![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন জীবনবাদী মানুষ। যা দেখি, বিশ্বাস করি, জানি, অনুভব কর, তার সবটাই লিখে যেতে চাই।
নির্মাতা তৌকির আহমেদের পরিচালনায় ২০০৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ছবি বের হয়েছিল, ‘জয়জাত্রা’। সে ছবির একটি দৃশ্যে হুমায়ূন ফরিদীর চরিত্র, পঞ্চান্দ সাহার সিগারেট খাওয়া দেখে বাচ্চা একটি ছেলে তাঁকে জিজ্ঞেস করে সিগারেট খেলে কি হয়। জবাবে পঞ্চান্দ সাহা বলেন, “সিগারেট খাইলে ক্ষিদা লাগে না”। দুই রাতের ক্ষুধা নিয়ে ছেলেটি তাঁর কাছে সিগারেট চেয়েছিল। এই ছবিটা যখন প্রথম দেখি তখন আমি ক্লাস টু কি থ্রী’তে পড়ি, ২০০৭-৮ এর ঘটনা। দৃশ্যটি দেখার পর আমার ভীষণ কৌতূহল জাগে একবার সিগারেট খেয়ে দেখার। আমার বাবা সিগারেট খান না, তাই ঘরের ভেতর চুরি করার কোনো সুযোগ ছিল না। বাইরে মানুষকে দেখতাম সিগারেট পুরোটা না খেয়ে ফেলে দিত। লাল-লাল চোখে তাকিয়ে থাকা সিগারেটের দিকে আমিও চোখ রেখে তুলে নেওয়ার কথা ভাবতাম। তবে এমন কিছু করার সাহস হয়নি সবার সামনে। দুই-তিনবার আড়ালে করতে গিয়েও কারো না কারো নজরে পড়ে ধমক খেয়েছি, তবু সিগারেট খাওয়া হয়নি। ফাইভ কি সিক্সে উঠে স্কুল শিখালো, অনেকের ধূমপান-নেশার প্রথম ধাপ ‘কৌতূহল’ কিংবা ‘বন্ধুদের প্ররোচনা’। পরীক্ষার খাতায় এসব লিখতাম আর ভাবতাম, ধূমপান করা ভালো না, এসবে নেশা ধরে, কি কি করে এসব শুরু হয়- সবটাই জানানো হচ্ছে। তবে ধূমপানে কেনো নেশা ধরে, মানুষের কেনো সিগারেট ছাড়তে এত কষ্ট হয়- এসব বই তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও পাইনি। বাবাকে জিজ্ঞেস করলেই প্রথমে কষে চড় বসাবেন। আর আমার কাছে বাবার চড়ের ভয়, কৌতূহলের চেয়ে বেশি। আমার ভেতর সিগারেটের প্রতি কৌতূহল আরও বাড়তে থাকল। জানতেই হবে কেনো এই জিনিস মানুষের এত পছন্দ, আসলেই ক্ষুধা লাগে না খেলে?
আমি প্রথম সিগারেট খাই ক্লাস সিক্সে। অনেক মিথ্যে গল্প-নাটক সাজিয়ে সিগারেট কিনেছিলাম দোকান থেকে। আমি নিজের মনকে ভালোভাবেই বুঝিয়েছিলাম, শুধু কৌতূহলের জন্যই আমি সিগারেট খেয়ে টেস্ট করব। একটার পর একটা, সবরকম সিগারেট কিনে টেস্ট করা শুরু করি। স্ট্রিক্টলি কনজারভেটিব ফ্যামিলিতে বাড়তে থাকায় আমার মধ্যে খুব সাধারণভাবেই সাহসের ভীষণ ঘাটতি ছিল। প্রত্যেকবার সিগারেট কিনতে গেলে অনেক মিথ্যে গল্প-নাটক সাজানো লাগতো। এজন্য কয়েক সপ্তাহ কি মাস পরপর সাহস জুগিয়ে সিগারেট খেতাম। যদিও আমি দেখতাম আমার সমবয়সী অনেকেই খুব সহজে সিগারেট কিনে দোকানের সামনেই টানছে, কেউ ওদের কিছু বলছে না। সিক্স থেকে এইটের মধ্যে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে সবরকম সিগারেট টেস্ট করা হয়ে গিয়েছিল। সবরকমভাবে খেয়েছি। শুধু টেনে ছেড়ে দিয়ে, একদম ভিতরে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে, সুখটান!
দুই বছরের আড়ালে-আড়ালে করা সাধনার পর আমি এটা বুঝতে পারি, সিগারেট টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই না। ২,৫,৭,১০,১২,১৫,২০,২৫টাকার সিগারেট খাওয়ার কোনো মানেই হয় না। যেখানে আমি সেসময়ে ১০-১৩টাকা দিয়ে মি. টুইস্ট খেতে পারি স্বাদ মিটিয়ে। তাও সবার সামনেই, নির্ভয়ে, বাবার সাথেও। তবে সিগারেট খাওয়ার এই দু’বছরের জার্নিতে আমারও সিগারেটের নেশা ধরে যায়। সেভেন-এইটের ক্লাস পার্টিতে স্কুলের বাথরুমে বসে একটানা ৪/৫টা সিগারেট আনন্দের সাথে ফুকতাম। স্কুলে আসার ভাড়া দিয়ে সপ্তাহে ২/৩বার সিগারেট কিনতাম। আর গল্প-নাটকও সাজানো লাগত না। একদিন আমার খুব কাছের একজন বন্ধু মনে করিয়ে দেয়, আমি ঠিক কি কারণে সিগারেট খেতে চেয়েছিলাম। আর এখন কিসের জন্য খাচ্ছি। তখন মনের মধ্যে কি হয়েছিল খেয়াল নেই, তবে এর পরের দিন থেকেই আমি সিগারেট খাওয়া পুরোপুরি ছেড়ে দেই। আমার ছাড়তে খুব কষ্ট হয়নি। এই জার্নিতে আমি আরেকটি জিনিস শিখে ছিলাম। সিগারেট দিয়েই অনেক নতুন বন্ধু বানানো যায়, তবে এদের বেশিরভাগই সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার সাথে হারিয়ে যায়।
হঠাৎ করেই রাতে কথাগুলো মনে আসলো। ভালো লাগে। নিজে থেকে বুঝে ছেড়েছিলাম। দুই বছর সিগারেট টেস্ট করার পর বুঝতে পারি, মানুষ গু খেলেও গুয়ের নেশায় পড়ে যাবে একটা সময়ে। তাই, যেসব জিনিস ছাড়তে কষ্ট হয় বা ধরে রাখতে ইচ্ছে করে, তার সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আরেকটি কথা মনে হয়, ফ্যামিলি থেকে কিংবা ছোট থাকতে স্কুল থেকেই যদি কীভাবে এসব নেশা, আসক্তি কাজ করে এসব বুঝাতো, হয়তো জীবনে আরও কয়েকটা মি.টুইস্ট বেশি খেতে পারতাম।
©somewhere in net ltd.