নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

ইহতিশাম আহমদ

জানতে চাই, জানাতে চাই মানুষের অনুভুতির এপিঠ ওপিঠ

ইহতিশাম আহমদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্রিক মানসিকতা ২ - পেশা নাকি পছন্দ (পর্ব-১)

২৬ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪


(রচনাটি দুই পর্বে বিভক্ত)

প্রায় সময়ই ফেসবুকের ইনবক্সে চলচ্চিত্র বিষয়ে আগ্রহী তরুনদের ম্যাসেজ পাই। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন প্রশ্ন। “ফ্রেম ঠিক হয় নাই বলতে কি বোঝায়? ফ্রেম কি ভাবে ভুল হয়, একটু বলবেন?” “ক্লোজ শটে হার্ড লাইট ব্যবহার করা উচিৎ নাকি সফ্ট লাইট?” অথবা “ভাই, শট ডিভিশন কাকে বলে, একটু যদি বুঝায় বলতেন। অনেককে প্রশ্ন করছি। কেউই ঠিক মত বলতে চায় না।” অনেকে তো আবার ইংলিশ বা হিন্দি সিনেমার কোন দৃশ্যের স্ক্রীন শট পাঠিয়ে জানতে চায় তার শর্ট ফিল্মে এই জাতীয় লাইট করতে গেলে কি কি লাগবে? অথবা ভিলেনের এই কপাল থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ার মেক-আপটা কি ভাবে করতে হবে? ইত্যাদি, ইত্যাদি।

প্রশ্নগুলো শুনে যে কেউই মানতে বাধ্য হবেন যে প্রশ্ন কর্তার চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগের অন্ত নেই। কথা সত্য। এমন কি যদি বলা হয়, সারা দিনে এরা নিজেদের আপন গার্লফ্রেন্ডকে যত না সময় দেয়, তারচেয়ে বেশী সময় চলচ্চিত্রকে দেয়, তো বাড়িয়ে বলা হবে না। নাটক সিনেমার সাথে জড়িত থাকা যাবে না এমন শর্ত দেয়া গার্লফ্রেন্ডের সাথে এরা চোখ বন্ধ করে ব্রেক-আপ করে ফেলে। ব্রেক-আপের পরে অবশ্য কষ্ট পায়। কিন্তু সিনেমার বিষয়ে তাদের নো কম্পোমাইজ। এরা সিনেমা খায়, সিনেমা পরে, সিনেমার সাথে ঘুমায়। এক কথায়, এরা সিনেমা পাগল। প্রশ্ন হলো, এই সব সিনেমা পাগল তরুনেরা কি আমাদের চলচ্চিত্রের মন্দা ভাব কাটাতে পারবে? পারবে বাংলাদেশের জন্যে কান, ভেনিস বা বার্লিন-এর মত চলচ্চিত্র উৎসব থেকে স্বর্ণপদক জয় করে আনতে?

উত্তরটা অতি অবশ্যই- না।

আবাক হচ্ছেন? যাদের রক্তে রক্তে সিনেমা, এমন কি পেশাব, পায়খানা, কফ, থুথু, এসিডিটি, গ্যাস, বীর্জ সব কিছুতেই সিনেমা, তারা কোন যুক্তিতে ভাল ভাল সিনেমা বানাতে পারবে না? ভাই, উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই। একটা প্রশ্নে উত্তর দেন, যে মানুষ বড় বড় দালান কোঠায় থাকতে পছন্দ করে, স্থাপত্যকলার দিক থেকে আকর্ষনীয় কোন ভবন দেখলে যে তার মহাকর্মব্যস্ত জীবন থেকে কয়েকটা মুহূর্ত বের করে নিয়ে সেই ভবনটির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অথবা যে জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় ব্যয় করেছে নিজের জন্যে একটা ভাল বাড়ি বানানোর আয়োজনে, সেই মানুষ কি চাইলেই একটা পেট্রনাস টুইন টাওয়ার বানাতে পারবে? পারবে একটা জাতীয় সংসদ ভবন বানাতে? ঠিক আছে, এত সব বড় বড় স্থাপনার কথা না হয় বাদই দিলাম। বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, সে কি আধুনিক সকল সুবিধা সম্পন্ন দশ তলা একটা এপার্টমেন্ট ভবন বানাতে পারবে? যারা কথার পিঠে কথা প্যাঁচাতে পছন্দ করেন তাদের জন্যে স্পষ্ট করে বলছি, আমি ভবন র্নিমাণ করার কথা বলেছি, ভবন র্নিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করার কথা বলিনি। সিনেমার ভাষায় বিষয়টা এভাবে বলা যেতে পারে, আমি ভবন প্রযোজনার কথা বলছি না, ভবন র্নিমাণ/পরিচালনার কথা বলছি। চিন্তায় পড়ে গেলেন তো? আমার আব্বা যে বাড়িটা আমার জন্যে রেখে গেছেন, সেটা বানানোর জন্যে তাকে কোন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্টের স্মরণাপন্ন হতে হয়নি ঠিকই কিন্তু রাজ মিস্ত্রির সাথে ব্যাপক পরামর্শ করতে হয়েছে এবং তার চাকুরী জীবনের শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত অনেক, অনেকবার সেটার মাঝে নানাবিধ পরিবর্তন সাধন করতে হয়েছে। আব্বা কলেজের টিচার ছিলেন, একবারে বড় করে বাড়ি বানানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তার সততার এই দিকটুকু আমাকে তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে, গর্বিত করে, আবেগপ্রবণ করে। কিন্তু কোন ভাবেই আমাদের বাড়িটাকে চেহারা বা সুযোগ সুবিধার দিক থেকে অসাধারণ কিছু বলবার সুযোগ আমি দেখি না।

জানি, আমার আত্মীয়দের অনেকেই আমার কথায় দ্বিমত পোষন করবেন এবং আমাকে ভৎসনা করে বলবেন, “তোমার বাবা তোমার জন্যে যা বানিয়ে গেছে, তুমি আগে তা বানিয়ে দেখাও। তারপরে এত বড় বড় কথা বলো।” উত্তরে বলল, ভাই অথবা আংকেল, বিষয়টাকে সেন্টিমেন্টাল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? যা ভাল, তা ভাল। আর যা খারাপ, তা খারাপ। এটা মেনে না নেয়ার মানে হল উটপাখীর মত গর্তে মুখ লুকিয়ে রাখা। আর বলতে পারেন, গর্তে মুখ লুকিয়ে রেখে কবে, কোথায়, কোন উটপাখীটা তার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে?

কয়েকদিন আগে এক ছেলের সাথে তর্ক হচ্ছিল বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র র্নিমাতাকে নিয়ে। ছেলেটার দাবী তিনি অসাধারণ একজন চলচ্চিত্র র্নিমাতা। প্রশ্ন করেছিলাম পাশাপাশি দুটি হলে যদি তার সিনেমা এবং থ্রি ইডিয়েট বা রং দে বাসন্তির মত সিনেমা চালানো যায় তবে কোন সিনেমাটা মানুষ বেশী দেখবে? এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের ইংরেজি ভাষা নিয়ে সমস্যা আছে, তাই আমি শুধু হিন্দি সিনেমার প্রসঙ্গই তুলেছিলাম। ছেলেটা বেশ ক্ষিপ্ত হয়েই আমাকে জবাব দিয়েছিল, বাংলাদেশের সিনেমাটাই বেশী লোক দেখবে। সেই সাথে পারলে সে আমার নামে দেশদ্রোহীতার মামলা ঠুকে দেয়, এমন অবস্থা। এরকম পরিস্থিতিতে খুব অভদ্রের মত আমার তাকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল, এই পরিচালকের এখন পযর্ন্ত বানানো একটা সিনেমার নাম বলো, যেটা কান ফেস্টিবলে গিয়ে দর্শক ও সমালোচকদের মাঝে আলোচনার ঝড় বইয়ে দিতে পেরেছে বা পারবে? সটি বনে তো শেয়ালও রাজা। আমার মাথা ব্যথা সুন্দর বনের বাঘ নিয়ে।

সাংবাদ মাধ্যমের সাথে জড়িত আছি। তাই জানি, দেশের মধ্যে কি ভাবে সেলিব্রেটি পরিচালক হওয়া যায়। আর যে সমস্ত সিনেমা কোন হলে প্রদর্শিত হয় না, কিন্তু ঝুড়ি ভর্তি করে পুরস্কার পায়, তাদের নিয়ে আলাচনা না হয় না-ই করি। কারণ, মাঠে খেলা হবে, ক্লাশে পড়াশুনা হবে, বিছানায় দাম্পত্য প্রেম হবে আর হলে সিনেমা প্রদর্শিত হবে- এটাই রেওয়াজ। যে কলেজের ছাত্ররা ক্লাশে থাকে না, সেই কলেজ কতটা মানসম্মত অথবা যে দম্পতির বিছানায় প্রেম হয় না, সে দম্পতির সংসার কতটা সুখের তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়। এখানে বলে রাখি, আমার আব্বার বানানো বাড়িটা আমার কাছে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাড়ি। কিন্তু সেটা শুধুই আমার কাছে। এর সেন্টিমেন্টা অন্য রকম, বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু এই বাড়িকে আমি আহসান মঞ্জিল বা লালবাগ কেল্লার সাথে তুলনা করবার মত আহাম্মকি কখনওই করব না। আলোচনা লম্বা হয়ে যাচ্ছে, আমার মূল প্রসঙ্গ চলচ্চিত্র, বাসা-বাড়ি নয়। তারপরও এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলছি, কারণ যেখানে সেন্টিমেন্ট কাজ করে সেখানে আমরা সহজে কোন কিছু মানতে চাই না। তাল গাছটা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। মোদ্দা কথায় আসি, ভাল কোন স্থাপনা বানাতে গেলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংএ ৪ বছরের গ্রাজুয়েশন করাটা যেমন জরুরী, তেমনি ভাল সিনেমা বা সুন্দর বনের বাঘ মার্কা কোন সিনেমা বানাতে গেলেও চলচ্চিত্র র্নিমাণের খুঁটিনাটিটা জানা খুব জরুরী। আবেগ দিয়ে সিনেমা দেখে যায়, সিনেমা হলে বসে প্রেমিক বা প্রেমিকার হাতে হাত রেখে প্রেম করা যায়। কিন্তু সিনেমা বানানো যায় না।

সিনেমা সম্পূর্ণ টেনিক্যাল একটা ব্যপার। একটি উপন্যাস মানসিক ব্যপার হতে পারে। একটি পেইন্টিং হয়ত মানসিক ব্যপার হতে পারে। হয়ত বলছি এ কারণে যে কালার, কম্পোজিশন, পাসপেক্টিভ এই সব না বুঝলে পেইন্টিং পাহাড়সম কঠিন একটা বিষয়। তবে অনেক শিল্পীই এই পৃথিবীতে আছেন যারা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও কালজয়ী পেইন্টার হয়েছেন। সুতরাং সবার কাছে না হলেও অনেকের কাছেই পেইন্টিং একটি মানসিক ব্যপার, যা মনের আবেগ থেকে উৎসারিত। সংগিত, নৃত্য বা অভিনয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু সিনেমা কোন ভাবেই মানষিক ব্যপার নয়। এটি একটি সমন্বিত ব্যপার। যেখানে বেশ কিছু যন্ত্রপাতির মধ্য দিয়ে কাহিনীর আবেগকে দর্শকের কাছে তুলে ধরতে হয়। আবারও বলছি, কাহিনিটা আবেগীয় ব্যপার, মানষিক ব্যপার, কিন্তু সেই আবেগকে সেলুলয়েডের ফিতায় বা ডিজিটালি তুলে আনাটা স্রেফ এবং স্রেফ টেকনিকাল ব্যপার। ঠিক যেমন পছন্দের একটি বাড়ি বানানো বা সেখানে বাস করা আবেগীয় একটি ব্যপার। কিন্তু সেই বাড়িটি র্নিমাণ করা যান্ত্রিক বা টেকনিকাল একটি ব্যপার।

সমস্যা হল, আমাদের এই সব তরুণ সিনেমা পাগলেরা কি জানি কেন চলচ্চিত্র র্নিমাণকে একটি মানষিক বিষয় হিসাবে ধরে নিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, তারা যেন প্রতিজ্ঞা করেছে ফিল্ম মেকিং না শিখেই তারা এ্যাভেটার বা এভেঞ্জার্সের মত ভয়াবহ সব সিনেমা বানিয়ে ফেলবে। ইদানিং অনেক শর্টফিল্ম র্নিমাতাকে এ্যাকশন ফিল্ম বানাতে দেখি। থ্রিলার বা এ্যাকশন ছাড়া তাদের যেন কোন কাহিনী মাথাতেই আসে না। এমন অনেকেই মাঝে মাঝে আমার সাথে যোগাযোগ করে, আমার সাথে এই নিয়ে দেখা করবার জন্যে সময় চায়। আমি তাদের সাথে দেখা করি। ধৈর্য নিয়ে তাদের গল্প শুনি, সুটিং প্লান শুনি। সেই সাথে তাদের চাহিদা মাফিক পরার্মশ দেয়ার চেষ্টা করি।

আমাদের দেশে মিডিয়াতে কর্মরত তিন ধরনের মানুষ আছে। এক, যারা আপনাকে সময়ই দেবে না। কারণ, তারা প্রচন্ড ব্যস্ত তাদের পেশাগত কর্মকান্ড নিয়ে। দুই, যারা আপনাকে সময় দেবে এবং খুব রসিয়ে রসিয়ে জানাবে এই জগৎ কতটা কঠিন এবং সেই সাথে আপনাদের অন্য কোন পেশা বেছে নেয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পরামর্শ দেবে। স্পষ্টতইঃ বোঝা যায়, এদের হাতে কাজ কম এবং এরা প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়াতে চায় না। ৩য় ধরনটি আমার মতন, নুতনদের সময় ও সহযোগিতা দেয়। বুঝতেই পারছেন, আমরা মিডিয়াতে সেমি বেকার টাইপের মানুষ। তাই বনের মোষ তাড়ানোর সময় আমাদের হাতে আছে। অনেকেরই আবার নাটিক সিনেমা না বানাতে পেরে মনের দুঃখ ভুলবার জন্যে কিছু মুরিদ তৈরী করে ছোট পরিষরে সেলিব্রেটি হওয়ার চেষ্টা করে।

চলবে....

২য় পর্ব - Click This Link

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: চালিয়ে যান ভ্রাতা...+++

২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

রেজওয়ান রাফসান বলেছেন: চালিয়ে যান।

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ২:২৮

কল্লোলিত সমুদ্র বলেছেন: শিখতে পারলাম কিছু, ধন্যবাদ।

৪| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২৮

ডার্ক ম্যান বলেছেন: লেখাটা খুব ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি

৫| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:১৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: প্রসঙ্গ চমৎকার , ভূমিকাটা একটু লম্বা হয়ে গেছে ,আশা করি আগামী পর্বে আমরা কাজের কথায় ঢুকে পরবো । :)

৬| ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:১২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

প্রয়োজনীয় পোস্টে।

কাজে লাগবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.