![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতায় শুরু কবিতা শেষ
সেদিন কেউ ছিলোনা। একটু বৃষ্টি ছিল আর একটু প্রেম আর একটু রক্ত কিংবা অভিমান ছিল। মেয়েটি একা বের হতে এমনিতেই ভয় পেত। কলেজে যাওয়া আসা এই সময়টাই সে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতো। আর সে এই রাস্তায় হাটবেনা। তার পথ চলায় আর কোন ভয় রইলো না। তার রক্তাক্ত দেহ পরে আছে রাস্তার পাশে। চারদিকে লোকজন ঘিরে আছে। লাশ তাও আবার একটি মেয়ের, ভিড় স্বাভাবিক ভাবেই হবে।
প্রথমে কেউ আঘাতে চায়নি, সবারই ভয় ছিল। তারপর একজন দুইজন করে জমতে থাকে। সবার মাঝেই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। মেয়েটির জামা রক্তে লাল হয়ে গেছে। জন্মগত ভাবেই একটা ভুলের দায়ভার তার ছিল, সে একটা মেয়ে। তার বাবা মেয়ে দেখেই নাক কুঁচকেছিলেন। বিরক্তি নিয়ে মেয়ের মুখ দেখেছিলো তার বাবা। না, মেয়েটি তার ভুল শুধরে নিয়েছিল। প্রতিটা পরীক্ষায় সে ভালো ফলাফল করার কারনে, তার বাবার গর্বের বিষয় ছিল সে।
আচ্ছা লাশের কি কোন লিঙ্গ বৈষম্য আছে। হয়তোবা সেখানেও সে অবহেলিত হবে। কেউ রক্তে ভিজিয়ে দেবে তার শরীর। ঠিক যেন পৃথিবীর মত, সেখানেও হয়তো রক্তের উৎসব হবে। কেউ চিৎকার করে বলবে "তুমি নারী, তুমি নগণ্য।"
মেয়েটির মায়ের আহাজারি চলছে। আর তার বাবা শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। চোখের জল কষ্টকে ধারণ করতে পারছেনা, তাই অশ্রু নামেনা, অশ্রু জমে বরফ হয়ে গেছে। বুক চাপড়ে মা কান্নাকাটি করছে। লোক জমছে, ভিড় বাড়ছে। নিরুত্তাপ জীবনে উত্তাপময় দিনের শুরু। আজ হয়তো কোন স্বামী স্ত্রীর কাছে শুয়ে বর্ণনা করবে, কিভাবে মেয়েটাকে হত্যা করা হয়।
হত্যা চলছেই, মানসিকতাকে ছোটবেলাই হত্যা করা হয়। তারপরও কান্ত দেয়না, আমাদের অন্ধ মানবেরা। বন্ধ করে দাও নারীশিক্ষা। বন্ধ করার জন্য কয়েকজন মেয়েকে মেরে ফেলো। আর সেটার জন্য গরীব ঘরের মেয়েরাই ভালো শিকার।
এই মেয়েটির নাম নীরা। ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারতো। সে যখন আবৃত্তি করতো, তখন মনে হত কবিতাটা নীরা আবৃত্তি করবে বলেই লেখা। সুনীলের কবিতা তার বেশী প্রিয় ছিল। সে প্রায়ই আবৃত্তি করতো এই কবিতাটি,
"কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল,
কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি ।
মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে !
নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো ?
আমার মাথা এই ঘরের ছাদফুঁরে আকাশ স্পর্শ করলে
তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে ?"
তার প্রিয় রঙ ছিল নীল। নীলের স্নিগ্ধতা তাকে মুগ্ধ করতো। সব খাবারই সে আগ্রহ নিয়ে খেতো। বই পড়তে ভালোবাসতো সে। কিন্তু এগুলো এখন অতীত কাল হয়ে গেছে। কোন হুজুরের ফতোয়া তার বর্তমানকে অতীত করে ফেলেছে। এভাবেই চলবে। একদিন সব মেয়েরা অন্ধকারে চলে যাবে। আমরা এককভাবে দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়াবো।
আজ কবিতার মন খারাপ, আজ নীল রঙের মন খারাপ। আজ এই বাংলার মন খারাপ। এখানে নীরা নেই। তাই আমরা চুপ করে আছি, শুধুই কিছু পাবার আশায়।
পুলিশ লাশ নিতে এসেছে। মর্গে কাটাছেড়া হবে। ক্ষত বিক্ষত করে দেবে একটি দেহ। রাস্তায় পুলিশ চাটাই সরিয়ে একবার লাশ দেখে নেয়। এখানেও লাশ মেয়ে বলে রেহাই পায়না কুদৃষ্টি হতে। লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছে নীরা কিংবা তার লাশ। আর আমরা সভ্য জগত নিয়ে আস্ফালন করছি এদিকে। আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি, আজ সব অরণ্য হয়ে যাচ্ছে। শ্বাপদে ভরে যাচ্ছে এই অরণ্য।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫
ফারজানা শিরিন বলেছেন: কোন হুজুরের ফতোয়া তার বর্তমানকে অতীত করে ফেলেছে। এভাবেই চলবে। একদিন সব মেয়েরা অন্ধকারে চলে যাবে। আমরা এককভাবে দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়াবো।>>>>>>>>>>>>> ???
হুজুর বললেন ? মনে তো ধর্ষক আর বখাটেরা মেয়েদের বর শত্রু ।