![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানতে চাই, জানাতে চাই মানুষের অনুভুতির এপিঠ ওপিঠ
আপনি যদি বর্ণচোরা বা কালার ব্লাইড কালার না হয়ে থাকেন তবে আপনি অবশ্যই জানেন কোনটা লাল রং আর কোনটা কালো, হলুদ, সবুজ বা অন্য কোন রং। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রংটি লাল, হলুদ বা সবুজ যা-ই হোক না কেন, তা দিয়ে কি কি কাজ করা যেতে পারে সেটা বুঝতে গেলে আপনাকে মূলতঃ তিনটি বিষয়েধারনা থাকতে হবে। ১. রংয়ের ঘনত্ব, ২. রংয়ের উজ্জ্বলতা এবং ৩. রংয়ের তাপমাত্র বা উষ্ণতা।
ঘনত্ব বলতে পদার্থ বিজ্ঞানে যা বোঝায় এখানেও তাই বোঝায়। মানে আপনার লাল রংটি হালকা লাল না গাঢ় লাল? অথবা সবুজ রংটি হালকা সবুজ নাকি গাঢ় সবুজ? কারণ একই রং যখন গাঢ় হয় তখন তার অনুভুতি এক রকম আর হালকা হলে তার অনুভুতি আরেক রকম। যেমন, দুঃখ বা বেদনা বোঝাতে আমরা গাঢ় নীলকে ব্যবহার করি। অপর দিকে স্বপ্ন বোঝাতে আমরা এই নীলেরই হালকা শেডকে ব্যবহার করি।
সব লাল সিঁদুর লাল হয় না অথবা সব হলুদ বর বধুর গায়ে দেয়া হলুদ হয় না। গুঁড়া মরিচের লাল আর সিঁদুরের লাল ঘনত্ব বা গাঢ়ত্বের দিক থেকে একই হলেও মরিচের লালে এক ধরনের ম্যাটম্যাটে ভাব রয়েছে যা সিদুঁরে নেই। সিঁদুরের লালেরয়েছে চকচকে ভাব । একই ভাবে জন্ডিস রোগীর হলদে ত্বকে এক ধরনের ফ্যাকাশে ভাব রয়েছে যা আমাদের অসুস্থতার অনুভুতি দেয়। কিন্তু নব বধূর হলুদ রাংগানো ত্বক আমাদের মনে এক ধরনের স্বপ্নীল অনুভুতি জাগায়। কারণ সেই হলুদে এক ধরনের উজ্জ্বলতা রয়েছে। অর্থাৎ কোন রংয়ের ঘনত্ব এক হওয়ার পরেও উজ্জলতার তারতম্যের কারণে আমাদের মনে তা ভিন্ন ভিন্ন আমেজ প্রদান করে।
রংকে বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে এর উষ্ণতা। জগতের সমস্ত রংকে মূলতঃ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। Cool এবং Warm,ঈষৎ ঠান্ডা এবং উষ্ণ। প্রথমেই বুঝে নেই Cool এবং Warm বলতে আমরা কি বোঝাতে চাইছি-
যদি বলা হয় ‘ছেলেটির মাঝে এক ধরনের ঠান্ডা ভাব আছে’তার অর্থ কিন্তু এই নয় যে ছেলেটি কুনো ব্যাঙএর মত শীতল রক্তের অধিকারী। বরং এখানে ঠান্ডা বা কুল বলতে আমরা বুঝি ছেলেটি শান্ত স্বভাবের বা তার মাঝে আবেগ, উত্তেজনা অথবা আন্তরিকতার আধিক্য নেই। আরো একটু গভীরে যেতে চাইলে বলা যায় অবহেলা, উপেক্ষা, আবেগহীনতা, গতিহীনতা, নিঃস্তেজতা, উদাসীনতা অথবা দুঃখ বোধ বা নিষ্ঠুরতা অথবা সৌজন্য বোধ ইত্যাদির অভাব ছেলেটির মাঝে থাকায় তাকে দেখে ঠান্ডা বা শীতল স্বভাবের মনে হয়।
অপর দিকে যদি বলা হয় ‘সে আমাকে উষ্ণ অর্ভ্যথনা জানালো’, তার মানে এই নয় যে তার বাসায় যাওয়ার সাথে সাথেই সে আমাকে গরম পানি দিয়ে গোছস করিয়ে দিয়েছে। উষ্ণ বা ওয়ার্ম বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে তার অভ্যর্থনায় আবেগ ছিল, আগ্রহ, আন্তরিকতা, আনন্দ, উত্তেজনা ছিল। সহানুভুতি আর স্নেহ ছিল। দেখা মাত্রেই বুকে টেনে নেয়ার মত গতিশীলতা ছিল।
রংয়ের মাঝেও মানুষের অনুভুতিতে গতিশীলতা বা গতিহীনতা জাগানোর সার্মথ্য রয়েছে। লাল, গোলাপী, কমলা, বেগুনী, হলুদ, ম্যাজেন্টা এই সব রংয়ের মাঝে উষ্ণ বা Warm বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নীল, ছাই, পীত, কফি, জলপাই ইত্যাদি রংয়ের বৈশিষ্ট্য ঈষৎ ঠান্ডা বা Cool. সবুজ রংটির সামান্য চারিত্রিক সমস্যা রয়েছে। সবুজের মাঝে ক্ষেত্র বিশেষে Cool এবং Warm উভয় বেশিষ্ট্যই পাওয়া যায়। সাদা এবং কালো নিরোপেক্ষ রং, অর্থাৎ একই সাথে Cool এবং Warm দুটো বৈশিষ্টই ধারন করে। আর তাই সাদা কালো চোখ বন্ধ করে সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়।
এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আপনার নায়িকার চরিত্র যদি চঞ্চল প্রজাপতির মত হয়ে থাকে তবে তাকে কুল কালারের পোষাক পরানো যাবে না। যদি পরান তো বেচারা অভিনেত্রী অনেক খাটাখাটুনী করে নিজের অভিনয়ের মাঝে যে চঞ্চলতা নিয়ে এসেছে কুল কালারের পোষাকটি তার সবটুকুই খেয়ে ফেলবে। ফলশ্রুতিতে মেয়েটি ক্রমাগত পরিচলকের গালি খাওয়ার পরও কোন ভাবেই চরিত্রটি আশানুরূপ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে না। বিষয়টা অনেকটা কাঁচা কলার তরকারী রান্নার সময় এক টুকরো আদা দেয়ার মত। যতই চুলার জ্বাল বাড়ান না কেন, কলা আর কিছুতেই সিদ্ধ হবে না। সুতরাং আপনি যদি পরিচালক হন তবে আপনার নায়িকাকে গালাগালি না করে ওয়ার্ম কালারের পোষাক পরিয়ে দেন দেখবেন মেয়েটি যদি সামান্য চঞ্চল আচরণও করে সেটাতেই তাকে কয়েকগুণ বেশী চঞ্চল দেখাবে।
অপর দিকে আপনার ভিলেন ঠান্ডা মাথার একজন খুনি, তাকে আপনি ওয়ার্ম কালারের জামা পরিয়েছেন। যার ফলে ভিলেন যতই চোখ মুখ কুচঁকে তাকাক না কেন তাকে আর ভয়াবহ দেখায় না। দোষটা আপনার অভিনেতা বা অভিনেত্রীর নয়। স্বভাবের সাথে মিল রেখে পোষক পরান দেখবেন তার জন্যে কঠিন অভিনয়টাও অনেক সহজ হয়ে গেছে।
এবার একটু ভিন্ন প্রসংগে আসি। ধরা যাক নায়িকার গায়ের রং শ্যামলা। তাকে আবগ প্রবণ বানাতে গিয়ে যদি আপনি গোলাপী বা কমলা রংয়ে শাড়ী পড়ান তবে শুধু শাড়ীটাকেই দেখা যাবে। নায়িকাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ নায়কার শ্যামলা ত্বকটির বৈশিষ্ট কুল বা ঈষৎ ঠান্ডা। সুতরাং গোলাপী বা কমলার মত শক্তিশালী ওয়ার্ম কালারের সাথে লড়াই করে সে জিততে পারবে না। তাহলে উপায়?
উপায় আছে। এতক্ষণ আপনাদের শুধু কোন রংটি জন্মগত ভাবে বা জেনেটিকালি ওয়ার্ম আর কুল সেই নিয়েই বলেছি। জেনে অবাক হবেন কুল কালারকে ওয়ার্ম বা ওয়ার্মকে কুল কালারে পরিনত করাও সম্ভব। শুরুতে রংয়ের ঘনত্ব এবং উজ্জ্বলতা নিয়ে কথা বলেছি। হালকা এবং উজ্জল রং, গাঢ় বা ফ্যাকাশে রংয়ের তুলনায় ওয়ার্ম বৈশিষ্ট ধারণ করে। মানে নীল রং, যা জেনেটিকালী কুল, তাকে যদি হালকা করেন বা উজ্জ্বল করেন তবে তা অনেকখানি ওয়ার্ম আচরন করে। একই ভাবে লাল, বেগুনী, হলুদ ইত্যাদি ওয়ার্ম রংকে গাঢ় করলে বা ম্লান, ফ্যাকাসে করলে তা অনেকখানি কুল আচরণ করে। আমি অনেকখানি শব্দটা ব্যবহার করছি এই জন্যে যে হালকা নীলের চেয়ে হালকা কমলা অবশ্যই বেশী ওয়ার্ম হবে। কারণ কমলা জেনেটিকালী একটি ওয়ার্ম কালার। একই ভাবে গাঢ় লালের চেয়ে গাঢ় কফি রংটি অনেক বেশী কুল হবে।
সুতরাং আপনার শ্যামলা বর্ণের নায়িকাকে আপনি যদি গাঢ় এবং চকচকে নয় এমন লাল বা গোলাপী, হলুদ, বেগুনী কিংবা হলুদ রংয়ের শাড়ী পরান তবে তাকে আবেগপ্রবণওদেখাবে, সেই সাথে তার পোষাক তার গায়ের রংয়ের সাথে লড়াইও করবে না। একই ভাবে আপনি মেয়েটিকে হালকা নীল রংয়ের চকচকে সিল্কের শাড়িও পরাতে পারেন। তাতেও সমস্যার সমাধান হবে। খেয়াল করে দেখবেন হলিউডি কৃষ্ণাঙ্গ নায়িকারা সচরাচর গাঢ় রংয়ের পোষাক ব্যবহার করে থাকে। যদি কোন কারণে হালকা রংয়ের পোষাক পরতে হয় তো সেটা কোন ভাবেই উজ্জ্বল হয় না। পার্টি বা আনন্দঘন দৃশ্যে আনন্দ বা উচ্ছলতা প্রকাশ করার জন্যে উজ্জ্বল পোষাক পরলেও তার রং গাঢ় থাকে অথবা রংটি জেনেটিকালী কুল হয়ে থাকে। কোন ভাবেই তাদের পোষাকের রং তাদের ত্বকের রংয়ের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় না। অবশ্য কাহিনীর প্রয়োজনে মাঝে মাঝেনায়িকাকে উদ্ভট সাজে সাজতে হয়, সেটা ভিন্ন ব্যপার।
প্রশ্ন করতে পারেন ফর্সা চেহারার কোন মেয়েকে যদি বিষাদগ্রস্থ দেখাতে হয়, তবে? উত্তরটা এতক্ষণে আপনাদের অনেকেরই জানা হয়ে গেছে। পোষাকের রং হবে কুল গোত্রীয়। যদি তাতে খুব বেশী বেমানান দেখায় তবে ব্যবহার করতে হবে ওয়ার্ম কালারের গাঢ় ও অনুজ্জ্বল শেড। আমি যদিও বার বার নায়িকার কথা বলেছি, বিষয়টা কিন্তু নায়ক, ভিলেন বা যে কোন চরিত্রের জন্যে সমান ভাবে প্রজোয্য।
শুধু পোষাক নয়, ঘরের রং, যে গাড়ি নায়ক নায়িকা ব্যবহার করছে তার রং, এমন কি প্রকৃতি বা চারপাশে কোথায় কি রং আছে সেটাও আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে। ধরেন, উচ্ছল রোমান্টিক একটি সিন ধূষর রংয়ের কোন বাড়ির সামনে শুট করছেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি সেই দৃশ্যে রোমান্টিকতার চেয়ে বিষাদতাই বেশী প্রাধান্য পাবে। একই ভাবে উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের সর্ষে ক্ষেতের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি যদি কান্নাকাটির সিন করতে চান তবে সে গুঁড়ে বালি। অবশ্য আপনি যদি কোন ভাবে সর্ষে ক্ষেতের রং পাল্টে দিতে পারেন, যেমন পড়ন্ত বিকালে বা ভোরে ক্ষেতের রং গাঢ় হলুদ হবে, সেই সাথে উজ্জ্বলতাও থাকবে না। তখন আপনি মন খুলে সেখানে কান্নাকাটির দৃশ্য শুট করতে পারবেন।
মনে রাখবেন ফিল্ম একটি সমষ্টিগত শিল্প। শুধু ভাল অভিনয় হলেই বা ভাল ক্যামেরাওয়ার্ক বা ভাল কাহিনী হলেই সেটা শিল্পে পরিনত হবে না। এখানে ছোট ছোট খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকেও একই সুতায় বা একই সুরে যদি বাঁধতেতে না পারেন তবে আপনি কাংক্ষিত ফলটি পাবেন না। শেষে পরিচালক হিসাবে নিজের অক্ষমতাকে ঢাকবার জন্যে বলবেন,‘আমাদের বাজেট কম ছিল তো তাই জিনিসটা ঠিক ব্যাটে বলে হল না।’
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৪
ইহতিশাম আহমদ বলেছেন: ধন্যবাদ....
২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
প্রয়োজনীয় ও দরকারী পোস্ট।
ধন্যবাদ শেয়ারে।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৩২
ইহতিশাম আহমদ বলেছেন: ধন্যবাদ.....
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬
কবি আলমগীর গৌরিপুরী বলেছেন: কারনে অকারনে কাজে আসবে।।।।।।। তা