নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু মুঠোভরা অন্ধকার

সে এক পাথর আছে কেবলই লাবণ্য ধরে ...

শামীম শরীফ সুষম

just another brick in the wall

শামীম শরীফ সুষম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের আমি অথবা আমার ঈদ

১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:৩৬









ঈদ মানে আনন্দ ।



আমি এ পর্যন্ত যতোজন মানুষের সাথে ঈদ বিষয়ে কথা বলেছি , প্রায় সবাই ঈদ নিয়ে ভীষণ ডিপ্রেসড । “সেই দিনকি আছে” , “আগে কত কি করতাম” , “আগে গরুর মাংস ৪০ টাকা কেজি ছিলো” ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু , ঈদের কথা বললেই সবার চোখ চকচক করে ওঠে , বাসে – ট্রেনে – লঞ্চে বাদুরঝোলা হয়ে মানুষেরা যখন ঈদে বাসায় ফেরে তখন তাদের জোখমুখ আনন্দে ঝলমল করে ।বাসায় যাইতেছি , এই আনন্দ রাখার যায়গা নাই । বাসায় ফেরামাত্র ফেসবুকে স্ট্যাটাস “ হোম, সুইট হোম “



আমি জানিনা এই কথাটা কার মাথা দিয়া আসছিলো , কিন্তু কথাটা চিরন্তন সত্য । হোম , বাড়ি , ঘর , দেশ – তাকে যেজন যেনামেই ডাকুক না কেন , তার স্থান হৃদয়ের অতি সন্নিকটে । আর বাসায় আসার জন্য , পুরনো মাঠে বসে হারানো বন্ধুদের সাথে তাসের আড্ডার জন্য , অথবা বাবার পাশে বসে থাকা , অথবা মায়ের হাতের রান্নার জন্য , ঈদের চেয়ে ভালো কোন অজুহাত নেই ।



ঈদ বললেই মনে পড়ে যায় নিজের ঈদের কথা ।



ঈদ অবশ্যই আমার কাছে ভীষণ বিশেষ কিছু ।রোযার শেষের দিকে কোন কিছুই যখন আর ভালো লাগে না , দিনগুলো ভীষণ বিরক্তিকর লাগে । তখন , আকাশের বুক খুজেঁ পাওয়া একফালি চাঁদ এমনকি নিল আর্মস্ট্রং আর চেয়ে বেশি আনন্দ দিতে পারে । আমারও ঈদ শুরু হত এই চাঁদ দেখা ও পটকা ফোটানোর মাঝ দিয়েই । আহা , স্ল্যাশের গিটারের চেয়েও শতগুণ মধুর ছিলো সেই পটকার বিকট শব্দ ।



পটকার কথায় মনে পড়ল । একবার “বুড়িমা” নামক পটকার বিপুল খ্যাতি শোনা গেল । শোনা গেল , এটা নাকি এ্যাটম বোমার মত শব্দ করতে সক্ষম । আমরা তখনও জানতাম না , আসলে এ্যাটম বোমা কিরকম শব্দ করে ঠিক , তবে পটকা ফোটাবার পর যারপরনাই হতাশ হয়েছিলাম ।



এক ঈদে লাইটওয়ালা জাম্প কেডসের উদ্ভাবন হলো । আমার শিশুমনে তা বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করলো তা বলাই বাহুল্য ।দি নিউ এ্যাডভেঞ্চার অব সিনবাদ আর পাঁচ মিনিট পর পর ধুক ধুক বুকে জাম্প কেডসের বিজ্ঞাপন । আমি দিনে রাতে , শয়নের স্বপনে শুধু জাম্প কেডস দেখতে থাকলাম , যেদিকে তাকাই শুধু জুতার নিচে লাল বাতি ।



আবদার শুনে বাবা আকাশ থেকে পড়লেন । বাবা ভীষণ অসংসারী লোক । সংসার ব্যতীত জগতের আর সকল বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান । কিন্তু তার মাথায় আমি কিছুতেই এই কেডস কেনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে পারলাম না । সারাদিন বোঝাবার পরে তার একটাই প্রশ্ন ,“ তুমি জুতোর আলো দিয়ে কি করবে ? “

সুতরাং , শেষ ব্রক্ষাস্ক্র প্রয়োগ করতে বাধ্য হলাম …. “ ভ্যা……………” এবং দিবস সমাপ্ত হবার পূর্বে আলোকিত পদযুগল ।



ঈদের সকালে বাবা আর আমরা তিন ভাই , একটা বড় পাটি নিয়ে রওনা দিতাম ঈদগাহের দিকে । ঈদের সকালে সবচেয়ে কষ্টদায়ক কাজ ছিলো সকালে হিমশীতল পানিতে গোসল করা … কিন্তু নতুন পান্জাবী আর আতর দিয়ে যখন বাবার হাত ধরে ঈদগাহের দিকে এগিয়ে যেতাম , দারুণ লাগতো ।



তারপরে ঈদগাহে চলত “ঈদগাহ উন্নয়ন কমিটির” চাঁদাবাজি আর দুই মিনিট নামাযের পর দুই ঘন্টার আকুল মোনাজাত । মোনাজাতের মাঝে একটা জিনিসই চাইতাম , এই মোনাজাত তাড়াতাড়ি শেষ হোক ।



আমার মনে আছে , আমরা অনেক বড় ফ্যামিলি ছিলাম । মধ্যবিত্তের সংসারে বাবার সাধ্য ছিলো না আমাদের সব ভাইবোনের আবদার পূরণ করবেন তিনি । মা সেলাই খুব সুন্দর করতেন । প্রতি ঈদের আহে দেখতাম মা বাটারফ্লাই সেলাই মেশিনে ঝুঁকে জামা বানাচ্ছেন , আমার ঈদের জামা । পোশাক হিসেবে তা হয়তো কখনোই খুব যুতসই কিছু ছিলোনা , কিন্তু ঈদ , নতুন জামা – সে আমার কাছে এক বিশাল ব্যাপার ।

আর মনে আছে জর্দা রান্নার কথা । মায়ের হাতের জর্দা , তার স্বাদই অন্যরকম । ঈদের আগের দিন রাত্রে মা কিসমিস আর বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন , আর একটু পর পর রান্নাঘরে ঘুরে আমি চুরি করে খেয়ে ফেলবো , এর মজাই অন্যরকম । আমি কখনো বুঝিনি , আমার চুরি করাটা হিসেব করে মা পানিতে ভেজাতেন ।



ঈদে সবথেকে লজ্জাজনক কাজ ছিলো সালামী আদায় করা । আমি কেন যেন কিছুতেই পারতাম না । একবার কার যেন পাল্লায় পড়ে একটা সালামী-সংঘে ডুকে গিয়েছিলাম , দেখি এতো চমৎকার ব্যাপার । কোনমতে একটু ঝুকে পা ছুয়েঁ দিলেই চকচকে দশটাকার লাল নোট …. কি মজা । মোটামুটি যাকে কখনোই দেখিনাই , চিনিনা , তাকেও সেবার দুবার করে সালাম করেছিলাম সেইবার ।



ঈদে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে হবে …প্রশ্ন হলো কোথায় ঘোরা যায় ? অতি জটিল প্রশ্ন , কোন সন্দেহ নেই । এমনকি ছেলেবেলাতেও আমরা ঘোরার জন্য খুব বেশি জায়গার কথা মনে করতে পারিনি । বন্ধুদের বাসা , ভিডিও গেমসের দোকান , কোকাকোলার লাল বোতল আর খুব বড়জোড় অন্ধকার গলিতে ঢুকে সিগারেটে বেমক্কা টান দিয়ে দমকা কাশি – এটুকুই ।



তবে গ্রামে দেখেছি মার্বেল খেলা হত । শুধু নির্দোষ মার্বেল নয় , টাকা দিয়ে মার্বেল খেলা । সালামীর বদৌলতে সবার পকেট সরগরম , সো মানি ইজ নো প্রবলেম , প্রবলেম ইজ ইগো । কোপা সামসু ।



একটু যখন বড় হলাম তখন দেখি রাস্তায় ব্যাঙের ছাতার মত শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে কোকের দোকান । ধুমসে হিন্দি গান বাজছে , এরই মাঝে দুই তিন কেস কোকাকোলা আর গোটাদশের প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে সদ্য গোঁফ গজানো যুবসমাজ । হাড় জিরজিরে দেহ , চকচকে পান্জাবী , সিগারেট আর কায়দা করে রিকশাবহুল তরুনীদের কটাক্ষ করে শিষ , মামলা ডিসমিস ।



মা মারা গিয়েছিলেন রমযান মাসে , ২০০১ সালে । ১১ রমযান । সেই ঈদ , আমি , আমরা কেউ কখনোই ভুলতে পারবো না …. কোন নতুন রান্না নেই , কোন কোলাহল নেই , পুরো বাসাটাকে কেউ যেন নৈশব্দ্যের একটা চাদরে মুড়ে দিয়েছিলো । আমরা সবাই নামায পড়লাম , মা’র কবর যিয়ারত করলাম । আমাদের ঈদ শেষ ।



সেই থেকে ঈদ আর আমার কাছে বিপুল আনন্দের কিছু নয় । আমার ঈদ শেষ হয়ে গিয়েছে , এখন যা আছে তা শুধুই প্রিয়জনদের পাশে পাবার আনন্দ । সে সৌভাগ্যও সবসময় জোটে না ।



তবুও ঈদ মানে অবশ্যই আমাদের কাছে বিশেষ কিছু । আমরা চুজার্স না , আমরা থার্ড ওয়ার্ল্ডের খেটে খাওয়া বেগার্সের দল , আমাদের স্বপ্ন টেলিভিশনের স্ক্রীণে শুরু হয় , কখনো পূরণ হয় না , আমাদের পয়সার জন্য নিজেদের ঘর ছেড়ে দূর কোন বস্তিনগরীতে মুখগুজেঁ থাকতে হয় , আমাদের বসের অপমান , প্রেয়সীর অভিমান সহ্য করতে হয় ….. ক্লান্ত , বিষন্ন এক একটা দিনের শেষে আমরা ছেলেবেলাকে স্বপ্নসুখ ভাবি । আর তাই ঈদে বাড়ি ফেরা আমাদের কাছে স্বপ্নের কাছাকাছি চলে যাওয়া , নিজের মাঠ , নিজের ঘর , নিজের বিছানা বালিশ , প্রিয়জন পাশে পাওয়া ।



তবুও যতদিন চলে যাচ্ছে , প্রতিটি ঈদ হয়ে পড়ছে আরও একটু অপ্রয়োজনীয় , আর একটু সাদাকালো ।পথের পাশে আমার ছেলেবেলা মুখ থুবড়ে পড়ে , ঈদের কোন জামা নেই তার কাছে । পর পর চারটি ঈদ করছি অনেক দূরে , জীবিকার প্রয়োজনে …. আমার এক ভাই আছেন , মিশু ভাই , নিজেও ভুলে গেছেন শেষ কবে ঈদ করেছিলেন পরিবারের সবার সাথে । ঈদে নতুন জামা কেনার দিন আর নেই , এখন কিনে দেবার বেলা । ছেলেবেলা আর নেই , আমরা সবাই খুব বেশি বড় , খুব বেশি একা হয়ে গেছি ।







সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা , ঈদ মোবারক ।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:৪০

মেঘের পালক বলেছেন: আসলেই আগে কত কি করতাম

২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ২:৪৪

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া!!!

ঈদের শুভেচ্ছা!:)

৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:০২

মুদ্রা সংগ্রাহক বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা যা কিছুক্ষনের জন্য হলেও নস্টালজিক করে তোলে....আপনার জন্য রইল ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা....আপনার মাকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুক এই প্রার্থনা করছি....

৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:১২

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: যখন নেয়ার বয়স থাকে, তখন ঈদ খুব মজার লাগে। আর যখন দেয়ার বয়স হয়, তখন ঈদ মজা লাগে না। বুড়ো মানুষের আসলে ঈদ ভালো লাগার কথাও না।

৫| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:৩৪

অরিত্রো বলেছেন: দোস্ত, অন্তত একটা ঈদ আমার সাথে আমার বাসায় করবি। সেই ঈদে আমার মা তোর আর আমার দুজনের।


৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৪৫

মৃত্তিকা মন বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল সুষম!
দেশের বাইরে ঈদ করলে বোঝা যায় দেশে পরিবারের সবার সাথে, বন্ধু, আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে করা কতটা আনন্দের।
ঈদের সময়টা ভালো কাটুক।

৭| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৫:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ইদ মোবারক সুষম। অনেক শুভকামনা রইলো।

৮| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৩৩

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: অনেক ভাল লাগল সুষম।

দিনগুলো এখন আরো ভাল কাটুক

:) :)

ঈদের শুভেচ্ছা

৯| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৩৭

সকাল রয় বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইলো

১০| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৪০

মুসকান মাহ্‌বুবা বলেছেন: আল্লাহ যেন তোমার মাকে বেহশ্ত নসীব করেন ।আআমিন।
তুমি যেখানাই থাকো না কাণোও আল্লাহ তোমাকে ভালো সুস্থ এবং নিরাপদ রাখবেন ঈণশাআল্লাহ।

১১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:০৫

সায়েম মুন বলেছেন: ভাল লাগলো লেখাটা। ঈদের শুভেচ্ছা সুষম।

১২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:০৮

অক্টোপাস পল বলেছেন: মিলে গেল অনেকটাই। আসলে সব মধ্যবিত্তের গল্পই বোধহয় একই।

ঈদের শুভেচ্ছা।

১৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৪২

রোজেল০০৭ বলেছেন: আমরা চুজার্স না , আমরা থার্ড ওয়ার্ল্ডের খেটে খাওয়া বেগার্সের দল , আমাদের স্বপ্ন টেলিভিশনের স্ক্রীণে শুরু হয় , কখনো পূরণ হয় না , আমাদের পয়সার জন্য নিজেদের ঘর ছেড়ে দূর কোন বস্তিনগরীতে মুখগুজেঁ থাকতে হয় ,আমাদের বসের অপমান , প্রেয়সীর অভিমান সহ্য করতে হয় ….


লেখাটা যদিও অনেক পরে পড়লাম,কিন্তু পড়তে পড়তে কোথায় যেন হারিয়ে গেলা্ম। মনটা কেমন জানি হাহাকার করে উঠল।

ভালো থাকিস দোস্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.