![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তর্ক নয়, সমাধানে আসুন। হত্যা নয়, শান্তি বজায় রাখুন। দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভাবুন।
আজ মা দিবস। আজ এই মা দিবসে আসুন না, মা বাবার মর্যাদা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ জেনে নিই।
আমরা অতি সংক্ষেপে মা বাবার মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি আল্লাহর বানী ও রাসূলের বাণী জেনে নিই।
‘মা’ ‘বাবা’। কতই না মধুর ডাক। যারা আমাদেরকে জন্মের পর থেকে শুরু করে সত্যিকারের মানুষ গড়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের দুঃখ-দূর্দশা, কষ্ট সহ্য করে এসেছেন।
* পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন- “হে মানুষ! তোমরা কিভাবে আল্লাহর সাথে কুফরী কর। অথচ তুমি ছিলে মৃত, আল্লাহ পাক তোমাকে জিন্দা করেছেন। জিন্দা থেকে আবার মৃত করেছেন। অতঃপর আবার তোমাকে জিন্দা করবেন। আবার তোমাকে সেই আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে।”
বিজ্ঞান দ্বারাও আজকে প্রমাণিত যে মানুষ জন্মের আগে মৃত ছিল। আর তা কেমন করে? তা হচ্ছে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন আমরা মৃত ছিলাম।
* আল্লাহ পাক বলেন- “সাবধান! তোমরা মাকে ভুলে যেও না। মাকে সম্মান করো। মা বাপকে মহব্বত করো। তাদেরকে শ্রদ্ধা করো।”
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, সুন্দরী বউ পেলে মা বাপের কথা আর মনে থাকে না। সুন্দরী বউয়ের কথামতো সন্তান তার মা বাপের উপর অত্যাচার করে।
আমরা মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলবো? কিভাবে আচরণ করবো? আল্লাহ তাআলা তাও শিখিয়ে দিয়েছেন।
* আল্লাহ পাক বলেন- “তোমরা মায়ের সাথে সম্মান করে কথা বলো, মোটা করে কথা বলো না।”
সন্তান হিসেবে আমাদের কাছে সবচাইতে বড় জিনিস হচ্ছে মা বাপ। মাওলানা সাহেবের দোয়া, পীর সাহেবের দোয়া, কবুল হতেও পারে, নাও হতে পারে। ৫০-৫০। কিন্তু মা বাবার দোয়া কবুল হবে, ১০০% নিশ্চিত।
* আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হবে। (১) মজলুম ব্যক্তির দোয়া (যে অত্যাচারিত) (২) মুসাফিরের দোয়া (৩) মা বাবার দোয়া।
* মা বাবার জন্য আল্লাহ পাক আমাদেরকে যে দোয়াটা করতে বলেছেন সেটা হচ্ছে- “হে আমার রব! আমার পিতামাতা যেমনিভাবে আমাকে ছোটবেলায় লালন পালন করেছেন তেমনিভাবে তুমি তাঁদেরকে তোমার রহমতের কোলে লালন পালন কর।”
* আল্লাহ পাক বলেছেন- “দুনিয়ার মানুষ খবরদার! মায়ের সাথে নাফরমানী করবে না। মাকে কোন কষ্ট দিবে না। মাকে সম্মান করবে।”
* হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- ‘রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হইল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খেদমত করব কার? রাসূল (সাঃ) বললেন, মায়ের। তারপর কার? রাসূল (সাঃ) বললেন, মায়ের। তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, তারপর কার? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, মায়ের। তারপর কার? অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার বাবার। তোমার পিতার চাইতেও তোমার মায়ের মর্যাদা তিনগুণ বেশি। (সুবহানাল্লাহ)
আসুন না, আমরা মা বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। মা বাবার সেবা যতœ করি। বর্তমান সময়ে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, ছেলে তার বউকে পেয়ে মা বাবার কথা ভুলে যাচ্ছে। এটা কি আসলেই ঠিক। যে মা আমাকে, আপনাকে ১০মাস গর্ভধারন করে কতই না কষ্ট সয়েছে, আর আমরা সেই মাকে আজকে পাঠাচ্ছি বৃদ্ধাশ্রমে।
* রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “মা বাপ হচ্ছে তোমাদের বেহেশত, মা বাপ হচ্ছে তোমাদের দোজখ।”
[অর্থ্যাৎ যদি আমরা মা বাবার কথামত চলি, মা বাবার মনে কোন কষ্ট না দেই তাহলেই আমাদের জন্য বেহেশত সোজা হয়ে যাবে। আর যদি মা বাবার মনে কষ্ট দেই মা বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করি তাহলে দোজখ চিরধার্য।]
আমরা বায়েজীদ বোস্তামির ঘটনাটাই মনে করি না কেন! যে ঘটনাতে ছিল মাতৃভক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
যে বায়েজীদ সারারাত পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মায়ের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। ফজরের আযান হল। মা ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন। তিনি দেখতে পেলেন বায়েজীদ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। মা বললেন হে বায়েজীদ! তুমি এখানে এ অবস্থায় কেন? বায়েজীদ বলল, মা তুমি গভীর রাতে পানি চেয়েছিলে। কিন্তু পানি ঘরে না থাকায় অনেক দূর থেকে পানি এনেছিলাম তোমার জন্য। কিন্তু এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তাই যতণ না তুমি ঘুম থেকে উঠবে ততণ আমিএই পানির গ্লাস নিয়ে তোমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। এ কথা শুনার সাথে সাথে বায়েজীদের মা বায়েজীদকে বিছানায় কম্বল দিয় শুইয়ে দিল। আর ফজরের নামায শেষে মা বায়েজীদের জন্য এই বলে দোয়া করলেন যে, হে আল্লাহ আজকে বায়েজীদ আমার জন্য যা করেছে তার জন্য আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হে আল্লাহ আমি তার মা হয়ে দোয়া করি, তুমি তাকে সুলতানুল আরেফীন বানাইয়া দিও। আর সেই দোয়া শেষ পর্যন্ত মঞ্জুর হয়ে গেল।
* আল্লাহ পাক বলেছেন- “তোমার ইবাদতের পরই হচ্ছে তোমার মা বাপ। তাই তোমরা মা বাপকে সম্মান কর।”
আসুন মা এর সম্মান নিয়ে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) এর ঘটনা পড়ি।
একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু হোরায়রা বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, কেন তুমি কি কোন বেয়াদবী করেছ? আবু হোরায়রা বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আর আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর দরবার ছাড়বি। আমি বললাম, ও আমার মা। তুমি বুড়ি মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না। তখন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার তো এখানে কিছুই করার নেই। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হে রাসূল (সাঃ) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল (সাঃ) বললেন, তাহলে কেন এসেছ? আবু হোরায়রা বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।” রাসুল (সাঃ) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন আবু হোরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও। আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইয়া বাড়িতে গিয়ে দেখতে চাই আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা দরজায় নক করতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি। মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে। হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মাকে সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।
এইরকম আরো অসংখ্য অসংখ্য ঘটনাবলী বিদ্যমান। আসুন আমরা সবাই এসব ঘটনাবলী কোরআন ও হাদীস থেকে অধ্যয়ন করে মা বাবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি এবং তাদের সেবা যত্ন করে বেহেশত লাভ করি। আমিন।
[আমার এই লেখায় ভুল-ক্রুটি থাকতে পারে। দয়া করে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।]
২| ০৯ ই মে, ২০১০ রাত ৯:৪২
সিটিজি৪বিডি বলেছেন: মায়ের অধিকার একটি আসমানি ফরমান
আল্লাহ পাক নারীকে মায়ের মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মা তার মাতৃত্বের কারণে শ্রদ্ধা, সম্মান ও সুন্দর আচরণ পাওয়ার হকদার। তাই ‘মা’ নারী ও পুরুষ সবার কাছে মর্যাদার স্বর্ণশিখরে অধিষ্ঠিত। এ নিখিল বিশ্বে মায়ের কোল হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মাতৃস্নেহ এক জান্নাতি নিয়ামত। ‘মা’ স্নেহের পরশ দিয়ে সন্তানাদির হৃদয়কোণে স্বস্তি, সান্ত্বনা ও প্রশান্তি উপহার দেয়। সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। নয় মাস গর্ভে ধারণ করে ‘মা’ তার কলিজার টুকরোকে হৃদয়ের তন্ত্রী ছিঁড়ে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করে জীবন-মরণের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রসব বেদনার অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে এ উন্মুক্ত পৃথিবীতে ভূমিষ্ট করেন। জন্মের দু’বছর ধরে বুকের মধুময় পিযুশ পান করিয়ে তিল তিল করে বড় করে তোলেন। মায়ের এ কষ্ট তাকে নিজেকে বহন করতে হয়। কোনো পুরুষ এ কষ্টের ভাগীদার হতে চাইলেও সম্ভব নয়। তাই মায়ের সম্মান, ইজ্জত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিতকল্পে ইসলাম চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে বলেছে ‘মায়ের পদতলে পুরুষ জাতির বেহেশত’। মায়ের মর্যাদার এ সুমহান স্লোগান ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম বা মতাদর্শ প্রদান করেনি। তাই সর্বাগ্রে আল্লাহর ইবাদত, এরপর মায়ের খিদমত। এটা আসমানি বিধান।
আল্লাহপাক বলেছেন¬:
‘তোমার রব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত কোরো না। আর তোমার মা-বাবার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না বরং তাদের সাথে ভদ্রোচিত কথা বলো’।
আল্লাহপাক অন্যত্র বলেছেন¬ ‘আর ইবাদত করো আল্লাহর, শরিক কোরো না তার সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো’। পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে¬
‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় আমল কি? তিনি বললেনঃ সময়মতো নামাজ পড়া। আমি বললাম, তারপর কি? তিনি বললেনঃ পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। আমি বললামঃ অতঃপর কোন আমল? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা’।
রাসূল সাঃ আরো বলেছেন¬:
‘হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা সালামী রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাঃ-এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে জিহাদে শরিক হতে চাই, যাতে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের মঙ্গল লাভ করব। তিনি বললেনঃ আফসোস তোমার জন্য, তোমার কি মা জীবিত আছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ ফিরে যাও, গিয়ে তার খিদমত করো... আফসোস তোমার জন্য। তার পায়ের কাছে পড়ে থাকো, সেখানেই জান্নাত’।
‘হজরত মা’আয ইবনে জাবাল রাঃ বলেন, ‘রাসূল সাঃ দশটি অসিয়ত করেছিলেন। তন্মধ্যে ১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, যদি তোমাদের সে জন্য হত্যা কিংবা অগ্নিদগ্ধ করা হয়। ২. নিজের পিতা-মাতার নাফরমানি কিংবা তাদের মনে কষ্ট দেবে না, যদি তারা এমন নির্দেশও দিয়ে দেন যে, তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ ত্যাগ করো’।
হজরত আবু উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। ‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের ওপর পিতা-মাতার কি হক রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, তারা দু’জন তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’।
‘রাসূল সাঃ বলেছেন, যে পুত্র স্বীয় পিতা-মাতার অনুগত, সে যখনই নিজের পিতা-মাতার প্রতি সম্মান ও মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন প্রতিটি দৃষ্টিতে সে একটি করে কবুল হজের সাওয়াবপ্রাপ্ত হয়’।
পিতা-মাতার খুশি ও অখুশির সাথে আল্লাহ পাকের খুশি-অখুশি জড়িত। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাঃ বলেছেন¬ ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত’।
ইসলাম মায়ের মর্যাদাকে বাবার মর্যাদার সমান করেনি; বরং মায়ের মর্যাদা বাবার মর্যাদার চেয়ে তিন গুণ বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ প্রত্যেক মা¬ বাবার চেয়ে তিনটি বিষয়ে কষ্ট বেশি করে থাকেন। ১. গর্ভে ধারণ করে নিজ শরীর ক্ষয় করে সন্তানের দেহাকৃতি দান করেন। ২. মৃত্যুসম কষ্ট সহ্য করে সন্তান প্রসব করেন। ৩. নিজ শরীরের রক্ত-গোশত গলানো বুকের অমৃত সুধা পান করিয়ে সন্তানকে প্রতিপালন করেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেছেন:¬
‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও দুধ ছাড়তে সময় লেগেছে ত্রিশ মাস’।
হাদিসে এসেছে ‘হজরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (মুয়াবিয়া ইবনে হীদা আল-কুরাইশী) রাসূল সাঃ-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার অধিক হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। অতঃপর লোকটি বললেন তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। অতঃপর লোকটি বললেন তারপর কে? তিনি বললেন তোমার বাবা’। এখানে বাবার মর্যাদার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন পয়েন্ট বেশি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম মায়ের জাতকে কতখানি মর্যাদা দিয়েছে তার প্রমাণ রাসূল সাঃ-এর ওই বাণীতে পাওয়া যায়। ‘এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ-এর কাছে গিয়ে বললেন¬ হে আল্লাহর রাসূল, আমি একটি বড় পাপ করেছি। আমার কি তওবার কোনো সুযোগ আছে? রাসূল সাঃ বললেন, তোমার কি মা আছে? লোকটি বললেনঃ না। রাসূল সাঃ আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি খালা আছে? লোকটি বললেনঃ হ্যাঁ, আছে। রাসূল সাঃ বললেন, তোমার তওবা আল্লাহর কাছে কবুল করার জন্য তোমার খালার সেবা করো’।
এ প্রসঙ্গে আরো একটি বর্ণনা আছে¬ ‘এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! জিহাদে যেতে চাই, এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? রাসূল সাঃ বললেন, তোমার কি মা আছে? উত্তরে লোকটি বললেন, হ্যাঁ আছে। তখন রাসূল সাঃ বললেন¬ তাহলে তুমি তোমার মায়ের সেবা করো। কেননা মায়ের পায়ের নিচেই জান্নাত’
সুতরাং প্রমাণিত হলো পুরুষ জাতির তুলনায় নারী জাতির মর্যাদা ইসলাম কত বেশি ঘোষণা করেছে। এ পৃথিবীতে ‘মা’ ডাকের ন্যায় মিষ্টি মধুর ডাক আর দ্বিতীয়টি নেই। ‘মা’ ডাকে যত তৃপ্তি, যত প্রশান্তি পৃথিবীজুড়ে তা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই মায়ের অধিকার আদায় করা সন্তানের ওপর ফরজ। এ অধিকার আদায়ে অবহেলা করা কবিরা গোনাহ।
প্রত্যেক মা-ই নারী। কিন্তু প্রত্যেক নারী ‘মা’ নন। মা হওয়া আল্লাহ-প্রদত্ত অনুগ্রহ। তাই এর শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে তার দায়িত্বানুভূতির আলোকে স্বীয় কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসতে হবে। মায়ের যেমন মর্যাদা বেশি, তেমনি মায়ের দায়িত্বও বেশি। মায়ের কাজ হলো মানব বাগানে ফুল প্রস্ফুটিত করা, মানব বংশ সম্প্রসারণ সংরক্ষণ ও প্রসূত সন্তানের জীবনকে সুন্দর পরিপাটি ও পরিমার্জিত করে গড়ে তোলা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সাচ্চা মুসলিম, সচ্চরিত্রবান, সৎ ও যোগ্যতম সুনাগরিক এবং আদর্শ দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলা। একটি শিশুর সুষ্ঠু প্রতিপালনের ওপর নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ। যে প্রজন্মের ওপর রাষ্ট্রভার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি গুরুদায়িত্ব অর্পিত হবে, তাদের লালন-পালন যদি সুষ্ঠু, সুন্দর ও আদর্শিক না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মই শুধু বিনষ্ট নয়, সুখী-সমৃদ্ধশালী ও কল্যাণকর সমাজ উপহার দেয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
কাজেই আল্লাহর সৃষ্টির উদ্দেশ্য সার্থক করতে ‘মা’ তার দায়িত্ব পালন করবেন। আর সন্তানরা মায়ের অধিকার আদায়ে তার ভরণ-পোষণ, সেবা-যত্ন, দেখাশোনাসহ যাবতীয় হক আদায়ে দিবানিশি সজাগ দৃষ্টি পালন করবেন। জীবিত অবস্থায় যেমন তার সুখী জীবন ও কল্যাণ কামনা করতে হবে, তেমনি তার মৃত্যুর পরও সুখী জীবন ও কল্যাণ কামনার দোয়া করতে হবে। আল্লাহপাক এ দোয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে বলেছেন¬ বলুন! ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা’। হে প্রভু! তাদের (পিতা-মাতা) উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শিশুকালে লালন-পালন করেছেন।
**************************
মাওলানা মিনহাজুল ইসলাম
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৯ মে ২০০৮
৩| ০৯ ই মে, ২০১০ রাত ১০:১০
শেলী বলেছেন: আমার একটা কথা ছিল ,"সুন্দরী বউ পেলে মা বাপের কথা আর মনে থাকে না"এর ব্যাপারে। আমি কখনো দেখিনি কেউ মা বাবার কথা ভুলে যায়। বলতে পারেন মাবাবার প্রতি কম সময় দেয় যেহেতু তার নিজের সংসারে সময় দিতে হয়। মা বাবাউ যে কত অত্যাচার করে পরের মেয়ের উপর। এই ইসলামেই কিন্তু আছে যে বউ চাইলে আলাদা থাকতে দিতে হবে এবং বউকে জোর করা যাবেনা মাবাবাকে দেখার ব্যাপারে। এরা কিন্তু বউয়ের মাবাবা না। কাজেই বউ যদি স্বামীর মাবাবার সেবা করে সেটা তার জন্য সদকা হবে,ফরজ হবেনা।
আমি অনেককে দেখি বিয়ের পর নিজের ছেলেকে কি পরিমান কষ্ট দিতে। ছেলের উপর নিজের মেয়ের ডিউটি দিয়ে দিতে। কিন্তু বোন মানুষ করা খুব কঠিন। নিজের সন্তানকে শাসন করা যায়,বোনকে কিছু বলাও যায়না। তাহলে ভাই /ভাবী খারাপ হয়ে যায়। আবার উল্টোটাও হয়। ভাবীরা খারাপ হয়। এককভাবে কাউকে দোষ দেয়া যায়না।
৪| ১০ ই মে, ২০১০ রাত ১:১০
মোহাম্মদ লোমান বলেছেন:
‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা’। +
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মে, ২০১০ রাত ৯:৪১
অপ্রিয় সত্য ৭০০ বলেছেন: +