নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই মিথ্যে শহরে আমি থাকবনা তোমাদের মত

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই।

ইমতিয়াজ ইমন

কবিতায় শুরু কবিতা শেষ

ইমতিয়াজ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সিক্সথ সেন্স

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:০৫

( এই গল্পের প্রতিটি চরিত্রই বাস্তবের সাথে মিলসম্পন্ন, কেউ যদি মিল খুঁজে না পান তাহলে সেটার জন্য লেখক দায়ী নয়)



গত সোমবার থেকে সমস্যাটা শুরু। যোগাযোগ মন্ত্রী আজরফ সাহেব হাঁটছেন আর চিন্তা করছেন। রুমের বাইরে তার পিএ কে বসিয়ে রেখেছেন। তার রুমে ঢোকা নিষেধ। তিনি রুমের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে দ্রুতবেগে হাঁটছেন।



প্রথমে তিনি তার পিএ রহমতুল্লাহর গায়েই গন্ধটা পান। তীব্র গন্ধ, মানুষের পায়খানার গন্ধে তার রুমটা দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে গিয়েছিলো। রহমতউল্লাহ এসেছিলো একটা সুপারিশ নিয়ে, তার পরিচিত একজনকে একটা কাজ পাইয়ে দিতে হবে। আজরফ সাহেব সবকিছু শুনলেন। তিনি জানেন যে এই কাজটা দিয়ে তিনি ভুল করছেন। হয়তো দেখা যাবে কাজটা হচ্ছেই না, কিন্তু বিল তুলে নিয়ে গেছে। ঠিক এই মুহূর্তে তিনি গন্ধটা পান। তিনি তার পিএ কে জিজ্ঞেস করেন যে সে



কোন কিছুর গন্ধ পাচ্ছে কিনা।

"না স্যার, কিসের গন্ধ স্যার।"

"একটা দুর্গন্ধ, মানুষের পায়খানার গন্ধ।"

"কি বলেন স্যার, এই রুমে এই ধরণের গন্ধ হতেই পারেনা।"

"হওয়ার হিসেব পরে, একটু বাইরে গিয়ে দেখে আসো কিচ্ছু আছে কিনা।"

"জী স্যার।"

রহমতউল্লাহ বাইরে যেতেই গন্ধটা মিলিয়ে গেলো। আশ্চর্য, মন্ত্রী সাহেব আশ্চর্যে মুখ কুচকালেন।

"কিছু নেই স্যার।"

মন্ত্রী সাহেব আবার গন্ধটা টের পেলেন। তাহলে কি এটা রহমতউল্লাহর গা থেকেই আসছে। তিনি তাকে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন। সাথে সাথে গন্ধটা দূর হয়ে গেলো।



আজরফ সাহেব ব্যাপারটা নিয়ে আর চিন্তা করলেন না। কিন্তু বিকেলে তার অর্থমন্ত্রীর সাথে একটা মিটিং ছিল। তিনি মিটিং এ গেলেন। রুমের ভেতর পা দিতেই সেই গন্ধটা এসে আবার নাকে লাগলো। আরও বিশ্রী আরও তীব্র। তিনি নাক চেপে ধরলেন।

তিনি অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন যে উনি কোন দুর্গন্ধ পাচ্ছেন কিনা।

"না তো। কেন?"

" না এমনিই।"

অনেক কষ্টে তিনি কথা শেষ করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে এই দুর্গন্ধটা অর্থমন্ত্রীর শরীর থেকেই আসছে। এই দুর্নীতিবাজ অর্থমন্ত্রীকে তিনি বরাবরই ঘৃণা করে আসছেন। কিন্তু কিছুই করার নেই এদের সাথেই থাকে চলতে হয়, এইসব দুর্নীতিবাজ লোকদের কথায় সায় দিতে হয়।



আজরফ সাহেবের বমি ভাব হচ্ছে। মনে হচ্ছে একটি খোলা ল্যাট্রিনে তিনি ডুবে আছন। তিনি দ্রুত বাসায় চলে আসলেন। মন্ত্রী হয়েও তিনি তেমন একটা উন্নতি করতে পারেন নি। দলে তার মতামতের তেমন একটা মূল্য নেই কিংবা বলা যায় তিনি মতামত দিতে ঘৃণা করেন।

সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি দলের নেত্রীর স্তুতি না করায় দলের সিনিয়র নেতাদের মৃদু হুমকি শুনতে হয়েছে। তাঁকে অনেক কিছুই করতে হয় যেগুলো তিনি পছন্দ করেন না।

বাসায় এসেই তিনি একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি দিতে বললেন। পানি খেয়ে তিনি স্থির হয়ে বসলেন। তিনি সমস্যাটা নিয়ে ভাবতে লাগলেন।



আগামীকাল দলীয় সভা। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন সেখানে কি হবে। তারপরও তিনি সভায় গেলেন। একা একা বসে আছেন। এখনও কেউ আসেনি। কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী এসে প্রবেশ করলেন। তার দামই আলাদা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভেতরে গিয়ে একটু পান করে আসলেন। তার চোখ চকচক করছে।



আজরফ সাহেব তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু লাভ হলনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিক তার পাশেই এসে বসলেন। আজরফ সাহেব আবার সেই পায়খানার গন্ধ পেলেন। তিনি কিছু না বলেই উঠে বাইরে চলে আসলেন।

প্রায় ঘণ্টা খানেক পর সভা শুরু হল। আজরফ সাহেব এক কোনায় একটা চেয়ার টেনে বসলেন। তীব্র দুর্গন্ধে তাঁর মাথা ঝা ঝা করতে লাগলো। এ থেকে তার মুক্তি নেই। তিনি গন্ধটা তার মাথায় ঢুকে যাচ্ছে।



তিনি দৌড়ে বাইরে আসলেন। বাইরে এসেই হড়হড় করে বমি করলেন। কয়েকজন সভা থেকে উঠে আসলেন কি হয়েছে দেখার জন্য।

"আমাকে এখান থেকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চল।" তিনি তার গাড়ী চালককে বললেন।



আজরফ সাহেব জ্ঞান হারালেন। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখেন তার সামনে তার স্ত্রী বসে আছেন। আজরফ সাহেব তাঁর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।

বিকেলের দিকে অনেকেই তাকে দেখতে আসলো। তিনি জানিয়ে দিলেন তিনি কারো সাথে দেখা করবেন না।

আজরফ সাহেব মনস্থির করে নিলেন তিনি আর মন্ত্রিত্ব করবেন না। কিছু দুর্নীতিবাজ আর চাটুকারদের ভিড়ে তিনি আর হারাবেন না।



মানুষ হওয়ার তীব্র ইচ্ছে নিয়ে বড় হয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ হয়তো হতে পারেন নি তিনি। সমাজ এখানে বিশাল বাধা। এখানে বিরুদ্ধ স্রোতে গিয়ে কেউ ঠিকে থাকতে পারেনা। চাটুকারে ভরে গেছে আজ সারা দেশ। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন তিনি পদত্যাগ করবেন।

আজরফ সাহেব শুধু মন্ত্রিত্বই বাদ দিলেন না, তিনি দল থেকেও পদত্যাগ করলেন। তিনি এখন আর গন্ধ পান না।



আজরফ সাহেবের ছেড়ে দেয়া আসন থেকে তাঁর ছেলে নির্বাচিত হয়েছে। সে মন্ত্রিত্তও পেল। মন্ত্রিত্ব পেয়ে আজরফ সাহেবের ছেলে আজরফ সাহেবের কাছে আসলো। আজরফ সাহেব আবার সেই দুর্গন্ধটা টের পাচ্ছেন। এখন আসছে তাঁর ছেলের শরীর থেকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.