নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিলিতিসের গান Songs of Bilitis(ধারাবাহিক)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১১

প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৯৪ সালে,গ্রীসের নামকরা কবি,সাপ্পোর সমসাময়িক,বিলিতিস নামের কোন এক কবির অনুবাদ হিসাবে,ফরাসী লেখক পিয়ের লুইসের অনুবাদ।বিরাট এক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে লেখাটা অনুরাগীদের মনে-খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ সালের এ ধরনের সর্ম্পূন লেখা খুঁজে পাওয়া ছিল অনেকটা অবিশ্বাস্য।আর প্রকাশ্য ভাবে সমকামিতা নিয়ে প্রকাশনা সেটা তো আরও অভাবনীয়।পরে অবশ্য জানা যায়-বিলিতিস বলে কোন কবির অস্তিত্বই ছিল না,ঐ সময়।ওটা আর কিছু না পিয়ের লুইসের তৈরী করা একটা অভাবনীয় ফেরেপবাজী।সাজানো হলেও, তবুওএক পুরুষের লেখা মেয়েদের নিয়ে বেশ সাহসী এক প্রকাশনা,লেখার মর্যাদাটা আজও কমে যায়নি।


হাত বাড়ানো,বন্ধু আমার

সারা রাত্রি ধরে চললো ঝড়ের দাপট।লম্বা চুলের সুন্দরী সেলেনিস,চরকা কাটতে রাতে ছিল আমার সাথে।ভুতের ভঁয়ে আমাকে জড়িয়ে সে ছোট্ট বিছানায় মাঝে মাঝে আমাকে জড়িয়ে,চেষ্টা করছিল ঘুমের দেশটা খোঁজার ।

আর এটাতো জানাই,কিশোরীরা যখন এক বিছানায় ঘুমায়,ঘুম পালায় তখন অন্য কোথাও।‘বিলিতিস,বিলিতিস,বল না কার প্রেমে মত্ত তুই’?কথাগুলো বলতে বলতে তার নিতম্বটা তুলে দিচ্ছিল আমার উরুতে,উষ্ণতায় যাতে ভঁরে উঠে আমার শরীরটা।

ফিসফিস করে বললো সেলেনিস, ‘আমি জানি বিলিতিস,তুমি ভালবাস আমাকে।
চোখটা বন্ধ করো তুমি,জান আমি কে,আমি কিন্ত লাইকাস’।তার শরীর নাড়াচাড়া করে বললাম আমি, ‘তোমার কি মনে হয়,আমি কি কি এতই বোকা আমার,আমি জানি তুমি একটা দুষ্টু মেয়ে।তোমার এই ঠাট্টাটা কিন্ত একেবারেই অশোভনীয়’।

তবুও বলে যাচ্ছিল মেয়েটা, ‘আমি কিন্ত সত্যিই লাইকাস,খুঁজে পাবে তাকে, চোখটা বন্ধ কর,তুমি,খুঁজে পবে তাকে অনুভুতিতে।এটাতো তারই হাত,হাতের ছোঁয়াটা’…আর অদ্ভুত এক নিস্তব্ধ সুরে সে নিয়ে গেল আমাকে,স্বপ্ন থেকে আরেক অদ্ভুত স্বপ্নে।


পেরসাফোনির কাছে আমার প্রার্থনা

আনুষ্ঠানিকভাবে স্নান করে,গায়ে দিলাম বেগুনী পোশাক।আমাদের জলপাই এর ডালগুলো ছুঁয়ে গেছে মাটির দিকে।

‘ওপারের,মহামান্য পেরসাফোনি,যে নামটাই তোমার পচ্ছন্দ,সে নামেই ডাকবো তোমাকে।দয়া করে প্রার্থনা শোন আমাদের,ছায়া তোমার মুকুট,হাসি ছাড়াই মহারানী তুমি,তুমি যে রানী হেডেসের।

‘কোকলিস,থ্রাইসামাইকোসের মেয়ে,শুয়ে আছে তোমার দরজায়।প্রার্থনা শোন তার,তাকে ডেকো না এখনও।তোমার জানা সে উড়ে যেতে পারবে না কোথাও যদিও ইচ্ছা থাকে তার,আজ বাদ দাও,আরেকদিন তাকে ডাকবে না হয়।

‘এত তাড়াতাড়ি সরিয়ে নিও না তাকে,দেবী আমাদের।ও যে অপেক্ষা করে আছে,শেষ হবে কবে তার কুমারীত্ব।প্রার্থনা করছে সে তোমার কাছে আর্শীবাদের জন্য,অর্ঘ দেব আমরা তোমাকে তিনটা কাল ভেড়া আমাদের’।




পাশা খেলা

আমরা দুজনেই তাকে খুবই পচ্ছন্দ করতাম,সবাই আরম্ভ করলাম পাশা খেলা।
বেশ মজার একটা আসরসেদিন,কুমারী মেয়েরাই অনেক আগ্রহে তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে।

গুটি প্রথম ছোড়ার পালা ছিল তার-সে ছুড়লো সাইকোলপস,এক চোখা বিশাল
একটা চেহারা,-আমার গুটিতে ছিল সোলন,রাজনীতির ধূর্ত মানুষটা।তারপর সে ছুড়লো কালিবোলসকে কিংবদন্তীর আর্গোসের রাজা,আর আমি হেরে যাব ভেবে দেবতার কাছে প্রার্থনা করা আরম্ভ করলাম।

খেলা আরম্ভ হলো আবার-এবার পেলাম এফিফোরন,দেবতাকে।তার গুটিতে ছিল কিয়োস।এবার গুটি ফেলে পেলাম আনটেয়াস-জলদেবতা পোসাইডেনের ছেলেকে।
হাতে ছিল তার গেল ডোলোসের চেহারা।এরপর আমার গুটিতে ছিল আফ্রোডাইটি,ভালবাসার দেবী যা জয় করবে প্রেমিককে।

মেয়েটার চেহারাটা একেবারে ফ্যাকাসে হয়ে গেল।আমি তার গলা ধরে জড়িয়ে ফিসফিস করে বললাম(যাতে অন্য কেউ শুনতে না পারে), ‘বন্ধু আমার হতাশ হওয়ার কিছু নাই,আমরা ওকে সূযোগ দিব আমাদের দুজনের মাঝে পচ্ছন্দ করার জন্যে’।


চরকার চাকা

মা সারাটা দিন,বোনদের সাথে আমাকে ঘরে বন্ধ করে রাখলো,একপাশে ওরা কথা বলছিল ফিসফিস করে,আমি ঘৃনা করি ওদের মনে প্রানে।চুপচাপ বসে আমার একাকীত্বে,খুঁজছিলাম আমি নিজেকে।

চরকার চাকা আমি যে একা তোমার সাথে, ‘তুমি ও তো একা,তুমি কি হবে সঙ্গী আমার?তোমার সাদা পশমের পরচূলায় মনে হয় তোমাকে,তুমি যেন কুমারী মেয়ে একটা।

ভাগ্য আমার,না হয় বল,এভাবে কি এখানে থাকা কথার আমার,এই দেয়ালের ছায়ায় বসে,হতাশায় ঘোরাতাম না চরকা।শুয়ে থাকতাম তারোসের পাহাড়ে বেগুনী পোশাকে,আনন্দে কোথাও।

সে তো আর আমাদের মত ধনী না,মা-তার সাথে বিয়েতে রাজী হবে না,
কোনদিন।তবে বলে রাখি তোমাকে,হয় বিয়ের আগের দিন আমি আত্মহত্যা করবো,যদি সে আমাকে নিয়ে না যায় বিয়ে করে …।

বাঁশী

হাইকিথিয়ান উৎসবে,আমাকে সুন্দর কটা বাঁশী উপহার দিল সে,যার বাজানোর ছাঁচগুলো সুন্দর ভাবে মেপে মেপে তৈরী করা,বাজানোর চাবি সুন্দর ভাবে ঘষা মোম দিয়ে,অদ্ভুত একটা মধুর স্বাদ নিয়ে আসে ঠোঁটে।

এমন কি বাঁজাতেও শেখালো আমাকে,কোলে বসে কাঁপছিলাম আমি,তখন তার হাতের ছোঁয়ায়।নিজে বাজানো আরম্ভ করলো যখন,স্বর্গীয় সুরের ছোঁয়ায় ভরা এমন মধুর সুরের স্বাদ,শোনার সূযোগ হয়নি আমার কোন সময়।

কারও বলার ছিল না কিছু,আমরা বসে ছিলাম শুধু একজন আরেকজনকে জড়িয়ে।বাঁশীর সুরগুলো ছিল এঁকে অন্যের জন্যে সাজানো,আর ঠোঁটগুলো খুঁজছিল বাঁশীতে আরেকজনের মনটা।

অনেক রাত হলো,সবুজ ব্যাঙগুলোর গানে ছেয়ে গেছে চারপাশ।মা বিশ্বাস করবে না,আমি হারানো পেটিকোটটা খুঁজছি এত রাত ধরে।


বেণী

ও আমাকে বললো, ‘স্বপ্ন দেখলাম আজ-তোমার এলো চুলগুলো পড়ে আছে আমার গলার পাশে,বিনুনীটা অনেকটা জোয়ালের মত, পাখার মত ছড়ানো আমার স্তনে।

‘আদরে খেলা করছিলাম চুলগুলো নিয়ে,অনেকটা যেন আমার নিজের চুল,সেই একই সুরে মুখে মুখ,ঠোঁটে ঠোঁট,যেন দুটো কুঁড়ি একই গাছের।

‘আর ধীরে ধীরে আমাদের শরীর মিশে যাচ্ছিল আরেকজনের শরীরে,এক উরু জড়ানো আরেক উরুতে,আমি যেন তোমার শরীর,তুমি তখন আমার শরীরে ছিলে একটা মধুর স্বপ্নের মত’।

সবকিছু যখন শেষ হয়ে গেছে সে আমার কাঁধে হাত রেখে এমন ভাবে সে
তাকালো চোখে,ভঁয়ে চোখটা নামিয়ে নিলাম,আমি।


বাটি

লাইকাস দাঁড়িয়ে দেখছিল আমার হেঁটে যাওয়া,গায়ে শুধু একটা নেংটী,
এমনই ভয়াবহ দৃষ্টিটা তার,যেন সে আমার খোলা স্তনকে দলনমদন করে তছনছ করে দেয়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছে।

কিছু কাদামাটি হাতে তুলে নিয়ে,পানিতে ভিজিয়ে নরম করে লাগিয়ে দিল,আমার গায়ে,ঠান্ডায় আমি যেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো।

আমার স্তনে কাদামাটি দিয়ে সেই মাপে একটা বাটি তৈরী করলো লাইকাস,
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ধীরে ধীরে আরও সুন্দর করলো সেটাকে।শুকানোর জন্যে বাটিটাকে দুপুর রোদে রেখে দিল,,তারপর সোনালী আর বেগুনী রং এ তুলির আঁচড়ে,বাটির ধারে এপাশে ওপাশে ফুল এঁকে সাজালো।

পুকুরটার ধারে গেলাম,জলপরীদের কাছে খুবই পবিত্র সেটা,সেখানে টকটকে লাল ফুল ডগাসহ তুলে আনলো লাইকাস,আমার জন্যে।


রাতের গোলাপ

রাতের অন্ধকারটায় একসময় হারিয়ে গেল সারা পৃথিবী,রাজত্ব তখন শুধু আমাদের আর আকাশের দেবতাদের।খালি পায়ে ছুটে গেলাম আমরা ছুটে নদীর ধারে,অন্ধকার জঙ্গলটা ছেড়ে হাল্কা আলোর খালি আকাশে।

ছোট তারার আলোই যথেষ্ট ছিল তখন,আমাদের ছোট শরীরের জন্য।মাঝে মাঝে চোখে পড়ছিল গাছের নীচে শুয়ে থাকা হরিনের চেহারা।

কিন্ত রাতের অন্ধকারে সবচেয়ে সুন্দর,গোপন জায়গাটা যেটা জঙ্গলের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে আমাদেরকে নিয়ে লাল গোলাপের রহস্যময় রাজ্যে।

কোন দেবতার রহস্য,সৌন্দর্যের ছোঁয়া পৌঁছাবে না,ঐ গোলাপের সৌন্দর্য সুবাসের ধারে কাছে।জানি না কেন যে,একা থাকি যখন এই সৌন্দর্য,এই সুবাস কেন মাতাল করে না আমাকে?


অনুশোচনা

কোন উত্তর দেইনি,লজ্জায় আমার গাল লাল হয়ে গেছে,হ্রদয়টা ছুটছিল ঘোড়ার গতিতে,ছুটে যাওয়ার যন্ত্রনা তখনও আমার স্তন জুড়ে।

নিজের সাথে যুদ্ধ করে বলছিলাম, ‘না!না!’, মাথাটা সরিয়ে নিলাম একদিকে,
চুমুর ঠোট তখনও পৌঁছায়নি আমার ঠোঁটে।আর আকাঙ্খার উন্মাদ কামনাও পৌঁছায়নি উরুর জঙ্গায়।

ক্ষমা চেয়ে আমার চুলে চুমু দিল সে,তার নিঃশ্বাসের ধোঁয়া ছুয়ে যাচ্ছিল আমার শরীর মন।সে চলে গাল…এখন আমি একা আবার।

সামনের খোলা মাঠটা,ছুটে যাওয়া অজানা কোন এক পৃথিবীতে,একটা বর্বরের মত পায়ের নীচের মাঠি খুঁটে যাচ্ছিলাম অযথাই।আঙ্গুলের নখ দিয়ে তুলে ফেললাম চামড়া,রক্ত বের হচ্ছিল,আর আমার কান্না ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে যাচ্ছিল ঘাসের উপরে।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.