বেঁচে থাকার সুখ

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১১

আরতো অল্প কিছুসময়।একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে।ঐ যে পশ্চিম দিগন্তটা রক্তিম হয়ে আছে, একটু পরেই হঠাৎ তলিয়ে যবে গভীর অন্ধকারে।আমি সবকিছু বুঝতে পারি। একটু আগে এক পাল সাদা বক উড়ে যাচ্ছিল দিগন্ত রেখা ধরে। আমি তাদেরও দেখতে পেয়েছি। মাঝে মাঝে আমি ও তাদের সাথে উড়ে বেড়াই। তাদের কাছে কথা বলার সময় নেই, বাড়ি ফেরার বড্ড তাড়া। কিন্তু আমার হাতে অফুরন্ত সময় তাই তাদের সাথে উড়ে মজা পাই না।দক্ষিণের ঐ তাল গাছে এখন বাবুই পাখির কেমন কিছির মিছির। কিন্তু একটু পরেই সব শান্ত হয়ে যাবে। একদম শুনশান নীরবতা। উত্তরের পুকুরটাতে হাঁসের পাল আর সামনে এগুবে না। দল বেঁধে ঘরে ফিরে আসবে। তারা যেমন প্রকৃতির নিয়ম বুঝতে পারে আমিও পারি। আমি ভোরের শিশির মাড়িয়ে হাঁটরে পারি। শুকনো পাতার শব্দ শুনতে পাই। কখন যে আমার পৃথিবীটা এভাবে রঙিন হয়ে উঠলো বুঝতেই পারিনি। কখনো ভাবিনী চার দেয়ালের বাহিরে এসে পৃথিবীর আলো বাতাস গায়ে মাখবো। টানাটানির সংসার, যে যার জীবন নিয়ে ব্যাস্ত। আমার জন্য অপচয় করার মত সময় কারো হাতেই নেই।সবাই স্বাভাবিক ভাবে ধরে নিলো আমার পৃথিবীটা গোলাকার নয়, চারকোণাকার। আমিও নিজের মনকে বুঝাতে থাকলাম। আমি হচ্ছি জাহান্নামের কীট। পৃথিবীর আলো বাতাস আমার জন্য নয়। কিন্তু মন বুঝতে চাইতো না। ছটফট করতো সারাদিন।শুধু চাইতো পালিয়ে বেড়াতে। দক্ষিণা বাতাসে গা ভাসিয়ে দিতে।জন্ম থেকে আমি সংসারের বোঝা।যতই দিন যেতে থাকলো বুঝতে পারলাম আমি বোঝা হিসেবে দিন দিন ভারি হচ্ছি।জগত সংসার থেমে না থাকলেও আমার জন্য সমাজের অনেক কিছুই থেমে গেলো। অনেক পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম হারাম হয়ে গেলো। গর্ভধারিণী মাকে বলা হল পাপি। আর আমি হলাম তার পাপের ফল। সমাজের অভিশাপ। সহ্য করতে না পেরে মা তো একদিন বলেই দিলো, বিধাতা আমি যে কোন পাপ করেছি,এমন অন্ধ পঙ্গু একটা মেয় তুমি আমার পেটে দিলে।তারপরেও কি আর বেঁচে থাকার স্বাদ জাগে।
থাক সে সব কথা। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। তাল গাছের বাবুই পাখি গুলো কেমন শান্ত হয়ে গেলো। সূর্যটা মনে হয় দিগন্ত পাড়ি দিয়েছে। একটু পরেই শফিক আসবে। শান্ত হয়ে আমার পাশে বসে তার তাল পাতার বঁশিতে সুর তুলবে। সেই সুর কেমন করে যেন সন্ধ্যার নীরবতার সাথে মিশে যায়। এই এক সুরে কি যে মায়া, ভালবাসা আমি খুঁজে পাই তা কখনো বুঝাতে পারবো না। বিধাতা আমার চোখের দৃষ্টি দেয়নি কিন্তু অশ্রু দিয়েছে ঠিকই। আমি হাজার বার চেয়েও সেই অশ্রু ধরে রাখতে পারি না। এটাই হয়তো আমার সুখ প্রকাশের মাধ্যম। এই একটা সুর আমার দৃষ্টি হীন চোখের দৃষ্টি দিয়েছে অচল পায়ে গতি দিয়েছে। বিধাতা তুমি আমাকে অনেক কিছুই দাওনী। কিন্তু তুমি আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছো আমি কখনো তা কল্পনাও করিনী। একদিন আমি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছি। কিন্তু আজ আমি স্বার্থপরের মত হাজার বছর বাঁচতে চাই। তুমি আমাকে হাজার বছর বেঁচে থাকার শক্তি দাও!!!

০ টি +০/-০