নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বই কিনুন,বই পড়ুন ।বই পড়লে বই লিখতে পারবেন ।

আকতার হাফিজ

আকতার হাফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ম. হাফিজ এর পরবর্তি উপন্যাস-অসজ্ঞায়িত ক্লান্তি

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০৯

অসজ্ঞায়িত ক্লান্তি
ম. হাফিজ
অনি হাটতে হাটতে বাঁশ ঝাঁড়ে ঢুকে গেল ।নিকষ কালো অন্ধকার বাঁশ ঝাড়ে ।নিজের শরীর পর্যন্ত দেখা যায় না ।অন্ধকারে মিশে একাকার হয়ে গেছে ,অনি নিজের অস্তিত্ব আলাদা বুঝতে পারছে না ।এক সময় এই বাশ ঝাড়ে দিনের বেলাতেও ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকত,এবং ভেতরে ঢুকতে ভয় লাগতো ।অনির মনে পড়ে ,ছোট বেলায় এ বাশ ঝাড়ের পাশের পথ দিয়ে মাঠ থেকে বাড়ীতে ঢুকতে ভীষন ভয় লাগত ।তখন চোখ বন্ধ করে ডানে বামে না তাকিয়ে এক দোড়ে এ পথ টুকু পাড়ি দিত । এখন বাশ কেটে ফেলে পাতলা করে ফেলা হয়েছে,তারপরেও সূর্যের আলো কমে আসার সাথে সাথে ঝারের ভেতর অন্ধকার গভীর হতে থাকে ।গাব গাছ,শেওরা গাছ গুলো কালো কালো মুর্তির মত মনে হয় ।অনি হাটতে হাটতে পশ্চিম দিকের আতা গাছ টার নিচে এসে দাড়ালো ।গাছের একটা মোটা শাখা মাটির সমান্তরালে ঝুকে পড়েছে ।এ গাছটির বয়স কত অনির জানা নাই ,তবে এ গাছ টি অর অনেক প্রিয় । মনে পড়ে ছোট বেলায় গ্রীস্ম কালে সমান্তরাল এ ডাল টায় রশি বেধে ঝুলুনি খেলত ।এখন আর কেঊ এখানে ঝুলুনি খেলে না ।অনি একটু লাফিয়ে ডালটা ধরল,ছরাৎ করে একটা শব্দ হল ।শব্দ শুনে শেওড়া গাছ গুলোতে ঘুমিয়ে থাকা পাখি গুলো কিচির মিচির করে ঊঠলো । কতগুলো পাখি এলো মেলো উড়াউড়ি করতে লাগল ।অনির কানের পাশ দিয়ে একটা পাখি ঊড়ে গেলো ।
অনির পা দূ’টা মাটি থেকে আধ হাত উপরে ।চার পাঁচ বার দোল দিলো অনি ।অন্ধকারে নিজের শরীরের নিচের অংশ দেখতে পাচ্ছে না ,তবে আগে পিছে দোল খাচ্ছে বুঝতে পারছে ।অনি এখন ভাবতে পারছে, এ ডালে ঝুলে আত্মহত্যা করলে এভাবেই ওর শরীর টা কিছুক্ষন দূলবে ,তারপর স্থির হয়ে ঝুলতে থাকবে ।জিব্বাটা হয়তো বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে ,চোখ দু’টো ঠিকরে বেড়িয়ে আসতে পারে ।লোকে লাশ দেখে ভয় পাবে ।সকাল হবার আগে কেঊ ওর লাশের সন্ধান পাবে না । সকাল সকাল লাশের অস্তিত্ব আবিস্কার করতে পারবে সে ব্যাপারেও অনির সংশয় হয় ।
কারন বাঁশ ঝাঁড়ের এ দিক দিয়ে লোক জনের চলাচল খুব কম ।শরীর দুলুনির সাথে সাথে বুক টাও অনির অভিমানে দুলতে থাকে ।সবাই ওর জন্য কাদবে ।এই রাতটুকু পাড় হয়ে সকালেই সবাই ওর মৃত্যু সংবাদ পাবে ।সকলে দেখতে আসবে ।লাশের পাশে দাড়িয়ে নিরবে অশ্রু ফেলবে ,দুঃখ পাবে ।একদিন সবাই ভুল বুঝতে পারবে ।সত্যিটা জানতে পারবে ।সবাই অনুতাপ করবে । সেটুকুই অনির স্বান্তনা ।তোমাদের জন্য জীবন দিয়ে গেলাম ।
পায়ের নিচে ঘাসের মধ্যে একটা ঝিঝি পোকা একটানা ডেকে চলেছে ,কানে তালা লাগার মত অবস্থা ।অনির বিরক্ত লাগছে ।পা দিয়ে আচড়ে ঘাস সরিয়ে কয়েকবার ঝিঝি পোকার অবস্থান সনাক্ত করার চেস্টা করল ।কয়েক টা জোনাকি পোকা অনির চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে ।হাত বাড়িয়ে একটা জ়োনাকি ধরল ।মাথার দিকে চেপে ধরে জোনাকির আলো চোখের সামনে ধরল ।ক্ষুদ্র আলোতে নিজের শরীরটা আবছা বুঝা যাচ্ছে । হাত উচিয়ে ঊপরের আতা গাছের ডাল টার উচ্চতা আবারও পরিক্ষা করল ।জোনাকির আলোতে ডালটা দেখতে পেলো ।হাত থেকে অল্প উপরেই ডালটা ।এক সারি পিপড়া হেটে যাচ্ছে ডালটির গা বেয়ে । পিপড়ারা রাতেও ঘুমায় না !ওদের কাছে রাতদিন সমান ।জ়ীবন মৃত্যুর অনুভবও কি ওদের কাছে সমান ?মৃত্যু কে ওরা কিভাবে ভাবে ,হাত দিয়ে পিষে দিলেই মৃত্যু হবে কতগুলো পিপড়ার ।কত সহজ মৃত্যু ।অনির ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করছে এত গুলো পিপড়ার মৃত্যু. ওরা কি ভাবতে পারছে যে কোন সময় ওদের মৃত্যু হতে পারে ?আত্মহত্যার প্রবনতাও কি ওদের মধ্যে আছে?গভীর একটা ভাবান্তর হয় অনির ।পিপড়াদের মধ্যে জীবন মৃত্যুর তেমন ভাবন নেই ।ছূটে চলছে তো চলছে ।চলতে হবে সেটাই জানে ওরা ।যখন মৃত্যু আসবে, চলার শেষ হবে ।অত ভেবে ওরা চলে না ।মানুষ কেন এমন হয় না ?এত স্বাদের জীবন টা বিষিয়ে তোলে ।ঊপভোগ্য এ জীবন টাকে নিরস ও দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তোলে।আর দুঃখের ভার সাইতে না পেরে মৃত্যু তে শান্তি খোজে ।মনূষ্য মনের এ প্রবনতাটাকে অনি বিশেষ পছন্দ করতো না ।অথচ আজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে ।কেন ?প্রিয় মানুষ গুলোকে কাদানোর জন্য নাকি নিজের এই ঘৃণিত জীবন থেকে মুক্তির জন্য ? কত দিন কাদবে আপন জন ?একদিন দু’দিন ,এক সপ্তাহ ,এক মাস ,এক বছর কিংবা এক যুগ ।তার পর সব ভুলে যাবে ।ওর মৃত্যুতে পৃ্থিবীর তেমন কোন পরিবর্তনই হবে না ।শুধু অনিই চলে যাবে চলমান পৃথিবী ছেড়ে ।
শুধু যে কারনে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে সে কারন টা কিংবা এ ঘটনা টা সকলের মনে বদ্ধমুল থাকবে বহু দিন ।কারন সঠিক কি ভুল তা কেউ জানতে পারবে না । তার চেয়ে এটাই ভালো-জীবন চলুক তার আপন গতিতে ।সে গতি হোক চিতার ক্ষীপ্র গতি কিংবা পিপড়ার ধীর পায়ে ছুটে চলা ।ক্ষতি কী ?জীবন চলুক নিঃসঙ্গ,উদাস আর বিষন্ন ভাবে ।
অনির হাতের জোনাকি টা ঘাসের মধ্যে পড়ে গেছে ,আংগুলের চাপে মনে হচ্ছে ওটা মরে গেছে ।কিন্তু পেছনের আলো টুকু তখনো জ্বলছে । মরে গিয়েও আলো ছড়াচ্ছে জোনাকি টা ।অথচ অনির জীবনে তেমন কোন কৃ্তীত্বই নাই যা ওর মৃত্যুর পরেও পৃথিবী তে আলো দিতে পারে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.