![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানতে চাই, জানাতে চাই মানুষের অনুভুতির এপিঠ ওপিঠ
(এক ব্লগারের বক্তব্যের প্রতিবাদে)
৫২তে আমাদের ভাষা আন্দোলন হয়েছিল ভাষার স্বাধীনতার জন্যে। অর্থাৎ জন্মের পরে আমার মাকে আমি যে ভাষায় কথা বলতে শুনেছি সে ভাষায় যেন আজীবন আমি কথা বলতে পারি। আমার মাকে আমি কখনও প্রমিত ভাষায় কথা বলতে শুনিনি। গীতিকার ও সুরকার আব্দুল লতিফ, যিনি সেই বিখ্যাত গান ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’-এর স্রষ্টা তার মা-ও প্রমিত ভাষায় কথা বলতেন কিনা আমি জানি না। তবে জানতে চাই এদেশের সকল বাঙ্গালীকে প্রমিত ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত করবার চেষ্টায় যারা তাদের মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন তারা কি পক্ষান্তরে আমাদের মায়ের ভাষাকে কেড়ে নিতে চাইছেন?
ভাব প্রকাশ আগে না ব্যাকরণ আগে- এই তর্ক অনেক দিনের। আমি মনের ভাব প্রকাশের পক্ষে। তাছাড়া ভাষার বিবর্তন আসবেই। তাই তৎসম থেকে তদ্ভব। চন্দ্র থেকে চাঁদ, পত্র থেকে পাতা। এছাড়া বিদেশী ভাষারও স্থান বাংলায় রয়েছে, যা ব্যাকরণ সম্মত। নয়ত আজ আমাদের দ্বিচক্রযান, কেদারা, পেয়ালা এসব বলতে হত। অনেকেই হয়ত বলবেন বিদেশী ভাষা শুদ্ধরূপে বাংলায় গৃহীত হতেই পারে। তাদের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি যে, হাসপাতাল শুদ্ধ ইংরাজি নয়। শুদ্ধটা হল হসপিটাল।এমনি ভাবে ব্যবহারের বা বোঝার সুবিধার জন্যে যুগ যুগ ধরে বহু বাংলা শব্দের পরিবর্তন হয়েছে। যুক্ত হয়েছে অনেক বাংলিস শব্দ যা প্রমিত ভাষার ভক্তরা নিজের অজান্তেই প্রতিদিন ব্যবহার করছেন। আজ আমাদের কাছে যা বাংলিস তা হয়ত ১০ বছর পরে - যদি বাংগালী হৃদয় গ্রহণ করে তবে - তা শুদ্ধ বাংলায় পরিনত হবে। যেমন সেকালে হসপিটালের বাংলিস বা ভুল উচ্চারন ছিল হাসপাতাল । আরবীতে হাজী বলে কোন শব্দ নেই। আছে আল-হাজ্জ্ব। এক সময় অনেক মাওলানা হাজী শব্দটার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। অথচ হাজী শব্দটা আজ বাংলা শব্দ সম্ভারে যুক্ত হয়েছে।
আবার একথাও সত্য যে ৮০র দশকে 'টেন্ডালী করবি না', 'বড় মাই ডিয়ার লোক', 'গিরিপিল্পি করিস ক্যান' ৯০র দিকে 'ঘিরিঙ্গি প্যাচ' ইত্যাদি অনেক শব্দের ব্যবহার শুরু হয় যা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ একটাই। বাংগালী হৃদয় এই শব্দগুলোকে গ্রহণ করে নাই। সুতরাং এখানে ভীত হবার তো কিছু দেখি না। যা থাকবার তা থাকবে। প্রমিত ভাষা প্রেমীরা তা ঠেকাতে পারবে না, আর যা হারিয়ে যাবার তা কেউ ধরে রাখতে পারবে না। তাহলে মজা করবার জন্যে অথবা বুঝবার বা বলবার সুবিধার স্বার্থে যদি কেউ নুতন নুতন শব্দ তৈরী করে তাতে দোষের কি। সময়ই বলে দেবে কোনটা থাকবে আর কোনটা থাকবে না।
অনেকেই বলেন বলার ভাষা আর লেখার ভাষা এক হওয়া উচিৎ না। যারা এমনটা বলেন তাদের সত্যি কতটা সাহিত্য জ্ঞান বা ভাষা জ্ঞান আছে তা নিয়ে আমি সন্দিহান। আমার বিশ্বাস তারা জাতে উঠবার জন্যে বা দৃষ্টি আর্কষনের জন্যেই এমনটা করে থাকেন। নয়ত তারা কি করে ভুলে যান যে কালিদাস তার লেখার ভাষাকে সহজ করতে গিয়ে সাহিত্যিক সমাজের কাছে হয়েছিল একঘরে। অথচ পাঠকদের কাছে হয়েছিল সমাদৃত। আজ কালি দাসকে আমরা চিনি। যারা তাকে এক ঘরে করেছিল তাদের নয়। শুধু তাই না, এক সময় সাহিত্যে সাধু ভাষার প্রচলন ছিল। যেমন বঙ্কিম চন্দ্র, ঈশ্বর চন্দ্র ইত্যাদি। তারও আগের সাহিত্যিকদের ভাষা ছিল আরো জটিল। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র যদি তাদের সাহিত্যে চলতি ভাষার ব্যবহার না করত তবে আজকেও আমাদের সাধু ভাষায় স্কুলের পরীক্ষায় রচনা লিখতে হত। মুখের ভাষা আর লেখার ভাষার তফাৎটুকু দূর করবার চেষ্টা যুগে যুগে অনেক কবি সাহিত্যিকরাই করেছেন। জীবনানন্দের কবিতায় সাধু চলিতের মিশ্রণ রয়েছে। ‘কি কথা তাহার সাথে, তার সাথে’-এই লাইনটি অনেক সাহিত্য প্রেমিকের কাছেই জনপ্রিয়। নজরুল তার গান, কবিতায় অনেক ধরনের ভাষার মিশ্রন ঘটিয়েছেন- ‘আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফাস গে-ই’। জসীম উদ্দিনের একটি কবিতার বইএর শুরুতে লেখা ছিল ‘এই বইএর সকল বানান ই-কার দিয়ে লেখা। অর্থাৎ নদী বানান নদি, বাড়ী বানান বাড়ি ইত্যাদি। ভাষাকে সরলীকরণের চেষ্টা নজরুল, রবীন্দ্র, জীবনান্দ, জসীম উদ্দিন সবাই করেছেন। তবে কি প্রমিত ভাষা আন্দোলনকারীরা তাদেরও কাঠগোড়ার দাঁড় করাবেন।
সব শেষে বলতে চাই। ভাষা মানুষের জন্যে। মানুষ ভাষার জন্যে নয়। তবে অর্থাটুকু অবশ্যই স্পষ্ট হওয়া চাই। যারা আমাদেরকে আমাদের মায়ের মুখে শোনা ভাষায় কথা বলতে বাঁধা দেয় তাদের বিরুদ্ধে এই ফেব্রুয়ারীতেই একটি পাল্টা আন্দোলন গড়ে তোলা উচিৎ।
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৩৮
ইহতিশাম আহমদ বলেছেন: অবশ্যই। বড় কষ্ট হয় ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েদের দেখে। না বাংগালী না ইংরেজ। অনেকে বলেন হায়ার এডুকেশনের জন্যে ইংরেজির প্রয়োজন। আমার পরিবারের অনেকেই বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছে তাদের সবাই বাংলা মিডিয়ামে পড়া।
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:৫৩
রাইসুল জুহালা বলেছেন: অসাধারন লেখা। গতকাল একবার এই পোস্টে এসেছিলাম। লেখা খুব ভাল লেগেছিল, কিন্তু কমেন্ট করার সময় ছিল না।
হাজী শব্দের ব্যাপারটা জানা ছিল না। আসলে ভাষাগত দিক থেকে আমরা এক ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি বলে আমি মনে করি। সব ভাষারই শুদ্ধ এবং অশুদ্ধ রুপ আছে। কিন্তু আমাদের তথাকথিত অশুদ্ধ রুপটা আমরা বাইরে ব্যবহার করতে আড়ষ্ট থাকি। যারা জিওফ বয়কটের ধারাভাষ্য শুনেছেন, তারা জানবেন যে উনি কিন্তু প্রচুর শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারন ব্যবহার করেন। বাংলায় এই ট্রেন্ডটা কেন যেন চালু করা যাচ্ছে না। আমি নিজেও এই দোষ থেকে মুক্ত না।
প্লাস আগেই দিয়েছিলাম।
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:১৩
ইহতিশাম আহমদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যর জন্যে ধন্যবাদ। আপনাকে আরেকটি তথ্য দেই আমি যখন স্কুলে পড়তাম (৮০এর দশকের মাঝামাঝি) বাংলা ব্যাকরণ বইতে চলিত ভাষার সংগাতে লেখা ছিল পশ্চিম বঙ্গের অধিবাসীরা যে ভাষায় কথা বলে তাকে চলতি ভাষা বলে। সেই ছোট বেলায় ব্যাপারটা আমাকে বেশ ধাঁধায় ফেলেছিল- তাহলে আমরা কি ভাষায় কথা বলি? কথা বলে যদি সাচ্ছন্দ না পাওয়া যায় তবে সালম রফিক বরকতেরা রক্ত দিল কেন? তারা কি প্রমিত ভাষায় কথা বলত? তবে অবশ্যই আপনি যা বলবেন তার অর্থ যেন বোধগম্য হয়। এটা খুবই জরুরী। আর ভাষার নিয়ম আপনা আপনিই একসময় দাঁড়িয়ে যাবে। আমেরিকানরা তাদের ইংরেজিকে অনেক সহজ করে নিয়েছে। বৃটিশরা তা মেনে নিতে পারে না। তাতে মার্কিনীদের কিছু যায় আসে না। অথচ আমরা রক্ত দিলাম, বাংলাকে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেলাম কিন্তু তারপরও আমাদের কথা বলার নিয়ম নির্ধারণ করবে পশ্চিমবঙ্গ। এটা মানা যায় না।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:১২
""শ্রাবণী"" বলেছেন: হুমমম...
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:১৬
ইহতিশাম আহমদ বলেছেন: খুব বেশী কি ভাবনায় ফেললাম?
৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০০
ইশতিয়াক মাহমুদ বলেছেন: ভালই বলেছেন। আরও ভাল হত যদি আপনি সেই ব্লগারের লিংকটা দিতেন। যেখানে বলেছন এক ব্লগারের বক্তব্যের প্রতিবাদে দেয়া পোস্ট। ভাষার পরিবর্তন থাকবেই, সবকিছুরই পরিবর্তন আছে।
২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৪৪
ইহতিশাম আহমদ বলেছেন: সামুতে আরেকটি ব্যক্তিগত যুদ্ধের সংখ্যা বাড়াতে চাইনি। আসলে 'এক ব্লগারের বক্তব্যের প্রতিবাদে' না লিখে আমার বোধ হয় লেখা উচিৎ ছিল 'এক ব্লগারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে'।
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৭
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলেছেন: +। স্কুল গুলোতে এবং ইংলিশ মিডিয়াম গুলোতেও বাংলা শিক্ষার ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। দুঃখের বিষয় বেশীর ভাগ ইংরেজী মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলায় লিখতে পারাতো দূর ভাল ভাবে বাংলা পড়তেও পারে না। ধন্যবাদ।