নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হকিস্‌টিক হাসান

হকিস্‌টিক হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পোশাক মালিকের কখনো কোন শাস্তি হয়না......

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫

২৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন পোশাকশ্রমিক নিহত হন। এই কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেলোয়ার হোসেন গত ১০ মার্চ পোশাকশিল্প মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচনের দিন বীরদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছেন সংগঠনের কার্যালয়ে।

অগ্নিকাণ্ডের পর কয়েক দিন একটু গা ঢাকা দিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন। তারপর সময়-সুযোগ বুঝে প্রথমে গণমাধ্যমের সামনে আসেন এবং পরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও অফিসকে খুশি করে এখন বহাল তবিয়তে আছেন।

তাজরীনের মৃত্যুকূপ থেকে ১১২ জন শ্রমিকের ঝলসানো মাংসপিণ্ড তুলে আনে দমকলবাহিনী। অথচ শাস্তির সব পথ থেকে দেলোয়ার হোসেন ফিরে আসেন বিজিএমইএর সহায়তা নিয়ে। বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিজিএমইএ প্রথমে দেলোয়ার হোসেনকে আত্মগোপনে থাকতে পরামর্শ দিয়েছিল। এরপর পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে শ্রমিকদের জন্য বকেয়া পাওনা আদায় করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত নিহত ও আহত সব শ্রমিককে পাওনাসহ ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল মান্নানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পোশাক খাতে অবহেলার কারণে ভবন ধসে, আগুনে পুড়ে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যে শত শত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, এর জন্য কোনো মালিকের জেলে যেতে হয়েছে কি না। গতকাল কয়েকজন সাংবাদিককে তিনি এর জবাবে জানান, স্পেকট্রাম ভবন ধসে যাওয়ার ঘটনায় মালিক গ্রেপ্তার হয়ে জেলে ছিলেন।

২০০৫ সালে সাভারের বাইপাইলে স্পেকট্রাম ভবন ধসে বিজিএমইএর তথ্যানুসারে ৬৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর স্পেকট্রামের মালিক শাহরিয়ার কবির দিন পনেরো লুকিয়ে থাকেন। পরে মাস দেড়েক জেলে আটক ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কোনো সাজা হয়নি।

গত বুধবার সাভারের রানা প্লাজা ধসে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারও আগে পোশাক কারখানার মালিকদের অতিমুনাফা ও লোভের ফাঁদে অন্তত ৩৮৭ জন মানুষের প্রাণ গেছে। এই হিসাব বিজিএমইএর। কিন্তু স্পেকট্রামের মালিকের অল্প সময়ের কয়েদ খাটাই হচ্ছে একমাত্র জেল-জরিমানার উদাহরণ।

তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেল বিজিএমইএ সূত্রে। গত জানুয়ারি মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধে অবস্থিত স্মার্ট ফ্যাশনসে আগুনে পুড়ে মারা যান সাতজন শ্রমিক। ওই স্মার্ট ফ্যাশনসের দুই মালিক শরিফ আহমদ ও জাকির হোসেন এখনো কারাগারে রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএর সদস্য নয়। এ কারণে মালিকের পক্ষে আর দাঁড়ায়নি বিজিএমইএ। তাই তাঁরা এখনো জেলে।

অথচ তাজরীন ফ্যাশনসের দেলোয়ার হোসেনকে থানা-পুলিশ পর্যন্ত করতে হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, ‘অপরাধ করে থাকলে সরকার পরে ধরেনি কেন? আমরা তো বাধা দিইনি।’ তিনি এ মন্তব্য করলেও জানা গেছে, বিজিএমইএ তাজরীনের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই তদন্তে মালিকের কোনো দোষ পায়নি তারা।

গত বুধবার ধসে পড়া সাভারের রানা প্লাজায় পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। এই কারখানাগুলোর হাজার তিনেক শ্রমিক ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েন। তাঁদের মধ্যে ৩০৫ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। অথচ আগের মতো একই কৌশলে লুকিয়ে আছেন এই পোশাক কারখানাগুলোর মালিকেরা। এর মধ্যে রয়েছেন ইথার টেক্সের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান। নিউ ওয়েভ বটমের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন ও পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস। ফ্যান্টম টেক ও ফ্যান্টম অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, এমডি ডেভিড মেয়র ও পরিচালক জাফর আহমেদ।

বিজিএমইএর বিরুদ্ধে মালিকদের রক্ষার অভিযোগ নতুন নয়। গাজীপুরের গরীব অ্যান্ড গরীব কারখানায় আগুনে ২১ জন শ্রমিক মারা যান। এই কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার শ্রমিকদের প্রায় সবারই মৃত্যু হয় ছয়তলা ভবনের ছাদের ওপর তৈরি টিনের ছাপরায়। আলো-বাতাস চলাচলের সুযোগহীন ওই ছাপরাতেই আটকা পড়ে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও তাপের শিকার হয়ে অসহায়ভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হতভাগ্য ২০ জন শ্রমিক। আরেকজনের মৃত্যু হয় তৃতীয় তলায়। অথচ ওই মালিকের কিছুই হয়নি। তাঁকেসহ এযাবৎ যত কারখানায় শ্রমিক নিহত হয়েছেন, তার সবগুলোর মালিককেই রক্ষা করতে পেরেছে বিজিএমইএ।

কোনো পোশাকশিল্পে মানুষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে প্রথমেই বিজিএমইএ বলে, কারখানাটিতে শ্রমিকের কর্মপরিবেশ (কমপ্লায়েন্ট) ভালো ছিল। গরীব অ্যান্ড গরীব, তাজরীন ও সর্বশেষ সাভারে রানা প্লাজা ধসে শ্রমিকের মৃত্যু হলেও একই দাবি করেছে বিজিএমইএ। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংবাদমাধ্যমগুলো অনুসন্ধান করে প্রমাণ করেছে, তথাকথিত ‘কমপ্লায়েন্ট’ তো দূরের কথা, মৃত্যুফাঁদের ঝুঁকির মধ্যেই ছিল এসব কারখানা।

প্রতিটি ঘটনার পর সরকার থেকেও একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো তদন্ত কমিটির সুপারিশই মানা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ তাজরীনের ঘটনার পরও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও মালিকপক্ষের অবহেলার কথা বলা হয়েছিল। অথচ মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে সাভারে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর এবার সরকার বা মালিকপক্ষ নাশকতা বা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব হাজির করতে পারেনি। এ কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এখন মালিকদের কী উপায়ে রক্ষা করা হবে, সেটিই দেখার বিষয়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৪০

চোরাবালি- বলেছেন: বাংলাদেশে কার শাস্তি হয় বলতে পারবেন?
রেকর্ড নাই। আমাদের মেরুদ্বন্ডে পচন ধরেছে, ভেঙে না পড়া পর্যন্ত আর নতুন করে গড়া সম্ভব না আমাদের সভ্যতা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.