নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই মিথ্যে শহরে আমি থাকবনা তোমাদের মত

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই।

ইমতিয়াজ ইমন

কবিতায় শুরু কবিতা শেষ

ইমতিয়াজ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আহ্নিক গতি

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪০

বর্ষাকাল চলছে। ফসল ভালো হওয়ায় সবার মনেই এখন আনন্দ। সারাদিন অখণ্ড অবসর। গল্প গুজব করে সবাই দিন কাটাচ্ছে। বিকেল হলেই শুরু হয় দাবা খেলার আসর। খেলোয়াড় দুইজন হলেও, সহযোগী হিসেবে আরও পাঁচজন করে থাকে। সবাই সতর্ক থাকার কারনে, খেলা সহজে শেষ হয়না। খেলা চলতেই থাকে।

যুবকেরা তাস খেলতে বসে, এটা অবশ্য হয় বড়দের চোখের আড়ালে। একদিকে চলে গল্প বলার আসর। গল্প বলায় পারদর্শীরা আসর জমিয়ে রাখে গল্প বলে। কেউ আবার গান গায়। হাসন রাজা, আব্দুল করিম, রাধা রমণ, দূরবীন শাহের গান। জীবন এখানে খুব সহজেই আনন্দময় হয়ে উঠে।

মহিলারা ঘরের কাজ করে পানের বাটা নিয়ে বসে। বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠে তাদের আড্ডা। বাবার বাড়িতে নাইওরে আসা মেয়েরা শ্বশুর বাড়ির গল্প শুনায়। কোলের শিশুরা কোলেই ঘুমিয়ে পরে।

আর ছোট বাচ্চারা নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি ব্যাবহার করে নতুন নতুন খেলা উদ্ভাবন করে। নানা খেলায় তারা নিজেদের মত মেতে উঠে।

এইসময়ে শিশুদের খৎনা করানোর জন্য হাজামরা গ্রামে গ্রামে আসে। এটা শিশুদের কাছে একটা আতংকের ব্যাপার। হাজামকে দেখেই শুরু হয় পালানো। তাদেরকে খুঁজে বের করে এনে খৎনা করানো হয়। তারপর কয়েকদিন দেখা যায়, ছোট ছেলেরা লুঙ্গি পরে, একহাতে লুঙ্গি সামনের দিকে ধরে হাঁটছে।

আজ এই গ্রামে অন্যরকম এক আনন্দের দিন। আজ গ্রামে কবি গানের আসর বসবে। সারা গ্রামে সাজ সাজ রব, একটা উৎসব উৎসব ভাব। যত্ন করে রাখা জামাটা আলমারি থেকে বের করে গায়ে দিয়েছে সবাই।

বয়স্করা বসে গল্প গুজব করছেন। তাঁদের ছেলেবেলায় তারা এইসব অনুষ্ঠান কেমন দেখেছেন সেই নিয়ে কথা বলছেন। মাঝে মধ্যে কিভাবে আয়োজন করতে হবে সেই ব্যাপারে যুবকদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

গ্রামের যুবকেরা প্যান্ডেল তৈরি করছে। এইসব কাজে অলস যুবকেরাই বেশী ভূমিকা পালন করে। এইসব কাজে তাদের উৎসাহ অনেক। বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে তারা সিগারেট টানছে। একটি সিগারেট বিভিন্ন জনের হাত ঘুরে নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। ছোট ছেলে মেয়েরা প্যান্ডেল তৈরি করার জায়গায় দাড়িয়ে আছে। যারা কোন কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, তারা গর্বিত ভঙ্গিতে সেই কাজগুলো করছে।

মহিলারা তাড়াতাড়ি ঘরের কাজ শেষ করছেন। গৎবাঁধা জীবনে অন্যরকম এক আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে সবাইকে।

সবাই কবি গানের দলের জন্য অপেক্ষা করছে। বিকেলের দিকে নৌকা এসে ঘাটে ভিড়ল। নৌকায় গান চলছে,

” কোন মেস্তুরি নাও বানাইছে,

কেমন দেখা যায়।

ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে,

ময়ূরপঙ্খী নায়।”

সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে দেখছে। কবি গানের দুটি দল সবার মাঝ দিয়ে হেটে গেল। এখন তারা বিশ্রাম নেবে, সন্ধ্যার পর শুরু হবে অনুষ্ঠান।

হ্যাজাকের আলোয় চারদিক আলোকিত। প্যান্ডেলের নিচে ত্রিপল বিছিয়ে দেয়া হয়েছে, সবাই তার উপর বসেছে। মেয়েদের জন্য পর্দা দিয়ে আলাদা বসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। বাচ্চারা মায়ের কোলে বসে আছে।

একপাশে গরুর মাংস আর পোলাও রান্না করা হচ্ছে। এলাকার বাবুর্চিরাই রান্না করছে।

কবি গানের দুটি দল মুখোমুখি বসেছে। বাদ্যযন্ত্রীরা টুং টাং করে বাদ্যযন্ত্রগুলো ঠিক করে নিচ্ছে। দলের প্রধান দুজন সামনে বসেছেন। একজন চিরুনি দিয়ে চুল ঠিক করছেন।

গান শুরু হয়ে গেল। সবাইকে সালাম জানিয়ে গান শুরু হল। একদল একটা বিষয় নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছে গানের মাধ্যমে , আবার অপর দল সেটা খণ্ডন করছে গানের মাধ্যমে। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি চলছে।

আসর জমে উঠেছে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে অনুষ্ঠান। মাঝে এক দফা চা বিতরণ করা হল। ছোট ছেলে মেয়েরাও চা থেকে বঞ্চিত হলনা।

গানের মধ্যে ধর্মীয় ব্যাপারগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে এখানে। একটা কাজের বৈধতা নিয়ে একদল যুক্তি দিচ্ছে, অপরদল তা খণ্ডন করছে।

রাত গভীর হচ্ছে, আনন্দ গভীর হচ্ছে, জীবনের মত আনন্দ, বেঁচে থাকার মত আনন্দ। আজ জীবনকে আকণ্ঠ পান করছে এই মানুষগুলো।

মধ্যরাতে সবার মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হল। তৃপ্তি সহকারে আনন্দের সাথে সবাই সে খাবার খেলো। খাবারের পর আবার শুরু হয় গান। অনুষ্ঠান তুমুলভাবে জমে যায়। দুই দলই সমান সমান। কেউ কাউকে হারাতে পারছেনা।

রাত ভোর হয়ে যায়। থামতে না চাইলেও থামতে হয়। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে সবাই ঘুমুতে যায় সবাই।

তারপর কয়েকদিন ধরে চলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা। আনন্দময় ঘটনার চর্বিত চর্বণ করে বেঁচে থাকে সবাই।

এভাবেই দিন কাটতে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির সাথে এগিয়ে যায় এই গ্রাম, এই গ্রামের মানুষগুলো, তাদের জীবন যাপন, প্রেম ভালোবাসা।

[নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হয়, কারণ আমি জন্মেছি ও বেড়ে উঠেছি গ্রামে। আমি সহজেই শহুরে নাগরিক হতে পারবো কিন্তু শহুরে নাগরিকরা সহজেই গ্রামের পরিবেশে থাকতে পারবেনা। কিন্তু সব বদলাচ্ছে, গ্রাম গুলোও কেন যানি বদলে যাচ্ছে,।

পৃথিবীর সাথে সব কিছুই এগিয়ে চলছে। সবকিছুর কি গতিশীল হওয়ার প্রয়োজন আছে?]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৩৩

আমিই মিসিরআলি বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার গল্পটা ++++++

মাঝে মাঝে আফসোস হয়, এরকম একটা পরিবেশে যদি জন্মাতাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.