বিপ্লবী নব প্রজন্মের প্রতি মাস্টারদা সূর্যসেনের খোলা চিঠি।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮

হে বিপ্লবী নব প্রজন্ম!

আমি তোমাদের মাস্টারদা সূর্যসেন বলছি,

আমি প্রয়াত সকল বিপ্লবীর পক্ষ থেকে তোমাদের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করছি।

অন্যায়, অবিচার, শোষন ও শাসনের কালো হাত থেকে স্বদেশ রক্ষার প্রয়াসে এবং মাতৃভূমির সাথে বিশ্বাস ঘাতকদের নায্য বিচারের দাবিতে নব প্রজন্মের এই মহাজাগরনকে, ইতিহাসের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সকল বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে জানাই বিপ্লবী শুভেচ্ছা। আমি এই বাংলায় স্বদেশী আন্দোলনের ১৯০৫, ২০, ৩২, আর ৪৭ দেখেছি । আমি দেখেছি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১-এর সাধীনতা সংগ্রাম আর ৮৯-এর গণজাগরনের রঙ । ২০১৩-র প্রজন্ম বিপ্লবের এই রূপ আমি দেখিনি কখনো। তোমাদের মাঝে জন্ম নেব বলেই মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে মৃত্যুকে হাসিমুখে করেছিলাম আলিঙ্গন ।



হে গৌরবের মহাপ্রজন্ম,

আমি লাখো প্রানের সঞ্চারণে আজ উজ্জীবিত! বহু কাল পরে, তোমাদের মাঝে আমি আবার প্রাণ ফিরে পেলাম। তোমরা প্রমান করেছ আবার, বিপ্লবীরা মৃত্যুঞ্জয়ী হয়। একজন বিপ্লবীর জীবনের বিনিময়ে কালে কালে সহস্র বিপ্লবীর জন্ম হয়। তোমরাই তো নবপ্রজন্মের ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা, রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, ভাসানী ফজলুল হক আর শেখ মুজিব। তোমরাই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, জাহানারা ইমাম আর নুর হোসাইন। বাঙ্গালির অধিকার আদায়ের বিপ্লবী ঐতিহ্য তোমরা রেখেছো সমন্নুত, আমি শ্রদ্ধায় অবনত।লাখো শহীদের বহুকালের অতৃপ্ত আত্মা আজ মুক্তির স্বাদ পেলো!



হে ক্রান্তিকারী মহাপ্রজন্ম,

দেশ ও জাতির প্রয়োজনে,অতীতের প্রতিটি বিপ্লব যদি ইতিহাস হয়ে থাকে, তবে জেনে রেখো, তোমরা এই মুহুর্তে অনাগত ভবিষ্যতের ইতিহাস রচনা করছো। লাখো শহীদের তাজা রক্ত লেগে আছে এই দেশ, এই মাটি, এই পতাকায়। অসংখ্য জননীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের গল্প লুকানো এই "স্বাধীনতায়"। আমি নিশ্চিত জানি, যুগে যুগে লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে যে স্বধীনতা তোমাদের আমরা দিতে চেয়েছি, তা তোমরা খুঁজে পাওনি এখনো। এখনো ক্ষুধার্তের হাহাকার ঘরে ঘরে, মেলেনি জীবনের নুন্যতম নিশ্চয়তা, মায়ের সম্ভ্রম বিক্রি হয় খোলা বাজারে, অধিকার বঞ্চিত মানুষ উন্মুক্ত রাস্তায় করে নিদ্রা যাপন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির হয়েছে দুরারোগ্য ব্যাধি, কৃষক পায়নি আজো ফসলের ন্যায্য দাম, গনতন্ত্রের নামে চলছে নিয়ম তান্ত্রিক লুটেরা রাজতন্ত্র, সার্বভৌম ক্ষমতা আজ সন্ত্রাস আর কালোবাজারীর হাতে, মজুতদারের হয়েছে বিত্ত বৈভবের পাহাড়, বাংলার অরক্ষিত সীমান্তে মানবতা হয় নগ্ন, লাঞ্ছিত। রাজাকারের নীল্ নকশায় স্বাধীনতার বুকে পা দিয়ে ২০০৯ এ পিল্খানায় হয় গণ ধর্ষণ, লুটতরাজ আর গনহত্যা। ৭১-এর স্বাধীনতার দোসররা আজো নিরাপদে আশ্রিত, যোগায় ইন্ধন, নাচে নাশকতায়। তারাইতো রাজাকার, যারা শত্রুর সাথে করে আঁতাত আর স্বদেশের সাথে মাতে বিশ্বাস ঘাতকতায় । বেলাশেষে সব শোষকের এক রঙ, বসে জুয়ার টেবিলে, ভাগ করে নেয় মানচিত্র আর জনমানুষের অদৃষ্ট।১৯৭১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সেইসব রাজাকারদের এখনো হয়নি সাজা। স্বাধীনতা এখনো দুষ্ট রাজনীতির বানিজ্যিক পণ্য,পসরা। তাইতো নব প্রজন্মের মহাবিপ্লবের এই ভয়ঙ্কর রূপ,এই মহাজাগরণ! আমি আজ সব বিপ্লবীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি সমস্বরে: ৭১-এর সংগ্রাম এখনো হয়নি শেষ, এইবার স্বাধীনতার স্বাদ পাবে আমার সপ্নের বাংলাদেশ!



ওহে ক্ষণজন্মা মহাপ্রজন্ম,

কালান্তরে শত বিপ্লবী যেই পতাকার স্বপ্নে ছিল বিভোর, সয়েছে অসহ্য মৃত্যু যন্ত্রণা, মুহুর্তে গিলে নিয়েছে প্রাণনাশী বিষ, করেছে লাগাতার অনশন, জীবন করেছে উৎসর্গ অকাতরে,তোমাদের হাতে সেই স্বপ্নিল পতাকা আজ কি প্রবল অহংকারে উড়ে ! গণজাগরণের এই মহেন্দ্রক্ষণে, সাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ৪৩ বছরের সুফল বঙ্গজননীর হাতে তুলে দেবার গুরু দায়িত্ব যে আজ তোমাদেরই কাঁধে! "স্বাধীনতা" শব্দের অর্থ উদ্ধার করে ঘরে ফিরতেই হবে তোমাকে, নইলে যে এই রকম আরো অনেক ৪৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে বঙ্গমাতাকে!



হে মহাবিপ্লবী প্রজন্ম,

জীবন মৃত্যুর স্বন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম: "প্রিয় বন্ধু শোনো, মৃত্যু আমার দরজার কড়া নাড়ছে অবিরাম, আমার সত্তা করছে যাত্রা অনন্তের পথে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এইতো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়! জীবনের এই আনন্দঘন, অলিক মহালগ্নে, আমি তোমাদের জন্য এক উপহার রেখে গেলাম। রেখে গেলাম আমার স্বপ্ন, আমার সোনালী স্বপ্ন, স্বাধীন এক জন্মভূমি! প্রিয় বন্ধু, সামনে এগিয়ে যাও; পিছু ফিরিবার আর নেই যে সময়। দাসত্বের দিন অতীত হলো বলে ! স্বাধীনতার চোখ ধাধানো স্বরূপ ঐতো দেখা যায়! জেগে উঠো এক সাথে, আর স্বপ্নটাকে রেখোনা অপূর্ণ। সাফল্য তোমাদের পথসঙ্গী হবেই। "

শুনে নাও আজ শত শহীদের প্রানের দাবি, মুছে দাও এই কলঙ্কের অধ্যায়, যদি দিতে হয় রক্ত তবে দাও প্রাণ। সহস্র বছরের ইতিহাস রবে সাক্ষী , অনাগত প্রজন্মকে শোনাবে তোমাদের বিজয়ের জয়োগান!



হে কালজয়ী মহাপ্রজন্ম,

আমি শত বিপ্লবীর প্রানের নির্যাস তোমাদের উপর ছড়িয়ে দিলাম। আমি প্রয়াত সকল বিপ্লবীর পক্ষ থেকে তোমাদের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করলাম। মহাপ্রজন্ম তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী হও মহাকালের, আর প্রজন্ম চত্বর শাহবাগ হউক নবজাগরণের গণ আদালত।



তোমাদের প্রানের সঞ্চারণে উজ্জীবিত।

.....................................................তোমাদেরই মাস্টারদা, সূর্যসেন।

১ টি +১/-০