নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা...

আল ইফরান

হৃদয়ে বাংলাদেশ

আল ইফরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামাজিক পরিবর্তনের স্বরুপ সন্ধানেঃ ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের উত্থান ও ভাংগনের সুচনা (শেষ পর্ব)

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৪

সামস্টিকতাবাদ প্রথম আঘাতটি পায় কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শিল্পায়িত সমাজে রুপান্তরের সুচনাকালে। অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এটি স্পস্ট হয়ে উঠে দেশ বিভাগের পরপরই। ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ত্ব আইন সামন্ততান্ত্রিকতাকে বিলুপ্ত করে দিয়ে এই দেশে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিল্পায়নের (প্রাইভেটাইজড ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন) পথকে সুগম করে দেয় যার ফলাফল হিসেবে আমরা দেখতে পাই অতি অল্প সময়ের মধ্যে ২২ পরিবারের উত্থান (এরা প্রকৃতার্থে সামন্তপ্রভু ছিলেন অতীতে), কর্পোরেটোক্রেসির সুচনাও তার সাথে সাথেই। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা যে উদ্দেশ্য অথবা মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে শুরু হয়েছিলো, তার অনেকটাই ব্যর্থ/ম্লান হয়ে যায় নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ের দ্বিধাবিভক্তির কারনে। স্বাধীনতার আদর্শকে (সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য) পেছনে ফেলে আমাদের পথচলা শুরু হয় পুজিবাদের সাথে। স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক রাজনীতি যথারীতি এখানে গুরুত্বপুর্ন প্রভাব বিস্তার করে। সমাজতান্ত্রিক বা আইডিয়ালিস্টিক পলিটিক্যাল ব্লক থেকে রাতারাতি বাজার-ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থায় রুপান্তরে আমাদের সমাজ একটা অপ্রস্তুত অবস্থায় সম্মুখীন হয়। আর অন্যদিকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সাংষ্কৃতিক প্রভাবে শাখা-প্রশাখা ছাড়তে শুরু করে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ। শিল্পায়নের প্রভাবে বিস্তৃতি ঘটে নগরায়নের। আর নগরায়ন মানেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, আর বিচ্ছিন্নতা থেকেই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার প্রাধান্য লাভ। অথরিটি হিসেবে চিরায়ত প্রতিষ্ঠান যেমন সমাজ, ধর্ম ও পরিবারের ক্রমহ্রাসমান প্রভাব আর রাস্ট্রের ক্রমবর্ধমান অপরিহার্যতা এই রুপান্তরের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কিন্তু রাস্ট্রের ব্যর্থতা এই জায়গাতেই যে সে পাবলিক মোরালিটির অভিভাবক, প্রাইভেট মোরালিটির নয়। এই জায়গাতে এসেই রাস্ট্র নিশ্চুপ, কারন ব্যক্তির মনে কি আছে বা তাকে কি উপায়ে নিয়ন্ত্রন করতে হবে সেটা তার জানা নেই। যাই হোক, সামাজিক কর্তৃপক্ষের ক্রমহ্রাসমান প্রভাব, যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় ভাংগন আর রাস্ট্রীয় ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার মাঝেই ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের মহীরুহ হয়ে উঠা। সামস্টিকতাকে পিষে ফেলে বাজার অর্থনীতির চক্রে আমাদের ধ্যান-ধারনায় চলে আসে ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দের ধারনা। স্যাক্রিফাইসের জায়গা দখল করতে শুরু করে বাজার ভিত্তিক কনজ্যুমারিজম (ভোগবাদ) এর অনিয়ন্ত্রিত অভ্যাস। প্রাচ্যের নৈতিকতা-ভিতিক জীবনাদর্শকে প্রতি পদক্ষেপে হারাতে শুরু করে পশ্চিমা জীবনাদর্শ, যেখানে ব্যক্তিই মুখ্য, পরিবার/ সমাজ/ রাস্ট্র নয়। ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়া, স্বাচ্ছন্দ্য, উৎকর্ষতার কাছে সমস্টির চাহিদা গৌণ বলে প্রতিভাত হয়। সেই সাথে পার্থিব সম্পদের বাসনায় অথবা যে ভাবেই হোক পার্থিব সুখ কেনার তীব্র বাসনা থেকে নিজেদের নৈতিক অবস্থানকে বিসর্জন দেয়া, যার ফলাফল হিসেবে আমরা দেখতে পাই সরকারি থেকে বেসরকারি- সকল ক্ষেত্রে দূর্বৃত্তায়নের সূচনা। ধনী হবার উদগ্র বাসনা অথবা সুখকে টাকা দিয়ে কেনার বস্তুগত ধারনায় হারিয়ে যেতে শুরু করেছি আমরা। সেই যে আমাদের মানসিকতার জগতকে ঢেকে দিলো বস্তুগত ভোগ ও সুখের ধারনা, সেখান থেকে আমরা আজও বের হয়ে আসতে পারি নি অথবা আসতে হয়তো চাইনি অথবা ফেরার রাস্তা হয়তো খুজে পাইনি। আর এভাবেই আমাদের সামাজিক মুল্যবোধ, নৈতিকতা আর সততা নামক ধারনাগুলো একে একে হারিয়ে যেতে শুরু করলো পুজিবাদের আগ্রাসী থাবার আড়ালে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ও ভোগবাদের কাছে। যার চুড়ান্ত প্রতিফলন দেখতে পাই বনবিভাগের প্রধানের বাসায় টাকার পাহাড় আর তার মা থাকেন এক প্রত্যন্ত গ্রামে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে অথবা মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে পিতা-মাতার খুন হয়ে যাওয়া। এমন এক সময় আর ব্যবস্থাকে আমরা আপন করে নিয়েছি যা অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের মানবীয় চেহারার আড়ালে দানবীয় রুপটাকে সামনে নিয়ে এসেছে, আর তার সমাধানে আমরা হাতড়ে বেড়াচ্ছি এখানে-সেখানে।
তাহলে এর থেকে উত্তরণের উপায় কি? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই অনেক ভাবে দিয়েছেন। তার মধ্যে সবচাইতে উপযুক্ত মনে হয়েছে নিজের চাহিদার সীমারেখা নির্ধারন করা। কারন যেই মুহুর্ত থেকে আমরা আমাদের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করতে পারবো (অর্থাৎ চাহিদার সীমারেখা নির্ধারন করতে পারবো), সেই মুহুর্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাজার অর্থনীতির সীমাহীন আগ্রাসনের রাশ টেনে ধরতে পারবো। সিস্টেমের ভাংগন হয়তো রোধ করা যাবে না, হয়তো প্রয়োজনও পরবে না, কারন আপনাকে কেব্দ্র করে পরিবার, পরিবারকে কেন্দ্র করে সমাজ আর সমাজ থেকে রাস্ট্র। আপনি নিজেকে পরিবর্তন করছেন মানে ব্যবস্থার পরিবর্তনের সুত্রপাত করলেন, হয় আজ না হয় আগামীর- কোন এক শুভদিনের প্রত্যাশায়। ঠিক এইজন্যই হয়তো বলা হয়েছে চ্যারিটি বিগিন্স এট হোম (আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও)।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


২২ পরিবারের মনোপলি ঘটায়েছিল আই্য়ুব খান; তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন আমেরিকান ক্যাপিটেলিজমে; তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ধনী শিল্পপতিরা চাকুরীর সৃষ্টি করবে, সাধারণ মানুষ চাকুরী করে খাবে, তিনি সেইদিক থেকে নিজের বিশ্বাস নিয়ে সৎ ছিলেন; তিনি নিয়ম শৃংখলার মানুষ ছিলেন; মনে করতেন বাংগালীরা অলস ও অল্পতেই বেঁচে থাকতে পারে, তাদেরকে বেশী দেয়ার দরকার নেই।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, শেখ সাহেব ও তাজুদ্দিন সাহেব পাকিস্তানী স্টাইলে দেশ চালায়েছেন, উনারা এর বেশী কিছু জানতেন না; পাকিস্তানের সব বাংগালী ব্যুরিক্রেটকে দেশ চালাতে দিয়ে ২ জন অলস সময় কাটায়েছেন, এসব ব্যুরোক্রেটরা উনাদের ২ জনকে পছন্দ করতো না।


১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৬

আল ইফরান বলেছেন: আইয়ুব খান যদিও সামরিক উর্দি পড়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, কিন্তু তার কিছু অবদান অনস্বীকার্য (ছাত্রদের অর্ধেক ভাড়া/ পরিবার পরিকল্পনা/ ম্যালেরিয়া নিবারন কর্মসূচী)। তবে যথারীতি উনিও বাংলার মানুষদেরকে হেয় করে দেখেছেন, আর পতনকে অনুধাবন করতে পারেন নি। আর বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন ভিন্ন প্রবাহের রাজনৈতিক চিন্তাধারা পোষণ করতেন। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচলেই তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০১

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

আল ইফরান বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আরেকটু সহজ করে, জাতির চলমান জীবন নিয়ে লিখুন।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫

আল ইফরান বলেছেন: পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। একই কথা আমার প্রফেসরও বলেন তবে সেইটা ইংরেজি নিয়ে। আমার ভাষাগত কিছু দুর্বলতা/ জটিলতা রয়েছে যার দরুন বাংলা লেখাটা সহজ করতে পারি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.