নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ব জোড়া পাঠাশালা মোর,সবার আমি ছাত্র।লেখক হওয়া নয়,পাঠক হওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।

Hafiz Anwar Hossain

Hafiz Anwar Hossain › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমায় ক্ষমা করে দাও

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:০৭

আজকে মঙ্গল বার,কিন্তু আমার সাথে
আজকে যা হচ্ছে সবই অমঙ্গল।সকালে
ঘুম থেকে উঠে কোচিংয়ে গেলাম,স্যার কি
বুঝাইলো
কিছুই বুঝলামনা।অগত্যা মাথার চূল ছিড়তে
ছিড়তে
বাসায় আসতেছি,রাস্তায় দেখি নীরা
আরেকটা
ছেলের সাথে রিক্সায় বসে কোথায় যেন
যাইতেছে।
মাথা পুরাই গরম হয়ে গেল,রাগ উঠলে
আমার মাথার চূল খাড়া হইয়া যায়,এটা
আমার বড় সমস্যা,তাই যে কেউ আমার
রাগটা ধরে ফেলতে পারে।দিলাম ফোন
নীরাকে।
গুনে গুনে ২৭বার ফোন দিলাম,একবারও
রিসিভ করলোনা।মাথা আরো গরম হয়ে গেল।
আজকালের মেয়েরা প্রেম বলতে বুঝে শুধু
ছেলেদের পকেটের টাকাকে।এটার বড়
প্রমাণ
রেল মন্ত্রীর বিয়ে।আজকেই নীরার সাথে
ব্রেকআপ করে নিবো।এসব ফালতু মেয়ের
সাথে
রিলেশন রেখে জীবন তেজপাতা বানানোর
কোন মানে হয়না।এসব মেয়েরা সাপের
চেয়ে বিষাক্ত।যাকে একবার ছোবল দেয়
যতক্ষণ পর্যন্ত দেহের রক্ত শেষ না হয় ততক্ষন
খাইতেই থাকে।এসব ভাবতে ভাবতে কখন
যে বাসায় চলে আসলাম বুঝতেই পারলামনা।
বাসায় এসে দেখি আম্মু বাসায় নেই,রাগ
আরো বেড়ে গেল,কি করবো কিছুই মাথায়
আসতেছেনা।রাগটাকে কমানোর উদ্দেশ্যে
একটা লম্বা ঘুম দেওয়ার জন্য বিছানায়
গেলাম।
'
.
ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধা ৫টা বাজে,ক্ষুধার
কারনে পেট চূচু করছে,কিন্তু খাওয়ার সময়
নেই।
টিওশনিটায় অলরেডি ১ঘন্টা লেট হয়ে
গেছে।
আগামীকাল তানিশা মানে আমার ছাত্রীর
পরীক্ষা।
তাই আজকে যেভাবেই হোক যেতে হবে
কোন ভাবেই মিছ করা যাবেনা।এই
টিওশনিটা
অনেক ভালো।যতদিন থেকে
পড়াচ্ছি,কোনদিন
বিকেলের নাস্তা মিস হয়নি।তাই পড়ানো
আর
নাস্তা খেয়ে পেটের ক্ষুধাটা নিবারণ করার
জন্য
দ্রুত বাসার দিকে চলতে লাগলাম।
তানিশাকে পড়াচ্ছি প্রায় ১ঘন্টা হয়ে গেল,
মাগার নাস্তা আসার কোন সম্ভাবনা
দেখছিনা।
এদিকে আমার পেটের ভিতর আই এস তার
পুরো দলবল নিয়ে একযোগে হামলা
চালাইতেছে।
আই এস এর হামলায় আমার পেটের নাড়ি ভূড়ি
সব ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।নাহ এখন আর
ক্ষুধাটা সহ্য করতে পারছিনা।তানিশাকে
জিজ্ঞেস করলাম করলাম,তোমার মা
কোথায়?
তোমার আম্মুকেতো দেখছিনা?উত্তরে
তানিশা যা বললো,শুনে মাথা আরো গরম হয়ে
গেল।
তানিশা বললো,আম্মু অসুস্থ তাই শুয়ে আছে।
তার মানে আজকে নাস্তা আসার কোন
সম্ভাবনা নেই।
গুষ্ঠি কিলাই তোর টিউশনির,নিজের
ভাগ্যকে
দোষ দিতে দিতে বাসা থেকে বের হয়ে
আসলাম।
রাস্তায় এসে প্যান্টের পকেটে হাত দিলাম,
পকেটটা আমায় পুরো হতাশ করলো।অনেক্ষন
খুজে ৫টাকার একটা পয়সা পেলাম।
টাকাটা দিয়ে সিগেরেট বা অন্য কোন
ছাইপাস
না কিনে আগের জায়গাতেই রেখে দিলাম।
আমি আবার ভদ্র ছেলে,সিগেরেট বা অন্য
কোন
নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ার অভ্যাস আমার
নেই,
এ জন্যই বোধহয় নীরা আমাকে ছেড়ে অন্য
ছেলের সাথে রিক্সায় ঘুরা ফিরা করে।
আজকালের মেয়েরা ভদ্র ছেলেদের সাথে
প্রেম করতে চায়না,কেননা তারা ভালবাসার
নামে টালোবাসা আদায় করতে চায়না,
ডেটিংয়ের নামে দিনের পর দিন লিটনের
ফ্ল্যাটে রাত কাটায়না।তবুও ভদ্র ছেলেরা
সামান্য ভালবাসার জন্য নিজেকে অভদ্র
করবেনা
এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
এসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে
বাসায় আসলাম।এসে আম্মুকে জিজ্ঞেস
করলাম,
কি রান্না করেছো?আম্মু বলল ডাল আর
পটল দিয়ে রুই মাছ।পটলের কথা শুনে
নিজেকে আর স্হির রাখতে পারলামনা।
সারাদিনের সমস্ত রাগ ঝেড়ে দিলাম আম্মুর
উপর।
প্রায় ৫মিনিটের মত কথার মধ্য দিয়ে
তালেবানি
হামলা চালালাম আম্মুর উপর,আম্মু আমার
কথা শুনে কোন কিছু না বলে চোঁখের
পানি মুছতে মুছতে রুমের দিকে চলে গেল।
আমিও আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
মায়েরা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতীত
প্রাণী,
এদের মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা নেই।
এরা সারাজীবন সব অত্যাচার নিরবে সহ্য
করে যায়,অতপর তাদের জায়গা হয়
বৃদ্ধাশ্রমে।
রুমে এসে মরার মত পড়ে রইলাম,ক্ষুধার
কারনে থাকতে পারছিনা,আবার আম্মুর
কাছে খাবারো চাইতে পারতেছিনা,খুব
অপরাধী লাগছে নিজেকে।আম্মুর সাথে
এই ব্যবহারটা না করলেও হত,এখানে
আম্মুরতো কোন দোষ নেই,সব দোষ আমার।
'
.
অবশেষে রাগটাই আমার উপর জয়ী হল,
আম্মুর কাছে খাবার বা ক্ষমা কোনটাই
চাইলামনা।
রুম থেকে টাকা নিয়ে সোজা চলে গেলাম
হোটেলে।
হোটেলে গিয়ে গোস্ত দিয়ে খানা খাইতে
বসলাম,
প্রথম লোকমাটা মুখে দিবো,এমন সময়
একটা বাচ্চা ছেলে দোকানে আসলো
সিংগারা নিতে।
বাচ্চাটার বয়স বেশি হলে ১০ থেকে ১২ হবে,
বেশ ভূষা দেখে মনে হল কোন মাদ্রাসার
ছাত্র।
>চাচা একটা সিংগারার দাম কত?
>৩ টাকা
>২টাকায় হবেনা?আমার কাছে ২টাকাই
আছে।
হোটেলের মালিক ২টাকাতেই সিংগারাটা
দিয়ে দিল।
সিংগারা নিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেটাকে
ডাক দিলাম আমি।একটা সিংগাড়া দিয়ে কি
করবে তুমি?
>ভাতের সাথে খাবো
>রাত্রে তরকারী দেয়নি?
>না,শুধু ডাল দিছে
>তাহলে এটা দিয়ে কিভাবে খাবে?
>ভিতরের মশলাটা দিয়ে ভাত খাবো,আর
রুটিটা এমনি খাবো
.
বিদায় করে দিলাম ছেলেটিকে,হাত থেকে
ভাতের লোকমাটা পড়ে গেল,পুরো শহরটা
লাগলো আমার কাছে যেন ঘুরতেছে।
একটা ছোট্র বাচ্চা আজ আমাকে শিখিয়ে
দিয়ে গেল জীবনটা কি?আর কিভাবে
পরিচালনা করবো।
ছেলেটা দিনের পর দিন শুধু ডাল
আর
ভাত দিয়ে খানা খাচ্ছে,তবুও কোন অভিযোগ
নেই তার,আর আমি?নাহ আর খাওয়া
হলোনা আমার,হোটেল থেকে দৌড়ে চলে
আসলাম
বাসায়।এসে দেখি আম্মু গোস্ত রান্না করে
ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে
আছে
আমার জন্য।আমি কোন কথা না বলে
সোজা গিয়ে আম্মুর পা ধরে বললাম,
আম্মু তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার
করেছি,আমায় ক্ষমা করে দাও,আর কখনো
এমন করবোনা।
আম্মু আমাকে তুলে জড়িয়ে ধরে বলল আমায়,
দূর পাগল,কোন মা কি তার ছেলের প্রতি
অভিমান করতে পারে?আমি কোন রাগ
করিনি।
আয় বস,তোর জন্য গোস্ত রান্না করেছি,
নিজ হাতে আজ খাইয়ে দিবো তোকে।
মায়ের মুখে দেখলাম,সেই আগের হাসি ফিরে
আসলো।
আই লাভ ইউ মা.......
.
অপরাধ সবাই করতে পারে,কিন্তু ক্ষমা
ক`জন চাইতে পারে?যদি আপনিও আপনার
মা,বাবার সাথে কোন অপরাধ করে থাকেন,
তাহলে আজই ক্ষমা চান।না হলে এমন
কাজ করুন,যার দ্বারা তারা আপনার প্রতি
খুশি হয়ে যায়।কেননা মায়ের পায়ের নিচে
সন্তানের বেহেশত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.