![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি আমার দেশকে। ভালবাসি বিজ্ঞান। [email protected]
১.
এল.ই.ডি মরিচ বাতিগুলো জোনাকির আলোর মত জ্বলছে আর নিভছে। আলোর ঘাটতি যাতে না হয় সেজন্য আকাশে চাঁদ মামাওহাজির। চারিদিকে অনেক লোকের সমাগম, হই হুল্লোড় আর আনন্দে ভরপুর। বিয়ে বাড়ি বলে কথা! সবার খাওয়া দাওয়া শেষে কাজী সাহেব, সাক্ষী, আমি এবং আমার হবু বউ রিয়া স্টেইজে বসে আছি। এক ফাঁকে আমি একবার রিয়ার দিকে তাকালাম। আহ! কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। মিশরি মেয়েদের মত টানাটানা চোখ, লম্বা লম্বা চুল। ইরানি মেয়েদের মত চেহারা। একবার তাকালেই চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের বিবাহকার্য শুরু হয়ে গেল। কিন্তু বিবাহকার্য শেষ হওয়ার আগেই আচমকা বাড়ির উঠোনে একটা বিশাল বিমান ল্যান্ড করল। ভাবছি এত ছোট জায়গায় এতবড় বিমান কেমনে নামল! কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান থেকে একে একে অনেকগুলো লোক নামতে লাগল। এদের পোষাক-আষাক অনেকটা সৌদি আরবের লোকদের মত। কিন্তু আমার বিয়েতে সৌদি আরবের লোকজন কেন আসবে? তাদের দাওয়াত কে দিল?আজব! আমি একবার চারদিকে তাকিয়ে নিলাম। কি সর্বনাশ! আমি এবং রিয়া ছাড়া আশেপাশের লোকজন কেউ নেই, সবাই হাওয়া। ওদের মধ্য থেকে কয়েকজন এসে আমার হাত- পা বেঁধে ফেলল। আর কয়েকজন এসে জোর করে রিয়াকে বিমানে তুলে ফেলল। নেতা টাইপের একজন হুংকার দিয়ে পরিষ্কার বাংলায় আদেশ দিল,''সালার ইয়ে টা কেটে কুচি কুচি করে ফেল''। সাথে সাথে একজন তলোয়ার নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। ভয়ে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যেতে লাগল, রক্ত হিম হয়ে গেল। লোকটা আমার পাশে এসেই তলোয়ার দিয়ে আমার ইয়ে বরাবর দিল এক কুপ। সাথে সাথে এক লাফ দিয়ে ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। ঘুম থেকে উঠেই হাঁপাতে লাগলাম। ওটা যে স্বপ্ন ছিল তা বুঝতে খানিক্ষণ সময় লাগল। যদিও স্বপ্নটা নতুন নয়, গত দু'সপ্তাহ ধরে এই অদ্ভুদ স্বপ্নটা দেখছি। সবসময় স্বপ্নটা মাথায় ঘুরে, পাগল হওয়ার মত অবস্থা। স্বপ্ন দেখা স্বাভাবিক, তাই বলে একই স্বপ্ন প্রতিদিন! কোনদিন পুরোপুরি পাগল হয়ে কাপ্তাই রোডে নেংটা দাঁড়িয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করা শুরু করি কে জানে! ভাবছি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে যোগাযোগ করব। কিন্তু পকেট খালি।
২.
দু'সপ্তাহ ধরে রিয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। ফোন করলেই তার বাবা রিসিব করে। কি হল মেয়েটার কিছুই বুঝতেছিনা। রিয়ার বান্ধবিদের কারো নাম্বারও আমার কাছে নেই। আমি তারপরও রিয়ার নাম্বারে ফোন দিলাম, দেখি কে রিসিব করে। রিং পড়ার সাথে সাথে রিসিব। মোবাইল ফোনের ওপাশ থেকে রিয়ার বাবার কন্ঠ ভেসে এল। তিনি হ্যালো হ্যালো করেই চলেছেন,আমি কথা বলব কি বলবনা ভাবছি। অবশেষে কথা বলেই ফেললাম।
__হ্যালো, স্লামালিকুম।
__ওয়ালায়কুম সালাম। কে বলছেন?
__জ্বি এটা কি চিড়িয়াখানার নাম্বার?
__আশ্চর্য! চিরিয়াখানার নাম্বার হতে যাবে কেন? আপনি কোত্থেকে বলছেন?।
__আমি ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে বলছি।
__সত্যি করে বলুন আপনি কে? এখানে কি চান?
__রিয়া নামক প্রাণীটা কি আছে? ওকে একটু ফোনটা দেওয়া যাবে?
__হারামজাদা, তোর জিব টেনে বের করে ফেলব। সরিষা তেলে ভেঁজে কুকুর দিয়ে খাওয়াব।
খাইছে!সাইক্লোন শুরু হয়ে গেছে। এখন আর মোবাইল কানে ধরে রাখার কোনো মানে হয়না। তাড়াতাড়ি লাইনটা কেটে দিলাম। যাক সাইক্লোন এখন আর আমার দিকে আসার সম্ভাবনা নাই। খুব সম্ভবত সাইক্লোন এখন কয়েক হাজার মাইল বেগে রিয়ার দিকে ছুটছে। আর রিয়ার কাছে যাওয়া মানেই একটা সংকেত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেখা যাক কি হয়!
৩.
আজকে আবার সেই স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভাঙল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৯টা বেজে গেছে। আজ হাম্বা বাবার মাজারে যাওয়ার কথা। তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে বেড়িয়ে পড়লাম। বন্ধুবান্ধবের মধ্যে কয়েকজন বলল এসব ব্যাপারে আধ্যাত্যিক লাইনে চেষ্টা করলে নাকি ভালো ফল পাওয়া যায়। তারা আমাকে হাম্বা বাবার মাজারের ঠিকানাও দিল। এখন হেঁটে হেঁটে হাম্বা বাবার মাজারের দিকেই যাচ্ছি, হেঁটে গেলে নাকি ফল বেশি পাওয়া যায়। শুনেছি বাবার মাজার বেশ গরম। তবে ঠিক কত ডিগ্রী গরম সেটা কেউ বলতে পারল না।সাথে একটা থার্মোমিটার নিলে মন্দ হত না! বাবার মাজারের কাহিনীও অত পুরানো নয়। ভদ্রলোকের আসল নাম ছিল কবির উল্লাহ। মানুষ মরার আগে আল্লাহ খোদার নাম নিয়ে মরে। কিন্তু এই ভদ্রলোক নাকি মরার ঠিক আগ মূহুর্তে পর পর তিনবার বিকট শব্দে হাম্বা হাম্বা হাম্বা করে ডাক মেরেছিলেন। সেই ডাকে নাকি আশেপাশের চল্লিশ বাড়ি পর্যন্ত সব গাভীন গরু বাচুর প্রসব করে দিয়েছিল। এই অলৌকিক ঘটনার পর তার ছোট ভাই খলিল উল্লার নেতৃত্বে এই মাজার স্থাপিত হয়। প্রায় ৪৫মিনিটের মত হাঁটলাম, মাজার আর কতদূর কে জানে!রাস্তায় কাউকে দেখছিনা যে একটু জিজ্ঞেস করব। হঠাৎ এক অদ্ভুদ লোক কে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। রাস্তার পাশে রোদের মধ্যে মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক মাটিতে বসে গভীর মনোযোগদিয়ে একটা বই পড়ছেন। পরনে ময়লাযুক্ত পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি।মাথায় চারপাশে কাঁচাপাকা চুল,মাঝখানে বিশাল টাক। এই ভদ্রলোকের মাথায় উকুন-টুকুন থাকলে শীতকালে তাদেরবিশেষ সুবিধা হত। মাঝে মধ্যে ঠাণ্ডা লাগলে বিশালটাকের খালি জায়গায় এসে রোদ-টোদ পোহাতে পারত। ইনার বামপাশে একজোড়া স্যান্ডেল, ডানপাশে একটা ব্যাগ। অবস্থা দেখে বুঝায় যাচ্ছে মাথায় গন্ডগুল। তবুও নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো। কাউকে যেহেতু পাচ্ছিনা একেই জিজ্ঞেস করা যাক। আমি পাশে গিয়ে বললাম,
__চাচা, স্লামালিকুম।
তিনি আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন,
__ওয়ালায়কুম সালাম।
এমন একটা ভাব যেন সুঁচে সুতা ঢুকাচ্ছেন, তাই এদিক ওদিক তাকানো যাচ্ছেনা। আমি আবার বললাম,
__চাচা, একটা হেল্প করতে পারবেন?
__পারবনা। আমি একটা ধারা খুজতেছি। ডন্ট ডিস্টার্ব মি প্লিজ
__কিসের ধারা?
__তা শুনে আপনার কাজ কি?
__চাচা আমি কিন্তু একজন উকিল,আপনি চাইলে সাহায্য করতে পারি।
তিনি এবার ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। কিছুক্ষণ তাকানোর পর ভ্রু স্বাভাবিক হল। এর অর্থ তিনি আমার মিথ্যা ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন, ধরেই নিয়েছেন আমি উকিল। তিনি কৌতুহলী কন্ঠে বললেন,
__আপনি সত্যি কি উকিল? আমাকে ধারা খুজে দেবেন?
__সেই কবে থেকে ধারা ধারা করতেছেন,আগে কিসের ধারা তা তো বলুন।
__আচ্ছা শুনুন, সংক্ষেপে বলছি। আমি একজন গরুর ডাক্তার। ডাক্তারি করে যা পেতাম তা দিয়ে আমার কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চলত। কিন্তু হঠাৎ হাম্বা বাবা নামে এক ভন্ড মাজার বের হয়। সেখানে নাকি অসুস্থ গরু নিয়ে মারধর করে মুখ দিয়ে তিনবার হাম্বা ডাক বের করতে পারলেই বাবা খুশি হয়ে সুস্থ করে দেন। এরপর থেকে কেউ গরু নিয়ে আমার কাছে আসেনা। বাংলাদেশ পেনাল কোডে কি এমন কোনো ধারা নেই যা দিয়ে এদের কে আমি ফাঁসাতে পারব?
__বাবা যদি সত্যি সত্যি অসুস্থ গরু সুস্থ করে দিতে পারে,তাহলে মামলা করবেন কোন যুক্তিতে?
__আরে ভাই কি বলেন। আপনি জানেন না এরা কত বড় ভন্ড। হাতে গুনা এরকম কিছু ভন্ডের কারনে বাকি পবিত্র আউলিয়া বুজুর্গরা অপমানিত হচ্ছেন। আমাদের দেশ আউলিয়া বুজুর্গের দেশ। কিন্তু এরকম ভণ্ডদের কাজকর্ম দেখে বাকি পবিত্র আউলিয়াদের প্রতি মানুষের ধারনা খারাপ হচ্ছে। কোনো আউলিয়া কিন্তু বলে যাননি আমার মাজারে এটা ওটা দিও। উনারা আল্লাহর মুমেন বান্দা ছিলেন। ইসলামের খেদমত করেছেন। উনাদের শ্রদ্ধা করা উচিৎ। উনাদের মাজার জিয়ারত করা উচিৎ। এরকম
পবিত্র আউলিয়াদের যারা অপমানিত করছে, আমার মত ডাক্তারের পেঠে যারা লাথি মারে, সেই ভন্ড বাবাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ। উচিৎ কিনা আপনি বলেন?"
ইনার লম্বা কথা শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম এবং প্রশ্নের উত্তরে কিছু না বলেই আবার হাঁটা শুরু করলাম। ভদ্রলোক আমার দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পরে মাজারে পৌছেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল। ওমা একি! এখানে ছোট খাটো একটা গরুর হাট বসে গেছে। মাজারের উত্তর দিকে লম্বা গরুর লাইন, দক্ষিণ দিকে মানুষের লাইন। ওখানে সত্যি সত্যি একটা গরুকে কয়েকজন মিলে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। এর আরেক পাশে একজন মানুষ হাম্বা হাম্বা করতেছে। আমাকে লাইনের বাইরে দেখে কয়েকজন এসে লাইনে দাড় করায় দিল। এসব কান্ডকারখানা দর্শন করে বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরলাম।
৪.
রাত ২টা। আমি বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম আসছেনা। বারবার রিয়ার ছবি চোখে ভাসছে। ঘুমুতেও ভয় লাগে। ঘুমালেই ঐ অদ্ভুদ স্বপ্নটা দেখি। এমন সময় হঠাৎ মোবাইলফোন বেজে উঠলো। রিয়ার নাম্বার। রিয়ার বাবা ফোন করেনি তো আবার! ফোন রিসিব করতেই রিয়ার কণ্ঠ ভেসে এল।
__হ্যালো!!
__হ্যালো, রিয়া?
__হু, কেমন আছ?
__আমি কেমন আছি পরে বলছি। আগে বল এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?
__প্লীজ রাগ করোনা। আমি ইচ্ছা করে তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করিনি।
__ইচ্ছা করে করনি মানে? তুমি জান কতবার তোমায় ফোন দিয়েছি। এই দু'সপ্তাহ একটা রাতও ঘুমাতে পারিনি আমি।
__বাবা ফোন নিয়ে ফেলছে। এখন চুরি করে ফোন দিছি। বেশিক্ষণ কথা বলা যাবেনা। আমি অনেক বিপদে আছি। একটা কথা বলতে ফোন দিয়েছি।
__কেন কি হয়েছে তোমার? কি বিপদ? খুলে বল প্লীজ।
__আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
__বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে!!! কখন?
__দু'সপ্তাহ আগে।
__দু'সপ্তাহ আগে বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আমাকে জানাচ্ছ আজকে!!
__কি করব বল! তোমার সাথে যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ।
__ভালোই তো!! তা কোথায় ঠিক হয়েছে বিয়ে? ছেলে কি করে?
__ছেলে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সৌদি আরব থাকে।
এটা শুনে একটু ধাক্কা খেলাম। আমার দেখা স্বপ্নের সাথে পুরোপুরি মিল! তাহলে কি টেলিপ্যাথি বলে কিছু একটা আসলেই আছে! তারমানে রিয়ার সাথে এই দু'সপ্তাহ মোবাইলে যোগাযোগ না হলেও টেলিপ্যাথিক সিস্টেমে কথা হয়েছে। ফলে আমার অবচেতন মন বিয়ে সম্পর্কে অবগত হয়ে স্বপ্নের মাধ্যমে চেতন মনকে জানানোর চেষ্টা করছিল!!!
__হ্যালো। কথা বলছনা কেন?
__বলার আর কি আছে? তো তুমি কি সিদ্ধান্ত নিলে?
__সরি। আমার পক্ষে বাবা মার মনে কষ্ট দেওয়া সম্ভব না। আমায় ক্ষমা করে দিও প্লীজ।
এইটা বলেই রিয়া কান্না শুরু করে দিল। লাইন কেটে দিলাম। কান্না শুনতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। আমারও ভীষণ
কান্না পাচ্ছে। মেনে নেওয়া ছাড়া কিছুই করার নাই। রিয়ার দোষও দেওয়া যাচ্ছেনা। এই দু'বছরে বুঝে গেছি সে আমায় কি পরিমাণ ভালবাসে। তবুও একটা ক্ষোভ মনে আসছে, সে বাবা মার মনে কষ্ট দিতে না পারলে প্রেম করল কেন? কিন্তু এটা ভাবা অর্থহীন কারন আমিও তো বেকার, পড়াশোনা শেষ হয়নি। আমারও তো উচিৎ ছিল প্রেমে না জড়ানো। রিয়ার স্বপ্ন ছিল ফিজিক্স নিয়ে পড়বে। অনেক বড় পদার্থবিদ হবে। সেই স্বপ্নও হয়তো এখানেই শেষ। নিজের চেয়েও রিয়ার জন্য অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। সারারাত ঘুমুতে পারলাম না। সকাল বেলার দিকে নিজের অজান্তেই ঘুম এসে গেল। বিকালের দিকে মোবাইলের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। মোবাইল বেঝেই চলেছে, ধরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। কিছুক্ষণ পর চোখ কচঁলাতে কচঁলাতে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম অহনার ফোন। অহনা আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বেস্ট ফ্রেন্ড। যার ফোন অগ্রাহ্যকরা কোনো পরিস্থিতেই আমার পক্ষে সম্ভবনা। আমি ঘুম ঘুম গলায় বললাম,
__হ্যালো...
__হারামজাদা, ফোন রিসিব করতে এতক্ষণ লাগে কেন? সকাল থেকে ফোন দিচ্ছি। কই ছিলি?
__ঘুমাচ্ছিলাম।
__ওরে আমার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা! রাতে ডাকাতি করতে গেছিলি নি?
__ফান করিসনা তো! ভাল লাগছেনা।
__ফানের কি আছে? তোরে দেখলেই তো মনে হয় লঘু ডাকাতের বংশধর।
__প্লীজ... জ্বালাইস না।
__আচ্ছা ঠিক আছে বাবা! এখন শোন, আজ রাতে জ্যোৎস্না দেখার প্ল্যান করেছি। আমাদের গেইটের সামনে চলে আসবি।
__পারবনা। আমার মন ভালো নেই।
__হালার পুত,পারবিনা মানে? তোকে আসতেই হবে।
__বললাম তো যেতে পারবনা।
__আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকব। আসা না আসা তোর ব্যাপার।
৫.
রাত বেশি হয়নি। আমি আর অহনা হাঁটছি। চারিদিক নিরব নিস্তব্ধ। আকাশে এক পোয়া বাংলা সাবানের মত এক ফালি চাঁদ। নিঃস্বার্থে জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে। সেই আলো রাস্তার দুই ধারের গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আমাদের গায়ে এসে পড়ছে। পাতার ফাঁক দিয়ে তাকালে মনে হয় চাঁদটা টুকরো টুকরো হয়ে আছে। মনে হচ্ছে উপর থেকে কেউ ম্যাগনেট টর্চ জ্বালিয়ে আমাদের উঁকি দিচ্ছে। অদ্ভুদ সৌন্দর্যে অদ্ভুদ ভালো লাগার অনুভূতি হল। এই মুহুর্তে ভাবলাম অহনাকে রিয়ার বিয়ের কথাটা বলি। কিন্তু সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,
__এখনো কি রিয়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে?
__হুম। কিন্তু তোই কেমনে জানলি?
__সকালে রিয়ার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। সে বলেছে।
এখন বুঝলাম অহনা কেন আমাকে জ্যোৎস্না দেখাতে এনেছে। সে নিশ্চয় আমায় সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যা ভাবছিলাম তাই হল। একজন মানুষকে যতভাবে সান্ত্বনা দেওয়া যায় সে ততভাবেই চেষ্টা করল।
__তোর কি রিয়ার জন্য খুব বেশি মন খারাপ?
__হু।
__এত মন খারাপ করার দরকার নেই। প্রেম কি শুধু তোই করেছিস আর কেউ করেনি! এই যেমন আমার কথাই ধর। জয়ের সাথে ব্রেক-আপ এর পর আমি কি তোর মত এত মন খারাপ করেছিলাম??
__জানিনা।
__মোটেই মন খারাপ করিনি। প্রেম কিসের মত জানিস? প্রেম হল ঐচ্ছিক বিষয়ের মত। বুঝলি?
__মানে?
__মানে ঐচ্ছিক বিষয়ে যেমন ফেল করলে সমস্যা নেই আবার ভালো করলে মোট রেজাল্টে যোগ হয়, এও তেমন। প্রেম না করলেও তোর দিন কেটে যাবে। আমাকে দেখছিস না কত ভাল আছি।
__হু।"
__প্রেম মানেই হল উদ্দেশ্যযুক্ত সম্পর্ক ও স্বার্থযুক্ত ভালোবাসা। যখনই উদ্দেশ্য ও স্বার্থ হাচিলে ব্যাহত হয় তখনই প্রেম হাতে থালা নিয়ে তিন রাস্তার মোড়ে বসে যায়। বুঝলি?
__হু।
__হু হু করিস নাতো! এবার গম্ভীর মুখে একটু হাসি ফোটা।
মনে হচ্ছে অহনার ঔষধে কাজ হয়েছে। নিজেকে অনেক হাল্কা লাগছে। এতক্ষণ দুঃখ কষ্ট ও হতাশার যে পর্বতটা কাধে ভর করেছিল, অহনা তা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে কাধ থেকে নামিয়ে দিয়েছে। আমি হাঁটা বন্ধ করে অহনার দিকে তাকালাম।
__কিছু বলবি?
__আচ্ছা, আমি এখন তোর হাতটা একটু ধরব। তোই কিছু মনে করবি?
__আরে আশ্চর্য! মনে করার কি আছে?
তোরে কে মানা করছেনি??
আমি অহনার হাত ধরলাম তবে একটু অন্যভাবে। অনেকটা ঘটক যেভাবে বগলের
নিচে ছাতা নেই, ঠিক সেই স্টাইলে অহনার হাতটা নিজের বগলের নিচে নিয়ে নিলাম।
অহনা বলল,
__আরে গাধা! এভাবে কেউ হাত ধরে নাকি?
__আরে গাধি! এ হল উদ্দেশ্যহীন ও নিঃস্বার্থভাবে হাত ধরা। সুতরাং ধরার স্টাইলও ভিন্ন।
অহনাও একই স্টাইলে আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
__যা ব্যাটা, আমিও ধরলাম। উদ্দেশ্যহীন এবং নিঃস্বার্থভাবেই ধরলাম।
__কখনো ছেড়ে দিবি নাতো?
__কখনো না।
উদ্দেশ্যহীন সম্পর্কের নামই বন্ধুত্ব।
নিঃস্বার্থ ভালবাসার নামই বন্ধুত্ব। এ বন্ধন
শক্ত বন্ধন। চির অটুট থাকুক এ বন্ধন।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৭
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: অনেকগুলো ধন্যবাদ।
২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: সুন্দর লিখনি ভ্রাতা +++++++
শুভ সন্ধ্যা
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৮
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: ধন্যবাদ।
শুভ রাত্রী।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৪
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: অসম্ভব ভাল লেগেছে --- দারুনভাবে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন ---অনেকগুলো ++++++++