই ঘটনা। এভাবে নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, গুম, গুপ্তহত্যা, সংবাদপত্র দলন, সাংবাদিক নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে সরকার। আবার অবলীলায় এসবের জন্য দোষ চাপাচ্ছে প্রতিপক্ষের ঘাড়ে। ১৭ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাািসনা বলেন, রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ, পোশাক কারখানায় আগুন দিয়ে মানুষ মারা, বিশ্বজিতের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ছেলেকে হত্যা—এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতেই করা হচ্ছে। এক যুদ্ধাপরাধের বিচারের নাম দিয়ে কত অঘটনই না ঘটিয়ে চলেছে সরকার নিজেই। হীরক রাজাদের চরিত্র আসলে এমনই।



এবারের বিজয় দিবসে এসএমএসের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী, শিবির, বিএনপি, যুদ্ধাপরাধী সবাই এই শুভেচ্ছা পেয়েছেন। কারণ সবগুলো মোবাইল ফোন কোম্পানির গ্রাহকদের বিটিআরসির মাধ্যমে এই শুভেচ্ছা দেয়া হয়। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, তারাও পেয়েছেন সেই শুভেচ্ছা। সত্যিই হীরক রাজার মশকরার কোনো তুলনা হয় না!



এদেশের মানুষ গত ১৮ ডিসেম্বর এক বিচিত্র হরতাল দেখেছে। সিপিবিসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলো এই হরতাল ডেকেছিল। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এই হরতালের মূল পিকেটার ছিল পুলিশ। আগের দিন সরকার নির্দেশ দিয়ে বিআরটিসির বাস বন্ধ করে দেয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাস-মিনিবাসও বন্ধ রাখা হয়। এ ধরনের হরতাল কোনোদিন দেখেনি মানুষ। হরতালে যে পুলিশ বাহিনী রণসাজে সেজে হরতালকারীদের দমন করে, সেই একই পুলিশ হরতাল সফল করতে কী প্রচেষ্টাই না চালিয়েছে। বদরুদ্দীন উমরের ভাষায় ‘সরকারের বেনামি হরতাল।’ হীরক রাজার দেশে আরও কত কিছু যে দেখতে হবে! কত অত্যাচার, কত স্বৈরাচারী আচরণ! তবে হয়তো সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন জনগণ জেগে উঠবে। সম্মিলিতভাবে বলে উঠবে—‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।’



লেখক : সৈয়দ আবদাল আহমদ- সাংবাদিক ও কলামিস্ট

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৪৫

রবি কিরণ বলেছেন: আপনার সাথে সহমত।

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:০৭

Crazy তৌফিক বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন....কবেযে মুক্তি পাব এদের থেকে আল্লাহই জানে!!আমার মতে প্রধাণ দুই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা উচিৎ! আমাদের মত সাধারন জনগনের জন্য কেউ রাজনীতি করেনা!! সব সালারাই নিজের জন্যই এসব করে....দেশের কথা কেউ ভাবেনা.........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.