নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই মিথ্যে শহরে আমি থাকবনা তোমাদের মত

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই।

ইমতিয়াজ ইমন

কবিতায় শুরু কবিতা শেষ

ইমতিয়াজ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ লাশ এবং জীবনের কথোপকথন

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৬

লাশটা পরে আছে নদীর তীরে। অর্ধেকটা শরীর পানিতে আর অর্ধেকটা শরীর ডাঙ্গায়। গলার কাছে রক্ত জমাট বেধে আছে। রক্তের কাছে মাইচজি ভনভন করছে। লাশটার চোখ নিস্পলক ভাবে থাকিয়ে আছে পৃথিবীর দিকে।

সারা গ্রামের মানুষ এসে জড়ো হয়েছে নদীর তীরে। এ রকম ঘটনা গত কয়েক বছরে এ গ্রামে হয়নি। দৈনন্দিন জীবনের বাঁধাধরা ছকে আজ ব্যাঘাত ঘটেছে। গ্রামের নতুন বউরা পর্যন্ত একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে লাশ দেখতে এসেছে।



প্রথম কে লাশটা দেখেছে এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। প্রথম দর্শন করার দাবী নিয়ে অনেকেই নিজের মত গল্প বানাচ্ছে। কিভাবে সে লাশটা দেখতে পেল, দেখার পর তার পতিক্রিয়া কি ছিল তার বিশদ বর্ণনা দিচ্ছে। একজন বলছে,

"আমি ভোরবেলা ফজরের নামাজ পরার জন্য বাইর হইছি। অজু করার জন্য নদীর ঘাটে আসলাম। মাত্র পানির মধ্যে হাত দিছি, তখনই দেখি সামনে যেন কি একটা শুয়ে আছে। আমার গায়ে লোম খাড়া হইয়া গেল। আইজ আসল জিনিসের হাতে পরছি বুঝতে পারলাম। আমি সাহস সঞ্ছয় কইরা আগাইলাম। দেখি একটা মানুষ মইরা পরে আছে। আমি এক দৌড়ে ঘরে চইলা আসলাম। বউরে ডাইকা তুলে ঘটনা বললাম।"

উপস্থিত শ্রোতারা মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে। বিস্ময়ে তাদের অনেকের মুখ হা হয়ে গেছে।



সবাই আলোচনায় মত্ত। কিভাবে লাশটা এলো, কিভাবে মারা গেল এ নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত দিচ্ছে।

অনেক মহিলারা আবার লাশ হয়ে যাওয়া মানুষটার জন্য চোখের জল ফেলছেন। মৃত্যুর জন্য জীবনের শোক প্রকাশ চলছে। দুটি বিপরীতধর্মী বিষয় একটা প্রান্তে এসে মিলিত হয়ে গেছে।

কয়েকজন ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছে। সবাই যাতে সুশৃঙ্খলভাবে লাশটা দেখতে পারে তার সেই ব্যাবস্থা করছে। অনেকেই মোবাইল ফোন দিয়ে লাশের ছবি তুলছে।



" কি দিন আসছেরে ভাই, মানুষের জীবন আর কুত্তার জীবন একই রকম।"একজন মন্তব্য করলো।

"এইরকমভাবে মানুষের মৃত্যু হয় , আহারে!" পাশ থেকে আরেকজন বলল।

"আহারে লোকটা মরার সময় আত্মীয়স্বজনেরেও পাইল না।"

"এইগুলান হইল কিয়ামতের আলামত। পাপকর্ম দুনিয়ায় বেড়ে গেছে। এখন মানুষ আর মানুষ নাই।" একজন প্রবীণ বললেন।

এভাবে আলোচনা চলতে থাকে। নানা মত আর নানা কথায় চলতে থাকে জীবনের মুল্য নির্ধারণ।



লাশটা পরে আছে। গলার পাশে জমে থাকা রক্তটা কালচে হয়ে গেছে। ভনভন করা মাছির সংখ্যা বাড়ছে। তার চোখ দুটি নিস্পলকভাবে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। ক্ষুদ্রতা থেকে তার যাত্রা এখন বিশালতার দিকে।

ধীরে ধীরে মানুষ বাড়ছে। বাচ্চারা পাশেই খেলাধুলা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। বয়স্ক মহিলারা পানের বাটা খুলে পান মুখে পুরছেন।

আলোচনা চলছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে আলোচনা। কখনো বা মৃত্যু নিয়ে, কখনো পাশের বাড়ির নতুন বৌকে নিয়ে। পাশের বাড়ির নতুন বউ কোন ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে সেই নিয়ে আলোচনা চলছে।



সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়। জোহরের আজান ভেসে আসে মসজিদ হতে। মহিলারা মাথায় কাপড় টেনে দেয়। বয়স্ক লোকেরা নামজে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ায়। তরুন যুবক যারা নিয়মিত নামজ পড়েনা তারাও আজ নামাজে যায়। আজ সবার মনে যেন পরকালের চিন্তা ঢুকেছে।



ভিড় বাড়ছে। নিরামিষ জীবন যাপনকে নাড়িয়ে দিয়েছে একটি লাশ। একটি মানুষ, একটি জীবন হঠাৎ লাশ হয়ে গেছে। নারী পুরুষের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আজ সে শুধুই লাশ।

তীব্র গন্ধ বের হচ্ছে লাশ থেকে। কয়েকটা কুকুর লাশটার পাশে ঘেঁষার চেষ্টা করছে। ভলান্টিয়াররা কুকুরগুলোকে তাড়াচ্ছে ।

ছোট্ট শিশুরা ক্লান্ত হয়ে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পরেছে।



বিকেল হয়ে আসছে। একটি নৌকা এসে ঘাটে ভিড়ল। পুলিশের একটি দল নৌকা থেকে নামলো। গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ লোকের সাথে তারা কথা বলল। অবশেষে লাশটাকে নৌকায় উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল।

সবাই ঘরে ফিরছে। বিকেলের বাতাস বিষণ্ণতা ছড়িয়ে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার আনন্দ নিয়ে সবাই বাড়ি ফিরছে। বেঁচে থাকার সার্থকতা আজ সবাই নতুনভাবে উপলব্ধি করছে।



রাত ঘনিয়ে আসে। বিছানায় স্বামীর পাশে শুয়ে স্ত্রী দিনের ঘটনা নিয়ে কথা বলে। রাত গভীর হয়। একসময় ক্লান্ত হয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরে।

রাতের অন্ধকার ঢেকে দেয় জীবনকে।

আবার সকাল হয়। সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। গতকালের ঘটনা কারোর মনে থাকেনা। আবার হয়তো কোন এক লাশ পরে থাকবে নদীর তীরে। আবার গৎবাঁধা জীবনের ছন্দ ছেড়ে নতুন একটা বিষয় নিয়ে সবাই আলোচনা করবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.