![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।
বিবর্তনবাদ আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম একটি তত্ত্ব। মানবসহ প্রানি জগতের উদ্ভবের পিছনে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব বলেই আজ পর্যন্ত পরিগনিত। বিবর্তনবাদের এই তত্ত্বটি আমাদের পৃথিবীর পশুপাখি ও উদ্ভিদ জগৎ সম্পর্কে বুঝতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। যে প্রক্রিয়ায় কোনো জীব বেঁচে থাকার জন্য, প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য নিজের পরিবর্তন ঘটায় অথবা, যে প্রক্রিয়ায় সহজতর জীব জটিল জীবে পরিণত হয় অনুন্নত জীব আরো উন্নত হয়,তাকে বিবর্তন বলে। এই তত্ত্বে দেখানো হয়েছে প্রাণীরা সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ একটি ক্ষুদ্র এককোষী অণুজীব থেকে 'এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন' এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। এবং মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে এতে খুব অল্প অল্প পরিবর্তন হতে হতে আজ পর্যন্ত এসেছে।" কিন্তু সেই অনুজীবটি কোথা থেকে এলো বা এর আর্বিভাব সম্পর্কে বিবর্তনবাদ তেমন কোন তথ্য দিতে পারে নাই। বিবর্তনবাদ তত্বটির উদ্ভব বিশিষ্ট জীব বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিখ্যাত বই অরিজিন অফ স্পিসিস থেকে। যেখানে তিনি বিবর্তনের সামগ্রিক ভাব বা পদ্ধতির সুষ্ঠু নিয়মের উল্লেখ করেছেন। সেই অণুজীবটা কোথা থেকে এসেছিল, এই প্রশ্নের উত্তর যেমন বিবর্তনবাদীদের কাছে নাই, তেমনি কে উদ্ভিদ হবে আর কে প্রাণী হবে তা নির্ধারণ করে দেয়ার মতও কেউ নাই। এখানে কোনো স্রষ্টার হাত ছিল বলেও তারা স্বীকার করেন না। তারা বলেন "এলোমেলো পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে এসব হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক নির্বাচন মানে হল ডিএনএ'র মধ্যে এলোমেলো পরিবর্তনের সময় কোনো প্রাণীর কোনো পরিবেশে টিকে থাকার মত উপযোগী জিনটিকেই নির্বাচন করা।
বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীদের মতে বিবর্তন কাজ করে দুইটি প্রধান উপায়ে। এর একটি হচ্ছে ডিএনএ পরিবর্তন (mutation), এবং আরেকটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন (natural selection)। ডিএনএ পরিবর্তন (mutation) এর মাধ্যমে বির্বতনের ঘটনা সম্পর্কে বিবর্তনবাদীরা বলে –যেকোন প্রজাতির দেহে জিন প্রজাতির তথ্য ধারন করে এবং প্রাণীর কোষকে নিয়ন্ত্রন করে। এর মাধ্যমেই প্রজাতির গুন অব্যাহত থাকে। মিউটেশন হল এই জিনে কোন ধরনের পরিবর্তন বা ভাঙন । মিউটেশন হল বিবর্তন ঘটার কাঁচামাল। মিউটেশন উপকারী, ক্ষতিকর বা নিরপেক্ষ হতে পারে। এখন ধরুন একটি জীবের মধ্যে একটি দরকারী মিউটেশন আছে, যা তাকে দীর্ঘকাল বাঁচতে বা কিছু কঠোর পরিবেশগত পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে সক্ষম করে। এই জীব প্রজননগতভাবে আরও সফল হবে এবং সম্ভবত আরও সন্তান উৎপাদন করতে পারে। এর বংশধররা এই দরকারী মিউটেশনটি বহন করবে এবং এটি তাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেবে । আরেকটি হলো প্রাকৃতিক নির্বাচন (natural selection)। সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্নতা ও পার্থক্য বিদ্যমান আছে। যেমন সবার গড় উচ্চতা এক নয়। কিছু লোক লম্বা, কিছু লোক বেটে। কিছু ভেরিয়েন্ট একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে সঙ্গীকে টিকে থাকা এবং আকর্ষণ করা সহজ করে তোলে। যেমন গড় উচ্চতার মানুষরা অতিরিক্ত লম্বা কিংবা অতিরিক্ত বেটে লোকের চেয়ে বিপরীত লিঙ্গের কাছে আকর্ষণীয় দেখায়। এবং গড় উচ্চতার মানুষদের সঙ্গী নির্বাচন করতে কোনো সমস্যা হয় না। কিছু ভিন্নতা একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে টিকে থাকা এবং সঙ্গীদের আকর্ষণ করা কঠিন করে তোলে। যেমন অনেক প্রকারের বাঘ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বংশ পরম্পরায়, বেঁচে থাকা এবং প্রজননে সহায়ক বৈশিষ্ট্যগুলি আরও সাধারণ হয়ে সবার মধ্যে বিদ্যমান হয়ে ওঠে। যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যে পরিবেশের সাথে খাপ খায় না এবং সঙ্গী আকর্ষণে ব্যর্থ করে সেগুলি কম সাধারণ হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, বংশধরদের জনসংখ্যা তাদের পূর্বপুরুষদের থেকে আলাদা। দুই বা ততোধিক বংশধর একই শ্রেণীর প্রাণী, বিভিন্ন পরিবেশে বসবাস করে, ধীরে ধীরে একে অপরের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণ বাড়াবে। সেইসাথে তাদের ভাগ করা পূর্বপুরুষদের থেকে পার্থক্য ছিল যা শেষ পর্যন্ত প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেমন হাঙ্গর মাছের অনেকগুলো প্রজাতি বিদ্যমান আছে। ডারউইন তার বিবর্তনবাদ বিষয়ে বই প্রকাশ করলেন On the Origin of Species ১৮৫৯ সালে। এরপর থেকে অনেক গবেষনা হয়ে গেছে এই তত্ত্বের ওপর। কিছু পরিবর্তন ও সংশোধন হয়েছে। যেমন mutation এর concept যুক্ত হয়েছে। তবে তত্ত্বের মূলকথা-Natural Selection একদমই অক্ষুন্ন ও নির্ভুল আছে।
বিবর্তনবাদই হলো বিশ্বের প্রাণিজগৎ উদ্ভবের এখন পর্যন্ত একমাত্র তত্ত্ব যেটি নিয়ে জীববিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। বিবর্তনবাদ প্রাকৃতিকভাবে প্রানীজগতের উদ্ভবের ধারনা দেয়। ইশ্বরকে এড়িয়ে প্রাকৃতিকভাকে প্রানিজগত সৃষ্টির ধারনা দেয়। মিউটেশন এবং ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে এক কোষি প্রাণি থেকে বহুকোষি প্রানির পরবর্তীতে অসংখ্য দেহকাঠামো সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মানুষ পর্যন্ত আবির্ভাবের ব্যাক্ষা দিয়ে থাকে। এই তত্ত্বে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কোন যুক্তি নেই। বিবর্তনবাদীদের ধারনা মতে সমস্তটাই আপনা আপনি ঘটে গেছে। প্রকৃতি হঠাৎ যাকে সিলেকশন করেছে সেই টিকে গেছে। কিন্তু প্রকৃতি কেমন করে সিলেকশন করে? প্রকৃতির কি আলাদা কোন স্বত্ত্বা আছে? প্রকৃতি কি প্রাণ? প্রকৃতি বা পরিবেশ যদি সিলেকশন করে তাহলে প্রকৃত্রির এই বিষয়টিও তো পরিকল্পিত। সেটি আবার বিবর্তনবাদীরা মানতে রাজী নয়। এক কথায় আপনা আপনি ইশ্বরবিহীনতা। ইশ্বরবিহীনতা প্রমান করতেই হবে। এই যে ঈশ্বরবিহীনতা এই বিবর্তন তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক সময় বিবর্তনবাদীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। ভূলভাল ফসিল সংগ্রহ। ভূলভাল তথ্য প্রদান। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা প্রচার প্রচারনা মাধ্যমে মানুষকে বোঝানের চেষ্টা করা। ইদানীং তারা বিভিন্ন প্রাণীর ফসিল বা জীবাশ্মকে এই বিবর্তনবাদের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ লাখ লাখ বছর আগে মরে যাওয়া কোনো প্রাণীর দেহাবশেষ বা হাড্ডি দেখে আন্দাজ করা হয় যে প্রাণীটি হয়ত এ রকম ছিল। আর বলা হয় যে, 'কোনো এক প্রজাতির প্রাণী পরিবর্তনের একটি ধাপে হয়ত এ রকম ছিল'। এটা কোনো প্রমাণ নয়। খুব বেশি হলে এটাকে অনুমান বলা যেতে পারে। তবুও এই বিবর্তনবাদ তত্ত্বটিকে অনেকেই সত্য হিসেবে প্রচার করছে এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তা পড়ানো হচ্ছে। বিবর্তনতন্ত্রীদের জালিয়াতি চক্রে পড়ে প্রকৃত বিবর্তন পথভ্রষ্ট হচ্ছে। এই যেমন লুসি। মানুষের মিসিং লিংক। লুসি ডিএনএ টেস্ট করতে চেয়েছিলো বিবর্তন বিরোধী বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ডিএনএ টেষ্ট করা হয় নাই। ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে, বানর ও আমরা একই বংশধর হিসাবে বিবর্তনীয় শাখা। তবুও জীবাশ্ম রেকর্ডের মধ্যে লিঙ্ক দেখাচ্ছে। প্রথম দিকের বনমানুষ এবং আধুনিক মানুষের মাঝের লিঙ্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সিংহভাগ নৃতাত্ত্বিকেরা মনে করেন যে, বনমানুষের (যেমন, শিম্পাঞ্জি) সাথে আধুনিক মানুষের সম্পর্ক সরাসরি বংশধরের পরিবর্তে সাধারণ পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে। এই পূর্বপুরুষদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি, তবে এপ-হোমিনিডের বিচ্যুতি ৬ থেকে ১০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে থাকতে পারে। ২০ শতকের গোড়ার দিকে এই অনুপস্থিত লিঙ্কটি খুঁজে পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর বিজ্ঞানীরা এতটাই মরিয়া হয়ে ওঠেন যে একটি বড় ধরনের প্রতারণা জাল পাতা হয়েছিল; পিল্টডাউন ম্যান (১৯১২ সালে ‘আবিষ্কৃত’) জীবাশ্মকে ভাবা হোত আদিমতম বনমানুষ। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আসল বলে বিশ্বাস করা হোত। আসলে এটি মধ্যযুগীয় কোন মানুষের মাথার খুলি, একটি ওরাংওটাং-এর চোয়ালের হাড় এবং একটি শিম্পাঞ্জীর দাঁতের জীবাশ্ম। এগুলোকে অ্যাসিডে ভিজিয়ে ও লোহার মরিচা ব্যাবহার করে এটাকে অনেক পুরাতন রূপ দেয়া হয়েছিল। মিথ্যা বিবর্তনবাদী দাবিগুলোকে যথাযথ বিশ্বাসের সাথে তুলে ধরার জন্য অন্য প্রাণীর জীবাশ্মকে পূর্বপুরুষ হিসেবে প্রমানের চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর মধ্যে নিয়ান্ডারথালস, নেব্রাস্কা ম্যান, পিল্টডাউন ম্যান(১৯১২), জাভা ম্যান এবং রোডেসিয়ান ম্যান (২০০৩)। এছাড়াও, The Hobbit Man (২০০৫)এবং লুসি কিংবা সেডিবা (২০০৮) অন্যতম। বিজ্ঞানীদের এই উদ্ভট ও মিথ্যা প্ররোচনার পেছনে যে বিশ্বের চিন্তাশীল ব্যক্তিরা যে শত শত বছর ধরে দৌড়েছেন এবং প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের ছাত্রদের যে, ভুল শেখানো হচ্ছে এবং সেই ভুলটাকেই তাদের বিশ্বাস করাতে বা প্রমান করাতে বাধ্য করা হচ্ছে মিথ্যা দিয়ে। কিভাবে মানবজাতি বিবর্তিত হয়েছে তা জানতে আর কত লুসিস, হবিটস, পিল্টডাউনস, নেব্রাস্কাস এবং আরডি লাগবে? মানব জীবাশ্মের জালিয়াতি যা মানব বিবর্তনের গবেষণায় 20 শতকের প্রথম দিকে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করেছিল। Lewes, Eng. এর কাছে পিল্টডাউন কমন-এ পাওয়া দৃশ্যত জীবাশ্মকৃত খুলিটি প্রথম 1912 সালে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের ("Piltdown man") একটি নতুন প্রজাতি হিসাবে প্রস্তাবিত হয়েছিল। শুধুমাত্র 1954 সালে একটি মানুষের কপালের মাথার খুলিটি দক্ষতার সাথে একটি ওরাংগুটের চোয়ালের সাথে যুক্ত দেখানো হয়েছিল। পিল্টডাউন ম্যান ছিল একটি প্যালিওনথ্রোপোলজিক্যাল প্রতারণা যেখানে হাড়ের টুকরোগুলিকে আদি মানুষের জীবাশ্মাবশেষ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। যদিও শুরু থেকেই কার্যত এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ ছিল, তবুও বহু বছর ধরে জীবাশ্মটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাপক গৃহীত হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে নিশ্চিতভাবে এটা প্রতারণা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ২০১৬ সালে একটি ব্যাপক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে অপেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক চার্লস ডসন এর জন্য দায়ী ছিলেন। ১৯২২ সালে, চার্লস ডসন দাবি করেছিলেন যে তিনি বনমানুষ এবং মানুষের মধ্যে ‘অনুপস্থিত লিঙ্ক’ আবিষ্কার করেছেন। ১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ডসন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জিওলজির রক্ষক আর্থার স্মিথ উডওয়ার্ডের সাথে যোগাযোগ করেন, তিনি জানান যে তিনি পূর্ব সাসেক্সের পিল্টডাউনের কাছে নুড়ি পাথর বিছানো এক স্থানে প্লাইস্টোসিন যুগের একটি মানুষের মত খুলির একটি অংশ পেয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে; সেই গ্রীষ্মে, ডসন এবং স্মিথ উডওয়ার্ড সাইটে আরও হাড় এবং নিদর্শন আবিষ্কার করেছিলেন, যা একই ব্যক্তির ছিল বলে তারা মনে করে। সেই আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি চোয়ালের হাড়, আরও মাথার খুলির টুকরো, এক সারি দাঁত এবং আদিম কিছু সরঞ্জাম রয়েছে। স্মিথ উডওয়ার্ড মাথার খুলির টুকরোগুলোকে পুনর্গঠন করেছিলেন এবং অনুমান করেছিলেন যে তারা ৫ লাখ বছর আগে থেকে মানব পূর্বপুরুষের অন্তর্গত। একটি ভূতাত্ত্বিক সোসাইটির সভায় সেই আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এটার ল্যাটিন নাম দেওয়া হয়েছিল Eoanthropus dawsoni ("Dawson's dawn-man")। ১৯৫৩ সালে এটি একটি জালিয়াতি হিসাবে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহজনক এলোমেলোভাবে জোড়ার বিষয় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ছিল।)কথিত মানব বিবর্তনের গণকবরে স্তুপীকৃত ফসিল বা জীবাশ্ম ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তেই থাকবে শুধু। বিবর্তনবাদের কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা সেটি তারা মানতে নারাজ। প্রমান করতেই হবে ঈশ্বরবিহীনতা।
বিবর্তনবাদ নামের এই তত্ত্ব কিন্তু চালস্ ডারউইনের উদ্ভাবিত তত্ত্ব নয়।তার জন্মের ১০০০ বছর পূর্বে প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়বস্তু সমৃদ্ধ তত্ত্ব দাড় করিয়েছেন একজন মুসলিম লেখক আল কোরআানের কিছু শব্দের উপর ভিত্তি করে।আল-জাহিজ নামক এই লেখক। জন্ম হয়েছিল ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে, দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরে। চার্লস ডারউইনের প্রায় এক হাজার বছর আগে ইরাকের এই দার্শনিক লেখেন ‘কিতাব আল-হায়ওয়ান’। ইংলিশ নাম ‘দ্যা বুক অফ অ্যানিমেলস’। অর্থাৎ এটি ছিল প্রাণীদের প্রজনন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বই। এই বইয়ের কারণে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আল-জাহিজ। ডারউইনের ১০০০ বছর পূর্বে আল জাহিজ বিবর্তনের সম্ভবনার কথা আল কোরআন থেকে তুলে ধরেছিলেন। তাঁর নাম আবু ওচমান আমর ইবনে বাহার ইবনে মাহবুব ইবনে ফাজারা আল বছরি আল কিনানি আল লাইচি। তিনি প্রায় দুইশতের মত কিতাব লিখেছেন। এর মধ্যে কিতাবুল হাইওয়ান নামে একটি কিতাবের উদ্ধৃতি বিবিসি বাংলাতেও দেয়া হয়েছে। সেই কিতাবে তিনি প্রায় সাড়ে তিনশতটির মত প্রাণীর জীবন রীতি ও স্বভাব-চরিত্র বর্ণনা করেছেন। তার সেই কিতাবকে উদ্ধৃত করে ১৯৮৩ সালে এক তুর্কি গবেষক মেহমিত বিরকদার Mehmet bayrakdar কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন al-jahiz and the rise of biological evolution নামে। সেখানে তিনি দাবী করেছিলেন যে,আল জাহিজ ডারউইনেরও এক হাজার বছর আগে বিবর্তনবাদের প্রবর্তন করেছিলেন। আল জাহিজ তাঁর রচিত কিতাবুল হাইওয়ানে একটি অধ্যায় এনেছেন دلالة المخلوق على الخالق নামে। অর্থাৎ সৃষ্টি তার স্রস্টার প্রমাণ বহন করে। এতে প্রমাণিত হয় তিনি সেই বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতেন না যা সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে। তবে তার রচনায় এমন কিছু আছে যা পশ্চিমা বিবর্তনবাদের সমর্থক না হলেও মোটামুটি ধরণের বিবর্তনের ইংগিত বহন করে। তাঁর কিতাবগুলোর উপর আরো বেশি গবেষণা হওয়া দরকার। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের শারীরিক গঠনের পার্থক্যের জন্য ভূপ্রকৃতিকে দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, পরিবেশের প্রভাবে মানুষ কিছুটা আল-মাস্কে পরিণত হচ্ছে। আল-মাস্ক শব্দের প্রকৃত অর্থ ‘ব্যক্তির বাহ্যিক গড়নে পরিবর্তন ‘। মানুষের বানর ও শূকরে পরিণত হওয়া নিয়ে কুরআন-হাদিসে এই শব্দ বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। আল-মাস্খ শব্দটি নেতিবাচক অর্থ প্রকাশ করে। যেমনঃ distort, disfigure। অর্থাৎ এমন পরিবর্তন বুঝায়, যা খারাপ। আল-মাস্খ শব্দটি devolution অর্থে মিউটেশন শব্দের সমার্থক। আল জাহিজ মনে করতেন যে,পরিবেশের প্রভাবে মানুষের মুখ কিছুটা বানরের মত হয়ে যেতে পারে, অথবা নাক শূকরের মত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বানর এক সময়ে মানুষ হয়ে যেতে পারে, এটা তিনি বলেন নি। কারন হিসাবে সহজে অনুমান করা যায়। আর তিনি একথাও বলেন নি যে, মানুষ বানর জাতীয় প্রাণী থেকে এসেছে। “Without doubt, we have seen that some nabatheen navigators resembled the ape in some geographical environment, likely we have also seen some’ people from Morocco and have found, them as like as aI-maskh, except for a little difference.. . And it is possible that the polluted air and water, and dust made this change in the character of these Moroccans. .. if this effect goes on more and more in them, those changes in their bristles, ears, colours, and form (similar to the ape) increase more” সুতরাং, আল জাহিজ মূলত আধুনিক ‘নিপুণ নকশা’ তত্ত্বের প্রবর্তক।তাছাড়া আল জাহিজ এই কথাও বলেন নি যে, বুদ্ধিমান সত্ত্বার হস্তক্ষেপ ছাড়া-ই প্রজাতির পরির্তন হয়েছে। বরং তিনি আল্লাহ-র অস্তিত্বের কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, “All small animals eat smaller ones; and all big animals cannot eat bigger ones… God makes cause of some bodies life from some bodies’ death and vice versa”, মানে, ছোট প্রাণী আরো ক্ষুদ্র প্রাণী খায়; এবং সকল বড় প্রাণী আরেকটি বৃহত্তর প্রাণীকে খেতে পারে না… আল্লাহ কিছু প্রাণীর মৃত্যুর দ্বারা কিছু প্রাণীর জীবন বাঁচান ও তার বিপরীত করেন”।তিনি লিখেছেন যে, বিভিন্ন কারনে প্রজাতি বিবর্তিত হয়, যার একটি কারন হল ‘আল্লাহ’।
মোট কথা, তিনি উদ্দেশ্যহীন পরিবর্তন [মিউটেশন] ও অজীবজনি নিয়ে কিছু বলেন নি। যেহেতু তিনি অজীবজনি নিয়ে কিছু বলেন নি, আর তিনি মুমিন। সেহেতু আমার মন্তব্য হচ্ছে, তিনি এক প্রকারের Theistic Design তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন। আমি তাকে Theistic Evolutionist বলতাম, যদি তার পূর্বে কেউ অজীবজনির ধারনা দিত, আর তিনি তা মৌনভাবে হলেও সমর্থন করতেন। Theistic design বলার কারন হল, তিনি মনে করতেন, চতুষ্পদ (তার দেয়া উদাহরণ হল: কুকুর, নেকড়ে শিয়াল) প্রাণীর আগমন হয়েছে একই প্রাণী আল-মিস্ক থেকে। কিন্তু আল-মিস্ক কোথা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে সেটা তিনি বলেন নি। একথা বলেন নি যে, মিস্ক এসেছে অন্য আরেক প্রাচীন প্রাণী থেকে, সেটি আবার আগের আরেকটি প্রাণী থেকে এসেছে। সহজে-ই অনুমান করা যায় যে, তিনি আল-মিস্ককে প্রথম সৃষ্ট জীবের প্রকৃত রূপ মনে করতেন। তিনি লিখেছেন, “People said different things about the existenee of al-miskh (original form of quadrupeds). Some acceptcd its evolution and said that it gave existence to dog, wolf, fox and their similars. The members of this family came from this form (al-miskh).”
তার ধারনা ভূমিকম্প ও বন্যার কারনে প্রথম প্রকৃত রূপ আল-মিসক বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
আল-জাহিজের সময় আব্বাসীয় শাসনের চরম অবস্থা চলছিল। সেসময় জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক বই গ্রিক ভাষা থেকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হতো। ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শন নিয়ে বেশ আলোচনা হতো তখন। আর এসবের কেন্দ্র ছিল বসরা শহর। এসব আলোচনা থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল আল-জাহিজের চিন্তাধারা। মুসলিম এই বিজ্ঞানী তার বইতে লিখেছেন, ‘টিকে থাকার জন্য প্রাণীদেরকে লড়াই করতে হয়। লড়াই করতে হয় তাদের খাদ্যের জন্য। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাই যাতে অপরের খাদ্য না হয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করতে লড়াই করে। এমনকি, প্রজননের জন্যেও তাদেরকে সংগ্রাম করতে হয়।’ তিনি আরো লিখেন, ‘নিজেদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে গিয়ে পরিবেশের নানা কারণে প্রাণীরা নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এভাবেই তারা নতুন নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। আর যেসব প্রাণী প্রজনন ঘটাতে টিকে থাকতে পারে তারা তাদের সফল বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারে।’ বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আল-জাহিজের এসব ধারনা তার পরবর্তী অন্যান্য মুসলিম চিন্তাবিদদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তারা হলেন-আল-ফারাবি, আল-আরাবি, আল বিরুনী এবং ইবনে খালদুন। তাছাড়া পাশ্চাত্যের Carolus Linnaeus (1707- 1778), Jean-Baptiste Lamarck (1744- 1829), Charles Robbert Darwin (1809- 1882), Hugo Marie de Vries (1848-1935)।Darwin ও Lamarck কে আমরা অনেকেই চিনি? উপরিউক্ত ৪ জন বিজ্ঞানীই Biology ও Botany নিয়েই জীবন অতিবাহিত করেছে। এখন আজ-জাহিজ সম্পর্কে বলতে হলে বলতে হবে- বিজ্ঞানী আজ-জাহিজ উপরিউক্ত ৪ জন বিজ্ঞানীর পিতা। উপরিউক্ত ৪ জন বিজ্ঞানী আজ-জাহিজকে সরাসরি Copy paste করেছে বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না!! উপরিউক্ত ৪ জন বিজ্ঞানীর প্রচার করা মতবাদের সমাহার হল-মহাবিজ্ঞানী আল-জাহিজ!! তাই বিবর্তন তত্ত্ব Darwin এর নয় বরং তা মহাবিজ্ঞানী আজ- জাহিজের।
(পর্ব-১ চলছে)
©somewhere in net ltd.