![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানতে চাই, জানাতে চাই মানুষের অনুভুতির এপিঠ ওপিঠ
(রচনাটি দুই পর্বে বিভক্ত)
১ম পর্ব - Click This Link
পীর সাহেব হওয়ার উদ্দেশ্য আমার কোন দিনও ছিল না। তবে একটা ভাল চলচ্চিত্র শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। তাই সহযোগিতা চাইতে আশা সবাইকেই আমার ছোট্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটাতে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ জানাই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের উত্তর হয়, “কোর্স তো ভাইয়া আরো হবে, আমি পরের ব্যাচে ভর্তি হব।” পরের ব্যাচ যায়, তারও পরের ব্যাচ যায়। কিন্তু তারা ভর্তি হয় না। না আমার এখানে, না অন্য কোন প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে। (আমার প্রতিষ্ঠানটাকে এখনও ভুঁই ফোঁড় প্রতিষ্ঠানই বলা যায়)। মোট কথা, তারা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিখতে রাজি না। ঠিক যেমন, আমার আব্বা কোন কন্সট্রাকশন ফার্মের হাতে তার বাড়ি বানানোর দায়িত্ব না দিয়ে রাজ মিস্ত্রির সাথে পরামর্শ করেছিল, তেমনি এরাও কোন কোর্স করে পুরোটা একবারে জেনে বুঝে নিতে রাজি না। নিজে নিজেই সব কাজ করতে গিয়ে আটকে গেলে, শুধু মাত্র তখনই আমার মত কোন রাজ মিস্ত্রির পরামর্শ নিতে আগ্রহী। তিক্ত হলেও সত্য, এদের দিয়ে আর যা-ই হোক, এ্যাভেটার বা এভেঞ্জার্স তো হবেই না, চাষী নজরুল ইসলামের “ওরা ১১ জন” বা শহিদুল ইসলাম খোকনের “লড়াকু”-ও হবে না।
এই সমস্ত সিনেমা পাগলদের প্রতি আমার উপদেশ- নিউটন সাহেব আপেল গাছ তলায় বসে থেকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল। নিউটনের সেই আবিষ্কার ক্লাশের বই পড়ে শিখতে যদি আপনাদের আপত্তি থাকে, তবে বাংলাদেশে তো তেমন একটা আপেল গাছ নেই, ভরা মৌসুমে আপনারা কাঁঠাল গাছ তলায় বসে দেখতে পারেন। মাথায় কাঁঠাল ভাংলেও ভাংতে পারে।
আমার এমন কড়া বক্তব্যে জানি অনেকেই অপমানিত বোধ করছেন। বিশ্বাস করেন, আপনাদের অপমানিত করার কোন উদ্দেশ্যই আমার নেই। আমার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে অনেক অনেক, ভাল ভাল আর্ন্তজাতিক মানের সিনেমা তৈরী হোক। তাই আমার বক্তব্যটা আরেকবার একটু ভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি। আমি নিয়মিত ভাবে আমার বউ বাচ্চার উপরে ডাক্তারী করে থাকি। জ্বর হলে প্যারাসিটামল, সর্দি হলে হিস্টাসিন, পেট খারাপ হলে মেট্রোনিডাজল, ডাইরিয়া হলে টেট্রাসাইক্লিন, গ্যাসের সমস্যা হলে এন্টাসিড বা অমিপ্রাজল, কেটে গেলে ডেটল, পুড়ে গেলে বার্নল, মুখের ভিতরে ছড়ে গেলে সিভিট ইত্যাদি ইত্যাদি। বলতে পারেন আমার চিকিৎসা সেবায় আমার পরিবার মোটামোটি নিরোগ জীবন যাপন করছে। কিন্তু আমার মেরুদন্ডের গোড়ায় যখন প্রচন্ড ব্যথা হয় অথবা থাইরয়েডের সমস্যার কারণে আমার বউয়ের হাত পা যখন ফুলে যায়, তখন আমার আর কিছু করার থাকে না। কারণ আমি ডাক্তার নই। ডাক্তার হতে পাক্কা চার বছরের সেশন শেষ করে তারপর বছর খানেক ইন্টার্নী করতে হয়। ৫ বছরের লম্বা সাধনা করার পরই একজন মেডিকেল ছাত্রকে রোগীর চিকিৎসা করার লাইসেন্স দেয়া হয়। এরপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে গেলে আরো কয়েক বছরের পড়াশুনার ধাক্কা।
মোদ্দা কথা, এর ওর কাছ থেকে জেনে জ্বর-সর্দি-কাশি আপনি সারাতেই পারবেন। কিন্তু পুরো ডাক্তার হতে পারবেন না। ঠিক তেমনি, নিয়মিত হলিউডি সিনেমা দেখে, মোবাইল ফোনের এফ এম রেডিওতে চলচ্চিত্র সংক্রান্ত টক শো শুনে, আপনি ফেসবুক কাঁপানোর মত শর্ট ফিল্ম অবশ্যই বানাতে পারবেন, কিন্তু সিনেমা হলের বক্স অফিস কখনওই কাঁপাতে পারবেন না। কান, বার্নিল বা ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব তো দূরের কথা। আবারও বলছি সিনেমা আবেগের ব্যপার না যে মনের জোরেই সব কিছু পারবেন। এটা টেকনিকাল ব্যপার। এবং শুধু একটা নয়, অনেকগুলো টেকনিকাল ব্যপারের সমষ্টি। লাইট, ক্যামেরা, সাউন্ড, এডিটিং- অনেক ধরনের টেকনোলজি সর্ম্পকে আপনাকে ধারনা নিতে হবে। সেই সাথে এই টেকনোলজির প্রয়োগ কিভাবে আবেগীয় ক্ষেত্রে করতে হবে তার ফরমুলাও জানতে হবে। যদি এই সবের কোনটাই ভাল মত না শিখে আপনি “এ্যাভেটর”, “মুন্নাভাই এমবিবিএস” বা “রঞ্জনা আমি আর আসব না”-এর মত সিনেমা বানাতে পারেন, তো কথা দিলাম, আপনার বয়স যা-ই হোক, আমি আপনার বাসায় গিয়ে আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করে আসব।
আরেক ধরনের সিনেমা পাগল আছে আমাদের দেশে। এবার তাদের কথা বলি। জেলা শহরগুলোতে সে সময় তেমন একটা কন্সট্রাকশন ফার্ম ছিল না। থাকলেও আমার আব্বার কন্সট্রাকশন ফার্মের স্বরনাপন্ন হওয়ার সামর্থ ছিল না। তাই আব্বা নিজেই যা পেরেছে, সাধ্য মত করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফিল্ম মেকিং নিয়ে পড়াশুনা হচ্ছে। আমার আব্বার মত অনেকেই আছে, যারা সিনেমার ব্যপারে সিরিয়াস কিন্তু সেখানে পড়াশুনা করার সামর্থ নেই। অর্থাৎ সাধ আছে, সাধ্য নাই। কতটুকু সাধ্য নেই, সেটা জানলে বিস্মিত হতে হয়। আমার ছোট্ট ফিল্ম স্কুলটিতে কোর্স ফি মাত্র তিন হাজার টাকা। ছয় সপ্তাহের কোর্স, ১২টি ক্লাশ, তিন হাজার টাকা। খুব বেশী নয়। (অবশ্য আমি বিখ্যাত কেউ নই। তাই এর বেশী কোর্স ফি রাখাও সম্ভব নয় আমার পক্ষে। তবে বিখ্যাত হলেও কোর্স ফি খুব বেশী বাড়াবো না, কথা দিচ্ছি)। তো, আমার কোর্স ফি তিন হাজার টাকার চেয়ে কম না কেন, এর উত্তর দিতে দিতে আমার জান বেরিয়ে যাওয়ার দশা। কেউ কেউ রিকোয়েস্ট করে কোর্স ফি কম করে দেয়ার জন্যে। আবার কেউ বা আমাকে অর্থ লোভী পিশাচ বলে আক্রমন করে বসে।
তো, এতক্ষণ রোগের লক্ষণগুলো নিয়ে কথা বললাম। এবার রোগের কারণ নিয়ে বলি। অনেক সরকারী আমলা টেনিস খেলতে পছন্দ করেন। অফিসার্স ক্লাবে গিয়ে নিয়মিত টেনিস খেলেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীও হন। অর্থাৎ তিনি টেনিস খেলা পছন্দ করেন। শুধু পছন্দই করেন না, টেনিসের ব্যপারে তিনি ড্যাম সিরিয়াস। কিন্তু দিনের শেষে তিনি কেবলই একজন আমলা, টেনিস তারকা নন। গ্রান্ড মাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ একবার একটা গানের ক্যাসেট বের করেছিলেন। গান তিনি সাংঘাতিক ভাবে পছন্দ করেন বলেই তা করেছিলেন। কিন্তু গান তার পেশা নয়। তার পেশা হল দাবা খেলা। কিছুদিন আগে রুনা লায়লা তার ডিজাইন করা একটা বুটিক শপ চালু করেছেন। আর্থাৎ ফ্যাশন ডিজাইনে তার আগ্রহ আছে। কাজটা তিনি পছন্দ করেন। কিন্তু তিনি পেশাদার ডিজাইনার নন। তিনি পেশাদার সংগিত শিল্পী। মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজি আনোয়ার হোসেন এক সময় রেডিওতে নিয়মিত রবীন্দ্র সংগিত গাইতেন। সুভাষ দত্তের “সুতরাং” সিনেমায় তার গাওয়া একটা গান খুব জনপ্রিয়ও হয়েছিল। তার মানে গানের ব্যপারে তিনি সিরিয়াস ছিলেন। কিন্তু গানকে তিনি পেশা হিসাবে বেছে নেননি। তিনি পেশায় একজন লেখক ও প্রকাশক।
অর্থাৎ কোন কিছুকে সিরিয়াসলি পছন্দ করলেই যে সেটাকে আপনি পেশা হিসাবে নিবেন, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। একটি ছেলে বিবিএ পড়তে পড়তে দু চারটা শর্ট ফিল্ম বানাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিবিএ তার ভবিষ্যৎ পেশা, চলচ্চিত্র স্রেফ পছন্দ মাত্র। যত যা-ই বলেন, ফ্যামেলির চাপেই হোক আর নিশ্চিত জীবনের আকাংখাতেই হোক, পাশ করার পরে সে কোন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতেই জয়েন করবে। এবং একটু একটু করে কাজের চাপে চলচ্চিত্র থেকে অনেক দূরে সরে যাবে। এটাই বাস্তবতা। আপনি যে কাজটা ভালমত জানেন, সেটাই ভাল মত করতে পারবেন। আর সেখান থেকেই আপনার উপার্জন হবে। বাপের হোটেল থেকে বের হয়ে একদিন নিজের হোটেল দাঁড় করাবেন। তখন যদি বউ বলে বসে, “খাওয়াতে পারো না তো বিয়ে করছো ক্যান? থাকো তুমি তোমার সিনেমা নিয়ে। আমি চললাম। হয় তোমার সিনেমা, নয়ত আমি। ডিসিশন নাও।” তখন কিন্তু গার্লফ্রেন্ডের সাথে যত সহজে ব্রেকআপ করেছিলেন, তত সহজে বউকে ডিভোর্স দিতে পারবেন না।
অর্থাৎ পছন্দ যা-ই হোক, মানসিক বা সামাজিক ভাবে যেটাকে আপনি ভবিষ্যৎ পেশা হিসাবে বিশ্বাস করবেন, আপনি শেষ পযর্ন্ত তা-ই করবেন। এবং এতে কোন অপরাধ নেই। সিনেমা বানানোর জন্যে না খেয়ে থাকার তো কোন মানে হয় না। বেঁচে থাকতে হলে খেতে পরতে তো হবেই। প্রশ্ন হল সিনেমাটা আপনাদের কাছে শুধু পছন্দ হয়েই থেকে যাচ্ছে কেন? সেটা কেন আপনার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পেশা হয়ে উঠছে না? সিনেমা থেকে আপনারা রোজগার করতে পারবেন সেই বিশ্বাসটা কেন আপনাদের মাঝে আসছে না? এক সময় মাছ বা মুরগীর খামার করাটাকে কোন পেশা হিসাবে ধরা হত না। এখন অনেক মানুষ শুধু হ্যাচারীর ব্যবসা করেই গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ায়। টেক্সটাইল ইন্সিটিটিউট যখন চালু হয় তখন সেখানে ছাত্র পাওয়া কষ্টকর ছিল। কেউ দর্জি হতে চাইতো না। এখন এই সাবজেক্টের সাংঘাতিক ডিমান্ড। চলচ্চিত্র শিল্প বেকায়দায় থাকলেও টিভি মিডিয়ার তো এখন রমরমা অবস্থা তাহলে নাটক বা চলচ্চিত্র নির্মাণকে কেন এখনও আমরা মন থেকে পেশা হিসাবে মানতে পারছি না?
হয়ত বলবেন, এই পেশায় নিশ্চয়তা কম। ভাই রে, কোর্ট কাচারীতে গিয়ে দেখেন, কালো রঙ জ্বলতে জ্বলতে লালচে হয় যাওয়া কোর্ট পরে কত উকিল বট তলায় বসে আছে। তাদের কোন মক্কেল নাই। তারপরও মানুষ উকিল হতে রাজি আছে। ওকালতি একটা পেশা। স্টক মার্কেটে কতবার ভরাডুবি হচ্ছে, তারপরও মানুষ শেয়ার কিনছে। অথচ একবার একটা সিনেমা ডুবে গেলেই আপনাদের মন তিতা হয়ে যায়। আসলে নাটক সিনেমা নিয়ে আমাদের মনে ধর্মীয় এবং সামাজিক একটা ট্যাবু কাজ করে। যারা এই লাইনে যায় তাদের চরিত্র ঠিক থাকে না, সিনেমার লোকেরা সব লম্পট হয়, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ঠিক আছে, মেনে নিলাম সিনেমার লোকেরা সবাই লম্পট। প্রশ্ন হচ্ছে আপনার এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার, সে লম্পট নয়। কোন কর্পোরেট অফিসের কর্মকর্তা সে লম্পট নয়। ডাক্তাররা নার্সেদের সাথে প্রেম করে না? প্লেনের পাইলটরা এয়ার হোস্টেসদের সাথে প্রেম করে না? তাহলে শুধু নায়ক, নায়িকা আর পরিচালকদেরই দোষ কেন?
শুধু তা-ই নয়, এই শহরের বহুতল বিশিষ্ট ফ্লাটগুলোতে হাজবেন্ড অফিসে চলে গেলে হাউজওয়াইফরা কেউই কি পরকিয়ায় লিপ্ত হয় না? সবাই সতী সাবিত্রি? স্টাটিং বেতন মাসে ত্রিশ হাজার টাকা, অফিস থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ আর ট্রান্সপোটেশন সুবিধা, এমন কি ফ্ল্যাট বাড়িও সে সুন্দরী তরুনীকে কর্পোরেট অফিস থেকে দেয়া হয়, তার কাজ যে কোম্পানীর ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট করা, সেটা কি মেয়েটা চাকরী নেয়ার সময় জানত না? এ রকম অগনিত উদাহরণ দেয়া যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের লাম্পট্য আর অবৈধ যৌন জীবনের। তাহলে আংগুল শুধু কেন চলচ্চিত্র জগতের দিকেই ওঠে? দুঃখজনক হলেও সত্য, শুধু মাত্র চরিত্র নষ্ট হবে বলে আমরা অনেকেই সিনেমাকে খুব করে পছন্দ করি কিন্তু পেশা হিসাবে নিতে চাই না। যদিও বয়ফেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে একা একটা ঘরে ঘনিষ্ঠ মেলামেশাকে একেবারেই খারাপ কিছু বলে মনে করি না।
অনিশ্চয়তা আর চরিত্রহীনতা, এই দুই জটিলতা সংক্রান্ত মানষিকতায় আটকে আছে আমাদের চলচ্চিত্রর পেশা হয়ে ওঠা, না ওঠা। দুটোই স্পর্শকাতর বিষয় এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যপার। তাই আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এটাকে আপনি পেশা হিসাবে মেনে নেবেন কি না। যদি করেন, তবে ডাক্তারী পড়ার জন্যে যেমন প্রয়োজনে জমি জমা বিক্রি করেন, তেমনি সিনেমা বানানো শেখার জন্যেও পয়সা খরচ করতে শেখেন। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্যে যেমন পড়াশুনার পিছনে বেশ অনেকগুলো বছর র্নিদ্বিধায় ব্যয় করেন, তেমনি চলচ্চিত্র র্নিমাণ শিখতেও কয়েক বছর নিষ্ঠার সাথে ব্যয় করেন। এমবিএ-তে যেমন গোল্ড মেডেল পেতে চান, তেমনি সিনেমার খুঁটিনাটিতেও সর্বোজ্ঞ হওয়ার চেষ্টা করেন। আগেই বলেছি, যেটা আপনি ভাল মত পারবেন, সেটা থেকেই আপনার উপার্যন হবে। দায় সারা সাধনায় কেবল দায় সারা ফলাফলই আশা করা যায়।
তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি, আপনি গোল্ড মেডেল পাওয়ার মত মেধাবী না। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই আপনি পাশ করার সংগে সংগে চাকরী পাবেন না। আপনাকে কয়েক বছর এই অফিস, সেই অফিস ধর্না দিয়ে বেড়াতে হবে। এবং সেটা আপনার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়। কিন্তু সিনেমায় পরিচালক বা সহিকারী পরিচালক হিসাবে কাজ পাওয়ার জন্যে মাত্র এক বছর কোন প্রযোজক বা কোন পরিচালকের পিছে পিছে ঘোরাটাকেও আপনি সময়ের অপচয় বলে মনে করেন। কেন? কেন? কেন?
ভাই, সিনেমা নিয়ে পাগলামী তো অনেক করেছেন। শুধু পাগলামী দিয়ে কিছু হয় না। বিষয়টাকে পেশা হিসাবে নেয়ার চেষ্টা করেন। অন্য সব পেশার মত প্রথমে ধৈর্য ধরে এবং যৌক্তিক পরিমানে অর্থ ব্যয় করে বিষয়টাকে ভাল মত শেখেন। তারপর কিছু দিন আর দশটা পেশার মত বেকারত্বে স্বাদ গ্রহণ করেন অথবা ছোট কোথায়, ছোট কাজ কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। নিজের বায়েডাটাটাকে একটু ভারী করেন। তারপর বড় কোন কাজের সাথে যুক্ত হন।
টিভি সেক্টরটাকে আপনি অন্যান্য চাকরীর মত করে ভাবতে পারেন। আর চলচ্চিত্রকে ব্যবসা হিসাবে ভাবেন। তারপর ছাত্র জীবন থেকেই পরিকল্পনা করতে থাকেন কিভাবে আপনি অমুক টিভি চ্যানেলে অথবা এড ফার্মে সুঁই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হবেন। অথবা কিভাবে আপনার সিনেমা নামক প্রেডাক্টটাকে সবচেয়ে বেশী সংখক মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। সব পেশার মানুষই ছাত্র জীবন থেকে পরিকল্পনা করতে থাকে তার কর্ম জীবনটাকে সে কি ভাবে সাজোবে। শুধু সিনেমা পাগলরাই ভবিষত্যের কথা ভাবতে গিয়ে ভক্তদের অটোগ্রাফ দেয়া আর পুরস্কার নেয়ার কথাই ভাবে। বিষয়টা হতাশাজনক এবং হাস্যকর। মানুষ কেন যেন অকারণেই বিশ্বাস করে নাটক সিনেমার জগতে হঠাৎ করেই অনেক কিছু হয়ে যাওয়া যায়। সব উচ্চতায় যে সিঁড়ি বেয়েই উঠতে হয়, এটা তারা ভুলে যায়। বোধকরি বিষয়টা তাদের স্রেফ পছন্দের, তাই তারা দিবাস্বপ্নে নিমজ্জিত হয়।
সব শেষে একটা বিষয় পরিস্কার করি। আমি শিখবার ব্যপারে জোর দিচ্ছি। তা সে আপনি কোন প্রতিষ্ঠান থেকেই শেখেন আর কারো পিছে ঘুরে ঘুরেই শেখেন- শিখলেই হল। তবে কোন পরিচালকের সাথে থেকে শিখাটা বেশ কষ্ট সাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ। পরিচালক সিনেমা বানাবে, না আপনাকে তার কাজের খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দেবে? তাই আমি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে শিখবার পক্ষপাতি। শেখার পরে আপনি ইন্টার্নী সেশন হিসাবে কারো সহকারী হিসাবে কাজ করেন। তাতে করে আপনার জানাটা পোক্ত হবে। আত্মবিশ্বাস বাড়বে নিজের কোন কাজ শুরু করার জন্যে। কেবল মাত্র তখনই আপনি পারবেন এই দেশের চলচ্চিত্র অংগনকে সত্যিকারের কিছু দিতে।
সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ