![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি আমার দেশকে। ভালবাসি বিজ্ঞান। [email protected]
সুপ্রাচীন কালে যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান মানুষের আয়ত্বে ছিলনা তখন সে ছিল প্রকৃতির এক অসহায় খেলার পুতুল। প্রকৃতি তাকে যেমন নাচিয়েছে সে তেমন নেচেছে।
কিন্তু মানুষ মাত্রেই কৌতূহলী এবং অনুসন্ধিৎসু। আর এই স্বভাব মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছে জানার আগ্রহ। এভাবেই সে প্রকৃতিকে জয় করার লক্ষ্যে
তৈরি করেছে নানা জ্ঞান-বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের বদৌলতে এক সময় মানুষ জানতে পেরেছে দূরের আকাশের তারাগুলো আমাদের সূর্যের মতই নক্ষত্র বৈ আর কিছু নয়।
এরকম বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে এই মহাবিশ্বে। শুধু আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রায় চার'শ বিলিয়ন নক্ষত্র। আর তখনই কৌতূহলী মানুষের
মনে উদয় হয়েছে নতুন আরেকটি প্রশ্ন। আমরা কি এই সুবিশাল মহাবিশ্বে একা? বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের কোথাও কি প্রাণের বিকাশ ঘটেনি? মানুষ তার
অনুসন্ধিৎসু মনের প্রশ্নটি নিয়ে রীতিমত হাজির হয়েছে বিজ্ঞানের দরবারে। কিন্তু বিজ্ঞানে স্রেফ অনুমান নির্ভর কোন কিছুরই স্থান নেই। কারণ বিজ্ঞান চলে
যুক্তির হাতে হাত ধরে এবং গণিতের উপর ভর দিয়ে। বিজ্ঞানীরা নানাভাবে প্রশ্নটির উত্তর বের করার চেষ্টা করে চলেছেন। ফলে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু যুক্তি,
এমন কিছু কারণ এবং এমন কিছু ঘটনা লক্ষ্য করেছেন যার ফলে বিষয়টাকে স্রেফ অনুমান বলে উড়িয়ে দেননি। কিন্তু এখনও এটি একটি তর্ক বিতর্কের
বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। এখন ভিনগ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা কতটুকু তা বুঝতে গেলে প্রথমেই আমাদের যে বিষয়টা পরিষ্কার করা দরকার তা হল প্রাণ বা জীবন বলতে আমরা কি বুঝি?
কিন্তু মুশকিলটা বেঁধে যায় এখানে। কারণ সুনির্দিষ্টভাবে প্রাণ বা জীবনের সংজ্ঞা দেওয়া খুব একটা সহজ কাজ না। এক্ষেত্রে প্রাণ বা জীবনের কিছু বিশেষ
গুন বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন জীব মাত্রেই খাদ্য গ্রহণ করে এবং তা পরিপাক করার ক্ষমতা রাখে। খাদ্য গ্রহণের ফলে জীবের শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে
এবং ক্ষয়-পূরণ হয়। জীবের অবশ্যই প্রজনন ক্ষমতা থাকবে। এছাড়াও জীবের আরেকটি গুণ হল উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া। এখন প্রাণের প্রধান উপাদানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক।
পৃথিবীতে প্রাণের প্রধান উপাদান হল ডিএনএ অণু। এটি কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন,
নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস দ্বারা গঠিত। যেহেতু কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসয় পরিবেশ মহাবিশ্বের প্রায় সর্বত্রই বিদ্যমান।
সুতরাং মহাবিশ্বের অন্য কোথাও ডিএনএ অণুর অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বিচিত্র কিছু নয়। তবে সমস্যা হল ডিএনএ এর জটিল কাঠামো ঠিক কিভাবে উদ্ভুদ হয়েছে তা বলা মুশকিল।
কাঁচামাল সহজে পাওয়া গেলেও এর উদ্ভব আচমকা ও সৌভাগ্যপ্রসূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখন প্রশ্ন হল প্রাণের উৎপত্তি ও বিকাশ কিভাবে হয়? মহাবিশ্বের
অন্য কোথাও কি সেই পরিবেশ আছে? সেজন্য আমরা দেখব পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি ও বিকাশ কিভাবে হয়েছিল। পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি ও বিকাশ কিভাবে হয়েছিল
সে ব্যাপারে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। এগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমনঃ
১।অতিপ্রাকৃত ঘটনা
২।সৃষ্টিবাদ
৩।স্বতঃজননবাদ
৪।বহির্জগতে উৎপত্তি
৫।জৈব রাসায়নিক তত্ত্ব।
এখন বহির্জগতে উৎপত্তি মতবাদটির দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। কারণ এর সাথে ভিনগ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনার একটা যোগসূত্র রয়েছে।
এ মতবাদ অনুসারে বহির্জগতের কোথাও না কোথাও প্রাণ আগে থেকেই ছিল। সেখান থেকেই উল্কার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণের বীজ ছড়িয়ে পড়েছে।
১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্সমেট নামক প্রকল্পের অধীনে কর্মরত একদল বিজ্ঞানী এএলএইচ৮৪০০১ নামে একটি মঙ্গলীয় উল্কা উদ্ধার করেন।
যাতে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়াও ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কায় একটা উল্কাপাতের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে উল্কাপিণ্ডগুলো উদ্ধার করে গবেষণার
মাধ্যমে ঐ উল্কাপিণ্ডের ভেতর শিলা-ম্যাট্রিক্সে প্রস্তরীভূত বায়োলজিক্যাল স্ট্রাকচার পাওয়া গেছে। এ সমস্ত ঘটনা বহির্জগতে প্রাণের সম্ভাবনার ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের
আরও কৌতূহলী করে তুলছে।
বহির্জাগতিক যে সমস্ত সভ্যতাসমূহের সাথে আমাদের যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোর সংখ্যা প্রণয়নের জন্য ডঃ ফ্রাঙ্ক
ড্রেক একটি সূত্র বের করেন। যা ড্রেকের সমীকরণ নামে পরিচিত। সমীকরণটি হল:-
N = R . P . E . L . I . C . T
যেখানে, N-হল সেই সমস্ত সভ্যতাসমূহের সংখ্যা যাদের প্রেরিত তাড়িতচৌম্বক নিঃসরণগুলো চিহ্নিত করা যায়।
R-হল বুদ্ধিমান প্রাণের উৎপত্তিতে সহায়ক নক্ষত্রসমূহ সংগঠনের হার।
P-হল সেই সকল নক্ষত্র যাদের গ্রহ ব্যবস্থা রয়েছে।
E-হল প্রাণ বিকাশে সহায়ক গ্রহের সংখ্যা।
L- প্রাণ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ থাকার কারণে সত্যিই প্রাণের আবির্ভাব ঘটেছে এমন গ্রহের সংখ্যা।
I- প্রাণের উৎপত্তি হওয়া যে গ্রহগুলোতে বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে তার সংখ্যা।
C- যে সকল গ্রহের প্রাণীরা প্রযুক্তির এতটুকু উন্নয়ন ঘটিয়েছে যা দ্বারা মহাকাশে সংকেত পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে পারে।
T- যেই সময় পর্যন্ত ঐ বুদ্ধিমান প্রাণী ঠিকে থাকতে পারে।
তিনি সমীকরণটি ব্যবহার হিসাব করতে গিয়ে নির্ণয় করেছিলেন যে, মিল্কিওয়েতে প্রায় ১০,০০০ গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরে
মানুষের মনে যে প্রশ্নটি জাগে তা হল, ভিনগ্রহে প্রাণীরা দেখতে কেমন হবে? তারা কি আমাদের চেয়ে সুদর্শন হবে নাকি হবে অত্যন্ত কুৎসিত? এটা সম্পূর্ণ
নির্ভর করে গ্রহের আবহাওয়া এবং পরিবেশের উপর। উদাহরণস্বরূপ যদি কোন গ্রহের আবহাওয়া অতি কঠোর হয় এবং তাপমাত্রায় চূড়ান্ত রকমের বদল হয়
তবে সে গ্রহের প্রাণীরা সুদর্শন না হওয়ারই কথা। কেননা তাদের থাকবে একটা রক্ষণী আবরণ অথবা পুরো এক থাক চর্বি কিংবা থাকবে ঘন ঘন লোম। ভিনগ্রহের
প্রাণী সম্পর্কে বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ ম্যাগী অলড্রিন পোককের ধারণাটা বেশ উল্লেখযোগ্য। তাঁর মতে বহির্বিশ্বে জেলিফিশের মত বুদ্ধিমান প্রাণী থাকতে পারে।
তবে তারা মোটেই আমাদের মত কার্বো-হাইড্রেট দিয়ে গঠিত নয়। এদের ডিএনএ কার্বনের পরিবর্তে সিলিকন দিয়ে গঠিত। এমনও হতে পারে এসব প্রাণীদের
আদৌ কোনও ডিএনএ নেই। এরা আমাদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। হয়তো এরা মিথেন গ্যাসের বায়ুমণ্ডলে বেঁচে আছে। এমনটি হওয়া মোটেই বিচিত্র কিছু নয়।
কেননা পর্যায় সারণিতে সিলিকন কার্বনের নিচে অবস্থিত। সিলিকন প্রায় সবদিক দিয়ে কার্বনের ন্যায় রাসায়নিক ধর্ম প্রদর্শন করে। সিলিকনের প্রাচুর্যতা নিয়েও
সন্দেহের অবকাশ নেই। সুতরাং এত কোটি কোটি গ্রহের মধ্যে কোথাও না কোথাও সিলিকনের তৈরি প্রাণ অসম্ভব কিছু নয়। এ সমস্ত কারণে বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহে
প্রাণের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না। একটা ঢিল যেমন উপর দিকে ছুঁড়ে মারলে তা অভিকর্ষের টানে ফিরে আসে তেমনি ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা
উড়িয়ে দিতে চাইলেও যুক্তির টানে বিজ্ঞানীরা তা পারছেন না। বরং এ বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ ও কৌতূহল বেড়েই চলেছে।
ভিনগ্রহে প্রাণ আদৌ আছে কি নেই তা যাচাই করার জন্য বিজ্ঞানীরা বেছে নেন বেতার তরঙ্গকে। কারণ যদি বহির্বিশ্বে আমাদের মত উন্নত প্রাণী থেকে থাকে তবে তারাও আমাদের মত
বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করে থাকতে পারে। সুতরাং তাই একমাত্র বেতার তরঙ্গই হতে পারে বহির্বিশ্বের সভ্যতার সাথে যোগাযোগের কার্যকর পদ্ধতি। আর তাই বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা এসমস্ত সংকেতগুলো
খুঁজার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হল কত ফ্রিকোয়েন্সিতে সংকেত পাঠাতে হবে তা নির্ণয় করা। কারণ বহির্জগতের বুদ্ধিমান প্রাণীরা কোন ফ্রিকোয়েন্সি গ্রহণ করতে পারবে তা
আমাদের জানা নেই। কিন্তু সমস্যা দেখে পালিয়ে যাওয়া বিজ্ঞানের কাজ নয়। বিজ্ঞানের কাজ হল সমস্যাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়া। এ সমস্যা সমাধানে তারা মহাবিশ্বের নির্দিষ্ট স্থানে বিভিন্ন মাত্রার
ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে থাকেন। এর উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা পরপর অনেকগুলো অভিযান চালিয়েছেন। তবে এখনও সরাসরি কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে
বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে সব কল্পনা-জল্পনার অবসান ঘটে বহির্বিশ্বের কোন প্রাণীর দেখা মিলবে সে আশায় বিজ্ঞানীরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানে...
তথ্যসূত্রঃ ১। উইকিপিডিয়া
২। মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্ত্বার খোঁজে (অভিজিৎ রায়/ফরিদ আহমেদ)
©somewhere in net ltd.