নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মো: ইসমাইল

মো: ইসমাইল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়েমেন সঙ্কট ও সমাধানঃ মানবিকতার ব্যাবচ্ছেদ

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১


২০১১ সালে ইয়েমেনের স্বৈরসাশক আলী আব্দুল্লাহ সালেহর ৩৩ বছর ক্ষমতার ইতি টানার পর পুরো ইয়েমেন জুড়ে বিভিন্ন উপজাতি, আঞ্চলিক এবং পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রুপ বা পক্ষ হল হুতি বা আনসারুল্লাহ, বর্তমানে সৌদি আরবে পলায়নরত প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মুনসুর হাদি, সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ এবং আল কায়দা ইন দা আরাবিয়ান পেনিনসুলা(AQAP)।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হুতি মিলিশিয়াদের হাতে রাজধানী সানার পতন হলে নতুন সঙ্কট শুরু হয়। এরপর থেকেই ইয়েমেন মুলত উত্তর ও দক্ষিনে ভাগ হয়ে পরে। রাজধানী সানা সহ উত্তর দিকের নিয়ন্ত্রণ করছে ইরান সমর্থিত শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা। আর দেশের দক্ষিন দিক নিয়ন্ত্রণ করছে প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মুনসুর হাদির অনুগত বাহিনী। এমতাবস্থায় ২০ মার্চ ২০১৫ হুতিদের দুটি মসজিদ ‘দর’ ও ‘আল হাশুস’-এ স্বঘোষিত খলিফা আবু বকর আল বাগদাদীর জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক ষ্টেট(IS) বোমা হামলা চালিয়ে ১৪২ জনকে হত্যা করে। একই সাথে দখল করে নেয় দক্ষিণাঞ্চলীয় ‘আল হুতা’ শহর। এরপর ২২ মার্চ ২০১৫ হুতি মিলিশিয়া ও তাদের মিত্ররা প্রেসিডেন্ট হাদির অনুগত বাহিনীকে হটিয়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ শহর ‘তায়েজ’ দখল করে নেয়। ২২ মার্চ ২০১৫ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে প্রেসিডেন্ট হাদিকে সমর্থন এবং হুতি মিলিশিয়াদের নিন্দা জানানো হয়। ফলে সহিংসতা বাড়তে থাকায় ২৫ মার্চ ২০১৫ প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মুনসুর হাদির বৈধ সরকার কে রক্ষা করার জন্য Operation Decisive Strom বা ‘প্রত্যয়ী ঝড়’ নামে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলাসহ সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব বহুজাতিক বাহিনী।
হুথি বিদ্রোহীদের দমনকল্পে সৌদি আরবের বিমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে হুথি মিলিশিয়ারা আরো অধিক মাত্রায় সংগঠিত হয়ে দেশটির রাজধানী সানার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ লাভ করেছে এবং অবশেষে বিদ্রোহীদের কাছে একরকম পরাজিত হয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি ২৬ মার্চ ২০১৫ সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে ইয়েমেন দেশটি আজ চরম সংকটের মুখে পতিত হয়। শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে।
জাতিসংঘ বলেছে, গত দুইসপ্তাহের লড়াইয়ে ইয়েমেনে অন্তত ৫শ জন নিহত এবং ১৭শ’ জন আহত হয়েছে। এদিকে সৌদি আরব সামরিক হামলার বিকল্প না ভেবে ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগর এডেনে তার নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী শিয়া হুতি বিদ্রোহী এবং তাদের সহযোগীদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। হুতিবিরোধী যোদ্ধাদের জন্য বিমান থেকে ৪ এপ্রিল ২০১৫ শনিবার অস্ত্রও ফেলেছে জোট বাহিনী। হাদির পক্ষের বাহিনীর স্থানীয় প্রধান আহমেদ কাশেম আল-শোয়ায়ি অস্ত্রের জন্য সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশকে ধন্যবাদ জানান।
অন্যদিকে হুতিদের মিত্র ইরান সামরিক হামলা বন্ধ করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের জোর আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বনেতাদের কাছে।ইরানের সাথে একমত হয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে বসে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া অনুরোধ জানিয়েছে যেন সামরিক হামলা বন্ধ করা হয়। জাতিসংঘে নিয়োজিত রুশ মিশনের মুখপাত্র আলেক্সি জেইৎসেভ জানান, 'মানবাধিকার সংরক্ষণে বিমান হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সুযোগ' নিয়ে আলোচনা হওয়াউচিত। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘে নিযুক্ত জর্ডানের রাষ্ট্রদূত, ডিনা কাওয়ার বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়া যে আবেদন করেছে তা বিবেচনা করতে হলে কাউন্সিলের সদস্যদের সময় প্রয়োজন।
ইয়েমেনের অর্থনীতি ততটা সচ্ছল না হলেও সৌদি আরব ও ইরান উভয়েরই ইয়েমেনের সঙ্গে অভিন্ন সীমান্ত থাকায় উভয়েই শিয়া-সুন্নি বিরোধকে তাদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে কাজে লাগাতে চাইছে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ক্রমাগত হুথিদের লক্ষ্যস্থলের দিকে বিমান হামলা ও ইরানের সহায়তায় হুথিদের পাল্টা প্রতিরোধ সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনার পাশাপাশি একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়। এদিকে ইয়েমেনের দক্ষিনাংশে এডেন সমুদ্র বন্দর যদি হুতিদের দখলে চলে যায় তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বব্যাপী তেল রপ্তানি হুমকির মুখে পরবে।আরব জোট বাহিনী যদি এভাবে হুতি বিরোধীপক্ষকে অকাতরে অস্র দিতে থাকে তাহলে অস্রের এই সহজলভ্যতা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। ইয়েমেনকে নিয়ে সৌদি জোট ও ইরানের মধ্যে যে পরোক্ষ বা পতক্ষ দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তাতে মধ্যপ্রাচ্যে যে একটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে তা অস্বীকারের সুযোগ নেই।আর এই সুযোগটা কাজে লাগাবে জঙ্গি গ্রুপ ইসলামিক ষ্টেট(IS)।
মানবিকতার বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে বিশ্ব মোড়লদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সৌদি আরবকে সামনে রেখে পশ্চিমা বিশ্ব অস্র বাণিজ্য আবার জমজমাট ভাবে শুরু করতে পেরেছে বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়। এক্ষেত্রে ও.আই.সি(OIC) এবং আরব লীগকে যথাযত ভুমিকা পালনের কোন বিকল্প নেই। জঙ্গি গুষ্টি নিয়ন্ত্রণ যেমন অত্যাবশ্যকীয় তেমনি মানবিকতা বা সাধারন মানুষের জীবন রক্ষাও আবশ্যকীয়।
লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.