![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো’ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর এই বিখ্যাত উক্তি ছোট বেলায় কম বেশি আমরা সবাই পড়েছি। কিন্তু বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে নারী একটি অংশ। আর জাতি বঞ্চিত হচ্ছে একটি শিক্ষিত মা পাওয়া থেকে। যা একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে তোলার জন্য অন্তরায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন আইনশিঙ্খলার বাহিনীর অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী আটক গডফাদারে ধরতে না পারার কারণে সমাজে সহজ সহজ লভ্য হচ্ছে মাদক। আর গবেষণা বলে দেশের মোট মাদকাসক্ত প্রায় চার ভাগের একভাগ নারী।
জান্নাতারা মীম শিক্ষা জীবনের শুরু ১৯৯৮ সালে ধানমন্ডির একটি ইংরেজি মাধ্যমে স্কুলে প্রে-গ্রপে ভর্তির মাধ্যমে দিয়ে। সে হিসাবে তাঁর এখন বিস্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রাজধানীর আদাবরের ‘মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ক্রিয়া’তে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর আগে ঢাকার আরও দুই তিনটি মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো ভাবেই মাদকের দুনিয়া থেকে ফিরে আসতে পারছে তিনি। সবশেষ পত্রিকা বিজ্ঞাপন দেখে তিন মাসের ‘প্যাকেজ’-এ চিকিৎসা ক্রিয়া তে ভর্তি আছে।
তাঁর কেস হিস্টরি ও পরিবারের সাথে কথা বলে জানায়, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মীম। তিনি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে তখন তাঁর বাবা মারা যায়। এর পরে মূলত অনেকটা শাসনের বাইরে চলে যায় সে। পরিবারের সদস্য বলে একমাত্র মা। আর আয়ের উৎস বাবা রেখে যাওয়া ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়ের মোট ৪টি বাড়ি। খুব অল্প বয়সে আদরের মীমের হাতে অধিক অর্থ দিতে শুরু করে তাঁর মা। এর পরে যখন সে ৯ শ্রেণিতে পড়ে তখন পরিবারের অন্য সদস্যের মাধ্যমে মীমের মা জানতে পারে তাঁর সন্তান মাদক জগতে পা রেখেছে। এর পরে শুরু হয় চিকিৎসা। এর ফলও পায়। ও- লেভেল পরীক্ষাতে মোট ৫টি পরীক্ষাতে অংশ গ্রহণ করে পাঁচটি তে উর্ত্তিন হয় সে। কিন্তু এর পরে আবার মাদকে জড়িয়ে যায় মীম। তাঁর পর থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘ সারে ৪ বছরে এ-লেভেল পরিক্ষার মোট ছয়বার অংশ নিয়ে সম্পুন করতে পারেনি।
জান্নাতারা মীমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পাপা(বাবা) মারা যাওয়ার পরে আম্মু আমাকে অনেকটার শাসন থেকে মুক্ত করে দেয়। আম্মুর কথা ছিল লেখা পড়ায় ভালো ফলাফল করতে হবে। আর আমিও মা কে কথা মেনে সেভাবে রেজাল্ট করে আসছিলাম। কিন্তু আমি যখন ক্লাস এইট শেষ করে নাইনে উঠি। তখন বন্ধুদের সাথে একদিন রাতে বাসার বাইরে থাকার অনুমতি পাই আম্মু কাছ থেকে। সেখানে ক্লাসের কিছু বন্ধুদের থেকেই আমার কিছু পানিও(মদ) এবং গাঁজা খাওয়ার সুযোগ হয়। আমি আগে থেকে সিগারেট খেতাম কিন্তু সেদিন যে আনন্দ পেয়ে ছিলাম তা এর আগে পাইনি। এর পর থেকে আমি নিয়মিত খাওয়া শুরু করে দেই। অন্যদের থেকে আমার কাছে সব সময় টাকা একটু বেশি থাকতো। তাই সবাই আবার সে সময় একটু গুরুত্ব দিতে শুরু করে। এভাবে করে কবে যে আমি মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছি নিজেও বলে পারি না। আমি জানি আমার জন্য আমার আম্মুর অনেক কষ্ট হয়।
তবে জান্নাতারা মীম তার মাকে কষ্ট দিতে এবং সমাজে সবার সামনে ছোট করতে চায় না মন্তব্য করে আরো বলেন, ‘আমি ভালো হতে চাই। আমি নিজেই এবার ভর্তি হয়েছি এখানে। আম্মুকে আসতে না করেছিলাম এখানে। কারণ এখানে আসলে ডাক্তারা আম্মুকে দোষদেয়। কিন্তু আমার আম্মুর তো কোনো দোষ নাই। আমি আমার ভুলে মাদকাসক্ত হয়েছি। আমার ভুল ছিল আমার বন্ধু নির্বাচনে। কথাগুলো বলতে গিয়ে মীম কান্না থামাতে পারছিল না। সব শেষ মীম বলে আমি একজন ভালো মেয়ে হয়ে পাপার(বাবা) কাছে যেতে চাই। আমি একজন ভালো বউ হতে চাই। কিন্তু আমাকে এই সমাজের কেউ মেনে নিবে না। আর যদিও মেনে নেয় তাও নিবে পাপার রেখে যাও টাকার জন্য। যেমনটা বন্ধুরা আমাকে টাকার জন্য গ্রহণ করে ছিল।’
এদিকে ‘মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ক্রিয়ার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট কানিজ ফাতেমা বিডিমর্নিংকে জানায়, তাঁর সাথে কথা আমি যতটুকু বুঝতে পেড়েছি মীম মূলত সমাজের অপব্যবস্থার শিকার। সে এখন পর্যন্ত ৩টি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু প্রতিবার বাড়ি ফেরার পরে কোনো না কোনো ভাবে তাঁর আগের বন্ধ মহল তাকে আবার মাদকের সাথে যুক্ত করে ফেলছে।
বাংলাদেশের মাদক বিরোধী সংস্থা (মানস) সাথে নারীদের মাদক সাথে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কথা হলে জানা যায়, দেশে প্রায় ৮০ লাখ মাদকাসক্ত ব্যক্তির ২৬ শতাংশই নারী। আর মাঝে ৫৬ শতাংশ ইয়াবা সেবনকারী। আর ৩৩ শতাংশ নারী, সিগারেট ৩২ শতাংশ, মদ ২৮ শতাংশ, গাঁজা ২৬ শতাংশ, ফেনসিডিল ৯ শতাংশ, হেরোইন ৫ শতাংশ, পেথেড্রিন ৩ শতাংশ এবং ১ শতাংশ নারী ড্যান্ডি নিয়ে থাকে। এ জরিপে অংশ নেওয়া ৯৫ জনের পরিবারের মধ্যে ১৬ শতাংশের স্বামী, ১৬ শতাংশের ভাই, ৪ শতাংশের বোন, ৪ শতাংশের বাবা ও ২ শতাংশের মা মাদকাসক্ত ছিলেন। এ ছাড়াও ৩৪ শতাংশ নারীর একাধিক যৌন সঙ্গী আছে এবং ৪৪ শতাংশের অনিরাপদ যৌন অভিজ্ঞতা আছে। তাদের ১১ শতাংশ মাদক সংক্রান্ত মামলায় জড়িত।
ঢাকায় মেয়েদের জন্য একমাত্র আলাদা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে রয়েছে আহছানিয়া মিশনের। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ইকবাল মাসুদের সাথে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার একটা প্রধান কারণ পরিবার বা বাবা-মায়ের সাথে ভাল সম্পর্ক না থাকা বা বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশামত সময় না পাওয়া।
তিনি বিডিমর্নিং কে আরও জানায়, ঢাকা আহছানিয়া মিশন ‘নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’ যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল। সে সময় দেশে মোট মাদকসেবীদের মাঝে নারীদের মাদক নেয়ার প্রবণতা ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। আর এই ৫ শতাংশের ৪ বছরে বেড়ে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশে চলে এসেছে।
আহ্ছানিয়া মিশনের নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের কাউন্সেলর শারমিন আবেদীন ইরা জানান,১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে পনের শতাংশ নারী নানা ধরণের মাদকে আসক্ত বলেও সাম্প্রতিক তাদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
আসক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়ে বলেন, আইনশিঙ্খলার বাহিনীর অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী আটক গডফাদারে ধরতে না পারার কারণে সমাজে সহজ সহজ লভ্য হচ্ছে মাদক। যার ফলে খুব সহজে নারীদের হাতে মাদক পৌঁছিয়ে যাচ্ছে।
২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৪৫
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: অবস্থা তো দেখছি উদ্বেগজনক! আমাদের দেশের মেয়েদের এই অধঃপতন সত্যিই ভয়াবহ! এটা কি শুধু আর্থিকভাবে সচ্ছল নারীদের অবস্থা নাকি দরিদ্র আর অশিক্ষিত নারীরাও এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে?
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫২
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: তথাকথিত আধুনিকতার নাম দিয়ে আমাদের সমাজটা গোল্লায় যাচ্ছে।
৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: মাদক তো আজকাল গ্রামে গঞ্জেও খুব সহজে পাওয়া যায়।
আসলে সরকার চাইলে মাদক মুক্ত বাংলাদেশ সম্ভব।
৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪
কালীদাস বলেছেন:
আপনের পরিসংখ্যান:
পোস্ট করেছি: ১২টি
মন্তব্য করেছি: ৪টি
মন্তব্য পেয়েছি: ২৭টি
ব্লগ লিখেছি: ১ বছর ৬ মাস
অনুসরণ করছি: ১ জন
অনুসরণ করছে: ১ জন
এই পঁচিশভাগ নারীর হিরোইন, ডাইল, ইয়াবা, ফেন্সির যোগান দিতে আপনে লাইনে নামতে পারেন, কওয়া যায় না আপনের জবানও খুইলা যাইতে পারে ব্যবসা করতে যায়া
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৩১
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: মদ গাজার ডিলাররা ধরা না পড়লে এসব বন্ধ হবে না।