নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝুলন (চট্টগ্রাম) বন্ধু, ভালো থেকো সারাটি ক্ষণ

রঙ্গিলা বন্ধুরে....... [email protected]

ইসমাইল মাহমুদ

রেল লাইন বহে সমান্তরাল.................................. ই-মেইল : [email protected] ০১৭১৫-১৭১৯৫০ ০১১৯৬১২৮৫১৩

ইসমাইল মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিলেটের আঞ্চলিক লোক সঙ্গীতের সন্ধানে

০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৩৩

ইসমাইল মাহমুদ

বাঙ্গালী জাতির অতিত ঐতিহ্য আর লোকগাথা স্মৃতি কথা কিচ্ছা আর পুথি পুস্তকে শুনা যেতো। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার স্পর্শে এসব অতিত ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে লোক সঙ্গীতের চর্চা কেউ করেনা। তবুও সকলের জানতে ইচ্ছে করে কেমন ছিলাম আমরা অতিতে। সত্যি বলতে কি, আধুনিকতার যুগ আসলেও লোক সংস্কৃতির কদর কমেনি। তবে অনেক লোকসঙ্গীত হারিয়ে যেতে বসেছে। সঙ্গীত পিপাসু রাম কৃষ্ণ সরকার হারিয়ে যাওয়া লোকসঙ্গীতের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খোঁেজ নিচ্ছে প্রবীনদের সাথে কথায় কথায় আলাপের মাধ্যমে। সমৃদ্ধ করছে লোক সঙ্গীতের ভান্ডার।

কার পানেতে চাইয়ারে মনা,কার পানেতে চাইয়া/.....সাঞ্জা বেলা ঘোর জঙ্গলে কান্দ ব্যাকুল হইয়া/....

পূর্নিমাতো থাকবেনারে আসবে রে আমইস্যা/.....চিরদিনতো থাকবেনারে রঙ্গের ভালবাসা/......মরমী সাধক কবিদের এসব লোকগানের মধ্যে ছড়িয়ে আছে কয়েক শতাব্দীর বাঙ্গালীর ইতিহাস ঐতিহ্য ও সমাজচিত্র। লোক কবিদের এই সব লোকগান সংগ্রহের মাধ্যমে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার রামকৃষ্ণ সরকার নামের এক যুবক। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও চৌমুহনা থেকে পুর্ব দিকে আধা কিলোমিটার এগুলেই উত্তর পার্শে রুস্তমপুর গ্রাম। গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা তাকে ‘গীতকৃষ্ণ’ নামে চিনে। তাছাড়া সে ছোট বেলা থেকে কেমন যেন ভাবুক টাইপের ছিল। রাম কৃষ্ণের মায়ের সাথে কথা হলে ভদ্র মহিলা জানান, রাম কৃষ্ণ কোথায় থাকে সারা দিন তারা না জানলেও খাতা কলম তার কাছে থাকে। বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে আর লোক সঙ্গীত সংগ্রহ করে তার খাতায় লিপিবদ্ধ করাই তার কাজ। রামকৃষ্ণ শ্রীমঙ্গলেরচিঠি অফিসে এসে তার নিরলস কর্মের কথা জানায়। খোঁজ খবর নিতেই গানের খাতা এগিয়ে দিয়ে বললো- দাদা, আমি তো লোক সঙ্গীত সংগ্রহ করছি। আমি মনে করি এটা আগামী প্রজন্মের জন্য খুবই প্রয়োজন। হয়তো কোন একদিন কাজে লাগবে এসব হারিয়ে যাওয়া গান গুলো। সে অবশ্য সিলেটী আঞ্চলিক ভাষায় এসব কথা বললো। তাকে আমরা বেশ ভাল করে চিনি। কিন্তু রাম কৃষ্ণ এতবড় মহৎ কাজ করছে জানতে পেরে অসম্ভব ভাল লাগলো। রাম কৃষ্ণের মত নিবেদিত ব্যক্তি আমাদের সমাজে বিরল। আমাদের যা জানা ছিল না, সে বিষয়ে বললো ছোট বেলা থেকে কবিগান, ধামাইল, লোকসঙ্গীতের প্রতি তার ঝোক ছিল। নিজ গ্রামে অথবা আশেপাশের গ্রামে আয়োজতি কবি গান, কীর্তন, এমনকি বিয়ের আসরে ধামাইল দেখতে যেতো । এভাবেই লোকগীতির প্রতি নেশায় মজে যায়। সেই নেশা আজও যায়নি। আজও গ্রামজনপদে লোক লোকালয়ে খোঁজে ফিরে লোক কবিদের অপ্রকাশিত দুটি লোক গানের জন্য ।

১৯৮৯ ইং আছিদ উল¬্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে আসা যাওয়া করেন। তৎকালীন সংসদের পাঠাগারে সংরক্ষিত সিলেটের সাহিত্য কৃষ্টি সংস্কৃতি নিয়ে লেখা বেশ কিছু বই পুস্তক ঘাটাঘাটি করে ধীরে ধীরে মননচিন্তায় প্রবেশ করে সংগ্রহের নেশায় আকৃষ্ট হয়। তখন কেবলই মনে হত লোকজ গানের সঙ্গে তার আত্মার সম্পর্ক । রামকৃষ্ণের দাবী এ পর্যন্ত তার সংগ্রহে রয়েছে রাধারমনের শতাধিক গান । এছাড়াও মহিন্দ্র গোসাই, অধর চাঁন, গোলক চাঁন, আরকুম শাহ, কালা শাহ, ছেগেন শাহ, লবচরন, দীন ভবানন্দ, গোবিন্দ দাস, ফকির শামসুল, কৃষ্ণ দাসসহ সিলেট অঞ্চলের অন্তত ২০ জন চারন কবি, বৈষ্ণব কবি, সাধক, বাউল - ফকিরের আড়াই শতাধিক লোকগান তার সংগ্রহে আছে । যেগুলো আজও লোকমুখে শোনা গেলেও অধিকাংশই রয়েছে অপ্রকাশিত। রামকৃষ্ণ পেশায় একজন দোকান কর্মচারী হলেও শৃঙ্খল জীবন তার পছন্দ নয়। মা, স্ত্রী ও ৩ সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। যেখানে গ্রামীন মেলা, কবি গানের আসর ও বাউল গানের আসর বসে সেখানেই তিনি ছুটে যান। এসব সংগ্রহের ব্যাপারে রামকৃষ্ণ জানায়, এ কাজে তাকে বিভিন্ন সময়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ঝিনাইদহ সরকারী কৃষ্ণচন্দ্র (কে.সি) কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কবি নৃপেন্দ্র লাল দাশ। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার সংগ্রহ নিয়ে সিলেট সরকারী এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নন্দলাল শর্ম্মার সাথেও যোগাযোগ করেছে। রামকৃেষ্ণর পদচারণায় মুখরিত করতে বিভিন্ন সময়ে উৎসাহ দিয়ে সাহায্যে করেছেন। সিলেট পিটিআই এর প্রশিক্ষক দিপঙ্কর মোহন্ত, শ্রীমঙ্গলের গণ সঙ্গীত শিল্পী বুলবুল আনাম, নাট্য ব্যাক্তিত্ব নীহারেন্দু কর , সিলেট অঞ্চলের লোক সাহিত্য নিয়ে গবেষনা করেছেন সিলেট এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নন্দলাল শর্ম্মাা । তিনি বলেন, রামকৃষ্ণের সংগ্রহ সর্ম্পকে আমি জানি। স¤প্রতি রাধা রমনের কিছু লোকগান সে আমাকে দিয়েছে। যেগুলো আগে কখনো প্রকাশ হয়নি। এগূলো বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। এগুলো নিয়ে যত বেশি গবেষনা হবে তত বেশি আমাদের সাহিত্য সমৃব্ধ হবে। রামকৃষ্ণ জানায় ,বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে লোক লোকালয় ঘুরে লোকগান সংগ্রহ করা তার শখ অথবা নেশা। শত অভাব অনটন ও আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও লোকগান সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তার পরবর্তী পরিকল্পনা যদি কোন সরকারী অথবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন অথবা ব্যক্তি কেন্দ্রীক কেউ যদি আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসেন তাহলে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে লোকমুখে ছড়িয়ে থাকা লোকগান সংগ্রহের পরিধি আরও এগিয়ে নেওয়ার আশা ব্যক্ত করে সঙ্গীত পিপাসু রামকৃষ্ণ সরকার। সিলেটের জনপ্রিয় আঞ্চলিক ধামাইল নৃত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা আরও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে তার। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কয়েক বছর আগে তার নিজ উদ্যোগে ‘নব নাগরী ধামাইল সংঘ” নামে একটি সংগঠন করলেও বাস্তবে এটি বিলুপ্ত হওয়ার পথে।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:০১

উজ্জ্বল ধর বলেছেন: এমন লেখায় কোন মন্তব্য নেই দেখে আমি হতাশ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.