![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধর্মীয় গোঁড়ামি বা প্রথাগত সংকীর্ণ মানসিকতার উর্ধে উঠে নির্ভীক ও সত্য প্রকাশের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মুক্তচিন্তা। কোন ব্যক্তি বা বিশেষ ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতমূলক বা বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ লেখকের উদ্দেশ্য নয়।
আমাদের সমাজে সমকামীরা সংখ্যালঘু হলেও তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। এশিয়ার বৃহত্তম গণতান্ত্রিক শক্তি চীনে সমকামীরা আইনগত ভাবে বৈধ হলেও তাঁদের অধিকার রক্ষায় নেই কোন সরকারি আইন। চীনের সমকামী সম্প্রদায়কে নিয়ে আজকের এই রচনা। একটি জরিপে উঠে এসেছে চীনের প্রতি ২০ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন সমকামী। জরিপে অংশ নেয়া মোট ৮৮৯৪ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫.৬ শতাংশ পুরুষ জীবনে একবার হলেও সমলিঙ্গভুক্ত সঙ্গীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা স্বীকার করেন। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জিয়াইউয়ান-ডটকম এর বরাত দিয়ে নিউজ পোর্টাল ড্যানলান এসব তথ্য জানায়। এর আগে গুগলের একজন বিশেষজ্ঞের পরিচালিত জরিপে জানা গিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতি বিশ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন সমকামী। এ দুটি পৃথক জরিপে অংশ নেয়া যথাক্রমে ১৫.৩৪ শতাংশ এবং ২০.৩৪ শতাংশ পুরুষ জানান তাঁরা জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে উভকামী বা সমকামী সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, এবং বরাবরই সামাজিক বাধার কারণে এসব সম্পর্ক তাঁরা গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন জানান তাঁরা এখনো তাঁদের সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পাননি, আর এদের মধ্যে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান যে তাঁরা এখন পর্যন্ত কোন ধরণের ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ান নি। অন্যদিকে ‘সাংহাই জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি’ গত ২৫ শে ডিসেম্বর তাঁদের একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে, যাতে জানানো হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩৪ টি শহরের মোট ৩৫০০ জন নাগরিকের মধ্যে প্রতি তিনজনে দুইজন (৬৮.৫ শতাংশ) মনে করেন ঐতিহ্যবাহী চৈনিক মূল্যবোধের কারণে চীনে সমকামীতা অগ্রহণযোগ্য ও পরিত্যাজ্য। গত ৩০ বছরে চীনে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসলেও চৈনিক সমাজে সমকামিতার মত ব্যাপারগুলোকে এখনো স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চীন ১৯৯৭ সালে সমলিঙ্গভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনকে বৈধতা দান করে, এবং চীনে ২০০১ সালে সমকামীতাকে মানসিক রোগের সরকারী তালিকা হতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেয়া হয়, যদিও এখন পর্যন্ত সমকামী নারী ও পুরুষদের বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে রক্ষা করার জন্য চীন সরকার কোন আইন প্রবর্তন করেনি। পাশাপাশি সমলিঙ্গের বিয়ে বা সমকামী ব্যক্তিদের সন্তান গ্রহণের বৈধতা দানের মত ইস্যু নিয়ে চীন সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা কোন ধরণের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। গুয়াংঝু ভিত্তিক ‘পিফ্ল্যাগ চায়না’র প্রধান নির্বাহী ‘আ কিয়াং’ সম্প্রতি ‘জিএসএন’ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “চীনের অধিকাংশ সাধারণ জনগণের কাছে সমকামীতার ব্যাপারটা এখনো ঠিক পরিষ্কার নয়, তাঁরা জানেন না সমকামীতা ব্যাপারটা আসলে কি। কারণ এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে নিজের সমকামী পরিচয়কে স্বীকার করে নেয়ার মত সাহসী লোকের সংখ্যা গণচীনের মোট জনংখ্যার তুলনায় নিতান্তই নগণ্য’’। তিনি আরও বলেন, “চৈনিক গণমাধ্যমগুলো সমকামীদের ব্যাপারে বরাবরই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে, একই সাথে চীনের স্কুল গুলোতেও শিক্ষার্থীদের সমকামীতার ব্যাপারে কোন ধারণা দেয়া হয় না, যা পরবর্তীতে নিজের লৈঙ্গিক পরিচয় প্রকাশে তাদের মধ্যে অনিচ্ছা তৈরি করে”। ‘আ কিয়াং’ বিশ্বাস করেন, চীনের ক্ষমতাধর সমকামী ব্যক্তিদের নিজেদের প্রকাশ করার মাধ্যমে গণমাধ্যম ও সমাজের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে পারে। যদিও চীনে সমকামীদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্কস্থাপন বৈধ, তবুও চীনের সমাজ-ব্যবস্থায় সমকামীরা আজও চরম অবহেলা ও নিগ্রহের স্বীকার, কারণ তাঁরা এখনো সামাজিকভাবে অস্বীকৃত ও অবাঞ্ছিত। ‘আ কিয়াং’ এর মতে, “একই বছরে আমেরিকার খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব জোডি ফস্টার কিংবা যুক্তরাজ্যের টম ডালি ও মিকা’র মত, চীনের ক্ষমতাধর ও বিখ্যাত সমকামী ব্যক্তিরা যতদিন না আত্মপ্রকাশ করবেন ততদিন চীনে সমকামীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন তৃণমূল পর্যায়েই থেকে যাবে”।
তথ্য সূত্রঃ ড্যানলান নিউজ পোর্টাল, জিএসএন নিউজ, ও গুগল।
©somewhere in net ltd.