নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই মিথ্যে শহরে আমি থাকবনা তোমাদের মত

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই।

ইমতিয়াজ ইমন

কবিতায় শুরু কবিতা শেষ

ইমতিয়াজ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ রাত দু'টা এবং একটি ফোন

১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০

তুমি তোমার মত করে বলে যাও। আমি হ্যা কিংবা না কিছুই বলবনা। কিন্তু আমি তোমার প্রতিটা কথাই মন দিয়ে শুনবো।



আমার সামনের চেয়ারে মেয়েটি বসে আছে।

মেয়েটির নাম নীরা। বয়স বিশ একুশ হবে। প্রেমঘটিত সমস্যা নিয়ে এসেছে। একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল, কিন্তু হুট করে একদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছেলেটিকে সে ফোনে পাচ্ছেনা, এমন কি তার ঠিকানাও জানেনা। এখন সে এই নিয়ে ভেঙ্গে পরেছে।



মেয়েটা এক নাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছে। বলার সময় তার চোখ দিয়ে অবিরত পানি পড়ছে। মেয়েটা কান্না থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। বুঝতে পারলাম তাকে প্রশ্ন না করলে সবকিছু জানা যাবেনা। আমি প্রশ্ন করা শুরু করলাম।



“তোমার কাছে ঠিক কখন প্রথম ফোনটা আসে?” আমি নীরা কে জিজ্ঞেস করলাম।

“২৭ আগস্ট, ঐ দিন আমার জন্মদিন ছিল।”

“সময়টা মনে আছে?”

“রাত দুইটার দিকে।”

“কতক্ষণ কথা বলেছিলে?”

“প্রায় ১০ মিনিটের মত।”

“তারপর কি হল?”



“তারপর প্রতিদিন রাতে দুইটায় ঐ নাম্বার থেকে ফোন আসতে থাকে। ফোন ধরা না পর্যন্ত, ফোন আসতেই থাকতো। প্রথম কয়েকদিন ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ধীরে ধীরে কথা বলাটা অভ্যাস হয়ে যায়।”

“কি নিয়ে কথা বলতে?”

“আসলে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ে নয়, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হত।”



মেয়েটা নিজেকে সামলাতে পারছেনা। কান্নার দমকে বারবার কেপে উঠছে। সহজ একটা ব্যাপার। মোবাইল ফোনে কথোপকথন। রাত জেগে কথা বলা, তারপর প্রেম। প্রেম খুবই সহজ হয়ে গেছে। এবং এই প্রেমগুলো দ্রুত ভেঙ্গে যায়, পরবর্তীতে এ থেকে জন্ম নেয় হতাশা। এই মেয়েটির বেলায় হয়তো তাই ঘটেছে।



মেয়েটি নিজেকে একটু সামলে নিয়েছে। আমি আবার থাকে প্রশ্ন করি।

“ছেলেটির নাম কি ছিল?”

“অয়ন”

“তার ব্যাপারে তুমি আর কি জানো?”

“ওর বাসা সিলেটে। বলেছে সে সিলেট মেডিকেল কলেজে পড়ে। বাসায় থাকে। বাবা মা এর সাথে। আর সেই তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।”

“তোমাদের কতদিন কথা হয়?”

“আট মাস। ও আসলে তার নিজের ব্যাপারে তেমন কিছু বলতো না। অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে বেশি কথা হত। ও কবিতা পছন্দ করে। তাই প্রায়ই আমাকে কবিতা শুনাত।”

“ফোন আসা বন্ধ হয় কবে থেকে?”

“প্রায় মাস খানেক হবে। তার নাম্বারে অনেকবার ফোন করেছি, কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ দেখায়। তার ফেসবুক আইডি কিংবা বাসার ঠিকানাও জানিনা। ”

“ওদের মেডিকেল কলেজে খোঁজ নাও নাই?”

“হ্যা নিয়েছি, কিন্তু এ নামে কোন ছাত্র নাকি সেখানে নেই।”

“দেখো তুমি যার সাথে কথা বলতে, সে তোমার সাথে অনেকটা প্রতারণা করেছে।”

“কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানেন, ঐ নাম্বারটা থেকে শুধু রাত দুইটায় ফোন আসতো। এবং সারাদিন বন্ধ থাকতো।”



এ কথাটা শুনে আমার কেন জানি খটকা লাগলো। এ রকম হতে পারে, কিন্তু প্রতিদিন রাত দুইটায় ফোন করবে, অন্য সময় করবেনা, ব্যাপারটা রহস্যজনক।

আমি মেয়েটাকে শান্তনা দেই। তার কাছ থেকে আমি মোবাইল নাম্বারটা নেই।

আমি মেয়ের বাবা মাকে বলে দেই তারা যেন পরের সপ্তাহে যোগাযোগ করে।



আমি পরের দিন নাম্বারটা নিয়ে ঐ ফোন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যাই। আমি তাদের নাম্বারটা দিয়ে , অভিযোগটা জানাই।



কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের লোকটি আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে।

“কোন সমস্যা?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“সরি স্যার, এই নাম্বারটা গত এক বছর যাবত বন্ধ আছে। এবং গত এক বছরে এই নাম্বার থেকে কোন ফোন করা হয়নি।”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

আমি নীরাদের বাসায় ফোন করলাম। নীরা ফোন ধরেছে।

“আচ্ছা নীরা তুমি কি শিওর যে ঐ নাম্বার থেকে ফোন আসতো।”

“হ্যা। কেন?”

” না এমনিতেই, নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলাম।”

“ও”



আমি ফোন রেখে আবার কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের লোকটির কাছে গেলাম।

“এক্সকিউজ মি, আমি কি এই নাম্বারের গ্রাহকের তথ্য জানতে পারি?”

“আসলে এটা জানানোর নিয়ম নেই এবং এটা সম্ভব নয়।”

আমি চলে আসলাম। কি করা যায় চিন্তা করছি। আমার পরিচিত একজন লোকের কথা মনে পড়লো যে ঐ মোবাইল কোম্পানিতে চাকুরী করে।

আমি থাকে ফোন দিলাম এবং নাম্বারটা দিয়ে ঐ নাম্বারটা যে ব্যাবহার করতো তার ঠিকানাটা জানাতে বললাম।



সে প্রায় পনের মিনিট পর আমাকে তথ্যগুলো দেয়। আমি ছেলেটির ঠিকানাও জানতে পারি।

ছেলেটির বাসা সিলেতে।

আমি ঐ দিন রাতের বাসেই সিলেটের উদ্দ্যেশে রওনা দেই। সিলেট পৌঁছে, অনেক খোঁজে ছেলেটির বাসা খুজে বের করি।

আমি কলিংবেল চাপলাম। প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সী একজন লোক দরজা খুলে দিলেন।

“এটা কি অয়নদের বাসা।”

“হ্যা।’

“আমি একটু অয়নের সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। একটু কাজ ছিল।”

উনি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে থাকিয়ে আছেন। উনার চোখের কোনে জল জমে উথেছে।

“ভেতরে আসুন।”

আমি ভেতরে গিয়ে বসলাম। অনেক সাজানো গুছানো।



‘দেয়ালে যে ছবিটা দেখছেন, সেটাই অয়নের ছবি। প্রায় এক বছর আগে সে সুইসাইড করে। কেন করলো তা এখনও জানতে পারিনি।”

আমি ভদ্রলোকের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।



আমি বুঝতে পারছিনা আসলে কি হয়েছে। অনেক কিছুই রহস্যময় থেকে যায়।

এখনো হয়তো নীরা কাঁদছে। এক অদ্ভুত ভালোবাসার জন্য। আমি আমার চেনা জায়গায় ফিরে আসি।



পরের সপ্তাহে নীরা আবার আসে। আমি থাকে অনেক কিছু বুঝাই। প্রায় ছয় মাসের চেষ্টায় নীরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়। কিন্তু সেই ফোনের রহস্য বের করা যায়নি। জগতে অনেক কিছুই আছে যার রহস্য আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:০৫

মাক্স বলেছেন: ভৌতিক ফোন!

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২৮

ইন্সিত বলেছেন: ভৌতিক। কিন্তু লজিকটা কি ???

১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৫২

ইমতিয়াজ ইমন বলেছেন: কোন লজিক খুজে না পেয়ে ভৌতিক গল্প বানিয়ে দিয়েছি।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৫৮

রাফসান আরিফ বলেছেন: মিসির আলি মিসির আলি টাইপ এর মনে হলো

১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৫৩

ইমতিয়াজ ইমন বলেছেন: লজিকহীন মিসির আলি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.