![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটু পড়ি, একটু লিখি
এই আমাকে একটু ধর,গেলাম রে,আমি শেষ, এটা কোন গল্প,উপন্যাস বা রূপকথার অতিরঞ্জিত কোন কাহিনী নয়।এগুলো কয়েকদিন আগে শরিয়তপুর জেলার জাজিরা -নড়িয়া উপজেলায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মৃত্যুবরণ করার পূর্ব মুহূর্তে কয়েকটি মানুষের আর্তনাদ।
একই দিন নদীতে পরে মরে গেছে ৯জন, আর ঢেউয়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে আরো ৩ জন।
জলবায়ু শরনার্থী, নদী-সিকস্তি,নদী-পয়স্তি এই শব্দগুলো অতি পরিচিত না হলেও শব্দগুলোর নির্মমতা,ধ্বংসলীলা, সর্বগ্রাসী রূপময়তার সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম হিসাব বুঝতে এই এলাকার মানুষের তেমন একটা কাঠখড় পোড়াতে হয়নি,কেবল সময় লেগেছে ২০-২৫দিন।
চোখের সামনে নি:স্ব হয়ে যাওয়ার দৃশ্য কলমিরচরের অধিবাসীদের কাছে এখন আর নতুন নয়। কারো জন্য কারো আবেগ আর কাজ করে না বা প্রকাশ করার আগেই নিজেকে আবিষ্কার করে উদ্বাস্তু হিসেবে।
কোটি কোটি টাকার সম্পদশালী ব্যক্তিকে ক্ষণিকের মধ্যে হাতে ভিক্ষার ঝুলি ধরাতে, অন্যের জমিতে ভাড়া থাকতে বাধ্য করাতে, নিজ চোখে পূর্ব-পুরুষদের ভিটেমাটি হারানোর দৃশ্য অবলোকন করাতে, মা-বাবা বা প্রিয়জনের শেষ স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে সর্বগ্রাসী পদ্মার নৈপুণ্যের সীমা নাই।
পদ্মার ইলিশ যতটাই সুস্বাদু,এর করালগ্রাস ততটাই বিধ্বংসী।
একটি মানুষের সারা জীবনের অর্জন চোখের নিমিষে ধূলিসাৎ করতে সর্বনাশা পদ্মা কতটা পারদর্শী, কিরূপ ভয়ংকর হতে পারে তা ৭/৮ দিনে কয়েকশো পরিবার এর সর্বসান্ত হওয়া না দেখলে বুঝানো যাবে না কিছুতেই।
কৌতুক এ চব্বিশ তলা বিল্ডিং এক পলকে নির্মাণের কথা কম বেশি সবারই জানা। কিন্তু সকাল থেকে রাত অবধি শত শত একর জমি নদীগর্ভে বিলিন হওয়া এখন নির্মম বাস্তবতা। যদিও এই এলাকার আবাল- বৃদ্ধ-বণিতা কারো কাছেই এ ভাঙ্গন নিয়তি, ভাগ্যের নিষ্ঠুর ছোবল ছাড়া আর কিছুই নয় তবুও সরকারি কর্তৃপক্ষের কথার ফুলঝুরি, আশারবানীর দুরন্তপনা দেখে হাজারো কষ্টের মাঝে একটু বিনোদন ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না।
কিছুক্ষণ আগেও যে পরিবারটি সম্পদ,প্রতিপত্তি আর আত্মবিশ্বাস এর প্রতীক হিসেবে সুপরিচিত ছিল, এই ক্ষণকাল পরে সে পরিবারটিই হয়ে যায় নি:স্ব,দারিদ্র্য ও হতাশার মূর্ত প্রতীক। নিক্ষিপ্ত হয় চির হতাশার দোলাচলে।
হ্যায় রে পৃথিবী!!হায়রে পদ্মা নদী!!! গরীব মানুষগুলোর শেষ সম্বল কেড়ে নিতে কি একটুও মায়া হয় না??না, দয়া,মায়া,সহানুভূতি শুধু ভদ্র পল্লীর বাসিন্দাদের জন্যই???
এমন একটা সময় ছিল যখন পদ্মা নদীতে গোসল করতে যাওয়ার জন্য দুই কিলোমিটার হাটতে হত। নদীর গর্জন বাতাসে ভেসে আসত বহুদূর থেকে,নদীর সৌন্দর্য নিয়ে মুরব্বিরা গল্প জুড়তো রূপকথার আদলে,প্রাকৃতিক রূপময়তা দেখে শিহরিত হত প্রতিটি মানুষের কল্পনাপ্রবণ মন,আন্দোলিত মন নাচত ঢেউয়ের তালে তালে,আর কবি সাহিত্যিকগন পংক্তি বানাতো সময়ে সময়ে নদী ও নারী সৌন্দর্য ও রহস্যে তুলনাহীন।
আর আজ লাখ মানুষের ঘর বাড়ি হারোনোর মিছিলে পদ্মার গুনকীর্তন প্রতিধ্বনিত হয় আর্তচিতকারে,সব হারানোর সান্ত্বনা বিহীন শোকের আর্তনাদে।
মানুষ কিংবা পশু-পাখি,গৃহপালিত গবাদি পশু,হাস-মোরগ কেউ নিস্তার পায় না ভয়াল পদ্মার ছোবল থেকে।
চির পরিচিত আবাসভূমি মুহূর্তে ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় নদীর অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসায়।
নদীর ভালোবাসা কাউকেই বঞ্চিত করে না বিন্দু পরিমাণে ,আবাসস্থল, কবরস্থান,খেলার মাঠ,পবিত্রভূমি মসজিদ কেউ রক্ষা পায় না পদ্মার কোমল ভালোবাসা থেকে।
নিজের সর্বস্ব বিলীন হওয়া,নিজেকে উদ্বাস্তু দেখেও গ্রামবাসীর আস্থা,বিশ্বাস কোন অংশেই ঘাটতি পড়ে না মহান সৃষ্টিকর্তার উপর।তিনিই পারে সকল ঘাত-প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করতে।তিনিই তাদের শেষ আশ্রয়স্থল।
২৬/০৯/২০১৬
©somewhere in net ltd.