নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৬

ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা

(৮)

বে

অনেক অনেকদিন আগেকার কথা,তবে খুব একটা বেশী দিন আগে নয়,একটা দেশ ছিল যেখানে সবাই একে অন্যকে অনুকরন করে চলতো,বয়স আর মৃত্যু ছাড়া তেমন নতুন কিছু ছিল না সেখানে,সময় যেন আটকে ছিল একই জায়গায়।ওটা সেলহাতিন খানের গল্পের দেশ।সেনাপতি ফাহির শাহ ছোটখাট একটা সৈন্যদল নিয়ে সেলহাতিন খানের সৈন্যদের হারিয়ে দখল করলো দেশটা,সেলহাতিন খানকও হত্যা করলো অনেক অত্যাচারের সাথে,হিসেবমত সেলহাতিন খানের লাইবেরী আর হারেম ঘুরে আসা ছিল ফাহির শাহের প্রথম কাজ।লাইব্রেরীতে আরম্ভ হলো পরিবর্তন,লেখা হলো নতুন ইতিহাস,নিহত সেলহাতিন খানের অভিজ্ঞ বাঁধাইকাররা,পুরোনো বই ছিঁড়ে ছবিগুলো নিয়ে নতুন ভাবে সাজনো আরম্ভ করলো,নিহত সুলতান সেলহাতিনের বিজয় পর্বের ছবি সরিয়ে আনা হলো ফাহির শাহের জয়যাত্রার অভিযানের ছবি।

অভিজ্ঞ শিল্পীদের ছোঁয়ায় বদলে গেল ইতিহাসের পাতা ফাহির শাহের জয়গানে।
হারেমের সুন্দরীরাও তখন সবাই ফাহির শাহের ক্ষমতার আওতায়,তবে সাধারণ বর্বর দস্যুদের মত ক্ষমতার বহরে,পরিচ্ছন্ন,জ্ঞানী মানুষের মত শিল্প,সাহিত্যের মাঝে নিজেকে প্রকাশ করাটাই ভাল মনে করলো,ফাহির শাহ,আশা ছিল তাতেই জয় হবে সকলের মন।যাই হউক,নেরিমান,নিহত সুলতান সেলহস্তিনের হারেমের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী,চোখ ভঁরা কান্নায় ফাহির শাহের কাছে অনুরোধ করলো,সুলতান সেলহাতিনের পৃষ্ঠপোথকতার লেয়লা,মজনুন বইটা যেন বদলানো না হয়,সেখানে লেয়লা আর মজনুনের ছবিটা নেরিমান,সেলহাতিনের ছবি।

তার বিগত স্বামীর শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে অমর হয়ে থাকবে বই এর পাতায় চেষ্টা
করেছে,একটা বইএ তার উদহারণ থাকলে তেমন কি আর ক্ষতি হবে?ফাহির শাহ তার ওস্তাদ শিল্পীদের ঐ বইটার কোন পরিবর্তন না করার জন্যে আদেশ দিল।কিছুদিনের মধ্যেই ফাহির শাহের মনোকামনা পূর্ন হলো,নেরিমানের মন তখন বদলে গেছে,ফাহির শাহ তখন নেরিমানের মনের মানুষ,ভালবাসার শরীর খেলায় লিপ্ত দুজন।যুদ্ধের আতঙ্ক,ঘৃনা সরে দুজনে দুজনের প্রেমে মত্ত।কিন্ত ফাহির শাহ তবুও মন থেকে মুছে দিতে পারেনি,লেয়লা আর মজনুনের ছবিটার কথা।না,তার মনের মানুষ অন্য কারও সাথে ছবিতে আছে সে জন্য,তার মনে একটা প্রশ্ন জ্বল জ্বল করছে,তার ছবি তো কোনও ঐতিহাসিক গল্প বা বই সাজানো নেই।এই দুঃখটা ফাহির শাহকে প্রায় বছর পাঁচেক এত বেশী যন্ত্রনা দিচ্ছিল,শেষে একদিন রাতের অন্ধকারে নেরিমানের সাথে উন্মাদ যৌনসঙ্গমের পর লাইব্রেরীতে ঢুকে লেয়লা,মজনুনের ছবিতে মজনুনের জায়গায় পুরোনো সুলতানের জায়গায় নিজের ছবিটা আঁকলো।

অন্যান্য অনেক সুলতানের মত ফাহির শাহও ছিল শিল্প,সাহিত্যের অনুরাগী,ভক্ত,তবে শিল্পী হিসাবে বলা যায় অনভিজ্ঞ একজন,তাই ছবিটাও খুব একটা সুন্দর করে আঁকা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।যাকগে,সকালে লাইব্রেরীয়ান যখন বইটা খুলে দেখলো,বিগত সুলতান সেলহাতিনের জায়গায় অন্য কারও মুখ,নেরিমানের লেয়লার পাশে মজনুনের জায়গায়
ফাহির শাহ না,সে ভাবলো ফাহির শাহের শত্রু আবদুল্লাহ শাহের গোপনীয় কাজ সেটা।
গুজব ছড়িয়ে পড়লো ফাহির শাহের সৈন্যদের মাঝে,গুজবটা পাশের রাজ্যের আবদুল্লাহ শাহকে মানসিকভাবে অনেক বেশী সাহসী করে তুললো।কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লাহ শাহ সেই দেশটা জয় করে,ফাহির শাহকে হত্যা করলো,আর নিজের রাজত্ব স্থাপন করলো,আর হারেমের নেরিমান হলো তার নতুন রানী।

মিম

এই কিবংদন্তীটা লম্বু মেহমেতকে নিয়ে-যে মোহাম্মদ পারস্যে খোরাসানী হিসাবেও পরিচিত,দীর্ঘ জীবন আর অন্ধত নিয়ে যার কাহিনীর জীবন কথা।যাকগে,লম্বু মেহমেতের কাহিনী ছবি আর সময় নিয়ে।ওস্তাদ লম্বু মেহমেতের জীবন কথার বিশেষত্ব এটা যে-যদিও প্রায় ন বছর বয়সে তার ছবি আঁকার শিক্ষা আরম্ভ হয়,ছবিও এঁকে গেছে সে প্রায় ১০০ বছরের উপর,তবে সেখানে মনছোঁয়া এমন কিছুই ছিল না,যা দেখে মানুষ অভিভূত হয়ে যাবে।আমি এখানে বেশী আতলামি করছি না,শুধু আমার মনের কথাগুলো বলছি।লম্বু মেহমেত পুরোনো ওস্তাদদের পদক্ষেপ অনুসরণ করে অনেক ছবিই অ্যাঁকে,
এ ছাড়া অন্যান্য শিল্পীদের মতই সব ধরণের ছবিই আঁকতো,সে।

লম্বু মেহমতের নম্রতা আর ছবি আঁকার একনিষ্ঠতা,ছিল আল্লাহর কাজে নিজেকে সপে দেয়া,নিজেকে ষ্টুডিওর শিল্পীদের মাঝে গল্পগুজবে মত্ত হয়ে,প্রধান শিল্পীর পদের তর্ক বিতর্কের বাইরে রাখতো।যদিও বয়স বা প্রতিভার দিক দিয়ে সেটা যথাযথই হতো।প্রায় ১০০ বছরের অভিজ্ঞতার এক শিল্পী,খুটিনাটি কোন কিছুই এড়াতো না তার ছবিতেঃঘাসের ছবি দিয়ে বই এর পাতার কিনারা অলঙ্কার করা,হাজার হাজার গাছের পাতা বাতাসের ছোঁয়ায় কুচকে যাওয়ার ছবি,ঘোড়ার কেশরের সৌন্দর্য্ তুলে ধরা তুলির ছোঁয়াচে,ইটের দেয়াল,লম্বা থুতনি টানা চোখের একের পর এক মুখ।ওটাতেই ছিল লম্বু মেহমেতের তৃপ্তি,নিজেকে কোনদিনই পদ্ধতি বা বিশেষত্বের দাস হয়ে অন্যান্য শিল্পীদের চেয়ে আলাদা হতে চায়নি,সে।যখন যে ‘খান’ বা ‘শাহজাদার’,আধিপত্যে ছিল সেই ষ্টুডিওর চলতি পদ্ধতি মেনে নিয়েই ছবি এঁকে যেত।যুদ্ধ বিগ্রহে এক ‘খান’ হারানো আরেক ‘খানের’ হাতে,আর শিল্পীদের হারেমের সুন্দরীদের মত যাওয়া এক হাত থেকে আরেক হাতে,তবে লম্বু মেহমতের ঝরে যাওয়া পাতা,ঘাসের ছবি,বা পাথরের আঁকাবাঁকা সুরে সেটার প্রতিফলন ফুটে উঠতো,ধৈর্যের সুরে।

তার বয়স যখন আশি,লোকজন যেন ভুলেই গেল সেও একজন মানুষ-তারা ভুলে গেল মৃত্যুও আছে তার জীবনেও।এই কারনে অনেকেই ভাবতো সে হয়তো সময়ের হিসেবের বাইরে,কোনদিন বুড়ো হবে না,মারাও যাবে না কোনদিন।অন্যান্য অনেক শিল্পীদের মত সময়ে অন্ধ না হওয়ার কারণ,যে তার নিজের কোন বাড়ী ছিল না,কাজের জায়গায় শোয়া আর বই এর পাতায় সময় কাটানোই ছিল তার জীবন,সময়ের চাকা আটকে ছিল তার কাছে।অনেকে অবশ্য বলতো,যে আসলে অন্ধ হয়ে গেছে লম্বু মেহমেত,আর দেখার কোন প্রয়োজন নেই তার,ছবিগুলো সে আঁকছে স্মৃতির পাতা থেকে।তার বয়স যখন প্রায় ১১৯,কিংবদন্তীর এই ওস্তাদ,যার শরীর যৌনতা সমন্ধে যেন কোন জ্ঞানই ছিল না,কোন দিন যৌনসঙ্গম করেনি,তার দেখা হলো টানা চোখ,লম্বা চিবুকের এক কিশোরের-যাদের ছবি সে এঁকে গেছে বছরের পর বছর,আধা চীনা আধা কোরেশিয়ান শাহ তামাসাপের ষ্টুডিও এর এক শিক্ষানবিশ।

তার প্রেমে পড়ে গেল আমাদের কিংবদন্তীর শিল্পী,প্রেমিকের সঙ্গ,শারিরীক আনন্দ খুঁজে নেয়ার জন্যে,প্রেমে উন্মাদ যে কোন মানুষের মত সে নানান ছলনার আশ্রয় নিল।প্রথম দিকে খোরাসানের এই কিংবদন্তীর শিল্পী নতুন ছবি আঁকার পদ্ধতি আয়ত্ব করা আরম্ভ করলো,সারাটা জীবন যা এড়িয়ে গেছে সে,ধীরে ধীরে এটাই তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল,কিংবদন্তীর শিল্পী থেকে সাধারণ এক শিল্পীর কদরে।শীতের এক সকালে খোলা জানালার পাশে তার পচ্ছন্দের শিক্ষানবীসের তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাব্রিজের ঠান্ডায় আক্রান্ত,লম্বু মেহমেত কদিন পরেই সম্পূর্ন অন্ধ হয়ে গেল,দিন দুই পর সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেল,কিংবদন্তীর এই শিল্পী।

সিয়াহ বললো, ‘খোরাসানের লম্বু মেহমেতের নাম শুনেছি,তবে এই কাহিনীটা শোনার সূযোগ হয়নি,কোনদিন,আমার’।

এমন ভাবে কায়দা করে কথাগুলো বললো সিয়াহ,বোঝা যাচ্ছিল গল্পটা শেষ আর আমার মন বোঝার চেষ্টা করছে,সে।কিছুক্ষন চুপচাপ ছিলাম,যেন সিয়াহ তার ইচ্ছামত আমাকে পর্যবেক্ষন করতে পারে।কোন কিছু করা নিয়ে ব্যাস্ত না থাকলে আমি বেশ বিচলিত হয়ে পড়ি,তাই আরেকটা গল্প বলার আগে,ছবি আঁকা আরম্ভ করলাম,আমার ছেড়ে যাওয়া পর্ব থেকে,সিয়াহ দরজায় আবার ধাক্কা দিল।বেশ শান্তশিষ্ট ছাত্র মাহমুত,যে সব সময় আমার হাটুর কাছে বসে রং মিশিয়ে দেয়,ব্রাশগুলো তৈরী করে রাখে,মাঝে মাঝে ভুলগুলো মুছে দেয়,বাড়ীর দিকে তাকিয়ে যেন আমার বৌ এর হাটা ফেরার শব্দগুলো শুনছিল।
‘আ...,সুলতানের ঘুম ভেঙ্গে গেছে এবার’,সিয়াহ বললো।
সে অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়েছিল,আর আমি ভাব দেখালাম তার অবাক চোখের চাহনিটা তেমন কোন বিশেষ ব্যাপার না।তবে এখানে না বললেই না,আমাদের মহামান্য সুলতানের সিংহাসনে বসা ছবিটা শাহজাদার মুসলমানীর দুশটা অনেক বইতে আছে,ব্যাবসায়ীদের দল,দাঁড়ানো দর্শকেরা,সৈন্য,বন্দী,যাদের দেখা যাচ্ছে এই
অনুষ্ঠানের জন্যে বিশেষভাবে তৈরী করা প্যান্ডেল থেকে।আমার একটা মাত্র ছবিতে সুলতান পায়ে হেঁটে যাচ্ছে,আর রুপার মোহর ভর্তি ব্যাগ ছুঁড়ে দিচ্ছে দাঁড়ানো দর্শকদেরকে।আমার ছবিটার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল দর্শকদের উচ্ছাস তুলে ধরা,তাদের মধ্যে মোগর নেয়ার জন্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি,পেছনে দিকে তুলে ধরা আকাশের শূন্যতা।

‘ছবির বিষয়বস্ত যদি ভালবাসা হয়,তবে মনের ভালবাসা দিয়েই ছবিটা আঁকা উচিত’, আমি বললাম, ‘আর ছবির কথা যদি যন্ত্রনা হয়,ছবি থেকে যেন কান্না ছুটে আসে উচিত দর্শকের মনে।যন্ত্রনাটা ছুটে আসবে প্রথম দেখায়,ছবিতে চরিত্রগুলোর
মুখে লুকোনো না,চোখের কান্নায় না।আমি পুরোনো ওস্তাদদের অবাক করা কিছু আনিনি,একটা মুখে তার আঙ্গুল দিয়ে কোন কিছু বলায়,সারা ছবিটাই এখানে একটা অবাক হওয়ার পালা।এটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে মহামান্য সুলতানকে তার হেটে যাওয়া চেহারায় দেখাতে’।

অবাক হচ্ছিলাম,যে ভাবে সিয়াহ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার ছবি আঁকার সব জিনিষপত্র দেখছিল,কোথাও কোন কিছু একটা খুঁজে বের করার আশায়,তার চোখে নতুন করে নিজের ঘরগুলো দেখছিলাম।

তুমি তো জানই,প্রাসাদ,হারেম আর কেল্লার ছবিগুলো আঁকা তাব্রিজ আর সিরাজে,যাতে ছড়ানো আছে আল্লাহর অর্ন্তদৃষ্টি শিল্পীর দৃষ্টিতে-তুলির আঁচড়ে তুলে ধরা কেল্লার ভেতরের হাড়িপাতিল,মদের গেলাস,দরজার পর্দা,পাখী খাঁচায় আটকানো,বালিশে হেলান দেয়া এক সুন্দরী,যে সূর্যের আলোটাও হয়তো কোনদিন দেখেনি।ছবিটা দুইভাগে ভাগ করা,অনেকটা যেন ক্ষুর দিয়ে মাঝখানে কেটে তুলে ধরা কেল্লার ভেতরের ছবি।অবাক হওয়া এক পাঠকের মত,সিয়াহ আমার রং,তরুন শিক্ষানবীস,পৃথিবীর নানান ধরণের পোষাক দিয়ে তৈরী করা বিদেশী এক পর্যটকের জন্য তৈরী এলবাম,এক পাশে রাখা কোন এক পাশার জন্য আঁকা যৌনসঙ্গমের ছবি,কালির দোয়াত,হাতীর দাঁতের চাকু,সোনার হাতলের ব্রাশ দেখছিল।

‘পুরোনো ওস্তাদদের যা সূযোগ হয়নি,সে দিক দিয়ে আমি ভাগ্যবান,অনেক যুদ্ধ দেখেছি’,নিস্তব্ধতাটা ভেঙ্গে দেয়ার জন্যে আলাপ আলোচনা আরম্ভ করলাম, ‘কামান,সৈন্য,মৃতদেহের পাশে জয়ী সুলতানের ছবি,সেনাপতিদের তাবুতে আমার তুলি দিয়েই আঁকা।যুদ্ধ শেষে ইস্তাম্বুলে ফেরার পর,আমার হাতেই যুদ্ধের নানান দৃশ্য আঁকা,না হলে হয়তো অনেকে ভুলেই যেত দুটুকরো হয়ে যাওয়া লাশের কথা,দুই দলের সৈন্যের সংঘর্ষের দৃশ্য,আমাদের কামানের শব্দে কেঁপে ওঠা অবিশ্বাসীদের চেহারার কথা ভুলে যেত।ভুলে যেত,কেল্লার মিনার রক্ষা করার জন্যে সৈন্যদের দ্বিধাবিহীন ভাবে ছুটে যাওয়ার দৃশ্য,ভুলে যেত সত্যের জন্য,ধর্মের জন্য,সুলতানের জন্য বিদ্রোহীদের টুকরো টুকরো করে দেয়া,সতেজ ছুটে যাওয়া ঘোড়ার চেহারা।সব কিছু আমি ধরে রাখি মনের খাতায়,তারপর যেন কফি গুড়ো করার যন্ত্রে,নিয়ে আসি নতুন এক জানালায় যেখানে জানা নেই আমার কামানের চেহারা,নতুন ধরণের বন্দুকের ট্রিগার,বিজয়ের ভোজে কার কি ধরণের পোষাক ছিল’।

‘এই যে তিনটা গল্প,তুমি বললে তার সারমর্মে কি দাঁড়ায়’,সিয়াহ এমনভাবে বললো যেন মোটামুটি সবকিছু বুঝে গেছে সে,তবে সেখানে আমার কোন অবস্থান নেই।

‘ “আলিফ”,প্রথম গল্পটায় যেখানে খলিফার মিনারের গল্পটা,সেটাতে এটুকু বোঝা যায়,যত প্রতিভাবান একজন শিল্পীই হউক না কেন,তার প্রতিভার মাপকাঠি ধরে রাখা সময়ের খাতায়,আর সময় টেনে আনে ছবির পূর্নতা’
‘আর “বে”,দ্বিতীয় কাহিনী থেকে আমরা এটা বুঝতে পারি,যেটাতে হারেম আর লাইব্রেরীর কথা বলা,সময়ের ছাপ সরিয়ে নেয়ার একমাত্র উপায় হলো প্রতিভা আর ছবি।তবে তিন নম্বর ছবির কথা তুমিই আমাকে বল’।

‘ “মিম”,সেই ১১৯ বছরের বৃদ্ধ শিল্পীর কথা,সেটা “আলিফ”, আর “বে” এর সংমিশ্রন,তার আদর্শ জীবন আর আদর্শ ছবি আঁকার পদ্ধতি ছেড়ে দেয়,তার সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নেই।আর কিছু না এটাই বলা’।



আমাকে সবাই ডাকে,জেইতিন(জলপাই)

জোহরের নামাজের পর আমি মনের আনন্দে শিক্ষানবীস কিশোরদের ছবি আঁকছিলাম, সেই সময় দরজায় একটা ধাক্কা শুনলাম,অবাক হয়ে আমার হাতটা কেঁপে উঠলো।ব্রাশ,
হাঁটুর ছবি আঁকার বোর্ডটা একপাশে রেখে,ঝড়ের গতিতে নামাজটা সেরে দরজা খুললাম।জিতে গেছি আমি,যদি আমি কোনকিছু লুকিয়ে রাখি,তা হলে তোমরা যারা এই বইএর মাধ্যমে আমাকে শুনতে পাচ্ছ,তারা তো আল্লাহর অনেক কাছের মানুষ,আমাদের মত এই সব নোংরা ঘৃনিত মানুষের চেয়ে।

আকবর খান,হিন্দুস্থানের সম্রাট,পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ,একটা ঐতিহাসিক বই তৈরী করার প্রস্ততি নিচ্ছে।বই এর কাজের পৃথিবীর চার কোনার শিল্পীদের কাছে খবর পাঠানো হচ্ছে,মুসলমান রাজত্বের সব নামকরা শিল্পীদের যোগ দেয়ার অনুরোধও করা হচ্ছে।
ইস্তাম্বুলে পাঠানো দূত গতকাল আমার সাথে দেখা করে গেছে,হিন্দুস্থানে যাওয়ার অনুরোধও করে গেল আমাকে।আজ দরজা খুলে দেখি দাঁড়ানো,সয়াহ,যার কথা আমি অনেকটা ভুলেই গেছি।পুরোনো দিনে সে আমাদের সাথে ঘোরার সূযোগ পেত না,বড়ই ঈর্ষা ছিল তার মনে।
‘হ্যা’?
সিয়াহ এসে বললো,পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করার সূযোগ জয়নি অনেকদিন,তাই সূযোগ পেয়েই ছুটে আসা,আমার ছবিগুলো দেখতে চাইলো সিয়াহ।সাদরে আমন্ত্রন জানালাম তাকে,যেন সে সব ছবিই দেখতে পারে,শুনলাম আজকে সে ওস্তাদ ওসমানের ষ্টুডিও ঘুরে এসেছে।ওস্তাদের একটা প্রশ্ন ছিল তার কাছেঃ
‘একজন শিল্পীর ছবির সৌন্দর্য বোঝা যায় তার অন্ধত্ব আর স্মৃতিতে’।




অন্ধত্ব আর স্মৃতি

ছবির আগে ছিল কাল একটা ছায়া আর ছবির পরেও থাকবে কাল একটা শূন্যতা।এই রং,ছবি,শিল্পকলা,ভালবাসা দিয়ে আমরা মনে করি আল্লাহ আমাদের, ‘দৃষ্টি’, দিয়েছে দেখার জন্যে!জানা হলো দেখার একটা পর্ব।দেখা হলো জানা মনে না রেখে।তাই ছবি আঁকা সেই শূন্যতাকে খুঁজে নেয়া আবার।খ্যাতনামা ওস্তাদেরা যারা ছবি আঁকতে ভালবাসে,তাদের রং আর দৃষ্টির উদ্ভব সেই শূন্যতা থেকেই,আল্লাহর সেই শূন্যতার আলোয় ফিরে যায় সবাই এই রং এর মাধ্যমে।শিল্পী যাদের স্মৃতি নেই,তারা জানে না আল্লাহর শূন্যতার অস্তিত্ব।সব নাম করা শিল্পীরাই তাদের তুলি দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে সেই শূন্যতা,বেহেশতের সেই অজানা ছোঁয়াচ।তাহলে শূন্যতার কথা বলি,যা হেরাতের
ওস্তাদদেরাও সবসময় বলতো।

স্মৃতি আর অন্ধত্ব নিয়ে তিনটা গল্প

আলিফ

লামি এ চালেবির,পারসী কবি ‘জামির অন্তরঙ্গতার উপহার’,যেখানে আছে দরবেশ,সুফীদের কাহিনী,শোনা যায় জিহান শাহের আমলের বই এ,আছে খ্যাতনামা শিল্পী শেখ আলী তাব্রিজি হুসরেভ আর শিরিনের অপূর্ব এক ছবি।এই নাম করা বইটা যা শেষ করতে প্রায় এগার বছর কেটে যায়,শেখ আলী তাব্রিজীর ছবিগুলো এতই অপুর্ব ছিল যে একমাত্র ওস্তাদ বাহজিদ ছাড়া হয়তো আর কার পক্ষে তা আঁকা সম্ভব ছিল না।বইটা যখন অর্ধেক শেষ তখন জিহান শাহ বুঝতে পারলো,তার হাতে আসছে অভাবনীয় একটা বই যার কোন তুলনা নেই।এ কারণে সে তখন পাশের রাজ্যের উজুন হাসানকে শত্রু ঘোষনা করে যুদ্ধের প্রস্ততি নিল।

জিহান শাহ ভেবে দেখলো যদিও এ মুহুর্তে হয়তো তার হাতেই আছে সর্বশ্রেষ্ট বইটা তবে সময়ে হয়তো নতুন কেউ এর চেয়ে ভাল বই করার চেষ্টা করতে,তাই সে আদেশ দিল,শিল্পী শেখ আলী তাব্রিজিকে হত্যা করার জন্যে,বইটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে।কিন্ত হারেমের উদার হ্রদয়ের এক মহিলা তাকে পরামর্শ দিল,শিল্পীকে অন্ধ করে দিলেই তার কাজ সিদ্ধি হবে,হত্যা করার কোন দরকার হবে না।জিহান শাহ সেই পরামর্শটাই বেছে নিল আর সে ভাবেই জিহান শাহ তার পাশ্বর্চরদের আদেশ দিল,কথাটা পৌঁছালো শেখ আলী তাব্রিজির কানেও।

সাধারণ,কোন নীচুদরের শিল্পীর মত শেখ আলী তাব্রিজি বইটা শেষ করে পালিয়ে যাইনি,এমন কি বই এর গতিটাকে কোনভাবে শ্লথ করেও দেয়নি,কোন নিম্নমানের ছবি আঁকার চেষ্টাও করেনি,যথারীতি এঁকে গেছে একই সৌন্দর্যে,ঘোড়া,প্রেমিকদের ছবি-গভীর রাত পর্যন্ত যতক্ষন না তার ক্লান্ত চোখ পানিতে ভঁরে গেছে।

ফজরের নামাজের পর যথারীতি সব ক্লান্তি ঝেড়ে নতুন হয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছে।
বেশির ভাগ সময় তার চোখটা থাকতো হেরাতের খ্যাতনামা ওস্তাদদের ছবিতে আর আরেক পাতায় যার নকল করে যেত সেই ছবিগুলো।শেষমেষ শিল্পী শেখ তাব্রিজী,জিহান শাহের বইটা শেষ করলো আর যা ভেবেছিল ঠিক তাই করলো জিহান শাহ,তাকে সোনার মোহর দেয়ার পর সূক্ষ শূচ দিয়ে তার চোখ দুটো অন্ধ করে দিল।

তবে তার যন্ত্রনা পর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শেখ আলি তাব্রিজি,উজুন হাসানের রাজসভায় যোগ দিয়ে,বললো,‘যদিও আমি এখন অন্ধ,তবে আমার স্মৃতির চোখে ভাসছে হুসরেভ,শিরিন পর্ব,এগারটা বছর আমার কেটে গেছে ঐ বই এর জন্যে।যদিও আলো নাই আমার চোখে,হাত আর তুলির ছোঁয়ায় হয়তো আরও সুন্দর হয়ে উঠবে দৃশ্যগুলো,আমাকে এখন আর যে এই পৃথিবীর নোংরামিটা দেখত্তে হয় না।আমার বিশ্বাস আল্লাহর সমস্ত সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারবো তার আসল রুপে’।

উজুন হাসানের মনে কোন দ্বিধা ছিল না,সে সূযোগ দিল শেখ আলী তাব্রিজিকে,আর স্মৃতির পাতা থেকে তৈরী হলো অভাবনীয় এক সৃষ্টি।আর এটাতো সবার জানা ঐ বই এর আধ্যাত্মিক ক্ষমতাই হয়তো যোগালো উজুন হাসানের জুহান শাহকে হারিয়ে তার রাজ্য দখল করা।পরে জিহান শাহের বই আর উজুন হাসানের বই আমাদের সুলতান হাতে আসলো,যখন ওতলুকবেলীর যুদ্ধে হেরে গেল উজুন হাসান।বই দুটো দেখার সুযোগ যারা দেখেছে তারা জানে আমি কি বলছি।

০০০০০০০


(৮)

বে

অনেক অনেকদিন আগেকার কথা,তবে খুব একটা বেশী দিন আগে নয়,একটা দেশ ছিল যেখানে সবাই একে অন্যকে অনুকরন করে চলতো,বয়স আর মৃত্যু ছাড়া তেমন নতুন কিছু ছিল না সেখানে,সময় যেন আটকে ছিল একই জায়গায়।ওটা সেলহাতিন খানের গল্পের দেশ।সেনাপতি ফাহির শাহ ছোটখাট একটা সৈন্যদল নিয়ে সেলহাতিন খানের সৈন্যদের হারিয়ে দখল করলো দেশটা,সেলহাতিন খানকও হত্যা করলো অনেক অত্যাচারের সাথে,হিসেবমত সেলহাতিন খানের লাইবেরী আর হারেম ঘুরে আসা ছিল ফাহির শাহের প্রথম কাজ।লাইব্রেরীতে আরম্ভ হলো পরিবর্তন,লেখা হলো নতুন ইতিহাস,নিহত সেলহাতিন খানের অভিজ্ঞ বাঁধাইকাররা,পুরোনো বই ছিঁড়ে ছবিগুলো নিয়ে নতুন ভাবে সাজনো আরম্ভ করলো,নিহত সুলতান সেলহাতিনের বিজয় পর্বের ছবি সরিয়ে আনা হলো ফাহির শাহের জয়যাত্রার অভিযানের ছবি।

অভিজ্ঞ শিল্পীদের ছোঁয়ায় বদলে গেল ইতিহাসের পাতা ফাহির শাহের জয়গানে।
হারেমের সুন্দরীরাও তখন সবাই ফাহির শাহের ক্ষমতার আওতায়,তবে সাধারণ বর্বর দস্যুদের মত ক্ষমতার বহরে,পরিচ্ছন্ন,জ্ঞানী মানুষের মত শিল্প,সাহিত্যের মাঝে নিজেকে প্রকাশ করাটাই ভাল মনে করলো,ফাহির শাহ,আশা ছিল তাতেই জয় হবে সকলের মন।যাই হউক,নেরিমান,নিহত সুলতান সেলহস্তিনের হারেমের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী,চোখ ভঁরা কান্নায় ফাহির শাহের কাছে অনুরোধ করলো,সুলতান সেলহাতিনের পৃষ্ঠপোথকতার লেয়লা,মজনুন বইটা যেন বদলানো না হয়,সেখানে লেয়লা আর মজনুনের ছবিটা নেরিমান,সেলহাতিনের ছবি।

তার বিগত স্বামীর শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে অমর হয়ে থাকবে বই এর পাতায় চেষ্টা
করেছে,একটা বইএ তার উদহারণ থাকলে তেমন কি আর ক্ষতি হবে?ফাহির শাহ তার ওস্তাদ শিল্পীদের ঐ বইটার কোন পরিবর্তন না করার জন্যে আদেশ দিল।কিছুদিনের মধ্যেই ফাহির শাহের মনোকামনা পূর্ন হলো,নেরিমানের মন তখন বদলে গেছে,ফাহির শাহ তখন নেরিমানের মনের মানুষ,ভালবাসার শরীর খেলায় লিপ্ত দুজন।যুদ্ধের আতঙ্ক,ঘৃনা সরে দুজনে দুজনের প্রেমে মত্ত।কিন্ত ফাহির শাহ তবুও মন থেকে মুছে দিতে পারেনি,লেয়লা আর মজনুনের ছবিটার কথা।না,তার মনের মানুষ অন্য কারও সাথে ছবিতে আছে সে জন্য,তার মনে একটা প্রশ্ন জ্বল জ্বল করছে,তার ছবি তো কোনও ঐতিহাসিক গল্প বা বই সাজানো নেই।এই দুঃখটা ফাহির শাহকে প্রায় বছর পাঁচেক এত বেশী যন্ত্রনা দিচ্ছিল,শেষে একদিন রাতের অন্ধকারে নেরিমানের সাথে উন্মাদ যৌনসঙ্গমের পর লাইব্রেরীতে ঢুকে লেয়লা,মজনুনের ছবিতে মজনুনের জায়গায় পুরোনো সুলতানের জায়গায় নিজের ছবিটা আঁকলো।

অন্যান্য অনেক সুলতানের মত ফাহির শাহও ছিল শিল্প,সাহিত্যের অনুরাগী,ভক্ত,তবে শিল্পী হিসাবে বলা যায় অনভিজ্ঞ একজন,তাই ছবিটাও খুব একটা সুন্দর করে আঁকা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।যাকগে,সকালে লাইব্রেরীয়ান যখন বইটা খুলে দেখলো,বিগত সুলতান সেলহাতিনের জায়গায় অন্য কারও মুখ,নেরিমানের লেয়লার পাশে মজনুনের জায়গায়
ফাহির শাহ না,সে ভাবলো ফাহির শাহের শত্রু আবদুল্লাহ শাহের গোপনীয় কাজ সেটা।
গুজব ছড়িয়ে পড়লো ফাহির শাহের সৈন্যদের মাঝে,গুজবটা পাশের রাজ্যের আবদুল্লাহ শাহকে মানসিকভাবে অনেক বেশী সাহসী করে তুললো।কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লাহ শাহ সেই দেশটা জয় করে,ফাহির শাহকে হত্যা করলো,আর নিজের রাজত্ব স্থাপন করলো,আর হারেমের নেরিমান হলো তার নতুন রানী।

মিম

এই কিবংদন্তীটা লম্বু মেহমেতকে নিয়ে-যে মোহাম্মদ পারস্যে খোরাসানী হিসাবেও পরিচিত,দীর্ঘ জীবন আর অন্ধত নিয়ে যার কাহিনীর জীবন কথা।যাকগে,লম্বু মেহমেতের কাহিনী ছবি আর সময় নিয়ে।ওস্তাদ লম্বু মেহমেতের জীবন কথার বিশেষত্ব এটা যে-যদিও প্রায় ন বছর বয়সে তার ছবি আঁকার শিক্ষা আরম্ভ হয়,ছবিও এঁকে গেছে সে প্রায় ১০০ বছরের উপর,তবে সেখানে মনছোঁয়া এমন কিছুই ছিল না,যা দেখে মানুষ অভিভূত হয়ে যাবে।আমি এখানে বেশী আতলামি করছি না,শুধু আমার মনের কথাগুলো বলছি।লম্বু মেহমেত পুরোনো ওস্তাদদের পদক্ষেপ অনুসরণ করে অনেক ছবিই অ্যাঁকে,
এ ছাড়া অন্যান্য শিল্পীদের মতই সব ধরণের ছবিই আঁকতো,সে।

লম্বু মেহমতের নম্রতা আর ছবি আঁকার একনিষ্ঠতা,ছিল আল্লাহর কাজে নিজেকে সপে দেয়া,নিজেকে ষ্টুডিওর শিল্পীদের মাঝে গল্পগুজবে মত্ত হয়ে,প্রধান শিল্পীর পদের তর্ক বিতর্কের বাইরে রাখতো।যদিও বয়স বা প্রতিভার দিক দিয়ে সেটা যথাযথই হতো।প্রায় ১০০ বছরের অভিজ্ঞতার এক শিল্পী,খুটিনাটি কোন কিছুই এড়াতো না তার ছবিতেঃঘাসের ছবি দিয়ে বই এর পাতার কিনারা অলঙ্কার করা,হাজার হাজার গাছের পাতা বাতাসের ছোঁয়ায় কুচকে যাওয়ার ছবি,ঘোড়ার কেশরের সৌন্দর্য্ তুলে ধরা তুলির ছোঁয়াচে,ইটের দেয়াল,লম্বা থুতনি টানা চোখের একের পর এক মুখ।ওটাতেই ছিল লম্বু মেহমেতের তৃপ্তি,নিজেকে কোনদিনই পদ্ধতি বা বিশেষত্বের দাস হয়ে অন্যান্য শিল্পীদের চেয়ে আলাদা হতে চায়নি,সে।যখন যে ‘খান’ বা ‘শাহজাদার’,আধিপত্যে ছিল সেই ষ্টুডিওর চলতি পদ্ধতি মেনে নিয়েই ছবি এঁকে যেত।যুদ্ধ বিগ্রহে এক ‘খান’ হারানো আরেক ‘খানের’ হাতে,আর শিল্পীদের হারেমের সুন্দরীদের মত যাওয়া এক হাত থেকে আরেক হাতে,তবে লম্বু মেহমতের ঝরে যাওয়া পাতা,ঘাসের ছবি,বা পাথরের আঁকাবাঁকা সুরে সেটার প্রতিফলন ফুটে উঠতো,ধৈর্যের সুরে।

তার বয়স যখন আশি,লোকজন যেন ভুলেই গেল সেও একজন মানুষ-তারা ভুলে গেল মৃত্যুও আছে তার জীবনেও।এই কারনে অনেকেই ভাবতো সে হয়তো সময়ের হিসেবের বাইরে,কোনদিন বুড়ো হবে না,মারাও যাবে না কোনদিন।অন্যান্য অনেক শিল্পীদের মত সময়ে অন্ধ না হওয়ার কারণ,যে তার নিজের কোন বাড়ী ছিল না,কাজের জায়গায় শোয়া আর বই এর পাতায় সময় কাটানোই ছিল তার জীবন,সময়ের চাকা আটকে ছিল তার কাছে।অনেকে অবশ্য বলতো,যে আসলে অন্ধ হয়ে গেছে লম্বু মেহমেত,আর দেখার কোন প্রয়োজন নেই তার,ছবিগুলো সে আঁকছে স্মৃতির পাতা থেকে।তার বয়স যখন প্রায় ১১৯,কিংবদন্তীর এই ওস্তাদ,যার শরীর যৌনতা সমন্ধে যেন কোন জ্ঞানই ছিল না,কোন দিন যৌনসঙ্গম করেনি,তার দেখা হলো টানা চোখ,লম্বা চিবুকের এক কিশোরের-যাদের ছবি সে এঁকে গেছে বছরের পর বছর,আধা চীনা আধা কোরেশিয়ান শাহ তামাসাপের ষ্টুডিও এর এক শিক্ষানবিশ।

তার প্রেমে পড়ে গেল আমাদের কিংবদন্তীর শিল্পী,প্রেমিকের সঙ্গ,শারিরীক আনন্দ খুঁজে নেয়ার জন্যে,প্রেমে উন্মাদ যে কোন মানুষের মত সে নানান ছলনার আশ্রয় নিল।প্রথম দিকে খোরাসানের এই কিংবদন্তীর শিল্পী নতুন ছবি আঁকার পদ্ধতি আয়ত্ব করা আরম্ভ করলো,সারাটা জীবন যা এড়িয়ে গেছে সে,ধীরে ধীরে এটাই তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল,কিংবদন্তীর শিল্পী থেকে সাধারণ এক শিল্পীর কদরে।শীতের এক সকালে খোলা জানালার পাশে তার পচ্ছন্দের শিক্ষানবীসের তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাব্রিজের ঠান্ডায় আক্রান্ত,লম্বু মেহমেত কদিন পরেই সম্পূর্ন অন্ধ হয়ে গেল,দিন দুই পর সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেল,কিংবদন্তীর এই শিল্পী।

সিয়াহ বললো, ‘খোরাসানের লম্বু মেহমেতের নাম শুনেছি,তবে এই কাহিনীটা শোনার সূযোগ হয়নি,কোনদিন,আমার’।

এমন ভাবে কায়দা করে কথাগুলো বললো সিয়াহ,বোঝা যাচ্ছিল গল্পটা শেষ আর আমার মন বোঝার চেষ্টা করছে,সে।কিছুক্ষন চুপচাপ ছিলাম,যেন সিয়াহ তার ইচ্ছামত আমাকে পর্যবেক্ষন করতে পারে।কোন কিছু করা নিয়ে ব্যাস্ত না থাকলে আমি বেশ বিচলিত হয়ে পড়ি,তাই আরেকটা গল্প বলার আগে,ছবি আঁকা আরম্ভ করলাম,আমার ছেড়ে যাওয়া পর্ব থেকে,সিয়াহ দরজায় আবার ধাক্কা দিল।বেশ শান্তশিষ্ট ছাত্র মাহমুত,যে সব সময় আমার হাটুর কাছে বসে রং মিশিয়ে দেয়,ব্রাশগুলো তৈরী করে রাখে,মাঝে মাঝে ভুলগুলো মুছে দেয়,বাড়ীর দিকে তাকিয়ে যেন আমার বৌ এর হাটা ফেরার শব্দগুলো শুনছিল।
‘আ...,সুলতানের ঘুম ভেঙ্গে গেছে এবার’,সিয়াহ বললো।
সে অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়েছিল,আর আমি ভাব দেখালাম তার অবাক চোখের চাহনিটা তেমন কোন বিশেষ ব্যাপার না।তবে এখানে না বললেই না,আমাদের মহামান্য সুলতানের সিংহাসনে বসা ছবিটা শাহজাদার মুসলমানীর দুশটা অনেক বইতে আছে,ব্যাবসায়ীদের দল,দাঁড়ানো দর্শকেরা,সৈন্য,বন্দী,যাদের দেখা যাচ্ছে এই
অনুষ্ঠানের জন্যে বিশেষভাবে তৈরী করা প্যান্ডেল থেকে।আমার একটা মাত্র ছবিতে সুলতান পায়ে হেঁটে যাচ্ছে,আর রুপার মোহর ভর্তি ব্যাগ ছুঁড়ে দিচ্ছে দাঁড়ানো দর্শকদেরকে।আমার ছবিটার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল দর্শকদের উচ্ছাস তুলে ধরা,তাদের মধ্যে মোগর নেয়ার জন্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি,পেছনে দিকে তুলে ধরা আকাশের শূন্যতা।

‘ছবির বিষয়বস্ত যদি ভালবাসা হয়,তবে মনের ভালবাসা দিয়েই ছবিটা আঁকা উচিত’, আমি বললাম, ‘আর ছবির কথা যদি যন্ত্রনা হয়,ছবি থেকে যেন কান্না ছুটে আসে উচিত দর্শকের মনে।যন্ত্রনাটা ছুটে আসবে প্রথম দেখায়,ছবিতে চরিত্রগুলোর
মুখে লুকোনো না,চোখের কান্নায় না।আমি পুরোনো ওস্তাদদের অবাক করা কিছু আনিনি,একটা মুখে তার আঙ্গুল দিয়ে কোন কিছু বলায়,সারা ছবিটাই এখানে একটা অবাক হওয়ার পালা।এটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে মহামান্য সুলতানকে তার হেটে যাওয়া চেহারায় দেখাতে’।

অবাক হচ্ছিলাম,যে ভাবে সিয়াহ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার ছবি আঁকার সব জিনিষপত্র দেখছিল,কোথাও কোন কিছু একটা খুঁজে বের করার আশায়,তার চোখে নতুন করে নিজের ঘরগুলো দেখছিলাম।

তুমি তো জানই,প্রাসাদ,হারেম আর কেল্লার ছবিগুলো আঁকা তাব্রিজ আর সিরাজে,যাতে ছড়ানো আছে আল্লাহর অর্ন্তদৃষ্টি শিল্পীর দৃষ্টিতে-তুলির আঁচড়ে তুলে ধরা কেল্লার ভেতরের হাড়িপাতিল,মদের গেলাস,দরজার পর্দা,পাখী খাঁচায় আটকানো,বালিশে হেলান দেয়া এক সুন্দরী,যে সূর্যের আলোটাও হয়তো কোনদিন দেখেনি।ছবিটা দুইভাগে ভাগ করা,অনেকটা যেন ক্ষুর দিয়ে মাঝখানে কেটে তুলে ধরা কেল্লার ভেতরের ছবি।অবাক হওয়া এক পাঠকের মত,সিয়াহ আমার রং,তরুন শিক্ষানবীস,পৃথিবীর নানান ধরণের পোষাক দিয়ে তৈরী করা বিদেশী এক পর্যটকের জন্য তৈরী এলবাম,এক পাশে রাখা কোন এক পাশার জন্য আঁকা যৌনসঙ্গমের ছবি,কালির দোয়াত,হাতীর দাঁতের চাকু,সোনার হাতলের ব্রাশ দেখছিল।

‘পুরোনো ওস্তাদদের যা সূযোগ হয়নি,সে দিক দিয়ে আমি ভাগ্যবান,অনেক যুদ্ধ দেখেছি’,নিস্তব্ধতাটা ভেঙ্গে দেয়ার জন্যে আলাপ আলোচনা আরম্ভ করলাম, ‘কামান,সৈন্য,মৃতদেহের পাশে জয়ী সুলতানের ছবি,সেনাপতিদের তাবুতে আমার তুলি দিয়েই আঁকা।যুদ্ধ শেষে ইস্তাম্বুলে ফেরার পর,আমার হাতেই যুদ্ধের নানান দৃশ্য আঁকা,না হলে হয়তো অনেকে ভুলেই যেত দুটুকরো হয়ে যাওয়া লাশের কথা,দুই দলের সৈন্যের সংঘর্ষের দৃশ্য,আমাদের কামানের শব্দে কেঁপে ওঠা অবিশ্বাসীদের চেহারার কথা ভুলে যেত।ভুলে যেত,কেল্লার মিনার রক্ষা করার জন্যে সৈন্যদের দ্বিধাবিহীন ভাবে ছুটে যাওয়ার দৃশ্য,ভুলে যেত সত্যের জন্য,ধর্মের জন্য,সুলতানের জন্য বিদ্রোহীদের টুকরো টুকরো করে দেয়া,সতেজ ছুটে যাওয়া ঘোড়ার চেহারা।সব কিছু আমি ধরে রাখি মনের খাতায়,তারপর যেন কফি গুড়ো করার যন্ত্রে,নিয়ে আসি নতুন এক জানালায় যেখানে জানা নেই আমার কামানের চেহারা,নতুন ধরণের বন্দুকের ট্রিগার,বিজয়ের ভোজে কার কি ধরণের পোষাক ছিল’।

‘এই যে তিনটা গল্প,তুমি বললে তার সারমর্মে কি দাঁড়ায়’,সিয়াহ এমনভাবে বললো যেন মোটামুটি সবকিছু বুঝে গেছে সে,তবে সেখানে আমার কোন অবস্থান নেই।

‘ “আলিফ”,প্রথম গল্পটায় যেখানে খলিফার মিনারের গল্পটা,সেটাতে এটুকু বোঝা যায়,যত প্রতিভাবান একজন শিল্পীই হউক না কেন,তার প্রতিভার মাপকাঠি ধরে রাখা সময়ের খাতায়,আর সময় টেনে আনে ছবির পূর্নতা’
‘আর “বে”,দ্বিতীয় কাহিনী থেকে আমরা এটা বুঝতে পারি,যেটাতে হারেম আর লাইব্রেরীর কথা বলা,সময়ের ছাপ সরিয়ে নেয়ার একমাত্র উপায় হলো প্রতিভা আর ছবি।তবে তিন নম্বর ছবির কথা তুমিই আমাকে বল’।

‘ “মিম”,সেই ১১৯ বছরের বৃদ্ধ শিল্পীর কথা,সেটা “আলিফ”, আর “বে” এর সংমিশ্রন,তার আদর্শ জীবন আর আদর্শ ছবি আঁকার পদ্ধতি ছেড়ে দেয়,তার সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নেই।আর কিছু না এটাই বলা’।



আমাকে সবাই ডাকে,জেইতিন(জলপাই)

জোহরের নামাজের পর আমি মনের আনন্দে শিক্ষানবীস কিশোরদের ছবি আঁকছিলাম, সেই সময় দরজায় একটা ধাক্কা শুনলাম,অবাক হয়ে আমার হাতটা কেঁপে উঠলো।ব্রাশ,
হাঁটুর ছবি আঁকার বোর্ডটা একপাশে রেখে,ঝড়ের গতিতে নামাজটা সেরে দরজা খুললাম।জিতে গেছি আমি,যদি আমি কোনকিছু লুকিয়ে রাখি,তা হলে তোমরা যারা এই বইএর মাধ্যমে আমাকে শুনতে পাচ্ছ,তারা তো আল্লাহর অনেক কাছের মানুষ,আমাদের মত এই সব নোংরা ঘৃনিত মানুষের চেয়ে।

আকবর খান,হিন্দুস্থানের সম্রাট,পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ,একটা ঐতিহাসিক বই তৈরী করার প্রস্ততি নিচ্ছে।বই এর কাজের পৃথিবীর চার কোনার শিল্পীদের কাছে খবর পাঠানো হচ্ছে,মুসলমান রাজত্বের সব নামকরা শিল্পীদের যোগ দেয়ার অনুরোধও করা হচ্ছে।
ইস্তাম্বুলে পাঠানো দূত গতকাল আমার সাথে দেখা করে গেছে,হিন্দুস্থানে যাওয়ার অনুরোধও করে গেল আমাকে।আজ দরজা খুলে দেখি দাঁড়ানো,সয়াহ,যার কথা আমি অনেকটা ভুলেই গেছি।পুরোনো দিনে সে আমাদের সাথে ঘোরার সূযোগ পেত না,বড়ই ঈর্ষা ছিল তার মনে।
‘হ্যা’?
সিয়াহ এসে বললো,পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করার সূযোগ জয়নি অনেকদিন,তাই সূযোগ পেয়েই ছুটে আসা,আমার ছবিগুলো দেখতে চাইলো সিয়াহ।সাদরে আমন্ত্রন জানালাম তাকে,যেন সে সব ছবিই দেখতে পারে,শুনলাম আজকে সে ওস্তাদ ওসমানের ষ্টুডিও ঘুরে এসেছে।ওস্তাদের একটা প্রশ্ন ছিল তার কাছেঃ
‘একজন শিল্পীর ছবির সৌন্দর্য বোঝা যায় তার অন্ধত্ব আর স্মৃতিতে’।




অন্ধত্ব আর স্মৃতি

ছবির আগে ছিল কাল একটা ছায়া আর ছবির পরেও থাকবে কাল একটা শূন্যতা।এই রং,ছবি,শিল্পকলা,ভালবাসা দিয়ে আমরা মনে করি আল্লাহ আমাদের, ‘দৃষ্টি’, দিয়েছে দেখার জন্যে!জানা হলো দেখার একটা পর্ব।দেখা হলো জানা মনে না রেখে।তাই ছবি আঁকা সেই শূন্যতাকে খুঁজে নেয়া আবার।খ্যাতনামা ওস্তাদেরা যারা ছবি আঁকতে ভালবাসে,তাদের রং আর দৃষ্টির উদ্ভব সেই শূন্যতা থেকেই,আল্লাহর সেই শূন্যতার আলোয় ফিরে যায় সবাই এই রং এর মাধ্যমে।শিল্পী যাদের স্মৃতি নেই,তারা জানে না আল্লাহর শূন্যতার অস্তিত্ব।সব নাম করা শিল্পীরাই তাদের তুলি দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে সেই শূন্যতা,বেহেশতের সেই অজানা ছোঁয়াচ।তাহলে শূন্যতার কথা বলি,যা হেরাতের
ওস্তাদদেরাও সবসময় বলতো।

স্মৃতি আর অন্ধত্ব নিয়ে তিনটা গল্প

আলিফ

লামি এ চালেবির,পারসী কবি ‘জামির অন্তরঙ্গতার উপহার’,যেখানে আছে দরবেশ,সুফীদের কাহিনী,শোনা যায় জিহান শাহের আমলের বই এ,আছে খ্যাতনামা শিল্পী শেখ আলী তাব্রিজি হুসরেভ আর শিরিনের অপূর্ব এক ছবি।এই নাম করা বইটা যা শেষ করতে প্রায় এগার বছর কেটে যায়,শেখ আলী তাব্রিজীর ছবিগুলো এতই অপুর্ব ছিল যে একমাত্র ওস্তাদ বাহজিদ ছাড়া হয়তো আর কার পক্ষে তা আঁকা সম্ভব ছিল না।বইটা যখন অর্ধেক শেষ তখন জিহান শাহ বুঝতে পারলো,তার হাতে আসছে অভাবনীয় একটা বই যার কোন তুলনা নেই।এ কারণে সে তখন পাশের রাজ্যের উজুন হাসানকে শত্রু ঘোষনা করে যুদ্ধের প্রস্ততি নিল।

জিহান শাহ ভেবে দেখলো যদিও এ মুহুর্তে হয়তো তার হাতেই আছে সর্বশ্রেষ্ট বইটা তবে সময়ে হয়তো নতুন কেউ এর চেয়ে ভাল বই করার চেষ্টা করতে,তাই সে আদেশ দিল,শিল্পী শেখ আলী তাব্রিজিকে হত্যা করার জন্যে,বইটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে।কিন্ত হারেমের উদার হ্রদয়ের এক মহিলা তাকে পরামর্শ দিল,শিল্পীকে অন্ধ করে দিলেই তার কাজ সিদ্ধি হবে,হত্যা করার কোন দরকার হবে না।জিহান শাহ সেই পরামর্শটাই বেছে নিল আর সে ভাবেই জিহান শাহ তার পাশ্বর্চরদের আদেশ দিল,কথাটা পৌঁছালো শেখ আলী তাব্রিজির কানেও।

সাধারণ,কোন নীচুদরের শিল্পীর মত শেখ আলী তাব্রিজি বইটা শেষ করে পালিয়ে যাইনি,এমন কি বই এর গতিটাকে কোনভাবে শ্লথ করেও দেয়নি,কোন নিম্নমানের ছবি আঁকার চেষ্টাও করেনি,যথারীতি এঁকে গেছে একই সৌন্দর্যে,ঘোড়া,প্রেমিকদের ছবি-গভীর রাত পর্যন্ত যতক্ষন না তার ক্লান্ত চোখ পানিতে ভঁরে গেছে।

ফজরের নামাজের পর যথারীতি সব ক্লান্তি ঝেড়ে নতুন হয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছে।
বেশির ভাগ সময় তার চোখটা থাকতো হেরাতের খ্যাতনামা ওস্তাদদের ছবিতে আর আরেক পাতায় যার নকল করে যেত সেই ছবিগুলো।শেষমেষ শিল্পী শেখ তাব্রিজী,জিহান শাহের বইটা শেষ করলো আর যা ভেবেছিল ঠিক তাই করলো জিহান শাহ,তাকে সোনার মোহর দেয়ার পর সূক্ষ শূচ দিয়ে তার চোখ দুটো অন্ধ করে দিল।

তবে তার যন্ত্রনা পর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শেখ আলি তাব্রিজি,উজুন হাসানের রাজসভায় যোগ দিয়ে,বললো,‘যদিও আমি এখন অন্ধ,তবে আমার স্মৃতির চোখে ভাসছে হুসরেভ,শিরিন পর্ব,এগারটা বছর আমার কেটে গেছে ঐ বই এর জন্যে।যদিও আলো নাই আমার চোখে,হাত আর তুলির ছোঁয়ায় হয়তো আরও সুন্দর হয়ে উঠবে দৃশ্যগুলো,আমাকে এখন আর যে এই পৃথিবীর নোংরামিটা দেখত্তে হয় না।আমার বিশ্বাস আল্লাহর সমস্ত সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারবো তার আসল রুপে’।

উজুন হাসানের মনে কোন দ্বিধা ছিল না,সে সূযোগ দিল শেখ আলী তাব্রিজিকে,আর স্মৃতির পাতা থেকে তৈরী হলো অভাবনীয় এক সৃষ্টি।আর এটাতো সবার জানা ঐ বই এর আধ্যাত্মিক ক্ষমতাই হয়তো যোগালো উজুন হাসানের জুহান শাহকে হারিয়ে তার রাজ্য দখল করা।পরে জিহান শাহের বই আর উজুন হাসানের বই আমাদের সুলতান হাতে আসলো,যখন ওতলুকবেলীর যুদ্ধে হেরে গেল উজুন হাসান।বই দুটো দেখার সুযোগ যারা দেখেছে তারা জানে আমি কি বলছি।

০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: আজকের পর্ব টা অনেক বড়।
তাতে কি, পুরোটাই পড়েছি।

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৩৮

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.