নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় সবসময়ই কিন্তু তাকে কাজে লাগানোর সক্ষ্যমতাই আপনাকে বদলে দিবে।

এ.এস বাশার

অবসর পেলেই লিখতে ,পড়তে, ভাবতে ও শব্দ নিয়ে খেলা করতে ভালো লাগে।

এ.এস বাশার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রত্নতত্ত্বের বিস্ময়- বাঘা মসজিদ ও ফিরে দেখা পঞ্চাশ টাকা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:০৫





বাঘা মসজিদ রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা সদর উপজেলায় অবস্থিত। এটি বেশ ভালভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। ইটের দেওয়াল ঘেরা ৪৮.৭৭ মিটার বর্গাকার চত্বরের মধ্যে বেশ বড় আকারের একটি পুকুরের পশ্চিম পাড়ে মসজিদটি নির্মিত। সমভুমি থেকে থেকে ৮-১০ ফুট উঁচু করে মসজিদের আঙিনা তৈরি করা হয়েছে। উত্তর পাশের ফটকের ওপরের স্তম্ভ ও কারুকাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মসজিদটিতে ১০টি গম্বুজ রয়েছে ।



মসজিদ চত্বরে প্রবেশের জন্য দুটি পুরানো খিলানকৃত প্রবেশপথ ছিল। এর একটি ছিল উত্তরদিকে এবং অন্যটি দক্ষিণ দিকে। দক্ষিণ দিকের প্রধান প্রবেশপথটি ছিল সাধারণ আয়তাকারের বক্রাকৃতির একটি কাঠামো। এর উভয় পার্শ্বে ছিল একটি করে মিনার।



ইটের তৈরি মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে একটি সংরক্ষিত ইমারত। এর কাঠামো আয়তাকার, যার বাইরের দিকের পরিমাপ প্রায় ২৩.১৬ মি. এবং ১২.৮০ মি.। মসজিদের বাইরের চারকোণার অষ্টাভুজাকৃতির বুরুজগুলি খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। এগুলি আলঙ্কারিক বন্ধনী দ্বারা বিভিন্ন অংশে বিভক্ত ছিল এবং এগুলির উপরে ছিল বহুভুজ নিরেট ছোট গম্বুজ। মসজিদের কার্নিস নমনীয়ভাবে বাংলারীতিতে বক্রাকারে তৈরি করা হয়েছিল। পূর্ব দিকে পাঁচটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে দুটি করে খিলানপথ আছে।



১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে আদি ছাদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বর্তমানের গম্বুজটি পুনঃনির্মাণ করে। পাথরের স্তম্ভ এবং দেওয়াল সংলগ্ন পাথরের পোস্তাগুলি থেকে উত্থিত আড়াআড়িভাবে ছেদকৃত খিলানগুলি গম্বুজের ভার বহন করছিল। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, প্রবেশপথের খিলানের উৎপত্তিস্থলে স্থাপিত সরদল আকারে পাথরখন্ডগুলি মসজিদের চতুর্দিকে বসানো আছে। এর ফলে বাইরে থেকে মসজিদকে দ্বিতল বলে মনে হয়।



মসজিদের অভ্যন্তরভাগকে চারটি প্রস্তরস্তম্ভের একটি সারি দ্বারা দুটি লম্বালম্বি আইল ও পাঁচটি ‘বে’-তে বিভক্ত করা হয়েছে। এর ফলে মসজিদের অভ্যন্তরভাগ দশটি স্বতন্ত্র অংশে বিভক্ত হয়েছে। এর প্রত্যেক ভাগ উল্টানো পেয়ালা আকৃতির গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল।



মসজিদটি অনবদ্য পোড়ামাটির অলঙ্করণের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনেক অলঙ্করণ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেলেও মসজিদের ভেতরে ও বাইরে এখনও প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান।



সবকটি খিলানপথ ও মিহরাব অলঙ্কৃত আয়তাকার কাঠামোর মধ্যে স্থাপিত এবং সেগুলির চারদিকের স্থানসমূহ উঁচুমানের আয়তাকার খোপ নকশায় অলঙ্কৃত ছিল। এগুলি একটির উপর আর একটি বসানো ছিল।



পূর্ব দিকের সম্মুখভাগে এরূপ একটি খোপ-নকশা স্প্যানড্রিলের ফ্রেমে পরিবেষ্টিত ছিল। এতে ছিল চমৎকার খাঁজবিশিষ্ট ও ফুলের নকশায় সজ্জিত একটি খিলান।



গভীর কুলুঙ্গিগুলি উত্তোলিত আলঙ্কারিক বন্ধনীর মাধ্যমে কয়েকটি আয়তাকার ছোট খোপ-নকশার সারিতে বিভক্ত ছিল। এর প্রতিটি বিভিন্ন নকশাঙ্কিত খাঁজ খিলান দ্বারা সুশোভিত ছিল। মিহরাব খিলানের স্প্যানড্রিলগুলি ফুলদানী নকশায় সমৃদ্ধ ছিল এবং এর মধ্যে থেকে আঙ্গুর লতার ন্যায় প্যাঁচানো নকশা ও পত্ররাজি বের হয়েছে। এর সাথে আরও রয়েছে সুস্পষ্টভাবে প্যাঁচানো গোলাপ নকশা।



সমস্ত গঠনটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে সংযুক্ত ছিল যা ধারাবাহিকভাবে অলঙ্কৃত আয়তাকার খোপ নকশায় পূর্ণ ছিল। মসজিদের একটি জানালার গ্রিলে আড়াআড়িভাবে ছেদকৃত বৃত্ত ও কোণ-এর পাশাপাশি অবস্থান দেখা যায়। পলকাটা কোণার বুরুজগুলি বিভিন্ন পোড়ামাটির নকশায় সমৃদ্ধ ছিল।



এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে উঁচু ভিটিতে নির্মিত অতিরিক্ত নামাজ কক্ষটি শুধু সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত গভর্নরের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল বলে মনে হয়। এ ধরনের বিশেষ নামায কক্ষ বাংলার কোনো কোনো মসজিদেও লক্ষ্য করা যায়। এতে মনে হয় যে, এ ব্যবস্থা ‘মাকসুরা’র বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।



ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ের মসজিদ স্থাপত্যের এ বৈশিষ্ট্য খলিফার নিরাপত্তার জন্য প্রবর্তন করা হয়েছিল। বাঘা মসজিদের এ বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি মসজিদটিকে জামে মসজিদের মর্যাদা প্রদান করেছে। আদিতে এ মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বারের উপরে লাগানো একটি শিলালিপির (বর্তমানে করাচিতে) বর্ণনা অনুযায়ী, সুলতান নুসরত শাহ ১৫২৩-২৪ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন।



বাঘা মসজিদটি বাংলাদেশের ৫০ টাকার নোটে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। এখনো মাঝে মাঝে বিশেষ নোটটির দেখা মেলে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই বিশেষ নোটটি। সঠিক সংস্কারের অভাবে মসজিটিও হারিয়ে যেতে পারে। ভ্রমন পিয়াসুরা একবার দর্শন করে আসতে পারেন এই সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভটি। আশারাখি মনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। আর অবশ্যই রাজশাহী মেইন শহরটা একবার ঘুরে দেখবেন।

কিভাবে যাবেনঃ বাস বা যে কোন যানবাহনের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা খুব সহজেই রাজশাহী শহর থেকে এই সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভটি দেখে আসতে পারেন।
এটি ঢাকা থেকে প্রায় ২৬১ কিলোমিটার দূরে। বাস, ট্রেন, কার এবং এয়ার প্লেন রাজশাহী শহরে প্রবেশের উল্লেখ যোগ্য বাহন। শহরের অভ্যন্তরে পরিবহন সেবা খুব ভাল। বাস পরিষেবা আছে; শহরের ভিতরে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ক্যাব, থ্রি-হুইলার অটোরিকশা এবং ঘোড়া চালিত টমটম পাওয়া যায়।

ছবি ও তথ্যঃ অন্তরজাল এবং নিজ।
১০/০৯/২০২০

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এখনো দেখা হয়নি।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩০

এ.এস বাশার বলেছেন: সময় পেলে ঘুরে আসুন। এখানকার দীঘির সুন্দর্যও অসাধারন। ভালোলাগবে।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৮

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার যতসব ছবি!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০০

এ.এস বাশার বলেছেন: ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার পোস্টটি অনবদ্য হয়েছে। দারুন একটা ফিচার। জাতিগতভাবে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষনের তেমন কোন ইচ্ছা বা সংস্কৃতি চোখে পড়ে না। চারদিকে শুধু অবহেলা, দখল আর নষ্ট করার পায়তাঁরা। লালবাগ কেল্লায় যতখানি না শেওলা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে প্রেমিক প্রেমিকাদের নাম ও পোষ্টার। মাঝে মাঝে এই সব পোষ্টার সরানোর জন্য অভিযান চালানো হয়। কিন্তু দিন শেষে ফলাফল শুন্য। খোদ ঢাকার কেরানীগঞ্জে নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্মৃতি বিজরিত জিঞ্জিরা প্যালেস দখল হয়ে গেছে। সেখানে আপনি এখন গিয়ে যদি ঐ প্যালেস খোঁজ করেন, তাহলে প্রভাবশালীরা আপনাকে তা দেখতে পর্যন্ত দিবে না, এমনকি শারিরীকভাবে লাঞ্চনার শিকার কিংবা আরো খারাপ কিছুই হতে পারে।

সেই হিসাবে এই জায়গাটি সরকার সংরক্ষন করে রেখেছে এটা বড় সৌভাগ্যের বিষয়, আনন্দের বিষয়। আপনি জানেন কি না জানি না, বাংলাদেশের ২ টাকার নোট এক সময় সবচেয়ে সুন্দর হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলো। সেখানে পরবর্তীতে চাটুকারদের কারনে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মান কিভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে আমার জানা নেই। তবে আমরা যারা তাঁকে ভালোবাসি, সম্মান করি, তারা আহত হয়েছিলাম এই ঘটনায়।

৫০ টাকার নোটে হাতে আসে মাঝে মাঝে। কিন্তু কখনও হয়ত সেভাবে দেখা হয় না। কিংবা বলা যায়, দেখার ইচ্ছে হয় না।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৩

এ.এস বাশার বলেছেন: সত্যি কথা বলতে বাঙ্গালী তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
এখনও সম্মান করি বঙ্গবন্ধু কে। তবে তাকে অমর করে রাখার যে অন্ধ প্রচেষ্টা চলছে এটা অতি ঘৃন্য। ভালোবাসা ও সম্মান জোর করে হয়না।

আপনার পোস্টটি অনবদ্য হয়েছে। দারুন একটা ফিচার।
মাননীয় মডারেটরের মন্তব্য পেয়ে আমি আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশেই কত কিছু যে আছে দেখার। অথচ নিজের দেশ না দেখে আমরা বিদেশ যাই।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৬

এ.এস বাশার বলেছেন: কবির ভাষায় বলতে হয়-- বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু । দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরেএকটি শিশিরবিন্দু।

৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাংলাদেশর প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনের এক দারুন অধ্যায়কে দারুন ভাবে তুলে ধরায় ধন্যবাদ।
ছবি আর বর্ণনা পাঠককে ধরে রাখে বিস্ময়ে অভিভূত করে।

কা_ভা ভায়ার মন্তব্যে সহমত।

পোষ্টে ++++++++

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৫

এ.এস বাশার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। গঠনমূলক মন্তব্যে অনুপ্রেরণা যোগায়।

৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই মসজিদে আমি নামাজ পড়েছি।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৯

এ.এস বাশার বলেছেন: বেশ তো। আপনার বাড়ি বুঝি রাজশাহীর কোথাও?

৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: কা_ভার সাথে পুরোপুরি একমত। সুন্দর যেকোনো কিছু ধ্বংসের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিভা অসীম পর্যায়ের। এ সব সাইটে গেলে মনটাই ছোট হয়ে যায়।

চমৎকার পোস্টে প্লাস।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৭

এ.এস বাশার বলেছেন: আমার পোস্টএ কা_ভা ভাই এর মন্তব্য সত্যি আমাকে অবাক করেছে। পাঠ ও প্লাস এর জন্যে কৃতজ্ঞতা।

৮| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট। এখানে কি এখনও নামাজ পড়া হয়?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫৪

এ.এস বাশার বলেছেন: জি মসজিদটি এখনো সচল। এবং প্রকৃতিক সুন্দর্য্যে ভরপুর...........।

৯| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রাচীন একটি স্থাপত্যের চমৎকার বর্ণনা ও ছবির সমাহারে সুন্দর একটি পোস্ট লিখেছেন। আরও ভাল লাগলো জেনে যে মাসজিদটি এখনও মুসল্লীদের দ্বারা আবাদ হচ্ছে।

কাল্পনিক_ভালোবাসা'র মন্তব্যটি ভালো লেগেছে। +

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম নন্তব্যে বলেছিলেন: এই মসজিদে আমি নামাজ পড়েছি। এর মাত্র সাত মাসের মাথায়ই তিনি এ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়ে গেলেন। কতটা নশ্বর আমাদের এ জীবন!

চমৎকার এ পোস্টে তৃতীয় ভাললাগা রেখে গেলাম। + +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.