![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
আজকে বৃহস্পতিবার।
১৮ই আগষ্ট। আজকে রুনা ও আকিবের বিয়ের ৫ বছর পূর্তি।
সন্ধ্যা ৭ টা।
রুনা ঘর গোছাচ্ছে। দেখতে দেখতে ৫টা বছর চলে গেলো। একসময় কত ভালবাসা ছিলো। প্রেম করে বিয়ে করেছিলো ওরা দু'জন। সাংসারিক ঝামেলায় সেই ভালবাসা কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। আকিব একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকড়ি করে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। রুনাও ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকে। তবে রুনার কাজের চাপ একটু কম। কারন ওদের বিয়ের বয়স ৫ বছর হলেও বাচ্চাকাচ্চা হয় নি। তাই রুনার কাজের চাপ গত ৫ বছরে খুব সামান্যই বেড়েছে। মগবাজারে একটা ফ্লাট নিয়ে থাকে ওরা দু'জন। ছোট সংসার। ভালভাবে চলে যায়।
আজকে রুনার মন খুব উৎফুল্ল। আজকে সকল ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে আকিবকে ভালবাসবে। কাল আকিবের অফিস নাই। থাকলেও রুনার কিছু যায় আসে না। এমন দিন তো বছরে একবারই আসে। আজকে সকাল থেকে রুনা একটু বেশি ব্যস্ত। এবারের বিবাহবার্ষিকী একটু স্পেশাল হবে। আকিব কিছুই জানে না রুনা আজকে কত আয়োজন করেছে। রুনা খুশিতে একটু পরপর হেসে উঠছে।
২
অফিস থেকে বের হতে আকিবের সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। আজকে বৃহস্পতিবার বলে কাজের চাপ একটু বেশি। অফিস থেকে বের হতে অন্যদিনের চেয়ে এক ঘন্টা বেশি দেরি হলো। দেরি হওয়ার কারন যে শুধু কাজ তাও না। আজকে আকিবের জন্মদিন। ও ভুলেই গিয়েছিলো। ওর কলিগ নাইম এসে হঠাৎ ওকে উইশ করলো। ওকে অবাক হতে দেখে নাইম বলল
- কী ব্যাপার ভাই? নিজের জন্মদিন নিজেই ভুলে গেলেন?
- আরে ভাই, এখন কি আর জন্মদিন মনে রাখার বয়স আছে? তুমি জানলে কিভাবে?
- কি যে বলেন ভাই! ফেসবুকের জামানায় জন্মদিন কি জানা লাগে? কেনো আপনাকে তো উইশ করলাম! পান নাই ফেসবুকে?
- আসলে কাল রাত থেকে ফেসবুকে ঢোকা হয় নাই। থ্যাংকস! উইশ করার জন্য।
একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। একটু পরেই অফিসের সবাই উইশ করা শুরু করলো। অফিস থেকে বের হওয়ার আগে বস ডেকে পাঠালেন। আকিবের বস ভাল মানুষ। "অফিসের বস" শুনলেই মনে যে একটা গম্ভীর চেহারা ভেসে ওঠে ইনি তার বিপরীত। আকিব রুমে ঢুকতেই একটা হাসি দিয়ে বললেন
- কী খবর বার্থডে বয়? হ্যাপি বার্থডে!!
আকিবও হেসে দিলো।
- থ্যাংকয়্যু স্যার।
- তারপরে? কাজ কেমন চলছে?
- ভালই চলছে স্যার।
আরও দুই একটা কথা বলে বিদায় দিলেন।
অফিস থেকে বের হয়ে নিচে এসে টংয়ের দোকানে চা খেতে বসলো আকিব। আজকে ওর জন্মদিন। মজার ব্যাপার হলো ওর বার্থডে আর ম্যারিজডে একই দিনে। কিন্তু রুনা একবারও ফোন দিলো না কেন? অবশ্য গতকাল রাতে ঝগড়া হয়েছে। এজন্য রাত থেকে ফেসবুকে ঢোকা হয় নাই। কারন ঝগড়া ওই ফেসবুক নিয়ে। কিন্তু তাই বলে একটা মেসেজ দিবে না?
ফেসবুকের কথা মনে হওয়ায় পকেট থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে লগইন করলো আকিব। অনেক উইশ আসছে। জন্মদিন আর ম্যারিজডে দুইটার জন্যই উইশ। হ্যাপি বার্থডে, ম্যারিজডে। মনেমনে একটু হাসলো আকিব, সবাই হ্যাপি লিখে উইশ করলো অথচ ওর দিনটা মোটেই হ্যাপি কাটলো না। এমনকি আজকে জন্মদিন তাও জানতে পারলো একটু আগে। ইনবক্সেও প্রচুর মেসেজ। একজনের মেসেজ দেখে মুচকি হাসলো আকিব। আইডির নাম সাদিয়া নুর। মেয়েটার সাথে ইদানিং বেশ ভাল সম্পর্ক। সারাদিনে আকিবের রিপ্লাই না পেয়ে মেসেজে দিয়ে দিয়ে অস্থির। কয়েকবার ফোনও দিছে। আকিব ব্যস্ত ছিলো তাই রিসিভ করতে পারে নাই। চায়ের দোকানে বিল মিটিয়ে উঠে পড়লো। রুনার কথা ভেবেই আবার মন খারাপ হয়ে গেলো। ইদানিং খুব ঝগড়া করে রুনা। ঝগড়ার সূত্রপাত এই সাদিয়াকে নিয়েই। একদিন রাতে চ্যাট করছিলো আকিব। দেখেই রেগে গেলো।
- এই মেয়ে কে?
- ফেসবুক ফ্রেন্ড।
- ফেসবুক ফ্রেন্ড নাকি অন্য কেউ?
- অন্য কেউ মানে?
- মানে তুমিই ভাল জানো।
- যা বলবা ঠিক করে বলো।
- কি আর বলব! সারাদিন অফিস করে আমার সাথে কথা বলার সময় পাওনা আর ফেসবুকে ঠিকই কথা বলার সময় পাও।
- আষ্চর্য!! কেউ মেসেজ দিলে আমি রিপ্লাই দেবো না?
সেই থেকে শুরু। প্রতিদিন ঝগড়া। গতকাল রাতে তো ফেসবুকে আর ঢোকেই নি রাগ করে।
নাহ আজকে এত তারাতারি বাসায় যাবে না। এক কাজ করলে কেমন হয়! আজ রাতে বাসায়ই যাবে না। একটু শিক্ষা হওয়া উচিত। আজ সজলের বাসায় যাবে। অনেকদিন ধরে শালা ডাকতিছে। মজাই হবে
৩
যত সময় গড়াচ্ছে, রুনার আনন্দ যেন তত বাড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে রুনার মনটা খারাপ। আকিবকে আর আগের মত কাছে পায় না। পাঁচ বছর আগে যখন ওরা প্রেম করত তখন কি ভালই না বাসত আকিব। রোজ সকালে বাসস্টপে এসে দাড়িয়ে থাকত শুধু ওকে দেখার জন্য। রুনা জানে এর জন্য ওর বন্ধুরা অনেক হাসাহাসি করত। কিন্তু আকিব কখনো গায়ে মাখত না। নির্লজ্জের মত দাড়িয়ে থাকত। রুনার খুব খারাপ লাগত। বেচারা কত অপমান সহ্য করে। কয়েকবার বলেছে যে আমার জন্য প্রতিদিন এভাবে দাড়িয়ে থাকা লাগবে না। পাগলটা কখনো শুনতো না। রুনা যদিও মুখে বলত দাড়ানো লাগবে না, কিন্তু মনেমনে চাইত এভাবেই যেন সারাজীবন চলতে থাকে। কোনোদিন ভীড়ের মধ্যে আকিবকে দেখতে না পেলে অস্থির চোখে এদিক ওদিক খুজত।
সব মেয়েরা যেই ভয়টা পায় রুনাও সেই ভয় পেতো। ভয়টা ছিলো বিয়ে। মেয়েরা বিয়ের কথা বললেই ছেলেরা বলে এখন আমার ক্যারিয়ার গড়ার সময়। অধিকাংশ সম্পর্ক ভেঙে যায় এই বিয়ের সময় এসে।
কিন্তু রুনাকে অবাক করে দিয়ে আকিব নিজেই একদিন বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলো। আনন্দে রুনা সেদিন কেঁদে দিয়েছিলো।
সেই কথা ভাবতে ভাবতে আজও রুনার চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
রুনা বাসায় বলেছিলো আকিবের কথা। কিন্তু ওর বাসা থেকে মেনে নেয় নি। রুনার বাবা খুবই রাগী মানুষ। বাবাকে যেমন ভয় করত তেমন ভালও বাসত রুনা। ওর সম্পর্কের কথা শুনে রেগে উঠলেন তিনি। মেয়ের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। শুধু কলেজে যাওয়া আর আসা। কিছুদিন অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে রাখলো রুনা। বাসে ওঠার সময় আকিবের দিকে তাকাতো না। কিন্তু একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখে আকিব দাড়িয়ে আছে। ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠলো। মনে হচ্ছে দেহে প্রাণ নাই। আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে নি রুনা। ওই রাতেই আকিবের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু রুনার বাবা মেনে নেয় নি। বাপের বাড়ি যাওয়া চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ওর।
আচ্ছা, আজকে এসব ভাবছে কেন ও? আজকে তো আনন্দ্র করবে। একটু পরে আকিব এসে পড়বে। ভাবতেই ভাল লাগছে। আহ! আজকে আবার আকিবকে নিজের মত করে কাছে পাবে।
৪
সজলের বাসায় ঢুকেই আকিব নাক কুচকালো। সারা ঘরে ধোয়াঁ। সজল সহ আরও তিনজন খাটের উপর বসে তাশ খেলছে। সবার ঠোটেই সিগারেট ঝুলছে। সামনে টাকা।
বোঝা যাচ্ছে জুয়া খেলা হচ্ছে। সারাদিন মদ, গাঁঞ্জা আর জুয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই সজলের। ওর স্কুল লাইফের বেষ্ট ফ্রেন্ড। এসএসসির পরে হঠাৎ করেই বখে যায় সজল। স্কুলে খুব ভাল ছাত্র ছিলো। কলেজে উঠে প্রথমে সিগারেট, তারপরে আস্তে আস্তে গাঁঞ্জা, মদ, হিরোইন কিছুই বাদ দেয় নি। সিগারেট অবশ্য আকিবও ধরেছিলো। কিন্তু ওই সিগারেট পর্যন্ত। কিন্তু সজলটা গোল্লায় গেলো। এখনো কিছুদিন পরপর সজল ডাকে। ওর সাথে আড্ডা না দিলে সজলের মন ভরে না।
আকিব ঘরে ঢুকতেই সজল বিশ্রী একটা গালি দিয়ে বলল
- শালা, এতদিনে তোর আসার সময় হলো??
- আমার তো আর তোর মত শুয়ে বসে থাকলে চলে না। প্রাইভেট জবের ঠেলা আছে।
- হুহ, কি আমার চাকরিজীবী!!
- তোর চেয়ে ভাল আছি। চুপ থাক শালা।
- আচ্ছা ঠিক আছে, বস। নে সিগারেট খা।
আকিব বসলো। দেখলো আজকে শালা ভালই আয়োজন করছে। পাশে অনেকগুলা গাঁজার পুটুলি দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে কোথাও বোতল লুকানো আছে সেটা আকিব নিশ্চিত। সজলের জুয়ায় কপাল ভাল। সব সময় খেলা শেষে দেখা যায় ওর লাভ আছে। আজকেও ব্যাতিক্রম হলো না। খেলা শেষে বসলো গাঁজার আড্ডা। আজকে প্রথমবারের মত গাঁঞ্জা টানলো আকিব। ধীরেধীরে রাত বাড়ছে।
ওদের আড্ডাও জমছে।
৫
বিয়ের পরে কিছুদিন প্রেম ভালবাসা খুব তীব্র থাকে। তারপরে আস্তে আস্তে সেই তীব্রতা কিছুটা কমে। ওদেরও তাই হয়েছে। আকিব তার চাকড়ি নিয়ে ব্যস্ত। রুনারও একটা চাকড়ি হয়েছিল। সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। সব কিছু ভালই চলছিলো।
কিন্তু সেদিন আকিব ফোন রেখে গোসল করতে যায় তখন ওর ফোনে কল আসে। সাদিয়া নামের একটা মেয়ে কল দিছে। স্ক্রিনের উপর জিনস আর টি-শার্ট পড়া একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠলো। রুনা অবাক হয়ে দেখলো। ফোন ধরলো না। পরপর পাঁচবার ফোন দিলো। আকিব বাথরুম থেকে বের হয়ে ফোন দেখে মুচকি হাসি দিলো। হাসিটা রুনার কাছে একটু অন্যরকম লাগলো। সেদিন থেকে মোটামুটি ওদের ঝগড়ার সূত্রপাত। এভাবে আকিবকে হারাতে পারবে না ও। কিছু একটা করতেই হবে। কয়েকদিন প্রচন্ড টেনশনে ঘুমাতে পারে নি রুনা। আকিব সব সময় বলে ও নাকি বাচ্চা। সব সময় বাচ্চাদের মত আচরন করে। আচ্ছা এটা কি বাচ্চাদের মত আচরন হচ্ছে!! একটা ছেলের একটা মেয়ে বন্ধু থাকতেই পারে!!
তারপরেই মনে হলো না, থাকতো পারে না। আকিবের আর কোনো বন্ধু থাকবে না। ও একাই থাকবে। কি করবে রুনা!! আকিবকে যে পেতেই হবে! ওকে হারালে চলবে না।
অবশেষে একটা উপায় পেয়েছে রুনা। আকিব শুনলে হয়ত আবারও বলবে ছেলেমানুষি। কিন্তু রুনার কাছে ভালবাসা। প্রচন্ড ভালবাসা। সে আকিববে সব সময় নিজের কাছে রাখবে। আকিব আর কোথাও যাবে না। আজকে রুনা শুধু বসার ঘর সাজিয়েছে। বেডরুম সাজায় নি। আজকে ওরা বেডরুমে যাবে না। আজকের ভালবাসা শারীরিক না।
আকিব যখন থাকে না তখন সারাদিন মুভি দেখে রুনা। সেখান থেকেই একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে।
দরজার উপরে একটা আঙটা লাগিয়ে সুতার মাধ্যমে একটা ধাড়ালো চাপাতি ঝুলিয়ে দিয়েছে ও। সুতার আরেক প্রান্ত দরজার সাথে। দরজা খুললেই সুতা ছুটে যাবে আর উপর থেকে চাপাতি এসে পড়বে। দরজার সাথে একটা লোহার হুকও লাগিয়েছে ও। হুকটা এমনভাবে লাগানো যেন সহজে দেখা যায়। হুকটা দেখলে ঘরে ঢোকার সময় মাথা নিচু করতেই হবে। ঠিক তখনই চাপাতি এসে ঘাড়ে পড়বে। চাপাতি যথেষ্ট ধাড়ালো এবং ভারি। মাথা কাটতে বাধ্য।
সারাদিন ধরে এটা সেট করেছে রুনা। কয়েকবার দড়জা খুলে দেখেছে ঠিকমত কাজ করে কিনা। হ্যা, ঠিকমত কাজ করে। সারাদেন একবারের জন্যও রুনার মনে হয় নি যে, ও একটা খুন করতে যাচ্ছে। ও শুধু জানে ও আকিবকে ভালবাসে। মাথাটা কাটা পড়ে গেলেই আকিব আর কারো সাথে মিশবে না। ও খুব যত্ন করে আকিবের লাশটা দেখে রাখবে। আজকে সারারাত ও আকিবের মাথাটা কোলে নিয়ে আদর করবে। শুধু রুনা আর আকিব।
আর কেউ না।
আজকে থেকে আর কেউ আকিবকে ওর কাছ থেকে দুরে নিয়ে যেতে পারবে না।
আকিব এখনো আসছে না কেন? এত রাত হবার তো কথা না।
আচ্ছা আকিব এতসব দেখলে কি বলবে!! ও কি বুঝবে রুনার ভালবাসা!!
ও কি রাগ করবে!! না কি মুচকি হেসে বলবে, "তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে"।
এই কথাটা রুনার খুব ভাল লাগে। আজকের পরে আর কখনো আকিব এটা বলতে পারবে না। একটু খারাপ লাগছে। কিন্তু ওকে তো চিরদিনের জন্য কাছে পাওয়া যাবে!
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। চমকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকালো রুনা।
১১:৩০ টা বাজে। এত রাতে কে ফোন দিবে? আকিব নাতো? ওর কোনো বিপদ হলো না তো!! ফোন ধরে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।
ফোন দিয়েছে রুনার মা। পাঁচ বছর পর। রুনা বুঝতে পারছে না কি করবে। অবশেষে রিসিভ করলো।
- হ্যালো রুনা!
- মা!!
- কেমন আছিস মা?
- আমি ভাল আছি। তোমরা কেমন আছ? তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?
- তোর বাবার অবস্থা খুব খারাপ। আর মনে হয় বাচানো সম্ভব না। শুধু তোর নাম বলছে। তোকে দেখতে চাচ্ছে।
বলেই ফোনের ওপাশ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন রুনা মা।
রুনার হঠাৎ মনে পড়লো কত ভালবাসতেন বাবা ওকে। রাগী ছিলেন কিন্তু তার রাগের পিছনে অনেক বড় একটা হৃদয় ছিলো। রুনাকে ছাড়া কিছু বুঝতেন না। সেই রুনা বাবাকে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে এসেছে। গত পাঁচবছর খোজ নেয় নি। আজ বাবা মৃত্যু শয্যায়। রুনাকে ডাকছে।
- কিরে, কিছু বলিস না কেন?
- হ্যা, মা বলো।
- তুই একটু তারাতারি আয় মা। তোর বাবা আর মনে হয় বাচবে না।
ফোন রেখেই দৌড়ে গিয়ে বেডরুমে ঢুকলো রুনা। কয়েকটা কাপড় ব্যাগে ভরলো। দুনিয়ায় সব চিন্তা তার মাথা থেকে মুছে গেছে। বাবা মৃত্যুশয্যায়, ওকে দেখতে চেয়েছেন। বারবার বাবার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এক্ষনি যেতে হবে। দৌড়ে দিয়ে দড়জা খুললো রুনা। হঠাৎ হুকে চোখ পড়তেই হুক থেকে মাথা বাচানোর জন্য মাথাটা নিচু করলো।
ততক্ষণে দড়জার উপর থেকে সুতাটা ছুটে গেছে।
©somewhere in net ltd.