নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য বলতে চাই

ঈস হাসান আনন্দ

ঈস হাসান আনন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের মূল্য ও রক্তের দাম

১১ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৮

আগামীকাল সকালবেলা হকার যখন দৈনিক পত্রিকা দিয়ে যাবে, খুলে পড়ার আগে একটু কাত করে নিবেন। দেখবেন অঝোরে রক্ত বওয়া শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টিকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহন না করাই উত্তম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে দৈনিক পেপার পড়া হতোনা। কিন্তু এখন খুব কম দিনই পত্রিকায় একটু নজর বুলানো ছাড়া অতিবাহিত হয়। প্রতিদিন যে হারে খুন-হত্যা, গুম, আত্মহত্যা ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে হঠাৎ হঠাৎ মনে হয়, আসলেই কি এতো তুচ্ছ মানুষের জীবনের মূল্য! নাকি শেয়ারের দরের মতো মানুষের জীবনের দরও উঠানামা করে। অবশ্য যখন কোটি টাকার বিনিময়ে বিশেষ বাহিনী কর্তৃক অপহরন ও গুম-হত্যার খবর শুনি তখন মনে আনন্দ জাগে, জীবনের দাম অল্প হলেও নগণ্যতো আর নয়! অবশ্য এই প্রাণ যে কতো দামী তা নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকেই উপলব্ধি হয়েছে। গত পোস্টে আপনারা পড়েছেন ৯০ এর উত্তাল সময়ে দুটি বাচ্চার জীবন নিয়ে টানাটানির কাহিনী। সে পোস্টের শেষ থেকেই এই পোস্টের শুরু।

আব্বা-আম্মা আমাদের দুজনকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছানোর পর নানান বাধা বিপত্তির পরে আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেন। কিন্তু ততক্ষনে বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। ইতেমধ্যে আমার জমজ ভাই আদরের গায়ের রঙ নীলবর্ণ ধারন করেছে এবং আমার অবস্থাও সুবিধাজনক নয়। দুজনকেই লাইফসাপোর্টে নেয়া হলো। তারপরও অবস্থার অবনতি হতে থাকায় ডাক্তাররা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। নানান পরীক্ষার পর ঘোষনা করলেন আমাদের দুজনারই রক্ত বিষাক্ত বা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যত দ্রুতসম্ভব ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে হবে আর একইসাথে অন্যদিক দিয়ে নষ্ট রক্ত বের করে দিতে হবে। খুবই জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। সেই সাথে স্বল্পসময়ের নোটিশে তখনকার সেরকম উত্তাল পরিস্থিতিতে হঠাৎ দুটি গ্রুপের (আমার A+ ও আদরের O+) এতো রক্ত সংগ্রহ করার চ্যালেন্জ তো ছিলোই। তারপরও আব্বা চেষ্টা শুরু করলেন।

পরদিন ভোর হতে হতেই সব স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা হাসপাতালে আসা শুরু করলেন। তখন আরেক দুঃসংবাদ, আদরকে "Clinically dead" ঘোষনা করলেন। চারিদিকে আবার ছুটাছুটি শুরু হয়ে গেল। আল্লাহর অশেষ রহমতে ডাক্তারদের অনেক প্রচেষ্টার পরে ওর দেহে প্রাণের চিহ্ন ফিরিয়ে আনা গেল। বিভিন্ন মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হল(আত্মীয়-স্বজন, আব্বা আম্মার বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও শাহবাগ মোড়ের জনৈক মহান গাঁজাড়ুর রক্ত)। পরে বিকেলের দিকে রক্ত সঞ্চালন শুরু হলো। এবার আরেক ঝামেলা! ডাক্তার একটি ইম্পোর্টেড ইন্জেকশনের নাম দিয়ে বললেন, “এটা দ্রুত সংগ্রহ করুন, কিছু নির্দিষ্ট ফার্মেসী ছাড়া পাবেননা। এই ইন্জেকশন না পেলে সমস্যা হতে পারে।”

ইন্জেকশনটি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা গেল উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে সেই নির্দিষ্ট ফার্মেসীগুলোর অর্ধেকই বন্ধ আর বাকিগুলোতে সেটি নাই। বিশাল দুশ্চিন্তা! অবশেষে অনোন্যপায় হয়ে সৌদি আরবে এক আত্মীয়কে ফোন দেয়া হল। দূর্ভাগ্যজনকভাবে “পানখাওয়া দুলাভাই” নামক সেই মহৎ ব্যক্তিকে জ্ঞান হওয়ার পর কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। যাইহোক, শর্টনোটিশে তিনি ওই নির্দিষ্ট ইন্জেকশনটি নিয়ে বাংলাদেশে ল্যান্ড করলেন। মহার্ঘ্য সেই বস্তুটি আব্বুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমাদেরকে একনজর দেখে পরের ফ্লাইটেই আবার সৌদিতে ফিরে গেলেন। সে সময়েই লাখখানেক টাকা খরচ হয়ে গেল আমাদের জীবন রক্ষার্থে।আল্লাহর অশেষ রহমতে আরেকদফা বেচে গেলাম।



পুনশ্চঃ শুনেছি শাহবাগ মোড়ের সেই গাঁজাড়ুর রক্ত নাকি আমাকে দেয়া হয়েছিল। বাসার সবাই তাই আমাকে ক্ষেপায়, আমি নাকি সে কারনেই নাকি একটু উল্টা-পাল্টা ভাবে চলাফেরা করি!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.