নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

-

আমার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখাগুলো পাবেন এখানে www.BigganProjukti.com

ইমতিয়াজ মাহমুদ সজিব

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করি বিজ্ঞান প্রযুক্তি.com এ। এখানে কি লিখব বুঝতে পারছি না :-(

ইমতিয়াজ মাহমুদ সজিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাচীনকালের রোমাঞ্চকর ও ঝুঁকিপূর্ন পেশা তিমি শিকার

০৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:৫২

এই পোস্টটি অনেক দিন আগে বিজ্ঞান প্রযুক্তি.com এ প্রকাশ করেছিলাম। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। যারা 'মবি ডিক' বইটি পড়েছেন তারা বই এর সাথে পোস্টটির অনেক মিল পাবেন। আশা করি ভাল লাগবে।







খুব বেশি দিন আগের কথা নয় ১৮০০ সালেও মহাসাগরগুলোর বুকে তিমি শিকারি জাহাজগুলো ঘুরে বেড়াত। সভ্যতার পালাবদলে এখন আর আগের সেই পালতোলা কাঠের জাহাজ আর হাত দিয়ে নিক্ষেপ করার হার্পুন দেখা না গেলেও আধুনিক জাহাজে যন্ত্রচালিত হার্পুন দিয়ে এখনও কিছু তিমি শিকার করা হয়। আগে তিমির তেলে তৈরি হত মোমবাতি। তেলের ব্যবসার জন্য শিকার করা হত ঝাঁকে ঝাঁকে তিমি।



পালতোলা জাহাজে হস্তনিক্ষিপ্ত হার্পুন দিয়ে তিমি শিকার অভিযান ছিল রোমান্সকর, উত্তেজনাপূর্ন আর বিপজ্জনকতো বটেই। শিকারে বেরিয়ে এক একটি জাহাজ ৫-৬ মাস এমনকি কয়েক বছরও সাগরে কাটিয়ে দিত। এরপর একদিন ফিরে আসত যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল সেই মূল বন্দর এ।



তিমি শিকার এ বেরুনোর আগের মূহুর্তগুলো খুবই ঝামেলার মধ্য দিয়ে কাটে। সাগরের বুকে দীর্ঘদিন কাটানোর জন্য সব ধরনের জিনিসপত্র সাথে নিতে হয়। জাহাজকেও মেরামত করে দীর্ঘ যাত্রার উপযোগী করে তোলা হয়। এগুলো করতে কেটে যায় অনেক দিন। এরপর সুবিধামত একদিন বন্দর ত্যাগ করে জাহাজ। শুরু হয় তিমির পিছনে ছুটে চলার শ্বাসরুদ্ধকর ক্লান্তিহীন যাত্রা।



জাহাজ বন্দর ত্যাগ করার সাথে সাথে একজন লোক তুলে দেয়া হয় জাহাজের মাস্টহেড এ। মাস্টহেড হল জাহাজের মাস্তুলের সাথে ঝোলানো একরকম ঝুড়ির মত। জাহাজের ডেক থেকে অনেক উপরে মাস্টহেড এ বসে তিমির প্রতি নজর রাখা হয়। মাস্টহেড থেকে সংকেত দেয়া হলে নির্দিস্ট দিকে তিমির পেছনে ছুটতে থাকে জাহাজ।



বন্দর থেকে বেরিয়ে এসে দুই-একদিন সাগরে ঘুরলেই যে কয়েকটা তিমির দেখা পাওয়া যাবে এমনি সাধারনত ঘটে না। অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন ঘুরার পরও কোন তিমি চোখে পড়ে না। মূলত তিমির খাবার থাকে যেখানে সেখানেই সাধারনত তিমির দেখা পাওয়া যায় বেশি। আর তিমি শিকারিরা সেদিকেই তাদের জাহাজ ছোটায়।







এরপর হয়ত দেখা পাওয়া যায় এক ঝাঁক তিমির। মাস্টহেড থেকে চেঁচিয়ে ওঠে ক্রু এবং দিক নির্দেশনা দেয়। কখনোবা জাহাজের কাছাকাছি ভেসে ওঠে তিমি। তখন ডেকে দাঁড়ানো নাবিকরাই প্রথমে তিমি দেখতে পায়। তিমির কাছাকাছি গিয়ে জাহাজের গতি কমানো হয়। এরপর জাহাজ থেকে নামানো হয় ছোট কয়েকটি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় প্রধানত দুইজন ব্যাক্তি থাকে। একজন প্রধান তিমি শিকারি, আর আরেক জন হার্পুনার। এছাড়াও কয়েকজন থাকে নৌকা এগিয়ে নেয়ার জন্য। হার্পুনার হল যে ব্যাক্তি তিমির দিকে হার্পূন ছুঁড়ে মারে আর প্রধান শিকারি হাল ধরে এবং নির্দেশনা দেয়। তীব্র চিৎকার চেঁচামেচি করে হার্পুনাররা ছুটন্ত তিমিটিকে ঘাবড়ে দেয়ার চেস্টা করে। এরপর সুবিধামত সময়ে ছুঁড়ে মারা হয় হার্পুন।





হার্পূন



বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একবারের নিক্ষেপে তিমির মত বিশাল আকৃতির প্রানীকে মারা সম্ভব হয় না। তাই কয়েকটি হার্পুন নিক্ষেপ করা। অনেক সময় হার্পুন বিদ্ধ অবস্থায় তিমি পালিয়ে যায়। আর সঠিকভাবে কয়েকটি হার্পুন নিক্ষেপ করতে পারলে মারাও যায়। এরপর শুরু হয় মৃত তিমিকে বাঁধার কাজ। এটা করতে প্রায় ১০-১৫ জন লোক প্রয়োজন হয়। বাঁধা শেষ হলে তিমিকে টেনে জাহাজের কাছে নিয়ে আসা হয় এবং মাথা আলাদা করে শরীরের অংশটুকু ফেলে দেয়া হয়। কি ভাবছেন ?? মূল দেহ ফেলে দিলে তেল পাওয়া যায় কোথায় ? আসলে তিমির মাথাতেই থাকে তেল।





মানুষ ও তিমির আকৃতির তুলনামূলক চিত্র



তেল এর জন্য সাধারনত স্পার্ম তিমি শিকার করা হয়। কারন এর বিশাল মাথায় থাকে উন্নত মানের তেল। বিশাল আকৃতির তিমির মাথা কাটা সহজ কথা নয়। দেহ থেকে মাথা কেটে আলাদা করার জন্য শুরুতেই ১০-১২ ইঞ্চি পুরু চামড়া কাটতে হয়। এই চামড়াকে বলা হয় ব্লাবার। তিমির মাথা সাধারনত জাহাজের পাশে পানিতে রেখেই কাটা হয়। এই সময় মাথার অর্ধেক ডুবে থাকে পানিতে। তিমির মাথার আকৃতি একটু অদ্ভুত। এর চোয়াল থাকে মাথার নিচের দিকে। আর স্পাউটের ফুটো রয়েছে মাথার উপরে আর চোখ ও কান দুপাশে। তিমির মাথা তাদের শরীরের তুলনায় বিশাল আকৃতির হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক স্পার্ম তিমি অথবা নীল তিমির মাথা বিশ ফুটের বেশি বড় হয়। আর এই বিশাল আকৃতির মাথার ভেতরেই থাকে চমৎকার তেল। হাতলওলা ধারাল কুড়াল নিয়ে তিমির মাথায় নেমে পড়ে কোন একজন হোয়েল ম্যান। এরপর মাথায় একটা গর্ত করে বালতি দিয়ে তোলা হয় তিমির তেল। কাঁচা দুধের মত দেখতে এই পদার্থের নাম স্পার্মাসেটি যেটিকে আমরা তিমির তেল বলে জানি। ছোট ছোট বালতিতে করে স্পার্মাসেটি তুলে ঢালা হয় বড় একটি বালতিতে। এরপর এই বালতি জাহাজের ডেকে তুলে নিয়ে বড় আকৃতির পিপেতে ভরে রাখা হয়।



একটা তিমির তেল সংগ্রহ করার কাজ শেষ হলে শুরু হয় আরেকটির সন্ধান। তিমি শিকার করতে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনারও শিকার হোত অনেক জাহাজ। হোয়েলম্যানদের ছোট নৌকাগুলো তিমির কাছাকাছি গেলে অনেক সময় তিমির লেজের বাড়িতে ভেঙ্গে চৌরির হয়ে যেত।



হোয়েল লাইনের সংগে জড়িয়ে গিয়েও অনেক নাবিক মারা যায়। সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা যেটি ঘটতে পারে যদি তিমি পালিয়ে যাবার বদলে গোটা জাহাজকে আক্রমন করে। আর দল বেঁধে আক্রমন করলে সেই জাহাজের তীরে ফিরে আসার সম্ভাবনা একেবারেই কম।







এইতো গেল আগেকার দিনের তিমি শিকারের কথা। আধুনিক যুগে যন্ত্রনিক্ষিপ্ত হার্পুন দিয়েও তিমি শিকার করা হয়। তবে এখন আর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তিমি শিকার করা হয় না। আগের মত তিমি শিকার চলতে থাকলে এতদিনে হয়ত আরও অনেক প্রানীর মত তিমিও বিলুপ্ত হয়ে যেত এই পৃথিবী থেকে …



পূর্ব প্রকাশিতঃ বিজ্ঞান প্রযুক্তি.com

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:০৩

আমরা তোমাদের ভুলব না বলেছেন: সুন্দর++++

০৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:৩১

ইমতিয়াজ মাহমুদ সজিব বলেছেন: ধন্যবাদ ...

২| ০৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:০৬

মঈনউদ্দিন বলেছেন:

০৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:৩৪

ইমতিয়াজ মাহমুদ সজিব বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:৪৭

আমিনুল ইসলাম বলেছেন: আরে এইডা কেডা।

০৭ ই মে, ২০১০ রাত ১০:০২

ইমতিয়াজ মাহমুদ সজিব বলেছেন: কোনডা ??

৪| ০৭ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:৫৩

শাকালাকা বুম বলেছেন: আমি যতদুর জানি তিমি নিরীহ প্রানি। তাহলে তিমি কেন আক্রমন করবে জাহাজকে দলবেধেঁ?

০৭ ই মে, ২০১০ রাত ১০:০৪

ইমতিয়াজ মাহমুদ সজিব বলেছেন: তিমিরা সাধারনত দল বেধে চলে। দলের একটি বা দুটি তিমি আক্রান্ত হলে অনেক সময় পুরো দল তিমি শিকারি জাহাজকে আক্রম করে। তবে এটা খুবই বিরল ঘটনা।

৫| ০৭ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৪

নষ্ট ছেলে বলেছেন: ভাল লাগল+++

০৭ ই মে, ২০১০ রাত ১০:০৫

ইমতিয়াজ মাহমুদ সজিব বলেছেন: ধন্যবাদ ...

৬| ০৮ ই মে, ২০১০ রাত ১২:২২

মাথা খারাপ বলেছেন: পিলাস

৭| ০৮ ই মে, ২০১০ রাত ১২:২২

মাথা খারাপ বলেছেন: পিলাস

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.