নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই মিথ্যে শহরে আমি থাকবনা তোমাদের মত

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই।

ইমতিয়াজ ইমন

কবিতায় শুরু কবিতা শেষ

ইমতিয়াজ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ঘৃণার গল্প ও বৃদ্ধ

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৬

রৌদ্রের উত্তাপ বাড়ছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে রিকশাটা। গায়ের সবটুকু শক্তি দিয়ে প্যাডেল চাপছেন বৃদ্ধ রিকশা চালক। পিচঢালা রাজপথ লজ্জায় গুঁটিয়ে যাচ্ছে বৃদ্ধ রিকশাচালকের কষ্ট দেখে।

প্রতিবার যখন প্যাডেলে চাপ দিচ্ছেন, বাঁকানো পিঠ আরও বাঁকা হয়ে যায়। নিজেকে খুবই ক্ষুদ্র মনে হয়।



সত্তর বছরের একজন লোক রিকশা চালাতে পারবে? প্রতিদিন দেখি এই বৃদ্ধ রিকশাচালক তার রিকশা নিয়ে বসে আছেন। কেউই তাঁর রিকশায় উঠে না। মানবিকতাবোধ ব্যাপারটা কিছু হলেও তো মানুষের মাঝে বেঁচে আছে। আমিও উঠতাম না। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে না উঠে পারলাম না।

আমি ঐ বৃদ্ধ লোককে কিছু টাকা সাহায্য দিতে চেয়েছিলাম, উনি বললেন, "বাবা আমাকে টাকা দান না করে, তুমি আমার রিকশায় উঠো, তাহলেই হবে।"

আমি আর না করতে পারিনি। আমি তাঁর আত্মসম্মানবোধের কাছে হেরে গিয়েছি।



আমরা আগাচ্ছি। মাঝে মাঝে টুক টাক কথা হচ্ছে। জীবনের গল্প বলছেন, জীবনে হেরে যাওয়া কিংবা জিতে যাওয়ার গল্প বলছেন।

রাস্তার পাশের দোকান থেকে ভেসে আসছে উদ্দাম হিন্দি গানের শব্দ। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। রিকশার চাকার ঘর্ষণের শব্দ ঢেকে দিচ্ছে হিন্দি গান।

"চাচা, রিকশা কি আপনার নিজের?" আমি জিজ্ঞেস করি।

"জি বাবা, রিকশা আমার নিজের।শুধু কর্পোরেশনের টাকা দিতে হয়" চাচা উত্তর দেন।

"প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশনকে কত দিতে হয়?"

"ত্রিশ টাকা।"

"বাকি যে টাকা থাকে, তাতে আপনার চলে?"

"আল্লাহর রহমতে চলে যায়।"

আমি রিকশায় বসে আকাশ দেখার চেষ্টা করি। দেখি সু উচ্চ ভবন আকাশকে ঢেকে দিয়েছে। আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে মাটির দিকে নিয়ে আসি।



রিকশা চলছে। একটা মিছিল এগিয়ে আসছে। আমরা এক পাশে সরে দাড়াই। পথ আজ তাদের দখলে, পথ আজ নষ্টদের দখলে।

মিছিল চলে যায়, রেখে যায় একরাশ জিন্দাবাদ আর কিছু তৈলাক্ত করতালি। আমি চাচাকে বলি এই জায়গাটুকু দ্রুত পার হওয়ার জন্য। বৃদ্ধ রিকশাচালকের পিঠ বাকা হয়ে আছে। জীবনকে হারিয়ে দিয়ে, সৃষ্টিকর্তাকে হারিয়ে দিয়ে উদ্দাম গতিতে এগিয়ে চলছে রিকশা।

যদিও জীবন এইসব সস্তা মানবিকতাবোধের ধার ধারেনা। মনে করুন তো আপনি আমি কিভাবে বেঁড়ে উঠেছি। এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা বড় হয়েছি। সমাজ বারবার মনে করিয়ে দেয়, এখানে যোগ্যরাই ঠিকে থাকে।



রিকশা এগিয়ে চলছে। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালার জামা ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপটে গেছে। সবকিছুই এভাবে একে অপরের সাথে মিশে যাবে, ন্যায় এর সাথে অন্যায়, জীবনের সাথে মৃত্যু। অন্যন্য রিকশায় যাওয়া মেয়েদের দিকে তাকাই। রিকশাওয়ালা হাপাচ্ছেন। রিকশা এগিয়ে চলেছে। যেভাবেই হোক গন্তব্যে পৌছাতে হবে।



বিভিন্ন ধরনের দোয়া প্রার্থীদের ব্যানারে রাস্তার চারপাশ ঢেকে গেছে। সবার দোয়া প্রয়োজন। সবাই কে এগিয়ে যেতে হবে ।সবার জন্য তাই আমরা দোয়া করব।



রিকশা এসে গন্তব্যে পৌছায়। আমি ভাড়া পরিশোধ করি। রিকশাওয়ালা বৃদ্ধ রিকশার উপর বসে অপেক্ষা করেন নতুন যাত্রীর জন্য। কোন নতুন গন্তব্যের জন্য।



অনেকদিন পর আবার সেই বৃদ্ধ লোকের সাথে দেখা। তিনি বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন। আমি উনার কাছে যাই।

"চাচা কেমন আছেন?"

"ভালো।"

"আপনার রিকশা কোথায়?"

" পুড়িয়ে ফেলেছে।"

"কি?"

"হরতালের দিন এখানে রিকশা নিয়ে বসে ছিলাম। কয়েকজন এসে আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে রিকশাটায় আগুন ধরিয়ে দেয়।"

চাচার চোখে পানি টলমল করছে। আমি অনুভব করলাম আমার চোখও ভিজে যাচ্ছে। আমি পকেটে যা ছিল তা চাচাকে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।

আমি জানি ওরা শুধু রিকশাটা পোড়ায়নি, ওরা পুরো সভ্যতাকেই পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা বেঁচে থাকবো এভাবেই, বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে অনন্তকাল। কিন্তু ঐ বৃদ্ধের ঘৃণা অনন্তকালকে ধ্বংস করে দেবে দ্রুতই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: খুব সুন্দর লিখসেন, গল্পের আদলে নিষ্ঠুর বাস্তবতা।

+++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.