"স্বপ্ন দেখার অধিকার"

১৩ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২৯

সুরঞ্জন অধিকারি সচিবালয়ের গেইটে দারোয়ান এর কাজ করে।

প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই গেইট দিয়ে যাতায়াত করে দেশ বা দশের সেবা করার জন্যে।

কখনো কখনো অনেকের কাছে হয়তো দেশ সেবা আর নিজের সেবা একই কথা,নিজেও তো দেশের একজন নাগরিক তাই না!!!!!

দেশের সবচেয়ে বড় অফিস হওয়ায় এখানকার মানুষগুলোও বরেণ্য, এদের চালচলন, কথাবার্তা,পোশাক পরিচ্ছদও অভিজাত গোছের।
সুরঞ্জন এর দৃষ্টি প্রতিটি মানুষের প্রতি থাকলেও মন্ত্রী,সচিবদের গাড়িই তার দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

মন্ত্রিসভার মিটিংয়ের দিনতো গেইট এর প্রবেশ পথ থেকে কোনভাবেই চোখ সরে না,মন্ত্রী,উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের প্রতি তার আকর্ষণ এর কারণে।

মাঝে মধ্যে সে মন্ত্রীর গাড়ির কাচের দিকে তাকিয়ে আয়নায় নিজের স্বপ্ন আকে,কখনো নিজের সন্তানকে মন্ত্রী বা সচিবের আসনে, কখনো বা উর্ধবতন কর্মকর্তা হিসেবে।

ছেলে-মেয়েদের উচ্চ আসনে দেখার স্বপ্ন যেন আর শেষ হয় না। পঞ্চাশ উর্ধব সুরঞ্জন নিজের ছেলেকে /মেয়েকে সব জায়গায় দেখতে পারলেও মন্ত্রিসভার মধ্যমণি চিন্তা করতে পারে না।

পৃথিবীর সব স্বপ্ন যে সবার জন্য নয়,সব স্বপ্ন সবাই দেখতে পারে না,সব স্বপ্ন দেখার অধিকার নিয়ে সবাই জন্ম নেয় না।
সুরঞ্জন এটা ভালোভাবেই জানে,এও জানে যে,সীমাহীন স্বপ্ন দেখার খেসারত কতটা নির্মম হতে পারে।

সুরঞ্জন স্বপ্ন আকে বিশাল গাড়ি,আলিশান বাড়ি,ছেলে-মেয়েদের জন্য ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,বউকে সুন্দর সুন্দর গহনা কিনে ধনাঢ্য মানুষদের সাথে পার্টিতে যেতে।

কখনো প্রিয়জন নিয়ে আইফেল টাওয়ার দেখতে প্যারিসে বা কখনো স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে ইউ এস এ পাড়ি জমাতে।

সে স্বপ্ন দেখে জীবন থেকে অভাব নামের অনুভুতিকে চিরতরে মুছে দিতে,তার ইচ্ছা করে চির-সুখের শহরে আবাস গড়তে,লাল-নীল স্বপ্নগুলোকে স্পর্শ করে দেখতে তা আসল না নকল।

তার ইচ্ছে করে স্বপ্নকে ধরে জিজ্ঞেস করতে কেন তাকে(স্বপ্ন) ধরার,আলিঙ্গন করার বা কাছে টানার সাধ্য সবার থাকে না।

ইচ্ছে করে স্বপ্নগুলোকে বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াতে,আর পরিবারের সদস্যদের দেখাতে আমিও স্বপ্ন ছুতে পারি!!!!

আমারও ইচ্ছা করে তোমাদের ভালো রাখতে, তোমাদের জীবনকে স্বপ্নময় করে তুলতে,রঙিন স্বপ্ন সাজাতে আমারো ইচ্ছার কমতি নাই।

শুধু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সকল বাস্তবতা যেখানে আমি শুধুই একজন গেইটম্যান,নিতান্তই স্বল্প পরিসরে স্বপ্ন দেখার অধিকার নিয়ে জন্ম নেয়া একজন সাধারণ মানুষ।

০ টি +০/-০