নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিয়াসের রূপান্তর Lucius Apuleius(Metamorphoses of Apuleius) The Golden Ass(ধারাবাহিক)

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০৭

(১৩)

‘থানসিলিয়াসের দিন কাটে না,শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা,কখন আসবে সেই সন্ধ্যাটা,কখন হারাবে আলো অন্ধকারের কোলে।সন্ধ্যা এলো-এলো রাতের অন্ধকার,ছুটে গেল থানসিলিয়াস।
চারিতের বাড়ির কাছে এসে শিষ দিল-থানসিলিয়াস জানান দিল তার উপস্থিতির।কাজের মেয়েটা এসে থানসিলিয়াসকে চারিতের কথামত বললো,“একটু অপেক্ষা করতে হবে,আমার মনিবের বাবা অসুস্থ,সে এখন বাবার বাড়ীতে।বলেছে তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে,আর আপনার জন্য কিছু খাবার আর মদ রেখে গেছে”।স্বপ্নেও হয়তো ভাবে নি থানসিলিয়াস,নেশা মেশানো ঐ মদ,মদ খেয়ে নেশায় গভীর ঘুমে তখন সে’।

‘নেশায় মজে থাকা থানসিলিয়াসকে রেখে কাজের মেয়েটা ছুটে-ডেকে আনলো মনিব চারিতেকে।রাগে ঘৃনায় উন্মাদ চারিতে থানসিলিয়াসকে দেখে বললো, “দেখ,সবাই দেখ,এ আমার স্বামীর প্রিয় বন্ধু,নাম করা শিকারী থানসিলিয়াস,বিয়ে করবে আমাকে!ঐ হাত দিয়েই খুন করেছে আমার প্রিয়জনকে,যত শয়তানী লুকোনো ওর মনের মধ্যে,সেটা ভাবাও অচিন্তনীয়।হয়তো তোমার কোন ধারনা নাই,কি আছে তোমার ভাগ্যে এই রাতের অন্ধকারে।ঘুমাও শান্তিতে ঘুমাও খুনী,না না আমার কাছে কোন তলোয়ার নাই,বল্লম নাই,অত সহজ হবে না মৃত্যু তোমার।লিপোলিমাসকে যে ভাবে খুন করেছ,তার মত ভাগ্য হবে না, তোমার।চোখ দুটো থাকবে তোমার,তবে স্বপ্নেও খুঁজে পাবে না আমাকে।আর তোমার ঐ নোংরা হাত কোনদিন ছুঁতে পারবে না আমার শরীর।মনে রেখ যে হাত দিয়ে অন্ধ আবেগে খুন করেছ আমার প্রিয় লিপোলিমাকে,খুঁজে বেড়াবে সে হাতে পৃথিবীর আলো।আমার প্রিয় লিপোলিমাসের আত্মার শান্তির জন্য,তোমার চোখদুটো তুলে দেব”’।

‘কিছুটা নিস্তব্ধতার পর-আবার বলা আরম্ভ করলো চারিতে, “জানিনা আমি কিসের অপেক্ষায় আছি?কেন আরম্ভ করছি না শারীরিক যন্ত্রনা?হয়তো নেশার ঘোরে ভাবছ শুয়ে আছ আমার সাথে,আমাকে জড়িয়ে।মনে রেখ আমি তোমার জীবনের অভিশাপ,যাক গে সময় এসে গেছে নেশার ঘোর কাটিয়ে তোমার অচিন্তনীয় দুঃখের রাজ্যে যাওয়ার।জেনে রাখ আমি নিলাম আমার প্রতিশোধ,আমি আমার প্রতিজ্ঞা পুর্ন করলাম,লিপোলোমাসের কাছে”।

“কি মনে হয় এখন,আমি কি তোমার বাসর রাতের সেই লাজুক বৌটা?তোমার চোখের নেশা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে,মনে মনে ভাবছ?কত সহজেই ছিনিমিনি খেলতে চাচ্ছ,আমার ভালবাসা নিয়ে?আমার প্রতিশোধের আগুন হবে এই কনের বিয়ের সঙ্গিনী আর তোমার অন্ধত্ব-তোমার প্রিয় বন্ধু,পরপারের অন্ধকার হবে,তোমার হারানো বিবেক”।

‘কথা বলতে বলতে ক্লান্ত চারিতে,খোঁপায় গোঁজা কাটা দুটো বের করে থানসিলিয়াসের চোখ ইচ্ছেমত মারতে থাকলো,কান্ড জ্ঞান হারানো সে।তারপর থানসিলিয়াসের লিপোলিমাসের রক্তে মাখানো তলোয়ারটা নিয়ে,শহরের মাঝ দিয়ে সোজা ছুটে গেল লিপোলোমাসের কবরের দিকে।
আমরা সব চাকররা এক এক করে ছুটে গেলাম চারিতের পেছনে,আমাদের মনে কোন সন্দেহ ছিল না চারিতে কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটাবেই।আমরা চীৎকার করে একে অন্যকে বলে যাচ্ছি, “কেউ একজন ওর হাত থেকে তলোয়ারটা কেড়ে নাও,কিছু একটা ঘটে যাওয়ার আগে”।
শহরের কিছু লোকও তাদের ঘুম ছেড়ে আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছিল,তবে চারিতের খোলা তলোয়ার ঘোরানো দেখে কারও কিছুই করার উপায় ছিল না’।

‘কান্নায় ভেঙ্গে পড়া আমরা তখন,অনুতাপে চীৎকারে হতবুদ্ধি,চারিতে অনুযোগ করে বললো, “কেন তোমরা দুঃখ করছ সবাই এটাতো আনন্দের সময়,আমি আমার প্রিয় লিপোলোমাসের হত্যার প্রতিশোধ নিলাম,ঐ খুনী আমাদের ভালবাসার সংসারটা তছনছ করে দিল।তাকে যথাযথ শাস্তি দিয়ে ফিরে যাচ্ছি,আমার প্রিয় লিপোলোমাসের কাছে”।

‘চারিতে আমাদেররকে বললো লিপোলোমাসের অশরীরি আত্মা স্বপ্নে,কি ভাবে সবকিছু বলে গেছে তাকে।কথাগুলো বলতে বলতে চারিতে তার তলোয়ারটা সোজা বুকের মধ্যে বিধে দিল,রক্তের ফোয়ারায় চারপাশটা রংএ লাল হয়ে গেল।কটা কথা বিড়বিড় করে বলে চারিতে হারিয়ে গেল চিরশান্তির দেশে,শান্তির মানুষটা হারিয়ে গেল শান্তিতে।আত্মীয় স্বজনেরা চারিতের মৃতদেহ তুলে ধোয়া মোছা করে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাধিস্থ করলো প্রিয়জনেরা,প্রিয় লিপোলোমাসের পাশে।
শেষ পর্যন্ত ভালবাসার দুটো মন একহলো চিরন্তনের জন্য’।

‘চারিতের মৃত্যুর খবর যখন থারসিলিয়াসের কাছে পৌছালো,মনে হলো চরম যন্ত্রনার মৃত্যুতেও পরিশোধ করতে পারবে না সে,তার অভাবনীয় অপরাধ।কাকুতি মিনতি করে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিল থানসিলিয়াস,ক্ষমা চেয়ে নিল চারিতের কাছে,লিপোলোমাসের কাছে। তাদের কবরের পাশে গিয়ে নিজের হতাশ জীবনের যবনিকা টেনে আনলো,
থানসিলিয়াস’।
০০০০০০০০০০


বৃহন্নলা(হিজড়া)পুরোহিতদের সঙ্গ

চারপাশের লোকজনের,কারও চোখ শুকনো ছিল না-বাতাসটাও ছিল হাহুতাসে ভেজা,
যদিবা সবকিছু যেন সাজানো।সবাই ভাবছিল নতুন মালিকানায় কার কি অবস্থা হবে।
সরকারী কর্মচারী যার হাতে আমার ভালমন্দ সপে দেওয়া ছিল,দেরী না করে বাড়ীর গহনা আসবাব পত্র আমার আর কটা মাল বওয়ার ঘোড়াদের পিঠে নিয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল-তখনও জানি না কোথায় যাচ্ছি,আমরা।যে যেখানে ছিল ছেলে মেয়ে মুরগী ছাগল যা ছিল সেটা নিয়ে সবাই ছুটলো।আমি এ ভেবে শান্তি পেলাম,এ যাত্রা অন্ততঃ নংপুসক
(খোজা)হওয়া থেকে অভ্যাহতি পেলাম।

সারাটা দিন একটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে হেঁটে-দিনের আলোর শেষে আমরা পৌছালাম নতুন এক বসতিতে।শহরের লোকজন সাবধান করে দিল শুধু রাতে না,এমনকি ভোরের দিকেও বাইরে না বেরোনোর জন্যে-বেশ কিছু নেকড়ে বাঘের অত্যাচারে সে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ সবাই।

নেকড়ে বাঘগুলো মানুষকেও কোন ভয় করে না,এমনও ঘটনা শোনা যায়,বাড়ির ভেতর থেকে মানুষ টেনে গেছে নেকড়ে বাঘের দল।লোকজন আমাদের সাবধান করে এটাও বললো,যাওয়ার সময় দেখতে পাব আমরা আধা খাওয়া মৃতদেহ,দেখা যাবে মানুষের হাড় ছড়ানো চারপাশে।যদি আমাদের কোথাও যেতেই হয়,যেন যাই দুপুরের আলোয়,যখন নেকড়ে বাঘের দলও কিছুটা চুপসে থাকে।

কিন্ত লুটপাঠ করা আমাদের দল,মানুষজন ধাওয়া করছে,কেউ আর সেই শহরটায় সময় কাটাতে রাজী ছিল না,বেশ কিছুটা ঝুঁকি ছিল যদিও-তবে কেউ অপেক্ষা করতে চায় নি। নেকড়ের বাঘের শিকার হওয়ার ভয়ে কোন রকম দলাদলি করে আমাকে-নিজেকে মাল বয়ে নেয়া একটা গাধাকে,ঘোড়াদের মাঝে জায়গা করে নিতে হলো।দলের লোকজন বেশ অবাক আমি ‘গাধাটার’,গতি অন্যান্য ঘোড়ার চেয়ে ছিল অনেক দ্রুত।কিন্ত আমি তো তখন ‘আকাশ ছোয়া’ পেঘাসাসের মত,চেমাএরা আগুনের ঝলকের ভয়ে অন্য জগতের কেউ।

লোকজন সবাই অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে প্রস্ততি ছিল যেন যুদ্ধযাত্রা,কারও হাতে বল্লম,কারও হাতে তলোয়ার,কারও হাতে বর্শা,কেউবা তীরধনু নিয়ে।কেউ কেউ রাস্তার থেকে তুলে নিল পাথরের টুকরা,কার ও হাতে লাঠি,আবার কজন মশাল জালিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে ছুটে যাচ্ছিল,কাছে থাকলে যেন নেকড়ের দলকে ভড়কান যায় কোনভাবে।যাই হোক আমাদের চীৎকার বা আগুনের ভয় যেটাই হোক,কোন নেকড়ে বাঘের দেখা পায়নি আমরা,সারাটা পথ।নেকড়ে বাঘ ছড়ানো সেই দুর্গম জঙ্গল ছাড়ানোর পর দিনের শেষে ছোট্ট একটা গ্রামে পৌছালাম আমরা,গ্রামের লোকজন অন্ধকারে ধরেই নিল নিঃসন্দেহে আমরা,ডাকাতের দল।
গ্রামের লোকজন ভয়ে তাদের শিকারী কুকুরের দলকে চীৎকার করে লেলিয়ে দিল আমাদের পেছনে,কুকুরের দল নেকড়ে বাঘ বা হিংস্র ভাল্লুকদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না।

কুকুরের দলটা হিংস্র বাঘের মত চারদিক থেকে আক্রমন করলো-মানুষ,ঘোড়া সবাই ছিন্নভিন্ন,ছেড়া মাংসের রক্তাত্ত একগাদা অচেনা একগাদা মুখ,আমরা তখন।পরের পর্বটা ছিল আরও ভয়ংকার-গ্রামের লোকজন ছাদে উঠে ইচ্ছেমত পাথর ছোঁড়া আরম্ভ করলো।পাথরের একটা টুকরো এসে লাগলো আমার আরোহিনীর কপালেও,রক্ত চুইয়ে চুইয়ে বয়ে যাচ্ছিল তার পোশাক আশাকে।বেচারী দুঃখে ব্যাথায় চীৎকার করে স্বামীকে ডাকা আরম্ভ করলো।কান্না শুনে তার স্বামী ছুটে এসে চীৎকার করে গ্রামের লোকজনদের কাছে অভিযোগ করলো ,’কি ব্যাপার,কেন সবাই এ ভাবে অমানুষিক ব্যাবহার করছো,তোমরা?একটুও কেন তোমরা সবাই পথযাত্রীদের এ ভাবে আক্রমণ করছো?কি ধরনের মানুষ তোমরা?কোন দয়ামায়া কি নেই তোমাদের?তোমরা নিশ্চয় কোন জঙ্গলের বাঘ,ভাল্লুক না,নিশ্চয় কোন গুহায় লুকোনো অজানা কোন জন্তও না,তবে কেন?তোমরা কি ভাবছ আমরা কি কোন চোর বা ডাকাতের দল’?

এই আবেদন শোনার পরপরই থেমে গেল পাথর ছোড়া,শিকারী কুকুরের দলকেও ডেকে নিয়ে গেল গ্রামের লোকজন।একজন চীৎকার করেই বললো, ‘আমরাও কিন্ত কোন চোর ডাকাত না,সবাই ভাবলো তোমরা ডাকাত,গ্রাম আক্রমন করছো।ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমরা,তোমাদের যাত্রা শুভ হউক’।

যাত্রা শুরু হলো আবার,সবাই কম বেশী আহত রক্তাক্ত তখন,ব্যাথা যন্ত্রনায় কান্নায় ভরে যাওয়া।কিছুটা হেটে যাওয়ার পর আমরা পৌছালাম সবুজ ঘাস ভঁরা সুন্দর এক বাগানে,দলের নেতা সবাইকে বিশ্রাম আর খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করে নিতে বললো।একটা স্বস্তির নিশ্বাস তখন সকলের মনে,পাশের ছোট্ট নদিটায় এক এক করে আরম্ভ হলো ক্ষত ধোঁয়ামোছা,কেউ কেউ ঔষধ দিয়ে ক্ষতের ওপর পট্টি দিয়ে বেধে দিল।

বুড়ো একটা মানুষ পাহাড় থেকে ছাগলের পাল নিয়ে নেমে যাচ্ছিল,আমাদের দলের একজন জিজ্ঞাসা করলো,তার কাছে কোন ছাগলের দুধ বা কোন খাবার আছে নাকি?
অবাক করে বুড়ো উত্তর দিল, ‘তোমরা খাবার খুজছো,তোমাদের কি জানা আছে,কোথায় আস্থানা গেড়েছ তোমরা”?কথা না বাড়িয়ে ছাগলের পাল নিয়ে বুড়ো বেশ তাড়াতাড়িই চলে গেল,অনেকটা দৌড়ে পালানো।

তার উত্তরের ধরণ আর তাড়াহুড়া করে চলে যাওয়ায় বেশ ভয় পেয়ে গেল সবাই।কিছুটা হতচকিত দলের লোকজন,কিন্ত কেউ বুঝে উঠতে পারে নি কারণটা।কিছু ক্ষন পর আরেকটা বুড়ো,বেশ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে লাঠিতে ভর করে আমাদের দলের কাছে এসে হাঁটু গেড়ে আবেদন করা আরম্ভ করলো, ‘তোমাদের কাছে মিনতি করছি,দয়া করে আমার নাতিকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা কর।নাতিকে এখান দিয়ে যাওয়ার সময়,নাতি একটা তোতা পাখী দেখে ধরতে গিয়ে পড়ে গেছে নীচের পাহাড়টায়,আটকে আছে একটা গাছে কোনরকমে,
একটু সাহায্য কর আমার নাতিকে বাচানোর জন্যে।আমি চেষ্টা করলাম অনেক,কিন্ত লাভ হয় নি কেন,এই বুড়ো শরীরে এখন আর শক্তি নাই তেমন।আমাদের পরিবারের শেষ চিহ্ন ঐ নাতি,আমার নাতিকে একটু বাচানোর চেষ্টা কর,বেঁচে আছে ও এখনও’।

কথা শেষ করে বুড়ো টেনে টেনে তার চুল ছিঁড়ে কান্না আরম্ভ করলো।আমাদের একজন কম বয়সী রাখাল বুড়োকে সান্তনা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,কোথায় আটকে আছে তার নাতি?
বুড়ো মানুষটা লাঠিতে ভর করে,রাখাল ছেলেটাকে নিয়ে গেল সামনের ঝোপটা ছেড়ে, যেখানে তার নাতি পড়ে গেছে।এর মধ্যে আমরা,গাধা ঘোড়ার দল চারপাশের ঘাসকাঁটা খেয়ে বেশ আনন্দে সময় কাটাচ্ছি,বেলাও পড়ে গেছে,মালপত্র নিয়ে সবার যাবার প্রস্ততিও শেষ,কিন্ত রাখাল ছেলেটার কোন খোঁজ খবর নাই,তখনও।শেষমেষ ছেলেটার আরেক বন্ধু তাকে খুজতে বেরোলো,ফিরে এলো ছেলেটা কিছুক্ষন পরেই,তবে তার বন্ধু ফিরে আসেনি সাথে।ফিরে আসা ছেলেটার চোখমুখ ছিল ভঁয়ে রক্ত হারানো,সে বললো,রাখাল ছেলেটার অর্ধেক খাওয়া শরীরটা পড়ে আছে ঝোপের ওপাশটায়,বিরাট এক সাপ তাকে চারপাশে জড়িয়ে ছিল আর বুড়ো মানুষটার কোন খোজ খবর নাই।

এটাই হয়তো বলার ইচ্ছা ছিল বুড়ো মানুষটার ছাগলের পাল নিয়ে যাওয়ার সময়,আর দেরী না করে দলের সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে চলা,লাঠির শব্দ আর চীৎকার করতে করতে হাঁটা দিল।এর পরের বিশ্রামের জায়গাটা আমরা অর্ধেক সময়েই পৌঁছে গেলাম।রাতটা কাটালাম ছোট্ট একটা গ্রামে,সেখানকার লোকজন আমাদের একটা ভয়াভব গল্প শোনালো,আমার বলা খুব একটা বেমানান হবে না।ঐ গ্রামের ধবাংবশেষ আজও আছে,আজও আছে সেই আমাদের রাত কাটানো খামার বাড়ীটা।

আমাদের ফেলে আসা খামারের ক্রীতদাসদের সর্দার বিয়ে হয়েছিল সাথের এক ক্রীতদাসীর সাথে,কিন্ত লোকটা প্রেমে পাগল ছিল অন্য এক বাড়ির সুন্দরীর সাথে,যে ক্রীতদাস না।তার বৌ,সেটা জানার পর রাগে দুঃখে স্বামীর কাছে রাখা মনিবের হিসাবপত্রের বই খাতা,ঘরের আসবাবপত্র যা ছিল সব পুড়িয়ে ছারখার করে দিল।কিন্ত তাতেও তার রাখ থেমে থাকেনি,
বৌটা নিজের আর তার ছোট্ট ছেলেটার গলায় দড়ি বেধে কুয়ো দিয়ে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করলো।দুর্ঘটনার খবর খামারের মালিকের কাছে পৌছানোর পর,মালিক ক্রীতদাসদটাকে ন্যাংটা করে,গায়ে মধু ঢেলে শুকনো একটা ডুমুর গাছে বেঁধে রাখার আদেশ দিল। ডুমুর গাছটা ভঁরা ছিল লাল পিপড়ায়,মধুর স্বাদে গন্ধে দল বেঁধে আরম্ভ হলো পিপড়ার আক্রমন-চোখ মুখ কোন অংশই আক্রমন থেকে ছাড়া পায়নি,কটা দিন ছিল তার অসহনীয় যন্ত্রনা,তারপর শুকনো কঙ্কালটা ছাড়া কিছুই ছিল না আর সেই ডুমুর গাছটায়।




গ্রামের যারা আমাদের গল্পটা বলছিল-তাদের বেশ সহানুভুতি ছিল ক্রীতদাসটার জন্য,
অনেকেই সে কারণেই গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছিল।সারাটা দিনের পর সন্ধ্যা আলোয় আমরা
পৌছালাম নতুন আরেক শহরে-ছিমছাম বেশ সাজানো গোছানো,শহরটা।দলের বেশির ভাগ লোকজনেরই পচ্ছন্দ ছিল সেই শহরটা,তাই সবাই ঠিক করলো সেটাই হবে সকলের নতুন থাকার জায়গা।প্রথমত সেটা আমাদের যারা ধাওয়া করছিল তাদের জন্যে অনেকদুরে-আর দ্বিতীয়ত শহরটার সৌন্দর্যের সাথে সাথে খাবার দাবারের কোন অভাব ছিল না।আমাদের দলের নেতা দিন তিনেক সময় দিল,গাধা ঘোড়াদের সুস্থ হওয়ার জন্যে,তার পর গাধা ঘোড়া সবগুলোকে হাঁটে নিয়ে নিলাম করার জন্যে।

গাধা ঘোড়া সকলের একটা দাম ধরা ছিল আগের থেকেই,বাজারের নিলামকারী চীৎকার করে চেষ্টা করছিল,যত চড়া দামে যত তাড়াতাড়ি বিক্রি শেষ করা যায়। একে একে সব গাধা, ঘোড়া বিক্রি হয়ে গেল,শুধু আমি একা তখনও একপাশে পড়ে ছিলাম উচ্ছিষ্টের মত।ঘৃনা হচ্ছিল নিজের এই বেঁচে থাকায় মানুষজন সবাই যে ভাবে আমার নাক,চোখমুখ দাঁত পরীক্ষা করছিল,একেবারেই অপমানের,অসহনীয়।একজন তো আমার দাঁতের দুই পাটির মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে ইচ্ছেমত টানা হেচড়া করে অদ্ভুত ভাবে পরীক্ষা করছিল,আমি রাগে কামড়ে অনেকটা তার আঙ্গুল দুটো কেটেই ফেলেছিলাম।সবাই ধরে নিল আমি অকেজো একটা শয়তান গাধা।নিলামকারী শেষে কৌতুক করে বলা শুরু করলো, ‘জানি কেই বা টাকা পয়সা খরচ করবে এই অচল শয়তান গাধাটার জন্যে।কারই বা ইচ্ছে হবে একগাদা খরচ করার জন্য,নোংরা দুর্গন্ধে ভঁরা এই অলস গাধাটার জন্যে,কেউ করবে না এটাই সত্যি’।সবাই হাসতে হাসতে এপাশ ওপাশ করে চলে গেল।

কিন্ত দুর্ভাগ্য যখন ছেড়ে যায় না তখন যায়ইনা,আমাকে কিনে নিল এক বুড়ো বৃহন্নলা, কালো পাকা মেশানো চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত ছড়ানো।ঐ শয়তান খোঁজা সিরিয়ান দেবীর নাম করে শহর থেকে শহরে টাকা পয়সা নিয়ে বেড়াচ্ছিল।বুড়ো খোঁজা নিলামকারীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘গাধাটার বয়স কত?একে নিয়ে আসা কোন শহর থেকে’?নিলামকারী বেশ সাজিয়ে বললো, ‘ওর বয়স পাঁচ বছর,বেশ শক্ত সামর্থ,মাল বয়ে নেওয়ায় ওর কোন জুড়ি নাই’।তারপর নিলামকারী ঠাট্টা করেই বললো, ‘ওকে আমাদের নিয়ে আসা কাপোসিনিয়ান ক্রীতদাস নিলামের বাজার থেকে।তবে কর্নেলিয়ানের আইনে ওকে বিক্রি করার আগে ওর গুনগুলো আমার জানানো দরকার,মাল বওয়া থেকে শুরু করে-বিছানার কাজে কোনটাতেই
ওর শক্তির ঘাটতি হবে না।এখন সবকিছু জানার,পচ্ছন্দমত একটা দাম বলুন’?
বুড়ো হিজড়া ওনেক প্রশ্ন করার আবার জানতে চাইলো,আমাকে দিয়ে কি গাড়ি টানা সম্ভব,আমার পিঠে চড়ে যাতায়াত করা সম্ভব কি না?

নিলামকারী বললো, ‘কি বলছেন আপনি,ওর মত শান্তশিষ্ঠ গাধা কোথায় পাবেন,কোন লম্ফঝম্প নাই,কোন সর্দারি নাই,শুধু মুখবুজে কাজ করে যায়।ইচ্ছে করলে পরিক্ষা করে দেখতে পারেন,ওর লেজটা তুলে ধরে,নাকটা দিয়ে দেখবেন নাকি’?

বুড়ো বৃহন্নলার বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি যে নিলামকারী তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে।ক্ষেপে গিয়ে সে বললো, ‘শয়তান,পাগল,তুমি তো একটা নর্দমার পোকার চেয়েও খারাপ,স্বর্গের দেবতা সাবাজিস,বেলোনা,ভেনাস,এডোনিস যেন সবাই তোমাকে অভিশাপ দেয়,অন্ধ হয়ে যাবে তুমি।তখন বুঝবে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করার ফল।গাধাটার যা অবস্থা ওর পিঠে চড়ে কোথায় গেলে,ও তো নিজে পড়ে যাবেই আর আমার হাড্ডিগুড্ডির কি অবস্থা হবে কে জানে?ছুটে ছুটে ডাক্তার খুঁজতে হবে শুধু আমার জন্যে না,ঐ গাধাটার জন্যেও’।

কথাগুলো শোনার আমি পেছনের পা দুটো তুলে বুড়ো বৃহন্নলা লোকটাকে লাথি মারার জন্য প্রস্ততি নিলাম,কিন্ত এবার ছিল আমার অবাক হওয়ার পালা,বৃহন্নলা লোকটা ১৭ ড্রামাক দাম ঠিক করে,গুনে গুনে নিলামকারীর হাতে তুলে দিল।টাকাপয়সা পেয়ে চাকরদের সর্দার আমাকে তুলে দিল,বুড়ো বৃহন্নলার হাতে।লোকটার,নাম ফিলোবাস,নিয়ে গেল তার বাড়ীতে।দরজার কাছে এসে সে চীৎকার করে ডাক বললো, ‘সুন্দরীরা,দেখ তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম এক সুন্দর সুপুরুষ’।সুন্দরীরা আর কেউ না আরও কজন বৃহন্নলা,তারাও বেশ ঢং করে হাসি আর নাচগানে যেন মাতাল হয়ে গেল।


০০০০০০০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: এই পর্ব টা দারুন লাগলো।

০৯ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:৫৭

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.