নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী, আমি মুসলিম , আমি বাঙ্গালী,কিন্তু আমি বিদ্বেষী নই

বিদ্রহী পথিক

নিশাচর প্রানী

বিদ্রহী পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষকদের মূল দাবি কী?

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৪

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষক তার চালিকাশক্তি। শিক্ষকসমাজ এখন আন্দোলনে ব্যস্ত। খুব সঙ্গত প্রশ্ন শিক্ষকদের মনোযোগ কোন দিকে? আন্দোলনে নাকি নিজ নিজ পেশা সমৃদ্ধকরণে? শিক্ষকতা এমন একটি পেশা, যেখানে শিক্ষকদের নিজেদের ব্যস্ত থাকতে হয়, নিজ নিজ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে। অন্যথায় শিক্ষকতা পেশায় দক্ষতা অর্জন, যোগ্যতা অর্জন বা সাফল্য অর্জন কোনোটাই সম্ভব নয়। শিক্ষকসমাজ যতটুকু সময় আন্দোলনে ব্যয় করবে, ততটুকু সময় শিক্ষাগ্রহণ বা শিক্ষাদান প্রক্রিয়া থেকে ছাত্রসমাজ এবং শিক্ষকসমাজ বঞ্চিত হবে। প্রকারান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতি, ক্ষতিগ্রস্ত হবে সার্বিক শিক্ষা প্রক্রিয়া, যা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। সুতরাং শিক্ষকদের দাবিদাওয়া হতে হবে যৌক্তিক। যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব।
৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সালের জাতিসংঘের ২৬তম অধিবেশনে তৎকালীন মহাসচিব ৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন শিক্ষকতা পেশাকে যথাযথ মর্যাদাসহ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে। অবশ্য এর সূত্রপাত হয় আরও আগে, শিক্ষকসমাজের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার দৃঢ়প্রত্যয়ে ১৯৬৬ সালের অক্টোবরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত শিক্ষকের মর্যাদাবিষয়ক আন্তঃসরকার সম্মেলনে। ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক আয়োজিত এ সম্মেলনে শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসা এবং শিক্ষকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য বাস্তবসম্মত সুপারিশমালা প্রণীত হয়। এ সুপারিশমালায় শিক্ষকদের মৌলিক ও অব্যাহত প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া, পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তাসহ শিক্ষকদের দায়দায়িত্ব, নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, দাবিদাওয়া আদায়ে দেনদরবার করার কৌশলাদিও অন্তর্ভুক্ত হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ২১ বছর ধরে শিক্ষকদের প্রতি অব্যাহত সমর্থন এবং শিক্ষকসমাজ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের শিক্ষাচাহিদা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতি বছরই বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশেও শিক্ষক সংগঠনগুলো এ দিবস পালন করে আসছে ১৯৯৪ সাল থেকে। কিন্তু এবারকার আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবসের প্রেক্ষাপটটাই অন্যরকম আবহম-িত। কারণ আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস উদযাপনের কয়েক দিন আগ থেকেই শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই নন; আন্দোলনে আছেন বা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। তারা আগের বেতন কাঠামোর সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার কথা বলছেন। নতুন করে কোনো দাবি উত্থাপন করেননি।অষ্টম বেতন স্কেলে বেতন ও পদমর্যাদা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনের দাবিতে শিক্ষকরা ঈদের ছুটি শেষে আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঁচটি সংগঠনের ঐক্যজোট বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মোর্চা সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে রাখা, টাইম স্কেল বহালসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করছেন।জোটভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বৃহস্পতিবার অর্ধ ও শনিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। আর ১৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করছে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা, জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে। তারা এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি।দাবি পূরণ না হওয়ায় সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকদের চেয়ার কালো কাপড়ে ঢেকে পাশে কোনো চেয়ারে বসে কাজ করবেন প্রধান শিক্ষকরা। এছাড়া ৩ থেকে ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস পর্যন্ত তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপরও দাবি পূরণ না হলে ৬ অক্টোবর থেকে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। পৃথক বেতন কাঠামো ও অষ্টম স্কেলে সৃষ্ট গ্রেড সমস্যা নিরসনের দাবিতে আন্দোলন করছেন ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঈদের ছুটি শুরু হয়।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের পরিকল্পনা হলো ঈদের ছুটির পর প্রথমে দুইদিনের কর্মবিরতি, পরে তিনদিনের কর্মবিরতি এবং তারপর লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করা।সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা এবং শিক্ষকদের পদমর্যাদা উন্নীতকরণের দাবিতে সরকারি কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষকরা ১৩ ও ১৪ অক্টোবর ক্লাস বর্জন করবেন। ১৮ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (শিক্ষাভবন) সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।আপাতত এ হলো আমাদের শিক্ষকসমাজের আন্দোলন কর্মসূচি। বাস্তবতা হলো, অক্টোবর থেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। বাংলাদেশজুড়ে নভেম্বরে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা, প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়গুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোদ্দাকথা হলো, সব পর্যায়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বছরের প্রথম তিন মাস হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরের শেষ তিন মাসও কি শিক্ষার্থীরা এমন অস্থিরতার মধ্যে কাটাবে এটা কারও কাম্য হতে পারে?শিক্ষকসমাজের আন্দোলন কর্মসূচি পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, আন্দোলন শুধু বেতনভাতা ও পদমর্যাদা সংশ্লিষ্ট। বেতনভাতা ও পদমর্যাদার বাইরে এসে নিজেদের পেশাদারিত্বের উন্নয়ন, শিক্ষার মান উন্নয়ন, পাঠদান পদ্ধতির সংস্কার, ছাত্রছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষাগ্রহণে আরও আগ্রহী করে তোলা এসব নিয়ে আন্দোলন করতে তো শিক্ষকদের দেখা যায়নি রাজপথে একবারও।প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, এসএসসি এবং এইচএসসিতে ভূরি ভূরি ছাত্রছাত্রী সোনালি জিপিএ অর্জন করলেও শিক্ষার মান নিয়ে হরহামেশাই প্রশ্ন উঠছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় গিয়ে সোনালি জিপিএপ্রাপ্তরাই চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। এটা কেন? বারবার প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মান কমে যাচ্ছে, এটা কি শিক্ষকসমাজ অস্বীকার করতে পারবে? এ যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরতে পরতে শিক্ষার গুণগত মান কমে যাচ্ছে এটার দায় কার? এককভাবে কি শিক্ষার্থীসমাজের, অভিভাবকমহলের? শিক্ষকসমাজের কি কোনো দায় নেই? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান করেন শিক্ষকরা। অভিভাবকমহল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সঁপেছেন শিক্ষকমহলের তত্ত্বাবধানে। সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান অর্জন, মান বর্জন, মানসম্মত শিক্ষা অর্জন, মানহীন শিক্ষা অর্জন সবকিছুর দায় শিক্ষকদের ওপর বর্তায়। সুতরাং এটা দায় স্বীকার করে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আন্দোলনের ডাক শিক্ষকসমাজেরই দেয়া উচিত।শিক্ষকতা হচ্ছে এমন একটা পেশা, যা এ পেশার ধারক-বাহককে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়নে থাকার দাবি রাখে। আমাদের শিক্ষকমহল কি পেশার দাবিমতো নিজেদের অধ্যয়ন সম্পৃক্ত বা সংশ্লিষ্ট রাখেন? পেশাদারিত্বকে সমৃদ্ধ করার জন্য পেশার দাবি পূরণ করেন? পাঠক সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন গত বছর অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া বেসরকারি শিক্ষক ও হবু শিক্ষকদের পাস-ফেলের চিত্র থেকে। ২১ আগস্ট ২০১৪ দশম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে পাসের হার প্রায় ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ ফেল! পরীক্ষার্থী ছিলেন সাড়ে ৩ লাখের বেশি। এ পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএ'র।এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত, বাদবাকিরা হবু শিক্ষক। যদিও ২০০৫ সালের ২০ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়া নিবন্ধন আইন অনুযায়ী বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় এমপিও-ননএমপিও নির্বিশেষে সব শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। দৃশ্যত, শিক্ষক পদে চাকরির বাজারে নিবন্ধনধারী প্রার্থীর আকাল, সে বিবেচনায় নিবন্ধন সনদ ছাড়াই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে।চাকরিরত অনেকেই নিবন্ধন পরীক্ষা দেন। অনেকেই একাধিকবার পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারেননি। অথচ এ শিক্ষকরাও সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির প্রশ্নকর্তা, পরীক্ষার হলে পরিদর্শক, পরীক্ষক ইত্যাদি।বিগত কয়েক বছরের নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যে পাঠ্যবই পড়ে ১ হাজার ২০০ নম্বরের পাবলিক পরীক্ষায় বসে, শিক্ষকরাও প্রায় একই বই পড়ে ২০০ নম্বরের নিবন্ধন পরীক্ষায় বসেন। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের জন্য আলাদা পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের টানা চার ঘণ্টার পরীক্ষা দিতে হয়। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার মতোই নির্দিষ্ট সিলেবাস থাকে এবং এর মধ্যে থেকেই প্রশ্ন করা হয়। এসব খাতাও মূল্যায়ন করেন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাই।২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মোট ১১টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পাসের গড় হার ৩০ শতাংশের নিচে। অর্থাৎ ৭০ শতাংশ শিক্ষক তাদের জন্য নির্ধারিত পাবলিক পরীক্ষায় ফেল করেন। এ হলো কর্মরত শিক্ষক বা হবু শিক্ষকদের গড় পাসের হার, অর্জিত শিক্ষার মান। তাহলে ভেবে দেখুন, কীভাবে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হবে? শিক্ষার্থীরা কীসের ওপর ভর করে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করবে? দেশের প্রায় ৯৭ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। এখানেই শিক্ষকতা করছেন নিবন্ধন পাস ও ফেল উভয় ধরনের শিক্ষকরা।শিক্ষার উচ্চস্তরের কথা যদি বলি সেখানেও একই দশা। উচ্চশিক্ষা নিয়ে তিনটি নামকরা সংস্থার তিনটি প্রতিবেদনেই আমাদের উচ্চশিক্ষার জন্য দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) শিক্ষার মান, গবেষণাসহ বিভিন্ন মানদন্ডে ২০১৫ সালে এশিয়ার যে ১০০টি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে, তার কোথাও বাংলাদেশের নাম নেই। এ তালিকায় জাপান ও চীনের প্রাধান্য রয়েছে। সেইসঙ্গে ভারতের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ও জায়গা করে নিয়েছে।সাংহাইভিত্তিক একাডেমিক র্যাং কিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি (এআরডব্লিউইউ) ২০১৩ সালে বিশ্বের ৫০০টি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দিয়েছে, তাতেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। এটি এশিয়ার টিএইচই নামে পরিচিত। একই সময়ে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি নামে আরেকটি সংস্থা ৩০০ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মানক্রম করেছে, তাতে বাংলাদেশের একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই পেয়েছে। অথচ এ তালিকায় ভারতের ১১টি ও পাকিস্তানের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে চীনেরই আছে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়। পাঠক একবার ভেবে দেখুন উচ্চশিক্ষায় আমাদের অবস্থান কোথায়? একসময় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অঙ্ফোর্ড বলা হতো, তাও হারিয়ে গেল? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়া এগোচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কি তাহলে তাল মেলাতে পারছে না? বিষয়টি অন্যদের চেয়ে শিক্ষক সমাজেরই বেশি ভাবা দরকার। ভাবা দরকার শিক্ষার্থী সমাজকেও। কারণ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য মানসম্মত শিক্ষার্থী যেমন দরকার, তেমনি মানসম্মত শিক্ষকও দরকার। আমরা জানি, মানসম্মত শিক্ষার্থী তৈরিতে মানসম্মত শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।টেকসই উন্নয়ন বলেন আর শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ বলেন সবকিছুর মূলেই মানসম্পন্ন শিক্ষকের ভূমিকা অপরিহার্য। কীভাবে মানসম্মত শিক্ষক তৈরি করা যায় সেটাই এ মুহূর্তে জাতির সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের ভাবতে হবে কীভাবে ভালো শিক্ষক হওয়া যায় আর সমাজ বা রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে কীভাবে ভালো শিক্ষক তৈরি করা যায়। উলি্লখিত নিবন্ধন পরীক্ষার সূত্র ধরেই যদি বলি অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। আসুন অধ্যয়ন করুন, অনুশীলন করুন, নিজ নিজ পেশার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন, কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ- অধ্যয়নের সুযোগ দিন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিন, আমাদের শিক্ষকদের মানসম্মত হয়ে উঠতে সময় লাগবে না। অশিক্ষিত শিক্ষকের পক্ষে মানসম্মত শিক্ষাদান, পাঠদান সহজসাধ্য নয়। শিক্ষকদের অনুশীলন হতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। সেই সঠিক পদ্ধতিটাই হচ্ছে প্রশিক্ষণ। আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অপ্রতুলতা রয়েছে, তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যমান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা অসম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই ব্যবস্থাপনা হবে কি? আমাদের প্রত্যাশা, নিজ নিজ পেশাদারিত্বের উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষকসমাজের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের দাবি উত্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।শিক্ষকদের যোগ্যতা বৃদ্ধি, বেতন কাঠামোর ন্যায্য হিস্যা, চাকরির স্থায়িত্ব, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে দেশের যে কোনো সচেতন মানুষেরই সমর্থন রয়েছে। আমরাও এসব দাবিদাওয়ার প্রশ্নে শিক্ষকদের সঙ্গে একমত। শিক্ষক আন্দোলনের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত এ কারণে যে, এর সঙ্গে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন জড়িত। সুতরাং শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে বাধা কোথায়? এ বিষয়ে ইউনেস্কোর ঘোষণায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গ যাতে তাদের ভূমিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক অবস্থান ভোগ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার দায় সম্পর্কে সবাইকে অবগত হতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, শিক্ষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা, তাদের জীবনযাত্রা ও কর্মপরিবেশ, তাদের চাকরির শর্তাবলি ও জীবিকার উন্নয়ন, যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের বিদ্যমান অভাব পূরণই শিক্ষা পেশায় পরিপূর্ণ যোগ্যতাসম্পন্ন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে আকৃষ্ট করা ও ধরে রাখার সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। অবশ্য, বেতন স্কেল এবং পদমর্যাদা সঙ্কট সমাধানই শিক্ষকদের মূল দাবি হওয়া উচিত নয়। মূল দাবি হওয়া উচিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তা সংস্কারের দাবি। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার হলে শিক্ষকদের আর কোনো দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতে হবে না, সংস্কারের মাধ্যমেই শিক্ষকের প্রয়োজন, শিক্ষকের মর্যাদা পরিপূর্ণ হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখকঃ শাওয়াল খান, শিক্ষাবিদ ও অনুবাদক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


শিক্ষকদের মাঝে ৭০% অশিক্ষক, কুশিক্ষক, ভুয়া সার্টিফিকেটধারী; এই ৭০%কে বের করে নতুন শিক্ষক নেয়ার দরকার।

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

ব শিক্ষকদের মুল দাবী হওয়া উচিত, "সবার জন্য শিক্ষা'; সেটাই উনাদেরকে মান ও টাকা এনে দেবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.