নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Paulo Coelho এর adultery (পরকীয়া)

১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৯

(২০)

গির্জার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম,কুয়াশায় ঢাকা সারা শহরটা,কোন একটা ভয়ের সিনেমার দৃশ্য।মারিয়ান হয়তো একটা গলিতে চাকু হাতে দাঁড়িয়ে আছে,আমাকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়বে,মধ্য যুগের জেনেভার মত সবসময় ফরাসীদের যুদ্ধে ব্যাস্ত,কোন না কোন কারণে।না শীতে,না হেঁটে যাওয়ায়,আমার রাগ কমেনি একটুকুও।বাড়ী পৌঁছে দুটা ভ্যালিয়াম খেয়ে শুয়ে পড়লাম,বসার ঘরে তখন আমার স্বামী বেবী সিটারকে হিসাব করে বিদায় করছিল।

ভ্যালিয়ামের আমেজে ঘন্টা দশেক কেটে গেল ঘুমে্র দেশে।সকালে যথারীতি সেই পুরোনো আমি,কেন জানি মনে হচ্ছিল আমার জন্যে স্বামীর অনূভিতিটা বেশ কমে গেছে।ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না,তবে মনে হলো গতকালকের আলাপ আলোচনা তার কাছে খুব একটা ভাল লাগেনি।এই প্রথম দুটো ভ্যালিয়াম এক সাথে খেলাম,ভ্যালিঊয়াম বা যে কারণেই হোক কিছুটা আলসে আর দুঃখী দুঃখী ভাবে মনটা ছেয়ে ছিল।

কাজে পৌঁছে দেখলাম,ফোনে জেকবের ম্যাসেজ,এঁকেবারেই ইচ্ছা হচ্ছিল না খুলে দেখতে,তবে কৌতুহল কি আর থামানো যায়?

আজ সকালে লেখা,
‘তুমি একেবারেই সবকিছু তছনছ করে দিলে,মারিয়ানের ধারণা ছিল না,আমাদের সর্ম্পক সমন্ধে,এখন সবকিছুই জেনে গেছে সে,কানাঘুষা করার আর কিছু নাই।তোমার অজান্তেই তুমি ওর ফাঁদে পড়ে গেলে’।

সুপারমার্কেটে কেনাকাটার জন্যে যেতে হলো,হতাশ একটা জীবন আমার,ভেসে যাচ্ছি গতানুগতিকতার স্রোতে।মারিয়ানের কথাটা একদিক দিয়ে ঠিক,আমি আর কিছু না বিছানায় শুয়ে থাকা একটা কুকুরের খেলার পুতুল।হতাশায় গাড়ীও চালাচ্ছিলাম এলেমেলো ভাবে,কান্না সামলাতে পারিনি,পেছনের গাড়ীগুলো হর্ন দিয়ে অভিযোগ জানান দিচ্ছিল,বারে বারে।

জেকবের কথাটা ঠিক,ওটা আমার বোকামী,প্রথমতঃ মারিয়ানের ফাঁদে পড়া,তবে আরও বোকামী হলো স্বামী,ছেলেমেয়ে,সংসারের কথা না ভেবে এ ধরণের ঝড়ো স্রোতে ঝাঁপ দিয়ে সীমাহীন সমুদ্রে ছুটে যাওয়া।দুটো ভ্যালিয়ামের আমেজে গাড়ী চালনাও কম বোকামী না,
শুধু নিজেকে বিপদে ফেলা না,বিপদে ফেলা অন্যান্যদের।রাস্তার একপাশে গাড়ী পার্ক করে,মন খুলে কাদছিলাম।আমার হাউমাউ কান্না দেখে কজন এসে জিজ্ঞাসা করলো,কোন সাহায্য করতে পারে নাকি?যদিও আমি না বললাম,কিন্ত আমার তো সত্যি সত্যি সাহায্য দরকার,ধীরে ধীরে আরও নীচে ডুবে যাচ্ছি,ডুবে যাচ্ছি চোরাবালিতে,কোন উদ্ধার নেই সেখান থেকে।

ঘৃনায় অন্ধ হয়ে গেছি আমি।হয়তো এর মধ্যে জেকব নিজেকে সামলে সংসারী হওয়ার চেষ্টা করছে,আমার সাথে আর যোগাযোগ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।ওটা তো আমারই দোষ,
বোকারাই ভাবে তারা বুঝতে পারে অন্যদের মনের কথা।জেকবকে ফোন করে ক্ষমা চাওয়া উচিত,তবে ও কি আর ফোন ধরবে?আমার স্বামী কেমন আছে সেটাও জানা দরকার,অবশ্য স্বামীর কথা শুনলেই বুঝতে পারবো,ও রেগে আছে,কি না?

কেন জানি আর কিছুই জানতে ইচ্ছা হচ্ছে না,একটু ভঁয় ভঁয়ও লাগছে,পেটটাও কেমন জানি গুড়গুড় করছে,হাতটাও কাঁপছে।চীৎকার করে কাঁদছিলাম,আর কোন কিছু করার যে সাহস নেই আমার!শুধু মন ভঁরে কাঁদতে চাই,আর যাই হোক তাতে কারও কোন ক্ষতি হচ্ছে না।

এ যন্ত্রনার জগতটা আমার নিজেরেই তৈরী,যদি সম্ভব হতো ফিরে যেতাম পুরোনোতে,এখন আর কি করা,কান্না,শুধু নিজেকে খোঁজা হতাশা আর ঘৃনায় ভঁরা এ জীবনে।

কেন যে এত বোকা হয়ে গেলাম?কি ভাবে ভাবলাম মারিয়ান আমাকে উপলক্ষ্য করে বলছিল কথাগুলো,অপরাধ বোধে ডুবে আছে আমার মন,আর দোষীর মত আমি মারিয়ানকে দোষী বানানোর চেষ্টা করছিলাম!

ইচ্ছা ছিল জেকবের সামনে মারিয়ানকে অপমান করার,অপদস্থ করা,যাতে সে না ভাবে আমি একটা পরগাছা জঞ্জাল,কিন্ত নিজেই পড়লাম মারিয়ানের ফাঁদে।জেকবকে আমি ভালবাসি না,তবে জেকবের হাত ধরে ফিরে যাচ্ছি আমার অনেক হারানো পুরোনোতে,একাকীত্বের হতাশা থেকে বের হয়ে আসার স্বাছন্দের আকাশে।

আনন্দের দিনগুলো বোধকরি শেষ হয়ে আসছে।ফিরে যেতে হবে বাস্তবের সুপারমার্কেটের পুরোনো এলাকায়,যেখানে দিন বদলায় না,আটকে আছে গতানুগতিতার ঘুর্নিঝড়ে,এক সময় যা ছিল শান্তির একটা আকাশ এখন সেটাই যন্ত্রনার কারাগার।ঘুর্নিঝড়ের গতানুগতিক আকাশেই,
যা আছে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে সেখানেই।

স্বামীকে বলতে হবে যা ঘটে গেছে ওটা সাময়িক একটা পদস্খলন,আমার বিশ্বাস,ও ঠিকই বুঝবে,নিশ্চয় ক্ষমা করবে আমাকে।আমার স্বামী একজন দরদী,বুদ্ধিমান লোক,তার জীবনে সংসার,পরিবারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ন আর কিছুই নাই।কিন্ত এমন যদি হয় আমি যা ভাবছি,
সেটা হয়তো ঠিক না,হয়তো সে মেনে নিবে না অযথার পরিবর্তন,ওর হয়তো এটা স্বেচ্ছাচারিতা?আমার স্বামী ভাবতে পারে, ‘আর কত,একটা মেয়ে যে সব সময় অভিযোগ করে যাচ্ছে,সব সময় হতাশায় ভুগছে,এখন আবার পরকীয়া প্রেমে মত্ত,এ ভাবে কি আর জীবন চলে?অনেক হলো,এবার কিছু একটা বদলানো দরকার’।

আমার কান্নার জোয়ার তখন ভাঁটার পথে,কাজের কথা ভাবছিলাম,রাস্তার খ্রীসমাসের সুখী লোকজনদের মাঝে আর কতটা সময় কাটানো যায় কান্নার চোখে?কিছু একটা করা দরকার,আমার চোখের সারা পৃথিবী তছনছ হয়ে যেতে পারে,যা কিছু করি ভেবে চিন্তে করা দরকার,অযথায় ভেসে যাওয়া ঠিক হবে না।আমার জীবনে কি গুরুত্বপূর্ন,ভেবে দেখতে হবে?

অন্ততঃ ভান করতে হবে,এক পতিভক্ত স্ত্রী হিসাবে,আহত এক জন্তর মত না,যন্ত্রণার রক্তাত্ত একটা চেহারা না।নিয়মের রাজ্যে যদিও আমি বেশ অচল,কিন্ত এখন এই সময়,খুঁজে বের করতে হবে আমার লুকোনো শান্ত চরিত্রটাকে।একুল ওকুল দুকুল ভাসিয়ে সমুদ্রের মাঝে সাঁতার কেটে তো আর জীবন কাটবে না!

চোখ মুছে আকাশের নীল হয়ে ছিলাম,বাড়ী ফিরতে হবে,যদিও আর কিছুটা সময় হয়তো কাটাতে পারি।এর আগে আমার স্বামী কি কিছু সন্দেহ করেনি,কোনদিন কি তার মনে কোন প্রশণ জাগে নি?পুরুষেরা কি বুঝতে পারে,মেয়েরা বিছানায় কখন ভান করছে?হয়তো পারে,
তবে ওটা জানার উপায় কোথায়?

ভাবলাম গাড়ী থেকে বের হয়ে পাকিং মিটারে পয়সা দিয়ে,কিছুক্ষন অযথা ঘুরে বেড়াবো।কাজে একটা অজুহাত দিতে খুব একটা অসুবিধা হবে নাঃছেলের শরীর খারাপ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে,বললেই যথেষ্ট।আমার সম্পাদক ঠিকই বিশ্বাস করবে,
সুইসেরা মনে ক্রে,এ দেশে কেউ মিথ্যা কথা বলে না।

আমি তো মিথ্যা কথা বলিই,সারা দিন মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছি।আত্মসম্মান বলে আর কোন কিছু নেই আমার,অজানা এক চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছি।সুইস জাতির লোকজন বিশ্বাস করে বাস্তবতায়,আবেগ অনুভুতির মাতাল জগতটাতে ওদের বিশ্বাস নেই।আমার সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না,আমার সাজানো পৃথিবীর সুন্দর সংসার,আর্দশ প্রেমিক,তারা কোথায়?

এলেমেলো ভাবে হাঁটছিলাম আমার ভালবাসার শহরে,জেনেভা এখনও আঁটকে আছে সেই পঞ্চাশের দশকে,ওর নতুন হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।শীত আছে,বাতাস নেই তেমন একটা,তাই একটু সহনীয়।হেঁটে যাচ্ছিলাম একের পর এক সাজানো বই এর দোকান,কাপড়ের দোকান,মাংসের দোকান ছেড়ে।শীতের প্রভাবে মনের দাউদাউ করে জ্বলা আগুনটা কিছুটা থিমিয়ে গেছে তখন।

আর্দশ মনের মানুষ কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব?হয়তো পারে!সমস্যাটা হলো,হতে পারে হঠাৎ দেখা পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অজানা মুখ দেখে থমকে থাকা বাতাসও বদলে যায় পাগল করা ঝড়ো সুরে,লূ হাওয়ার মত বদলে যায় চেনা আকাশ।

জেকবের কাছে কি চাওয়ার ছিল আমার?এটা তো আমার জানাই ছিল,জেকব সাথে সর্ম্পকের পরিনতি,কিন্ত এমন নোংরা ভাবে শেষ হবে,এটা ভাবতে পারিনি?হয়তো আমার যা চাওয়া ছিল,পেয়ে গেছি,অভিযান জয়ের আনন্দের শেষে এখন শান্ত হয়ে ঘরে ফেরার পালা।এমন কি হতে পারে আমার চাওয়া ছিল আরও অনেক-জেকবের সাথে একসাথে থাকা,তাকে মানসিক শক্তি যোগানো,বৌ এর কাছে যার কোনটাই পাচ্ছে না,সে।হয়তো স্বপ্ন ছিল আমার জেকবকে তার জগত থেকে সরিয়ে আমার জগতে নিয়ে আনন্দের দেশ সাজানো,অনেকটা যেন অন্যের বাগানের ফুলের গাছ নিজের বাগানে আনা,কিন্ত ওটাতো জানাই ফুল ও ভাবে বাঁচে না।

ঈর্ষার স্রোতে ভেসে যাচ্ছি আমি,কিন্ত এখন আর কান্না নেই,আছে প্রচন্ড রাগ।মানুষজন আসছে যাচ্ছে,ব্যাস্ততার ফাঁকেও তাদের চোখ আঁটকে আছে ফোনের ছোট্ট দেয়ালে।
বাস আসছে,যাচ্ছে,হয়তো শীতের অত্যাচারে লোকজন তাড়াহুড়া করে উঠানামা করছে।যারা কোথায় যাবে ঠিক করতে পারেনি,তারাই ধীরে ধীরে উঠছিল।কারও চোখে মুখে ছিল না কোন আনন্দ বা হতাশা,অচেনা মুখগুলো যন্ত্রের মত শুধু যা করার সেটাই করে যাচ্ছে।

আমি ফিরে গেছি আমার পুরোনোতে,মনের ভেতরের কিছু রহস্য তখন আমার বোধগম্য।
একটা হলো,ভেতরে লুকানো ঘৃনাটা যা আসে যায়,অনেকটা বাসের মত।সুখ খুঁজতে গিয়ে আমি হারিয়ে গেছি,আর সামনের দিকে তাকানোর সাহসও আমার নেই।আমার স্বামী?ওর সাথে মন খুলে দিয়ে কিছু আলাপ করা দরকার,তাকে সব কিছু জানানোই এখন বুদ্ধিমানের কাজ।এটা আমার বিশ্বাস,ওটাই আমার মুক্তির পথ,আর কত মিথ্যা বলে যাব?

তবে এখন আর কিছু ভাবতে চাচ্ছি না,অন্য কিছু না ঈর্ষাই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।সরে যেতে পারছি না,কুকুরের মত বিরাট একটা শেকল দিয়ে বাঁধা আমি সেখানে,আর কোথাও যাওয়া সম্ভব না।

মারিয়ান কি পচ্ছন্দ করে তার স্বামীর পরকীয়ার গল্প,কোথায় কি ভাবে কার সাথে সে যৌন খেলায় মত্ত ছিল?আমার বোঝা উচিত ছিল জেকব যৌন খেলার এক পারদর্শী খেলোয়াড়,
যখন বিছানার টেবিল থেকে সে কনডমটা তুলে নিল,তা ছাড়া ওর চালচলনেও অনেক কিছুই বোঝা যাচ্ছিল।হোটেল থেকে বের হয়ে কতবার যে নিজেকে বললাম,আর না এটা এখানেই শেষ করা উচিত,কিন্ত আমার মনের কথা ছিল অন্য কিছু,জেকব ডাকলেই আমি এখনও ছুটে যাব।

আমি,সব কিছুই জানি।তবুও নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম,শরীর খেলার অভিযান ছাড়া ওটা আর কিছুই না।কিন্ত ওটাতো সত্যি না।বুঝতে পারলাম,ভালবাসা বা ঐ নামের আর্কষনে ভেসে গেছি আমি,অনেক ঘুম ছাড়া রাত কেটে গেছে,আমার।ভালবাসার মাতাল,
আমি।জানি না,কি করবো?মনে হয়,সব বিবাহিত মানুষেরই কোন না গোপন আর্কষন আছে।যদিও হিসেবমত ওটা নিষিব্ধ,তবে নিষিব্ধ ব্যাপারে জড়ানোটাই জীবনকে আরও আর্কষনীয় করে তোলে,এটা কার না জানা।বেশীর ভাগ মানুষের মনে এটা এমন একটা যোগাযোগ যা নষ্ট করে দিতে পারে সহজ স্রোতে ভেসে যাওয়া জীবন।আর ওটা শরীর খেলার আনন্দটাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে স্খালনের চরম মূহুর্তে চীৎকার করে বলা, ‘ভালবাসি তোমাকে’,ছাড়া আর কিছু না।

আচ্ছা,এমন যদি হয় দেখলাম আমার স্বামী অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেম করছে?আমার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?অসহনীয় হতো নিশ্চয়,হয়তো বলতাম,পৃথিবীতে ভাল মানুষের কোন জায়গা নাই,জীবনের চলার পথে আমি সম্পূর্ন ব্যার্থ একটা মানুষ,আর বয়সের ভারে চমকটাও হারিয়ে গেছে।হয়তো ঈর্ষায় পাগল হয়ে যেতাম,কাঁদতাম পাগলের মত,ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে যেতেও দ্বিধা হতো না।হয়তো মাস দুতিনেক পরে অনুশোচনায় ক্লান্ত হয়ে ফেরার চিন্তা করতাম।মাস চারেক পরে নতুন জীবন আরম্ভ করার কথা ভেবে হয়তো অস্থির হয়ে উঠতাম।তবে মাস পাঁচেক পরে ফিরে স্বামীকে বলতাম, ‘ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করেই ফিরলাম,ওদেরকে এভাবে অযথা যন্ত্রনা দেওয়ার কোন মানে হয় না’।তবে হয়তো তখন বেশ দেরী হয়ে গেছে,স্বামী সুন্দরী,যুবতী প্রেমিকার সাথে উদ্দীপনায় ভঁরা নতুন একটা মুখ।

ফোনটা বেজে উঠলো,আমার ছেলে তারপর আমার সম্পাদক।ছেলেকে,সম্পাদককে বললাম আমি বাস ষ্ট্যান্ডে,কিছুক্ষনের মধ্যেই পত্রিকার অফিসে যাচ্ছি।ভঁয় পাওয়া মন কখনও খুঁজে পায় না বাস্তবতার আকাশ।এ ভাবে আর কতক্ষন,আমাকে প্রকৃতস্থ হতে হবে।আমার কাজ অপেক্ষা করে আছে,হয়তো কাজ সাহায্য করবে আমার মনের দূরবস্থাকে।

বাস ষ্ট্যান্ড ছেড়ে গাড়ীর কাছে পৌছালাম।ঝরা পাতায় ভঁরে আছে রাস্তাগুলো,কেউ পরিষ্কার করে নি তখনও,জেনেভা বেশ ধনী একটা শহর,তাদের অভাব থাকার কথা না।ঐ পাতাগুলো একসময় ছিল গাছের ভালবাসায়,এখন নতুনকে জায়গা করে দিয়ে সরে গেছে।গাছ কি কখনও মনে রাখে তার সবুজ চেহারার,যে সবুজ তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।না!গাছ কি কোনদিন ভাবে ঐ পোকামাকড়ের কথা,যার ফুল থেকে ফুলে নিয়ে যায় রেনু,যেন নিশ্চিহ্ন না হয় তার প্রজন্ম।গাছ সব সময় শুধু নিজের কথা,ছুড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করেনি,না পাতা,না পোকাদের।

আমি অনেকটা যেন সেই সবুজ ঝরা পাতা যার জানা নেই,ফুরোবে তার সময় সুর্যের কোন এক সাজে।সবুজ পাতাটা অবাক চোখে ভালবসে গেছে সূর্যকে,চাঁদকে,দেখে গেছে বাসের আসা যাওয়া,গাড়ীর শব্দের সুরে অবাক হয়ে ছিল,কেউ তাকে বলেনি ফুরোবে বসন্ত আসবে শীতের ছোঁয়াচ,একসময়।যৌবনের আনন্দের সময়টা কেটে গেছে গাছের সাথে,তবু এক সময় হলদে জীর্ন পাতাটাকে ছুঁড়ে দিল গাছ।

কেউ বলে নি, ‘দেখা হবে আবার’,শুধু বলে দিল, ‘দেখা হবে না আর’,জানা ছিল গাছটার আর কোনদিন দেখা হবে না তাদের।বরং গাছ নিষ্ঠুর সুরে বাতাসকে ডেকে বললো, ‘ওকে ছুঁড়ে দাও দূরে,বহুদূরে’।গাছের জানাই ছিল আরও নতুন সাজে,আর ও সুন্দর সবুজ ফুলে ভঁরে উঠবে চারপাশ।
অনেক হলো,অলস চিন্তা,ভাবনা,চিন্তা একপাশে রেখে বরং কাজে ব্যাস্ত থাকাই ভাল।তবুও মন থেকে সব কিছু ঝেড়ে ফেলতে পারছি না।দেখি রাস্তায় পার্ক করা গাড়ীর লাইসেন্সটা একজন গার্ড স্কান করে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আপনার গাড়ী’?
হ্যা।
গাড়ীর লাইসেন্স প্লেট চেক করে হয়তো এর মধ্যে টিকেট লেখা হয়ে গেছে,ক দিন পর সাজানো একটা খামে এসে পৌঁছাবে।হয়তো আমাকে ১০০ ফ্রাঙ্ক জরিমানা দিতে হবে,আমি অবশ্য উকিল দিয়ে ফাইন মওকুফের আবেদন করতে পারি,খরচ হবে ৫০০ ফ্রাঙ্ক।
‘আপনার গাড়ী প্রায় ঘন্টা খানেক পার্ক করা ছিল এখানে,আধ ঘন্টার বেশী পার্ক করার নিয়ম নাই’।মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম,কোন প্রতিবাদ করিনি,কোন অনুরোধ করিনি,বেশ অবাক হয়ে গেছে লোকটা।আমার যথাযথ প্রতিক্রিয়া না দেখে তার অবাক হওয়ারই কথা।হাতের মেশিনের একটা টিকেট বের করে খামে গাড়ীর সামনের কাঁচে রেখে চলে যাচ্ছিল।আমি চাবিতে চাপ দিয়ে গাড়ীর দরজাটা খোলার পর,গার্ড একটু চমকে টিকেটটা আমার হাতে দিল।দুজনেরই কোন অভিযোগ ছিল না,আমরা চলে গেলাম নিজেদের রাজ্যে,কোন অভিযোগ শুনতে হয়নি তাকে আর নিয়ম ভাঙ্গার শাস্তি সেটা তো প্রাপ্যই।

জানা যাবে,আমার স্বামী হয়তো খুব সংযত,হয়তো চারপাশের কোন কিছুই তাকে বিচলিত করে না,আর বিচলিত হলেও কোন প্রকাশ নেই তার হাভেভাবে।বাড়ী ফিরলাম,সারা দিন ধরে কাগজের অফিসে পৃথিবীর দূর্বোধ্য সমস্যাগুলো জেনেঃপাইলটের ট্রেনিং দরকার,বাজারে খ্রীষ্টমাস গাছের প্রাচুর্যতা বেড়ে গেছে অনেক,এটা সেটা,আমার নিজেকে কোন নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতাটা ছিল না,আর।

অন্যান্য আরও হাজার রাত্রির মত,যথারীতি রাতের খাবার প্রস্ততি আরম্ভ করতে হলো। খাবার পরবসার ঘরে কিছুক্ষন টিভি দেখলাম আমরা,আর ছেলেমেয়েরা তখন তাদের টেবলেটে সন্ত্রাসীদের মারতে ব্যাস্ত।ডিসওয়াশারে থালাবাসন দিয়ে ঘুমোতে গেলাম,আর স্বামী গেল ছেলেমেয়েদের ঘুমাতে যাওয়ার আদেশ দিতে।এর মাঝে তেমন একটা কথাবার্তা হয়নি আমাদের,শুধু দৈনন্দিনতা দু একটা গল্প কথা ছাড়া।ঠিক মনে পড়ে না এটাই কি আমাদের প্রতিদিনের গল্প,না অবাক হওয়ার কিছু আছে আরও।

ফায়ারপ্লেসে আগুন এ বছরে এ বারই প্রথম।আগুনের চেহারাটা শান্তি আনে আমার মনে,ভাবছি হয়তো সবকিছুই জানে আমার স্বামী।মদের বোতল খুলে,কিছু পনীর সাজিয়ে দিলাম থালায়।মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে আগুনের ফনা দেখছিলাম,কোন অস্থিরতা বা ভঁয় ছিল না আমার মনে।একটা কিছু বদলানো দরকার,এ সংসার যদি ভাঙ্গতে হয় ভাঙ্গুক,শরতের একটা দিনে শেষ হবে সব কিছু,দুজন সভ্য মানুষের মত চলে যাব আমরা হয়তো ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে।

স্বামী নীচে এসে খেয়াল করলো সাজানো নতুন পরিবেশ,কোন প্রশ্ন ছিল না তার।আমার পাশে সোফায় বসে আগুনের নাচ দেখছিল,আর মদের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছিল।ওর গ্লাসে আরও একটু মদ দিচ্ছিলাম,হাত নাড়া দিয়ে মানা করলো।কিছু বলার ছিল না যেন,আমি বললাম,আজকে তো প্রচন্ড শীত ছিল,হয়তো শূন্যের নীচেই হবে।আমার স্বামী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
ভাব দেখে মনে হচ্ছে কথাবার্তা আমাকেই আরম্ভ করতে হবে।
আমি সত্যিই দুঃখিত রাতের খাবারের ঘটনাটার জন্যে…।
‘ওটা তোমার দোষ না,মহিলাটার মাথায় গোলমাল আছে।একটা অনুরোধ করছি,শোন এ সব জায়গায় আমাকে না নিয়েই গেলে আমি খুশী হবো’।
বেশ ঠান্ডা গলার কথাগুলো,একটা ছোট বাচ্চাও জানে,প্রচন্ড একটা ঝড় আসার আগে,মনে হয় সবকিছুই শান্ত।
আমি বলতে ভুলিনি,মারিয়ানের ঐ ভদ্রতার পেছনে লুকানো ছিল সাপের মত একটা মন,ঈর্ষায় ভরা,ঘৃনায় ভঁরা।
‘এতে অবাক হওয়ার কি আছে,ঈর্ষায় তো মানুষ অন্ধ হয়ে যায়ই,ভুলে যায় তার অবস্থান।ঈর্ষা আমাদের এমনভাবে অন্ধ করে দেয়,আমরা ভুলে যাই আমাদের সুন্দর সময়গুলো,যোগাযোগের জগতটা।এভাবেই ঘৃনা দুজনের মাঝের ভালবাসার জগতটা একপাশে ঠেলে জায়গা করেন নেয়’।

আমার স্বামী,মন খুলে কথা বলার পরিবেশ তৈরী করে দিচ্ছে।সে আবার বলা আরম্ভ করলো, ‘মানুষের জীবনে দিনগুলো আসে যখন তার পাওয়াগুলো সরে আসে চাওয়ার অনেক দূরে। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে,ঐ চাওয়ার জন্যে কতটুকু বির্সজন দিতে পার তুমি?’
ওটা কি আমার জন্যে প্রশ্ন ?
‘না,না,আমি নিজেকেই প্রশ্ন করছি।সাধনা ছাড়া কি কোন জিনিষ পাওয়া সম্ভব?একটা বিশ্বাস থাকা দরকার,সাধারণ সংষ্কারের প্রাচীরটাও ভাঙ্গতে হবে,ভয় ভাঙ্গার জন্যে দরকার সাহস।এটা ভুলে গেলে চলবে না জীবন একটাই,সেখানে তোমার কিছু চাওয়ার জন্যে কিছু ছাড় দিতে হবে’।
মদের গ্লাসে আরেকটু মদ ঢেলে নিলাম,আমার স্বামী আরও কটা কাঠ ছুঁড়ে দিল আগুনে।
কখন আমার সাহস হবে সত্যি কথাটা বলার?কিন্ত কেন জানি স্বামী আমাকে কোন সূযোগ না দিয়ে বলে যাচ্ছিল তার কথাগুলো।
‘স্বপ্ন দেখাটা সহজ মনে হলেও অত সহজ না,বরং সেটা বেশ ভয়ানক।আমরা যখন স্বপ্ন দেখি,আমরা অনেক কিছু টেনে আনি সেই স্বপ্নের রাজ্যে,খুজে নেই সেখানে নিজের পচ্ছন্দের দেশটা’।

এখন,যত সময় যাবে ততই আমাদের দুজনের যন্ত্রনা বাড়বে,গ্লাসটা হাতে মনের যন্ত্রনার কথা বলার চেষ্টা করছিলাম।আমার স্বামী বললো,ওগুলো রাতের খাবারে কম আলোচনা করাই ভাল।যখন আমি তাকে আমার হতাশার কথা বলছিলাম।ও বললো, ‘ও ধরণের কিছু আমি আলোচনা করতে চাচ্ছি না’।
আমাকে থামিয়ে সে তার নিজের কথাই বলে যাচ্ছিল,
‘স্বপ্ন খুঁজতে মানুষকে একটা দাম দিতে হয়।হয়তো পুরোনো স্বভাব বদলাতে হয়,হয়তো খুঁজে নিতে হয় অজানা কোন দুরুহ পথের যাত্রা।তারপর একসময় মানুষ পেছনে ফিরে বলে,অযথাই জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল’।
আমার স্বামী সব কিছুই আরও যন্ত্রনাদায়ক করে দিচ্ছে।আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটা তো আবলতাবল না,ওটাই তো আমাদের সমস্যা।
আমার স্বামী হেসে উঠলো।
‘আমি আমার ঈর্ষাকে দমন করে রাখি,তাই আমি সুখী তোমার সাথে।কেন জান?কেননা আমাকে তোমার প্রেমের যোগ্য করে নিতে হয়,সংসার ভালবাসার জন্যে আমি যুদ্ধ করি,যুদ্ধ করি ছেলেমেয়েদের ভালবাসি বলে।ভালবাসি তোমাকে,ভালবাসার জন্যে,তোমার পাশে থাকার জন্যে,যে কোন যুদ্ধ করতে আমার দ্বিধা হয় না।কিন্ত তবুও কি ভালবাসার মানুষটাকে ধরে রাখা যায়?যায় না!যদি তুমি মুক্ত হতে চাও,খুঁজে নিতে চাও নিজের সুখ,সেখানে আমার আপত্তি থাকবে কেন?তোমার জন্যে আমার ভালবাসা আকাশ ছোঁয়া আর তার শেষ নাই কোন’।
আমার চোখ ভরা কান্নায়,জানি কি বলছিল সে,ওগুলো কি শুধু কথার কথা,না আমাকে উদ্দেশ্য করে বিশেষ কিছু বলা।
‘আমি একাকীত্বকে ভঁয় করি না’,আবার বলা আরম্ভ করলো সে, ‘আমি অলীক রাজ্যে বাস করতে চাই না,ভেবে ভেবে, অস্থির হতে চাই না কি হতো,কি হওয়া উচিত বাস্তবকে এড়িয়ে’।
আমার হাতটা হাতে নিয়ে,আবার বলা আরম্ভ করলো,সে।
‘তুমি আমার জীবনের,একটা আর্শীবাদ।আমি হয়তো তোমার স্বামী হওয়ার যোগ্য না,আমি জানিনা কি ভাবে মনের অনুভুতিটা প্রকাশ করতে হয়?তবে এটুকু জানি সর্ম্পক,যোগাযোগে সেটার প্রয়োজনীয়তা আছে।তুমি যে আমার জীবনে কত গুরত্বপূর্ন তোমাকে বলা হয়নি কখনও,বলার যথাযথ ভাষা খুঁজে পাইনি।এখানে বসে,ঈর্ষা ভালবাসার অভাব নিয়ে আলাপ আলোচনা করা,আমার পচ্ছন্দের না।চল,না হয় দুজন আমরা বাইরের কোথাও থেকে ঘুরে আসি।পুরোনো বছরের বিদায়টা না হয় নতুন কোন এক শহরে হোক না এ বার,না যেখানে আমরা গেছি সেখানে গেলেও অসুবিধা নাই’।
‘ছেলেমেয়েরা’?

০০০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে অনুরোধ।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১:২২

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.