![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি আমার দেশকে। ভালবাসি বিজ্ঞান। [email protected]
__আমার সব কথা তো শুনলেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন আমার সমস্যা একটা নয়। সমস্যা অনেক।
__হুম। মানলাম আপনার সমস্যা অনেক। এমনকি সবগুলো সমস্যা নিয়ে লিখতে বসলে অনায়াসে দশ ফর্মার একটি বই লিখে ফেলা যাবে। কিন্তু আপনার প্রথম সমস্যা কোনটা জানেন?
__কোনটা?
__আপনি সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়ান।
__ঠিক বলেছেন। কিন্তু এ ছাড়া যে উপায় নেই।
__দেখুন, সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়ালে সমস্যা কমে না বরং চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
__কিন্তু সমস্যার মুখোমুখি হতে হলে তো সমাধান লাগবে। আমার সমস্যা গুলো এমন যে যার কোনো সমাধান নেই।
__এটা আপনার ভুল ধারণা। সব সমস্যারই সমাধান আছে। অবশ্যই আছে। আপনাকে ধৈর্য সহকারে খুঁজে বের করতে হবে। রবি ঠাকুরকে নকল করে বলা যায়,”সমস্যা দেখে করিসনে ভয় আড়ালে তার সমাধান হাসে”।
__আমি চেষ্টা কম করিনি। সমাধান মিলে না। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি। আসলে আমার দ্বারা কিছুই হবে না।
__এটা আপনার দ্বিতীয় সমস্যা। আপনি ইতিবাচক চিন্তা খুব কম করেন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দিয়ে সমাধান খুঁজলে আপনি কখনোই পাবেন না। উল্টো সমস্যা আরো জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যাবে।
__হুম। অনেক সময় এমন হয়েছে যে আমি একটা সমস্যার সমাধান বের করেছি কিন্তু আশেপাশের লোকজন কি বলবে সেটা ভেবে আর প্রয়োগ করিনি।
__ধরে নিতে পারেন এটা আপনার তৃতীয় সমস্যা। লোকভয়। এই লোকভয় জিনিসটা সম্পূর্ণ পরিহার করে চলা উচিত। এক্ষেত্রে জাফর ইকবাল স্যার বলেছেন,”যারা তোমাকে চিনে না তারা তোমাকে পাগল ভাবল নাকি ছাগল ভাবল তাতে কিছু আসে যায় না। আর যারা তোমাকে চিনে তারা তো জানেই তুমি কতটা পাগল আর কতটা ছাগল। তাই কোন কিছু করতে ইচ্ছে হলে করে ফেলবে অযথা ভান করবে না”।
কথা হচ্ছিল বাসে আমার পাশে বসা যাত্রীটির সাথে। বাস একটা বাজারে এসে থেমেছে। সেই সাথে থেমেছে আমাদের কথোপকথনও। বাসটি সম্ভবত যাত্রী উঠানোর জন্য থেমেছে। পাশের ভদ্রলোক চুপ মেরে আছেন। কি যেন ভাবছেন! এমন সময় হুঠ করে কোত্থেকে একটা বেটে মত লোক জানালা দিয়ে অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে ব্যাঙের মত লাফ মেরে আমার হাতে একটা বিজ্ঞাপনের কাগজ ধরিয়ে দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে লোকটি লাফিয়ে লাফিয়ে কাগজগুলো পুরো বাসে ছড়িয়ে দিল। এই বেটা নিশ্চয় স্কুলে থাকার সময় দীর্ঘলাফ, উচ্চলাফে ফার্স্ট হয়ে হয়ে অনেক বাসন-কোসন অর্জন করেছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নাই। কাগজ বিলি করার মধেও যে একটা আর্ট আছে এই লোককে না দেখলে বুঝতাম না। আশেপাশের লোকজন খারাপ ভাববে তাই এই কাগজগুলো সাধারণত কেউ পড়ে না। এখানেও তাই হল। প্রায় বেশিরভাগ যাত্রীই কাগজগুলো ফেলে দিল। অনেকে আবার না দেখার ভান করে থাকলো। একটা ছেলেকে দেখলাম একবার ডানদিকে আরেকবার বামদিকে তাকিয়ে কাগজটা আস্তে করে পকেটে চালান করে দিল। বোধহয় বাসায় গিয়ে একা একা পড়বে। সামনের সীটের একজন কাগজটা পাখা বানিয়ে গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছেন। আর আমি অত ভালো খারাপ, সাত পাঁচ না ভেবে পড়া শুরু করে দিলাম। পাশের ভদ্রলোকটি মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছেন। এখানেও দেখলাম নানা সমস্যা ও সমাধানের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে শারীরিক সমস্যা। এখানে এমন কিছু কমন সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে যা প্রায় সবারই থাকে। আসলে এগুলো কোন সমস্যাই না। স্বাভাবিক। এটার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়া। বোকা বানানোর ফন্দি আর কি! আমার পড়া শেষ হলে কাগজটা দিয়ে একটা বিমান বানিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিলাম। জ্বালানী ও পাইলটবিহীন কাগজের বিমান। এদিকে বাস আবার চলা শুরু করেছে। পাশের ভদ্রলোকও আবার মুখ খুললেন।
__আপনার সব কথা বুঝলাম। কিন্তু আমি আসলে বুঝতে পারছি না এখন আমার কি করা উচিত।
__বুঝতে পারছেন না বললে ভুল হবে। মনে হয় বুঝার চেষ্টা করছেন না। যাই হোক প্রথমেই আপনার সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে এক জায়গায় দাঁড় করান। ধরুন আপনার প্রত্যেকটি সমস্যা ঋণাত্মক। এখন সমপরিমাণ ধনাত্মক (পজিটিভ) সমাধান পাশে দাঁড় করান। দেখবেন ফলাফল আসবে শূন্য।
__খুব সুন্দর বলেছেন। কিন্তু আমি আপনাকে আগেই বলেছি আমার সমস্যাগুলো খুব জটিল। আমার দ্বারা হবে না। তার চেয়ে সমস্যা থেকে পালিয়ে ভালোই আছি।
__আপনি আবার আবেগকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটাও এক প্রকার সমস্যা। গুরুতর সমস্যা। দুর্বল আবেগের পাশে যত শক্তিশালী যুক্তি এনে দাঁড় করানো হোক না কেন আবেগ সেটাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিবেই। সুতরাং আগে আবেগ কন্ট্রোল করুন। বাস্তবতা ফীল করার চেষ্টা করুন।
ভদ্রলোক আবার চুপ মেরে গেলেন। আবার কি যেন ভাবছেন। এভাবে নীরবতায় প্রায় ঘন্টাখানেক কেটে গেল। উনার সাথে আর কোন কথা হয়নি। বাস আবার থেমেছে। ভেবেছিলাম যাত্রী উঠানোর জন্য থেমেছে কিন্তু সকল যাত্রীদের বাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। বাসের ইঞ্জিনে নাকি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমাকে তো আর মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ এটেন্ড করতে হবে। ওদিকে ড্রাইভার জানিয়ে দিয়েছে,’’আমরা অহন বাস ছাড়তে পারুম না। আপনেরা নিজ নিজ দায়িত্বে চইলা যান। আমরা খুবই দুঃখিত”।
কিন্তু বাসটা এমন এক জায়গায় এসে থেমেছে যেখান থেকে সাধারণত অন্য গাড়ি পাওয়া যায় না। ভালো ঋণাত্মক সমস্যায় পড়া গেল। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ধনাত্মক সমাধান পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অন্যের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে ঘামাতে নিজেই এক মহা সমস্যায় পড়ে বসে আছি। তাই আশেপাশের সমস্যা নিয়ে আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না…
১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: হুম। ধন্যবাদ...
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯
এম. এ. হায়দার বলেছেন: সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়ালে সমস্যা কমে না বরং চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
সহমত।