নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Paulo Coelho এর adultery (পরকীয়া)

১৪ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১:০০

(১৭)

ছোট্ট একটা ঘর,সাজানো অফিসঘর হিসাবে-ঘটা করে বসলাম আমরা।দেয়ালে ঝুলানো ইন্ডিয়া থেকে আনা একটা ছক,রাশি চক্র।একটা বৃত্ত মাঝখানে সৌরমন্ডলের সব শক্তি আর রহস্যের উৎস,চারপাশে অন্যান্য চিহ্ন দিয়ে সাজানো রাশিচক্র।টেবিলে সাজানো নানান ধরণের পাথর।

ওঝা বৃত্তিতে মেয়েদের অবস্থান নিয়ে আলাপ আলোচনা আরম্ভ হলো।কিউবান লোকটা বোঝানোর চেষ্টা করলো,জন্মের সাথে সবাই একটা অর্ন্তদৃষ্টি নিয়ে জন্মায় আর মেয়েদের ক্ষেত্রে সেই অর্ন্তদৃষ্টি আরও প্রখর।যে কোন জ্ঞানী লোক জানে কৃষিকাজ,ফসলের আসনটা কোন দেবতার না এক দেবীর,আর চিকিৎসা,জড়িবুটি এটা মেয়েদের হাত দিয়েই পৃথিবীতে আসা।

আবেগ আর আধ্যাত্মিকতার জগতটা মেয়েদের অনেক কাছে,এ জন্যেই তারা বেশী ভোগে মানসিক যন্ত্রনায়,চিকিৎসকদের কাছে যার কেতাবী নাম, ‘হিষ্টিরিয়া’,আজকাল বদলে হয়ে
গেছে, ‘বাইপোলার মানসিকতা’,আর এই মানসিক অবস্থা ভাসায় তাদের আবেগের জোয়ার থেকে দুঃখের ভাটায়।কিউবান লোকটার মতে অশরীরি জগতের সাথে মেয়েদের যোগাযোগটা পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি আন্তরিক,কেন না আধ্যাত্মিকতার সুর যা ভাষায় বর্ননা করা যায় না,সেটা পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের কাছে অনেক বেশী বোধগম্য।

আমি কিউবানের মনের ভাষায় কথা বোঝার চেষ্টা করলামঃ
হয়তো এ আবেগের স্রোতের প্রচন্ডতা,শয়তান,অশরীরি আত্মার প্ররোচনায় মেয়েদের ঠেলে দেয় অশুভ রাজ্যে?
আমার প্রশ্নটা হয়তো কিউবান লোকটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি ভেবে,আমি আবার নতুন করে সাজিয়ে বললাম।মেয়েরা মানসিকভাবে এতই দূর্বল যে সুখের রাজ্য থেকে দুঃখের সাগরে…

‘মানসিকভাবে দূর্বল,এটা আমি কখন বললাম?বলিনি।বরং তার উল্টোটাই সত্যি,মেয়েদের মানসিক শক্তিই,তাদের মানসিক টানাপোড়েনের কারণ।ভালবাসা বা প্রেমের ক্ষেত্রেও,একই কথা প্রযোজ্য’।

বোঝা গেল কিউবান লোকটা আমার সাথে একমত।তাকে মন খুলে সব কথা বলতে বলতে,অজান্তেই একসময় হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না আরম্ভ করলাম।বিচলিত হয়নি লোকটা,
তবে তার মনটা তো আর পাথরের তৈরী না,তার চোখেমুখে ছিল সহানুভুতির ছাপটা।

‘পরকীয়া প্রেমের কথা বলতে গেলে,ধ্যানচর্চায়,ধর্মের ছোঁয়ায়-যে খুব একটা সাহায্য হয়,তা না,বরং বলা যায় কোন সাহায্যই হয় না।এ ক্ষেত্রে জড়িত মানুষেরা সাময়িকভাবে আনন্দের সাগরে ভেসে যায়, যদিও নিজের চারপাশটাকে হিসেব মত রক্ষা করে,আর খুঁজে নেয় আনন্দের নতুন একটা আকাশ,যাকে বলা যায় আদর্শ একটা পরিবেশ’।
মানুষ পরকীয়া প্রেমে জড়ায়,কেন?
‘এ ব্যাপারে আমার তেমন একটা অভিজ্ঞতা নাই,তবে আমার নিজস্ব একটা মতামত আছে, এটা যেন কাগজে না ছাপা হয়’।
আমাকে একটু সাহায্য কর।
কিউবান কয়েকটা আগরবাতি জ্বেলে আমাকে পা ভাঁজ করে বসতে বললো,নিজেও সামনে একইভাবে বসলো।আগে অন্য কিছু ভাবলেও,এখন মনে হচ্ছিল,লোকটা নিঃসন্দেহে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে।
‘বিবাহিত মানুষ যে কারণেই হোক যখন অন্য কারও সাথে জড়িয়ে পড়ে তার মানে এটা না,তার বিবাহিত জীবনে তেমন কোন টানা পোড়েন আছে।আমি এটাও মনে করি না শরীরের খেলাটা সেখানে প্রধান উপলক্ষ্য।বরং বলা যায় নীরস,একঘেয়েমি সুরের দৈনন্দিনতা ছেড়ে,তারা একটা যুদ্ধ খোঁজে,জড়াতে চায় নতুন অজানা অভিযানে,হয়তো সেটাই কারণ।শুধু এটাই যে একমাত্র কারণ,তা না হয়তো আছে আরও অজানা অনেক কিছু,যা আমার জানার বাইরে’।
কেন হয় সেটা?
‘কেন না আধ্যাত্মিক জগত থেকে আমরা যখন দূরে সরে যাই,সরে যাই আমরা বিধাতার আকাশ থেকে,নিজেদের অস্তিত্বে সন্দিহান হয়ে উঠি,নিজেরাই।আমরা সেই অন্যন্য এককে খোঁজার চেষ্টা করি,তবে তার কাছে যাওয়ার পথটা অজানা আমাদের।আর এটা আমাদের একটা চিরন্তন অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।দেশ জাতি সমাজ আইন করে তাতে কি আর সমস্যার সমাধান হয়,মন উচাটন সেই যোগাযোগের খোঁজে’।

মন কিছুটা হাল্কা হলো,ভিন্ন একটা দৃষ্টিভঙ্গী ভাসছে তখন আমার মনে।কিউবানের চোখের ভাষা বলছিল,যা বলছে সেটা তার জানাই,কেননা এই যন্ত্রনায় ভুগছে সে নিজেও।

‘আমার চেনাজানা একজনের কথা বলছি,প্রেমিকার সাথে যৌনতায় সে ছিল অক্ষম।তবুও তার মন ভঁরে থাকতো আনন্দে শুধু প্রেমিকার পাশে থাকার জন্যে,আর তার প্রেমিকাও ভেসে যেত আনন্দে।শুধু কথা বার্তা হাসি ঠাট্টা,ছিল না শরীর খেলার কোন উদ্দামনা’।

কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে তাকে কৌতুকের সাথে জিজ্ঞাসাই করে ফেললাম,মানুষটা কি কিউবান?
‘হ্যা।আমার বৌ হয়তো ও জন্যেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।হয়তো শুধু ওটাই কারণ ছিল না,তার ওভাবে চলে যাওয়ার,কে জানে’?
তাকে হারানোর পর,তোমার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?
‘আমি হয়তো যাদুবিদ্যায় অশরীরি ক্ষমতার সাহায্য নিতে পারতাম,তবে পরলোকে তার জন্যে অনেক খেসারত দিতে হতো আমাকে।কিন্ত আমার জানা দরকার ছিল,তার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কারণ।তাই যাদু বিদ্যায় মত্ত হয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা না করে,আমি পড়াশোনায় ব্যাস্ত হয়ে গেলাম’।

কিউবান লোকটা তারপর একটু গাম্ভীর্যের সাথে কথা বলা আরম্ভ করলো।
‘টেক্সাস ইউনিভার্সিটির এক পরিসংখ্যনে বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছিল,পুরুষেরা কেন মেয়েদের চেয়ে বেশী পরকীয়া প্রেমে জড়িত,যদিও জানা সেটা শুধু তাদের জন্য ক্ষতিকর না,
ক্ষতিকর তার চারপাশের প্রিয়জনদের জন্যেও?যতটুকু জানা যায় পুরুষ,নারী দুদলেরই পরকীয়া প্রেমের প্রতি সমান আগ্রহ,তবে মেয়েদের সংযম ক্ষমতাটা অনেক বেশী’।

কিউবান লোকটা তার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিল বারে বারে-আমি তাকে অনুরোধ ক্রলাম না থেমে আরও কিছু বলার জন্যে।
‘পুরুষদের মানসিক টানাপোড়েনে তেমন একটা যোগ না দিয়ে শরিরের আনন্দে ভেসে যাওয়া আমাদের সামাজিক যাঁতাকলকে অনেকটা রক্ষা করে।বুদ্ধিমতী মেয়েরা এ জন্যে পুরুষদের দোষী করে না।তারা চেষ্টা করে নিজেকে থামানোর জন্যে তবে শরীরের ডাক উপেক্ষা করতে পারে না,সবাই।আমি কি বই এর ভাষায় কথা বলছি,নাকি’?
না।

‘এটা তোমার জানা,আমরা গাড়ীঘোড়ার চেয়ে সাপ,মাকড়শাদের ভঁয় করি বেশী,যদিও গাড়ীঘোড়ার ধাক্কায় মানুষের মৃত্যু হয় অনেক বেশী?এটার কারণ এই যে আমাদের মনটা এখনও পড়ে আছে সেই প্রাগোঐতিহাসিক গুহাতে,যখন সাপ আর মাকড়সা ছিল মৃত্যুর দূত।পুরুষদের অনেক মেয়েদের সাথে শরীর খেলার ব্যাপারটা,পরকীয়া প্রেম পর্ব সেই পুরোনোর নতুন এক চেহারা।প্রকৃতি তাকে শেখালো,শিকার করে খাবার জোগাড় আনা আর সমাজ রক্ষার জন্যে যত নারী সম্ভব তাদের সাথে সঙ্গম করে নতুন প্রজন্ম পৃথিবীতে আনা’।

আর জাতি,সমাজ রক্ষা করার মেয়েরা কি কোন দায়িত্ব নেয়নি,তারা কোন চিন্তাই করতো না?
‘অবশ্যই করতো।তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে ওটা ছিল এগার মিনিটের কথা আর মেয়েদের জন্যে সেটা ছিল নয় মাসের গল্প।শুধু তাই না নতুন প্রজন্মের সেবা,শুশ্রুষা-এটা ওটার কথা ভুলে গেলে চলবে না,ছিল বাইরের সাপ মাকড়শা থেকে তাদের রক্ষা করা।মেয়েদের অনুভূতিটা তাই কিছুটা অন্য ধরণের,জীবন যাত্রায় ভালবাসা,আত্মসংযম বিরাট একটা অংশ তাদের কাছে’।

বুঝলাম কিউবান লোকটা তার নিজের কথা বলছে,ও যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে তার জীবনের ঘটনাগুলো দিয়ে।আমি দেখছিলাম ভারতের সেই রাশিচক্রের বৃত্তটা,পাথর আর আগরবাতি।আসলে আমরা দুজনে একই ধরণের মানুষ,একই ভুল করে,আবার একই প্রশ্ন মনে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমরা দুজন-যার উত্তর পাইনি না আমি,না কিউবান লোকটা।

কিউবান লোকটা আবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,আর সময় নেই,আমার হাতে।
আরেকজন কেউ আসবে হয়তো,আর তার ইচ্ছা ছিল না তার রুগীদের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হউক।সে উঠে আমাকে দরজার দিকে এগিয়ে নিয়ে বললো,‘আমি রুঢ় হতে চাই না,তবে দয়া করে আমার সাথে আর যোগাযোগ করো না।যা বলার ছিল,সবই উগলে দিলাম তোমার কাছে’।

এটা বাইবেলের কথাঃ
একটা দুপুরের ঘটনা,ডেভিড বসার আসন থেকে উঠে প্রাসাদের ছাঁদে হাটাহাটি করছিল,
নীচে অদ্ভুত সুন্দরী একটা মেয়ে গোসল করছিল।তার চেহারায় এতই মুগ্ধ হয়ে গেল,ডেভিড সে লোক পাঠালো ঐ মেয়েটা সমন্ধে বিস্তারিত সবকিছু জানার জন্যে।একজন এসে জানালো, ‘ও বাথসিবা,ইলিয়ামের মেয়ে,হিট্টিদের উরিয়ার বৌ’।সবকিছু শোনার পর ডেভিড লোক দিয়ে বাথসিবাকে ডেকে পাঠালো,আর তারপর যথাযথ ভাবে ডেভিড সূযোগ করে নিল সেই মেয়েটার সাথে তার যৌন সম্পর্কের।মেয়েটা ফিরে গেল বাড়ীতে আর সন্তান সম্ভবা হওয়ায় ডেভিডকে জানালো, ‘আমার বাচ্চা হবে’।

শোনার পর ডেভিড,তার বিশ্বস্ত সৈন্যদের একজন-উরিয়াকে এমন এক অভিযানে যেখান থেকে বেঁচে আসা অসম্ভব বললেই ঠিক হবে।অভিযানে মারা গেল উরিয়া,আর বাথসিবা প্রাসাদে রাজা ডেভিডের সাথে বসবাস আরম্ভ করলো।

ডেভিড একটা বিরাট উদহারণ,যাকে মানুষ যুগ যুগ ধরে একটা আর্দশ চরিত্র হিসাবে জানে,অভাবনীয় সাহসী একটা চরিত্র,সে শুধু পরকীয়া প্রেমই করেনি,তার প্রতিদন্দীকে ছলচাতুরি করে খুন করতেও দ্বিধা করেনি।

বাইবেলের উদহারণ দেয়ার দরকার নেই,আমার পরকীয়া প্রেমকে যুক্তিযুক্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে।মনে পড়ে গেল আমার স্কুল জীবনের কথা-সেই একই স্কুল যেখানে বসন্তে জেকব আর আমি চুমু খেয়েছিলাম।ঐ চুমুগুলোকে আবার অনেক কটা বছর অপেক্ষা করতে
হলো ফিরে আসার জন্যে,আর ফিরে আসার চেহারাটা ছিল আমার ভাবনার সম্পূর্ন উল্টো।মনে হচ্ছিল নোংরা,স্বার্থপর,অশুভ কোন কিছু একটা।তবুও মনটা কেন জানি ছিল উচ্ছাসে ভঁরা,খুঁজছিল,‘ আবার কবে পাব সেটার স্বাদ’।

জেকবের সাথে দু সপ্তাহে বার চারেক দেখা হলো,জড়তা বেশ কেটে গেছে তখন,
যথারীতি যৌনসঙ্গমও হলো সনাতন ভাবে,যদিও নতুন নতুন আবিষ্কারের খেলার চেষ্টা থেমে থাকেনি।আমার মনের ইচ্ছাটা পূর্ন হয়নি তখনও,জেকবকে হাত পা বেঁধে যোনীদ্বারে তার জিভের ছোঁয়ায় আনন্দ সুখ খোঁজা হয়নি তখনও,তবে নিঃসন্দেহে পূর্ন করবো আমার ইচ্ছা।

মারিয়ান আমাদের মাঝে শুধুই একটা নাম-গতকালই তো তার স্বামীর সাথে যৌনখেলায় মত্ত ছিলাম,বেশ বুঝতে পারি এ নাটকে মারিয়ান কত নগন্য একটা চরিত্র।আমি চাই না মাদাম কোনিগ কোনভাবে জানুক আমাদের সর্ম্পকটা জেনে ডির্ভোসের চিন্তা করে,এটাই তো ভাল,আমার প্রেমিক শরীর খোঁজার পালা সবই থাকবে,আর বদলাতেও হবে না কোন কিছু।আমার স্বামী,সংসার,বাড়ী,চাকরী কোন কিছুই হারাবে না তার ঔজ্বল্য,চমৎকারিত্ব।

কি করবো কোকেন নিয়ে,কেন যে অযথাই হুজুগে কিনে রাখলাম?কিছু টাকা খরচ হলো অযথাই,বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারি,তবে ধরা পড়লে কোন কথা নাই সোজা জেলে।ওদের দিয়ে দিতে যারা ব্যাবহার করে,তবে দূর্নাম কি তাতে খব একটা কম হবে?জেকবের সাথে শরীর খেলার জন্যে কত কিছুই না করতে হলো!আমি ভাবছিলাম এটা হয়তো ভালবাসা,
আসলে তা না এটা শুধুই একটা শরীর খেলা,যে কোন সময় শেষ হতে পারে।এমন না যে এই সর্ম্পক রক্ষা করা আমার জন্যে একটা মাথা ব্যাথাঃএর মধ্যে উত্তেজনার ঝড়,যৌনতার নতুন আনন্দ খুঁজে নেয়া কোনটাই বাদ পড়েনি।আমার কোন দুঃখ নেই কোন অনুশোচনা নেই,এতগুলো বছর একটা আর্দশ জীবন টেনে নেয়ার পুরস্কার হিসাবে এতটুকু আনন্দ আমার অবশ্যই প্রাপ্য।মনটা এখন শান্তিতে পরিপূর্ন,অন্তত আজ পর্যন্ত।

কটা দিন শান্তিতে ঘুমানোর পর মনে হচ্ছে শুয়ে থাকা দানবটা নির্বাসনের রাজ্য ছেড়ে বের মুক্ত আকাশ দেখার জন্যে অস্থির হয়ে গেছে।সমস্যটা কি আমি নিজেই,নাকি এটা বছরের সেই সময়টা?বছরের এই সময়টায় আমার মন কেন জানি বেশ খারাপ থাকে-আমি শরীরের হরমোনের হিসেব,এগুলো নিয়ে কথা বলছি না।খুশী ভেবে আর যাই হোক,খ্রীসমাস ছুটির এই সময়টা-জেনেভায় অবস্থাটা অন্যান্য দেশের মত অতটা গোল্মেলে,হৈচৈ এ অত অসহনীয় হয়ে যায় না।একবার খ্রীসমাসে নিউইয়র্কে ছিলাম।চারপাশে আলোয় ভঁরা,জানালা দরজা সাজানো,
বরফের মত সাদা কুঁচি,ছুটে যাওয়া হরিন,হাসি ছড়ানো লোকজনের মুখ…আর আমি,আমাকে মনে হচ্ছিল অন্য গ্রহ থেকে আসা একটা মানুষ।যদিও আমি ঐ LSD ও ধরণের জিনিষে কোনদিন জড়াইনি,তবে মনে হচ্ছিল যে নেশার মাত্রাটা বেশ বাড়াতে হবে আলোর নানান রংগুলো উপলদ্ধি করার জন্যে।

জেনেভায় আমরা যা দেখি-শহরের মাঝখানটায় হাল্কা একটু সাজানো,মনে হয় বাইরে থেকে আসা লোকজনদের জন্যে (কিছু কেনাকাটা!একটু জোর গলায় বলার চেষ্টা,এলেই যখন তোমার ছেলেমেয়েদের জন্যে কিছু নিয়ে যাও!)।কিন্ত আমি ওখানে ঐ হৈচ এর রাজ্যে পৌঁছাতে পরিনি।এই অদ্ভুত অনুভুতিকে খ্রীসমাস বলা যায় না।কোন কোন বাড়ীর চিমনী দিয়ে কোথাও Santa Claus ঝুলছে যা মনে করাবে এটা খ্রীসমাস।আর সারাটা মাস ধরে মনে করতে হবে,এটা আনন্দের মাস।

রাতে ঘুম ছিল না চোখে,পাশে আমার স্বামী ঠিকই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল।জানি না এটা কি আমার পরকীয়া লুকানোর কারণ,আমার যৌন কামনাটা অনেক বেড়ে গেছে।হয়তো এমনও হতে পারে,জেকবের যৌন খেলায় সাজানো নতুন পালাগুলো এটার কারণ।দেরী করে বাড়ী ফিরে গেলেও,স্বামীর চোখে বা কথায় কোনদিন কোন ঈর্ষার কারণ দেখিনি।শুধু একবার,
জেকবের কথামত বাথরুমে শরীরে লুকানো গন্ধ সরানোর চেষ্টা করেছি,তারপর থেকে এক জোড়া প্যান্টি আর আন্ডারওয়ার সাথে নিতে ভুলিনা,কখনও।

মনে হয় না,এখন আর চোখে মুখে,কোন বিচলিত,অস্থিরতার ভাবটা থাকে কখনও।পরিচিত কজনের সাথে দেখা হলেও লুকানোর চেষ্টা করিনা,বরং এখন তাদের জিজ্ঞাসা করি,‘কারও সাথে দেখা করতে আসলে,এখানে’?এটা আমার আত্মবিশ্বাসে সাহায্যও করে,আর কোন ধরনের সন্দেহ হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়।কেন না দেখা যাবে অন্য কোন শহরে হোটেলের লিফটে যদি দেখা হয়,তারাও আমার মত নতুন আকাশে অভিসারের অভিযানে ভেসে বেড়াচ্ছে।

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,ঘুম ভেঙ্গে গেল কিছুক্ষন পরেই।ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনষ্টাইনের হাতে তৈরী হয় নতুন এক দানব,আর ডাঃজেকাইল তার দানবটাকে ছেড়ে দিয়েছিল মানুষের মাঝে।তবু আমার মনে কোন ভঁয় নাই,তবে বোধ করি আমার মনের দানবটাকে আয়ত্বে রাখার জন্যে কতগুলো নিয়ম করলে খারাপ হয় না।

আমার মন এক দিক স্নেহ মমতায় ভঁরা,বিপদে আস্থা না হারিয়ে ঠিকমত এগিয়ে যেতে পারে,সাংবাদিকতার সাক্ষাৎকারে অসাবধানতা এড়িয়ে সহজেই ঠিক প্রশ্ন উপস্থাপনা করতে পারে।আরেকটা দিক যা নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম আমি সহজেই বিচলিত হয়ে পড়ি,মনটা খোঁজে নতুন অভিযানের স্বপ্ন,যা শুধু হোটেলের রুমটায় জেকবের সাথে যৌন খেলায় মত্ত না থেকে,খোঁজে নতুন আনন্দের আকাশ।আজকাল খুব সহজেই রেগে যাই যখন দেখি দোকানের কর্মচারীরা খদ্দেরের সাথে অযথায় গল্পে ব্যাস্ত হয়ে আছে,আর লাইন ধরে দাঁড়ানো।আজকাল বাজারেও খুব একটা যাওয়া হয় না,আর জিনিষপত্রের দাম আর তারিখটাও আজকাল খুব একটা পরখ দেখি না।

কারও সাথে একমত না হলে তাকে যুক্তিতর্ক দিয়ে আমার মতামত বোঝাতে ছাড়ি না।আমি রাজনীতি নিয়ে তর্ক করি।আমি আগের সেই ব্যাক্তিত্ব প্রধান মেয়েটা না,আমি যেন নতুন আরেকজন কেউ।চেনা লোকজন প্রায়ই বলে, ‘অনেক বদলে গেছ,তুমি’।সবাই যেন বলার চেষ্টা করছে, ‘তুমি কিছু একটা লুকাতে চাচ্ছ’,সময়ে হয়তো বদলে সে কথাটা হবে, ‘তুমি যদি অবৈধ কিছু কর তাহলেই লুকানোর প্রয়োজন’।হয়তো অযথাই সন্দিহান আমি,মনে হচ্ছে এই এক শরীরে দুটো চরিত্র লুকানো।

ডেভিডকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি,লোকজনকে আদেশ দেয়ার পর আর বাথসিবাকে প্রাসাদের বিছানায় আনতে খুব একটা ঝামেলাও হয়নি।কাউকে কোন জবাবদিহি করতে
হয়নি,ডেভিডের।সমস্যা দেখা দিল যখন,ডেভিডের খুব সহজ হিসাবটা একটু গরমিল হলো-বাথসিবার স্বামীকে মৃত্যু যুদ্ধে পাঠানোর সময়,তা ছাড়া আর কিছু না।

সুইস দেশের লোকজন যদিও বেশ বিচক্ষন,সর্তক,তবু কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকেও বেহিসেবি,লাগামছাড়া,অচেনা একটা চেহারায় যে দেখা যায় না,তা না।রাস্তায় গাড়ী চালানোর সময় ক্ষেপে যেতে তাদের খুব একটা বেশী সময় লাগে না।আর একটা বিষয় হলো বদলানো,সেটা কাজে হোক,আচার ব্যাবহারে হোক,সুইস দেশবাসীরা বদলানোর সর্ম্পূন বিপক্ষে।পৃথিবীতে যেখানে যা যে ভাবে চলছে,চলুক,বদলানোর চেষ্টা করা,সারা সমাজ সংসারকে অস্থির করে দেয়া ছাড়া আর কিছু না।সুইজারল্যান্ড অনেক ঝড় ঝাঁপটা ছেড়ে পৌঁছেছে এখানে,ওখানে নতুন করে বদলে নতুন সূর্য নিয়ে আসার দরকার নাই।

আমরা যেখানে বেড়াতে গেছি,উইলিয়াম,ভিক্টর ফ্রাঙ্কেষ্টাইনের খুন হওয়ার,অনেক যুগ ধরে ওটা পড়ে ছিল পরিত্যাক্ত একটা জায়গা হিসাবে।কালভিনের,অত্যাচারী হাত ধরে জেনেভা একটা উঁচু ধরণের শহর হিসাবে পৃথিবীতে জায়গা করে নেয়।

প্লেনপালাইস,জেনেভা শহরের মাঝামাঝি একমাত্র জায়গা,যেখানে সবুজের কোন আভাস নেই।শীতে এখানে হাড় জুড়ানো ঠান্ডা,গরমে সূর্যের তাপ ঘামে ভিজিয়ে দেয় শরীর।তবে অযথা এটা ওটা বলে কি লাভ,এমন কি কোন নিয়ম আছে কোন জিনিষটা কোথায় থাকবে?

এটা একটা নতুন ভড়ং,শনিবারের দিন-পুরোনো জিনিষপত্র বিক্রি করার লোকজন দোকান সাজিয়ে বসে আছে।বাজারটা বাইরের লোকজনের কাছে বিরাট একটা আর্কষণ,এমন কি ট্রাভেল গাইডেও লেখা, ‘পুরোনো বাজার যাওয়ার মত একটা জায়গা’।পাঁচ ছয়শ বছর আগেকার পুরোনো জিনিষের পাশে ভিসিআর।এসিয়া,আফ্রিকা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরোনো ব্রঞ্জের মূর্তির পাশে সাজানো আশির দশকের কিম্ভুতিকার চেয়ার টেবিল আসবাবপত্র।

লোকের ভিড়ে জমজম করছে চারপাশ,দেখলাম কজন গুনগ্রাহী একটা মূর্তি নিয়ে দোকানদারের দরদাম করছে,একপাশে।বেশীর ভাগ লোকজন যারা আসে কিছু না কিছু একটা কিনে ফে্টা,তবে দরকা্র বলে না-সস্তা তাই।ফিরে হয়তো এক দুবার ব্যাবহার করে-তারপর ফেলে দিয়ে বলে, ‘অকেজো জিনিষ,তবে বেশ সস্তা ছিল’।

০০০০০০

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.