নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা...

আল ইফরান

হৃদয়ে বাংলাদেশ

আল ইফরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হেলথ জাস্টিস- সাংবিধানিক প্রবঞ্ছনা, দূর্নীতি এবং রাজনৈতিক ছলনার এক উপাখ্যানঃ শুরুর কথা

২২ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৪

ছোট একটা ব্যক্তিগত গল্প দিয়েই শুরু হোক!
১৮’তে কোর্সওয়ার্ক শেষে গ্র্যাজুয়েট ক্লাসের গবেষণার বিষয় নিয়ে প্রোগ্রাম ডিরেকটর এবং সম্ভাব্য সুপারভাইজারদের সাথে বাস্তবায়নযোগ্য বিভিন্ন টপিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা (ফোরাম শপিং এর মত) চলছিলো। ক্লাস চলাকালীন সময়েই আমি মোটামুটিভাবে ঠিক করে রেখেছিলাম যে হেলথ ইক্যুয়ালিটি (স্বাস্থ্যের অধিকারে সমতা) নিয়ে কাজ করবো। সেই অনুযায়ী আমার প্রপোজাল প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিলো আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোর যে গঠনগত দুর্বলতার কারনে আমরা রাইট টু হেলথ নিয়ে আদালতে যেতে পারি না তার একটা নির্মোহ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে যাওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপ্রেক্ষিতে।
মজার বিষয় হচ্ছে আমার প্রোগ্রাম ডিরেকটর শুনে এককথায় নাকচ করে দিলেন এবং বললেন যে এটার পরিধি ব্যাপক বিস্তৃত হয়ে যাবে। আর এই টপিকের টেকনিক্যালিটিজ ফেইস করার মত সুপারভাইজার তাদের স্টকে আপাতত নাই (আই মিন সাউথ এশিয়ান কনস্টিটিউশনাল ডিসকোর্স ডিল করার মত)। যদিও প্রফেসর সুর্য সুবেদি (নেপালি বংশোদ্ভুত) ছিলেন, কিন্তু অদ্ভুত কোন কারনেই হোক না কেন প্রোগ্রাম ডিরেকটর সেইটা রেখে বললেন রিজিওনাল ইন্টিগ্রেশন নিয়ে কাজ করতে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে এবং কিছু ব্যক্তিগত বিরুদ্ধ পরিস্থিতিকে সামলে সেই বিষয়ে কাজ করে থিসিস জমা দিয়ে দিলাম। কিন্তু মনের মধ্যে কাঁটার মত বিধে ছিলো সেই বিষয়ে কিছু লিখতে না পারার যন্ত্রণা। ২০২০ এর শেষের করোনা পরিস্থিতিতে নিজের পরিবারসুদ্ধ অসুস্থ হওয়া এবং মায়ের পাশে দু’ সপ্তাহ কোভিড ওয়ার্ডে অবস্থানের সময় কেন জানি নিজের এই ব্যর্থতার কথা বারবার মনে পড়তো। মনে হত যদি প্রোগ্রাম ডিরেক্টরকে আরেকটু কনভিন্স করতে পারতাম তাহলে কিছু না করতে পারার দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হতো না দেশে ফিরে।

যে গবেষণা প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলাম তার তিনটি দিক ছিলো, দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর দুর্বলতা বিশ্লেষন, জাতীয় বাজেটের বিপরীতে দুর্নীতির প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামো এড়িয়ে যাওয়ার অপকৌশল।
সাংবিধানিক প্রবঞ্ছনার ইতিহাসের শুরুটা সদ্য স্বাধীন দেশের সংবিধানের কারিগরদের মাধ্যমেই। কথাটা শুনতে হয়তো খুব কঠিন মনে হবে, কিন্তু প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে চলমান রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অন্যায় আচরনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন হয় পুজিবাদি আদর্শের তথাকথিত এলিট আইনবিদদের হাত দিয়ে যারা সিভিল এবং পলিটিক্যাল রাইটসকে ইকোনমিক, সোস্যাল এবং কালচারাল রাইটসের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে চেয়েছিলেন ক্যাপিটালিস্টিক হেজিমনিকে এস্টাবলিশ করার সুপ্ত বাসনা নিয়ে। পড়ন্ত সমাজতন্ত্রের সর্বশেষ প্রভাব এড়ানোর জন্য সুকৌশলে সদ্য স্বাধীন দেশকে নিয়ে যাওয়া হয় এমন এক ইউটোপিয়াতে যা কখনোই বাস্তবায়নযোগ্য ছিলো না।
ভোটের অধিকার যে কখনোই ভাতের অধিকারকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না সেইটা অনুধাবনের চুড়ান্ত ব্যর্থতা বিগত দশকগুলোতে হাজারো মানুষের জীবনকে কেড়ে নিয়েছে। যে দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে জীবন এবং সম্ভ্রম বিসর্জন দিলো সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রতিহত করার জন্য, সেই স্বাধীন দেশেই অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংষ্কৃতিক অধিকারকে সাংবিধানিকভাবে দ্বিতীয় কাতারে ঠেলে দেয়া হলো এবং বলা হলো যে এই অধিকারগুলো আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য হবে না (অনুচ্ছেদ ৮.২)। আমার সীমিত জ্ঞান বলে যে একবিংশ শতাব্দীর সাংবিধানিক আইনের ইতিহাসে কোন স্বাধীন দেশ তার নিজের নাগরিকদের সাথে এ ধরনের নিষ্ঠুর উপহাস করার কথা চিন্তায়ও আনে নি, বাস্তবায়ন তো অনেক দূরের বিষয়।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০২১ রাত ৮:৩৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সাংবিধানিক প্রবঞ্ছনার ইতিহাসের শুরুটা সদ্য স্বাধীন দেশের সংবিধানের কারিগরদের মাধ্যমেই। এই কথাটা একটু উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করলে ভালো হয়।

২৩ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:০২

আল ইফরান বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সংবিধানের কারিগর বলতে আমি সংবিধান রচনার সাথে জড়িত বোদ্ধা আইনবিদদের ভুমিকাকেই মুখ্য হিসেবে দেখি। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংষ্কৃতিক অধিকারকে 'প্রগ্রেসিভ রিয়েলাইজেশনের' কুহেলিকায় ঠেলে দিয়ে সিভিল-পলিটিক্যাল রাইটসের উপর জোর দেয়ার কর্মটি ওনারাই করেছিলেন। আর আমার মনে হয় না আমাদের আইনপ্রনেতারা (সংসদ সদস্যরা) এই বিষয়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া উপলব্ধি করতে সক্ষম ছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে আজকে আপনি-আমি-আমরা আইসিইউ/অক্সিজেনের অভাবে মরে গেলেও স্বাস্থ্যখাতের দায়িত্বশীলদের মধ্যে কাউকে সাংবিধানিক আদালতের কাঠগড়ায় দাড় করাতে পারবো না।
আশা করি আমি আপনাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।

২| ২৩ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:৩৩

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: হেলথ জাস্টিস নিয়ে আরো কিছু জানতে আগ্রহী।
আমি একসময় হেলথ কমিউনিকেশন নিয়ে কিছু পড়াশোনা করেছি। তবে হেলথ জাস্টিস নিয়ে বিস্তারিত জানা হয়নি।

২৩ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৭

আল ইফরান বলেছেন: ম্যাডাম, হেলথ জাস্টিস এমন একটা ইস্যু যার মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি ফেইস আছে। আপনি এর মধ্যে সামাজিক স্তরায়ন, রাজনৈতিক ইতিহাস, উন্নয়নের হিস্যা এবং পাবলিক পলিসির একটা বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা খুজে পাবেন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে।
তবে মুল সমস্যা সাংবিধানিক আইনের প্রয়োগ নিয়ে যেটা নিয়ে পলিসি লেভেলে কোন এক বিচিত্র ধরনের ঔদাসীন্যতা আছে।
আর একাডেমিক্যালি কেউ কিছু বলতে না চাওয়ার একটা বড় কারন হতে পারে হয়তো এই বিষয়ে আমাদের দেশে অথরিটেটিভ কাজ এখন পর্যন্ত খুব কমই হয়েছে (আর হলেও সেটা আমার সীমিত জ্ঞান খুজে পায় নি)। তবে ব্যক্তিগত পড়াশুনার তাগিদে যতটুকু পড়া হয়েছে তাতে মনে হয়েছে আমাদের সমাজবিজ্ঞানী এবং আইনবিদদের মধ্যে এ বিষয়ে কথা বলতে ভীষন অনাগ্রহ (পাবলিক হেলথে পড়াশুনা করা ডাক্তাররা বিবেকের দায় থেকেই হোক অথবা শুধু পাবলিশ করার জন্যই হোক না কেন, অল্প-বিস্তর লিখেছেন)

৩| ২৩ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৩:২১

আখেনাটেন বলেছেন: প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে চলমান রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অন্যায় আচরনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন হয় পুজিবাদি আদর্শের তথাকথিত এলিট আইনবিদদের হাত দিয়ে যারা সিভিল এবং পলিটিক্যাল রাইটসকে ইকোনমিক, সোস্যাল এবং কালচারাল রাইটসের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে চেয়েছিলেন ক্যাপিটালিস্টিক হেজিমনিকে এস্টাবলিশ করার সুপ্ত বাসনা নিয়ে। -- দুর্দান্ত বলেছেন।

সমাজে যেখানে এক শ্রেণি অসমতাকে টিকিয়ে রাখাকেই নিজেদের ক্ষমতার ভিত্তিমূল মনে করে, সেখানে স্বাস্থ্য সমতা, শিক্ষার সমতা এগুলো যে নিছক একটি ইউটোপিয়ান বুলি হবে সেটা আর বলতে!

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাত এখন উপরের তলার লোকেদের রুটিরুজির বড় যোগানদাতা.....ফলে সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি অসমতা বাড়লেও অবাক হবো না......এখন দেশে একটি ক্ষুদ্র শ্রেণি সকল দিক থেকে উঠছে, আর বাকিরা নামছে....এই গ্যাপ আরো বাড়বে ভবিষ্যতে বলে মনে করি...... :(

২৩ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০১

আল ইফরান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যেই ক্রমবর্ধমান গ্যাপের কথা বলেছেন সেইটা উপলব্ধির দায় ছিলো যারা আমাদের সংবিধান রচনা করেছেন তাদের। অনেকগুলো সংশোধন হয়েছে সংবিধানের, আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে সবচাইতে প্রয়োজনীয় ছিলো এই স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আবাসনের অধিকারকে আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য করার জন্য নতুন কোন সংশোধন নিয়ে আসা। দূর্ভাগ্যবশত আপনার সাথে আমিও একমত যে বৈষম্য আরো বাড়বে সামনের দিনগুলোতে, কারন বিশেষ এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তায়নকে আমরা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছি। তার উপরে আছে সরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতের চলমান নিয়ন্ত্রনহীণ দূর্নীতি আর অন্যায়ের পাহাড়।
সামনের দিনগুলোতে তার সাথে যুক্ত হবে আরো বড় ইস্যু যা হয়তো কেউই আঁচ করতে পারছে নাঃ ২০২৬ এর পরে বাজারের ২০% প্যাটেন্টেড লাইফ সেভিং ড্রাগ তৈরির ফ্রি লাইসেন্স (যা এলডিসি হিসেবে আমরা পাই) আমাদের দেশী ঔষধ কোম্পানিগুলোর হাতে আর থাকবে না। ড্রাগ প্রাইসিং নিয়ন্ত্রনের কোন পরিকল্পনাও কারো কাছে এই মুহুর্তে নেই। আল্লাহর হাতে নিজেকে ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৫২

শেরজা তপন বলেছেন: এমন অনিয়মিত হলে চলবে আল ইরফান ভাই। আর একটু সচল হউন

ভাল থাকলে যোগাযোগ রাখবেন।

০২ রা আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৪৬

আল ইফরান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, শেরজা তপন ভাই।
সচল হতে চেয়েও পারছি না বিবিধ ব্যস্ততার (পারিবারিক, পেশাগত ইত্যাদি) কারনে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেই আবার নিয়মিত হবো, ইনশাআল্লাহ।

৫| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৪

নাহল তরকারি বলেছেন:
আপনার বাসা মুন্সীগঞ্জ এর কোথায়?

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৭

আল ইফরান বলেছেন: আমি সদরের বাসিন্দা কিন্তু সেখানে থাকি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.