নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা...

আল ইফরান

হৃদয়ে বাংলাদেশ

আল ইফরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ইতিহাস নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ যে বিষবৃক্ষের শেকড় ছড়িয়েছে অতল গহীনে!

২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:৫২

গল্পটার শুরু ২০০৪ এর দিকে। মফস্বল শহরের আংশিক আধুনিকতা আর আংশিক কাদামাটি গন্ধ নিয়ে এসে ভর্তি হলাম রাজধানীর এক কলেজে। বামে-ডানে যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু মেধাবী মুখের আনাগোনা। প্রথম কয়েক মাস বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করে অনীহা চলে আসায় মনের খেয়ালেই ভর্তি হলাম মানবিকে। কিন্তু সেই যে প্রথমে এসে বিজ্ঞানের বিতাড়িত ছাত্র হিসেবে পরিচিতি পেলাম, তাতে নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক উভয় সংকটের মধ্যে। ক্লাস করি মানবিকের বন্ধুদের সাথে, ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে কলোনিতে আড্ডা দেই বিজ্ঞানের বন্ধুদের সাথে। যাই হোক, প্রথম ছয় মাসের সংগ্রামের ফসল (পরীক্ষার ফলাফল) ঘরে উঠলে একটু স্বস্তি পেলাম আর ধীরে ধীরে ঢাকার গতিশীলতার সাথে মানিয়ে নেয়ার চেস্টা চলতে থাকলো (এখনো সেই প্রক্রিয়া চলছে :P )।

২০০৪ এর মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময় এহসানুল হক মিলন সাহেবের তড়িৎ কর্মপদ্ধতির কারনে সৌভাগ্যবশত প্রশ্নপত্র ফাঁস বলতে কোন কিছুর সাথে আমাদের পরিচিত হতে হয় নি। ঠিক তার বিপরীতে, উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় এসে কিছু কথাবার্তা অল্পস্বল্প করে কানে আসতে শুরু করলো। তখনো হাতে মোবাইল ফোন আসে নি, বাবা খোজ নিতেন বাড়িওয়ালার টিএন্ডটি ফোনে (আর সপ্তাহান্তে বাড়ি চলে যেতাম)। হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে আমাদের সাথে পরীক্ষা দিতে আসতো গুলশান কলেজের ছেলেরা। ইংরেজি পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে দেখি তাদের অনেকেরই মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। আমার পাশের বন্ধু বললো মনে হয় ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সেট মিলে নাই। সেই প্রথম প্রশ্নপত্র ফাঁসের কালচারের সাথে আনুষ্ঠানিক পরিচয় (অনানুষ্ঠানিক পরিচয় স্কুলে থাকতে, প্রাইভেট না পড়ার কারনে প্রশ্ন কমন পরতো না কিছু বিষয়ে)। যাই হোক, পরীক্ষা শেষ করে আয়েসি ভঙ্গিতে বিআরটিসির ভলভো ডাবল ডেকারের উপরের পেছনের সিটে আরাম করে ফার্মগেট ভার্সিটি কোচিং ক্লাস করতে যাই। তখনো আমাদের ভার্সিটির এডমিশন এক্সাম সাইকেল শুরু হয় নাই। মেডিক্যাল প্রথমে, তারপর বুয়েট (অথবা আগে-পরে), তারপর অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমাদের জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু।

যাই হোক, সেই যে প্রথমে বিজ্ঞানের বন্ধুদের সাথে চলা শুরু, তারা এই পর্যন্ত আমার সাথেই ছিলো (এখনো আছে)। মেডিক্যাল এডমিশন টেস্টের আগের দিন রাতে আমার সব বন্ধুরা যখন শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তারমধ্যে আমার এলাকার এক ছেলে তার বাসা থেকে সন্ধ্যাবেলা উধাও এবং ফোন বন্ধ। সে ফিরে আসলো পরদিন রাতের বেলা। খুব সম্ভবত ফলাফল হয়ে গিয়েছিলো ২/৩ দিনের মধ্যেই। আমার রুমমেটসহ বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেইবার মেডিকেলে চান্স পায় নি, ফেয়ার এক্সাম হলে যাদের নাম মেধাতালিকায় থাকার কথা। যার উধাও হওয়ার কথা বললাম সে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়ে গিয়েছিলো। আমাদের ব্যাচে পুরো বাংলাদেশে প্রথম হওয়া ছেলেটিও আমার প্রাক্তন সহপাঠী ছিলো এবং আমি নিজে বলতে পারি সেই বছর প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলে সে হয়তো টিকতো (?), কিন্ত প্রথম সারির কোন কলেজে না। এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মেন্টাল ট্রমায় আমার পরিচিতি অনেক বন্ধুর উচ্চশিক্ষার জীবন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো। আমার মফস্বল শহরের যে'কজন সেবার মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলো, ফেয়ার এক্সাম হলে তাদের কাউকে কোন সাধারন বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির পেছনের সারির সাবজেক্ট পেতেও হিমশিম খেতে হতো। এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের আয়োজন যে করেছিলো সে আমাদেরই বন্ধু ছিলো।

এতগুলো কথা বলার একটাই কারন, এই প্রশ্নপত্র ফাঁস জেনারেশন অনেক আগে থেকেই বহাল তবিয়তে সমাজে টিকে আছে। আজকে যারা খবর দেখে ভাবছেন ২০১৩-১৮' তেই কেবল টাকা দিয়ে প্রশ্ন কেনা গিয়েছে, তারা এখনো অনেকেই হয়তো এর পেছনের ইতিহাসের খোজ রাখেন নি। এই ট্রেন্ডটা চালু হয়েছে অনেক আগে থেকে এবং বিচারহীনতার সংষ্কৃতির এই দেশ আমাদের সম্ভাবনাময় অনেক মেধাবীদের হারিয়ে যেতে অথবা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে এভাবেই। আজকে যেহেতু নাসিম সাহেব দুনিয়ার বিচারের বাইরে চলে গিয়েছেন, তাকে নিয়ে কোন কথা বলবো না। কিন্তু এই বিচারের কাঠগড়ায় মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তরসহ অনেক বড় সচিব-আমলা রাঘব-বোয়ালকে নিয়ে আসার দরকার ছিলো। এটা কোন ছিচকে অপরাধীদের কাজ নয়- দেশকে মেধাশুন্য করে দেয়ার দীর্ঘমেয়াদি এক ষড়যন্ত্রের অংশ এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারবার। যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত ঊর্ধতনদের বিচার হয় নি (হয়তো হবেও না), সেভাবে এই অপরাধের পিরামিডের সবচাইতে উচু জায়গায় থাকা তস্করদের বিচার হবে না সেইটাই বরঞ্চ স্বাভাবিক। আমি ন্যায়বিচার আশা করিও না। কেন করছি না তার পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে না হয় আরেক দিন কথা বলা যাবে।

পাদটীকাঃ ঠিক এই গল্পের বিপরীতে আরেকটা ছোট গল্প আছে। যে বন্ধু নামের গণশত্রু এই প্রশ্ন ফাঁসের আয়োজনে ছিলো, সে আমার স্কুলজীবনের আরেক মেধাবী সহপাঠীকে প্রশ্ন কেনার অফার করেছিলো। এই অফারের জবাবে তার ধনাঢ্য বাবার উত্তর ছিলোঃ ছেলে যদি মেধায় না টিকতে পারে, তাহলে পয়সা খরচ করে প্রাইভেট ইনস্টিটিউশনে পড়াব, কিন্তু প্রশ্নপত্র কিনে নকল মেধাবী হওয়ার দরকার নাই। যথারীতি সে চান্স পায় নি এবং আমার সেই সহপাঠী প্রাইভেট কলেজ থেকেই পড়াশুনা শেষ করেছে। চুড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষার কম্বাইন্ড মেরিট লিস্টে তার নাম ছিলো।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ২:১১

মা.হাসান বলেছেন: ভিতরের কারণ আপনি পোস্টেই বলেছেন। দেশকে মেধা শূন্য করার এক দীর্ঘমেয়াদি চক্রান্ত চলছে। বিশ্বিবিদ্যালয়ে এমন লোকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে পড়ানোর কোনো যোগ্যতা যাদের নেই। বিশেষ ছাত্র সংগঠনের ছাত্রনেতার আলাদা করে মেডিক্যাল প্রফেশনাল পরীক্ষা নিয়ে এক ইয়ার থেকে আরেক ইয়ারে ওঠানো হয়েছে। এর পর মেডিক্যাল কলেজে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হয়ে গিয়েছে। আফসোস দেশের মন্ত্রিদের এরকম চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হয় না। পিন্টু একটা দুবৃত্ত ছিলো, কিন্তু মিলন সাহেব নকলমুক্ত পরীক্ষার জন্য অনেক কিছু করে গেছেন।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:১৩

আল ইফরান বলেছেন: ক্ষমতা-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়নের ফলাফল যে কি ভয়াবহ এবং সুদুরপ্রসারী হয়ে উঠছে সেটা মনে হয় আমাদের দেশের মানুষজন এখনো বুঝে উঠতে পারে নি। যখন বুঝতে শিখবে তখন পলাশীর প্রান্তরের বিপরীত পার্শ্বের মাঠে কাজ করা কৃষকের মত অবস্থা হবে।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ২:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


সব জাতিতে দুষ্ট লোক থাকে; তবে বাংলাদেশে, মিলিটারী ক্ষমতা নেয়ার পর, সবকিছুতে দুষ্টরা স্হান করে নিয়েছিলো।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:১৬

আল ইফরান বলেছেন: শিক্ষাখাতের দূর্বৃত্তায়ন মিলিটারিদের হাতে হয় নি, সিভিলিয়ানদের হাতেই হয়েছে।
আমার কাছে বরঞ্চ মনে হয় মিলিটারিদের হাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ভালো হয়।
তবে গবেষণা ভিত্তিক উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোতে তাদের হস্তক্ষেপ বিপরীত ফলাফল নিয়ে আসে।

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৩:০০

রাজীব নুর বলেছেন: ২০০০ সালের পর থেকেই আমাদের দেশে শিক্ষার মান নামতে থাকে। এখন একদম তলানিতে এসে ঠেকেছে।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:১৯

আল ইফরান বলেছেন: ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এই অবনমন শুরু হয়েছে এরশাদের আমল থেকে যখন শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইংরেজি মাধ্যমের পরিবর্তে বাংলা মাধ্যম চালু হলো। আর কফিনের শেষ পেড়েক ঠুকে দেয়া হয়েছিলো এই জিপিএ ব্যবস্থা এনে (২০০০ এর পরে) যাতে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় সমগ্র শিক্ষাখাতে।

৪| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:০৪

জনৈক অপদার্থ বলেছেন: আমাদের সাথে কয়েকজন ছিলো। সবগুলা ভাল ভাল চাকরি করে এখন

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:২১

আল ইফরান বলেছেন: আমাদের সাথে যাদের কথা বললাম তাদের মধ্যে একজনের মোটামুটি ১০ বছর লেগেছিলো কোর্স শেষ করতে। আমি পারতপক্ষে ০৬' ব্যাচ এর ডাক্তারদের এড়িয়ে চলি।

৫| ২৫ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৪২

দারাশিকো বলেছেন: সে সময় প্রশ্ন ফাঁস হতো কিন্তু তার ব্যপ্তি এত কম ছিল যে বেশিরভাগ লোকের কাছে অধরাই থেকে যেতো। মোবাইল এবং তারপরে মোবাইল ইন্টারনেট এই প্রশ্নফাঁসকে অনেক গতি দিয়েছে।

এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করার দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্ত চলছেই। শুধু প্রশ্নফাঁস নয়, পড়াশোনার মান, ভর্তি পদ্ধতি, পড়াশোনার পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই পচন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলাফলও হবে দীর্ঘমেয়াদী। হয়তো আরও ৫০/৬০ বছর লেগে যাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:২৭

আল ইফরান বলেছেন: আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত। সেই সময় ঢাকার বাইরে প্রশ্ন পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব ছিলো।
একটা বড় ধরনের বিপ্লব অথবা সংঘাত ছাড়া আমাদের পক্ষে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে কয়েক বছর পরে হয়তো আমাদের দেশের ইস্যু করা সার্টিফিকেট আফ্রিকা/ ল্যাটিন আমেরিকার ব্যর্থ রাস্ট্রগুলোর ইস্যু করা সার্টিফিকেটের মত হয়ে যাবে।

৬| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

নাসরিন ইসলাম বলেছেন: নতুন পোস্ট নিয়ে ফিরে আসুন্।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৫৩

আল ইফরান বলেছেন: আপনার সুপরামর্শমুলক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারনে নতুন লেখা লিখতে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পাচ্ছি না, অফলাইনে অন্যদের লেখা পড়ে চলে যাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.